দ্য পানিশার 2.0

4.7
(32)

আমিনুল ইসলাম নিজেকে কোন ভাবেই শান্ত রাখতে পারছেন না । হাসপাতালের কেবিনের ভেতরে বারবার পায়চারি করছেন । কীভাবে নিজেকে শান্ত করবেন বুঝতে পারছেন না । একটু আগে থানাতে গিয়েছিলেন । অফিসার বলেছে যে কোন চিন্তা না করতে । যারা তার ছেলের এই অবস্থা করেছে তাদেরকে ছাড়া হবে না । যে কোন ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

আমিনুল ইসলাম নিজের ছেলের দিকে তাকালেন । নাফির একটা হাত ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে । ডান পা টি ভাঙ্গা না হলেও ভয়ানক ভাবে মুচড়ে দেওয়া হয়েছে । মাথা ফেঁটেছে কয়েক জায়গায় । শরীরে অগনিত আঘাতের চিহ্ন । নাফির মা অনবরত কেঁদে চলেছেন । তাকে দোষ দেওয়া চলে না । নিজের আদরের ছেলের এই অবস্থা দেখলে যে কারো অবস্থায় এমন হবে । আমিনুল ইসলাম নিজেকে শান্ত রাখতে পারছেন না । একবার কেবল ওদের হাতের কাছে পেয়ে নেন, তারপর মজা বুঝাবে সে ।
সব চেয়ে খারাপ লাগছে আনিকার জন্য । বেঁচারির সাথে আর কদিন পরেই নাফির বিয়ে হবে । সব ঠিক হয়ে আছে । মেয়েটিও কেবিনের ভেতরে বসে রয়েছে । আমিনুল ইসলাম আনিকার মাথায় হাত রাখলেন । তারপর বললেন, চিন্তা কর না মা, নাফি অবস্থা যে করেছে তাকে আমি ছাড়বো না !

এমন সময় একজন ডাক্তার ঢুকলো কেবিনে । আমিনুল ইসলাম তাকে দেখে বললেন, ডাক্তার রিপোর্টে কি বলছেন? ওর সুস্থ হতে কতদিন লাগবে ?
ডাক্তারের চেহারা মাস্ক পরা । কেবল চোখ দুটো দেখা যায় । তখনই আমিনুল ইসলাম ব্যাপারটা খেয়াল করলেন । এই ডাক্তার অন্য জন । একটু আগে যে রিপোর্ট নিয়ে গিয়েছিলো, ইনি সে নন । ডাক্তার এগিয়ে গেল নাফির দিকে । ভাঙ্গা প্লাস্টার করা হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর পা টা পরীক্ষা করলো হাত দিয়ে । মোচড়ানো স্থানে কেবল কালসিটে পড়ে আছে । হঠাৎ একটা ভয়ংকর কাজ করলো ডাক্তার । কালসিটে পরা স্থানে জোরে চাপ দিল । সাথে সাথে নাফির ঘুম ভেঙ্গে গেল । চিৎকার করে উঠলো সে । সোজা তাকালো ডাক্তারের দিকে । চোখে একটা হতভম্ব ভাব । সেই বিস্ময় ভাবটা মুহুর্তেই আতংকে রূপ নিল । একভাবে তাকিয়ে রইলো ডাক্তারের দিকে ।

আমিনুল ইসলাম চিৎকার করে বললেন, হোয়াট দ্য ফাক ডাক্তার !
সাথে সাথে নাফি চিৎকার করে বলল, ড্যাড, এই লোকই আমাকে মেরেছে !
-কী !

আমিনুল ইসলাম যেন রাগে লাল হয়ে গেল । এতো বড় সাহস । তিনি দ্রুত এগিয়ে গেলেন ডাক্তার রূপী মানুষটার দিকে । এখনই যেন মেরে ফেলবে তাকে । কিন্তু সে আশা তার পূরন হল না । মাঝ পথেই তাকে আটকে যেতে হল । কারণ আগন্তক নিজেই এগিয়ে এসেছে তার দিকে । সোজা গলা চেয়ে ধরেছে তার । এক প্রকার ধাক্কা মেরে দেওয়ার কাছে নিয়ে গেল তাকে । আমিনুল ইসলাম কয়েক মুহুর্ত নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন বটে । কিন্তু বুঝতে পারলেন যে সামনের মানুষটার শরীর ভয়ানক শক্ত । তিনি কোন ভাবেই শাক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারবেন না ।

সারা জীবন মানুষ জন তাকে সমীহ করে চলেছে। তার টাকার জোরের কারণে । কিন্তু এখন সেই টাকার জোর কোন কাজে লাগছে না । হঠাৎ আগন্তক বলল, আপনার ছেলেকে কেন মেরেছি জানেন? জানেন কি? কারণ আপনার ছেলে এবং আরও দুইজন মিলে আপনারই অফিসের ইন্টার্ন সোফিয়াকে রেপ করেছে ।
আমিনুল ইসলাম অবাক হয়ে তাকালেন আগন্তককের চোখের দিকে । তারপর বিছানার দিকে চোখ চলে গেল তার । তার ছেলে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । ছেলের চোখ দেখেই তিনি বূঝতে পারলেন যে আগন্তক ঠিক কথা বলছে । তিনি ছেলের এমন স্বভাবের কথা জানে বেশ ভাল করেই, এগেও এমন ঘটনা ঘটেছে । তবে সেগুলো সামনে আসার আগেই সব সামাল দেওয়া হয়েছে ।
এবার আগন্তক তাকালো নাফির দিকে । নাফি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তার বাবার দিকে । তার বা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে কিন্তু আগন্তকের শক্তির কাছে অসহায় বোধ করছে। তখনই আগন্তক আস্তে আস্তে আমিনুল ইসলামকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে একটু উপরে তুলে ধরলো । আমিনুল ইসলামের পা মাটি থেকে উপরে উঠে গেল । সে আরও বেশি ছটফট করতে লাগলো । নাফি মা এতোটাই অবাক হয়ে গেছে যে মুখ দিয়ে একটা কথা তো দুরে থাকুক সামান্যতম চিৎকার করতে ভুলে গেছে, একটুও নড়তে পারছেন না তিনি ।

নাফি এবার চিৎকার করে বলল, প্লিজ বাবাকে ছেড়ে দিন । প্লিজ বাবাকে ছেড়ে দিন । আমি সব স্বীকার করে নিচ্ছি । আমি অপরাধ করেছি ।

আগন্তক এবার এক ঝকতাকে আমিনুল ইসলামকে ঘরের এক পাশে ছুড়ে মারলেন । ওখানে কিছু জিনিস পত্র ছিল । সেগুলোর উপরে গিয়ে পড়লেন তিনি । আগন্তক এবার নাফির বেডের দিকে এগিয়ে গেল । তারপর বলল, তোমার পা আমি কেন ভাঙ্গি নি জানো? কারন তুমি যেন হেটে পুলিশ স্টেশনে যেতে পারো । তোমাকে সাত দিন সময় দেওয়া হল । এই সাত দিনের ভেতরে তুমি নিজে পুলিশের কাছে যাবে এবং নিজের দোষ স্বীকার করবে । সোফিয়াকে নিয়ে যাবে পুলিশের কাছে । সে ভয় পেয়েছে । তাকে দিয়ে মামলা করাবে এবং নিশ্চিত করব যেন পুলিশ মামলা নেয় । নিজে স্বীকারোক্তি দিবে । ক্লিয়ার ?
নাফি মাথা নাড়ালো !
আগন্তক আবার বলল, তোমার দুই বন্ধুকে বলবে তোমার সাথে যেন ধরা দেয় এবং তুনি নিজে তোমার সহ তাদের কুকীর্তির কথা পুলিশের কাছে বলবে । আরেকটা কথা যদি তোমাদের বাবাদের কেউ সোফিয়াকে বাধ্য করে কেস তুলে নিতে কিংবা যে কোন ভাবে তোমরা ছাড়া পেয়ে যাও আমি তোমাকে সহ তোমার ঐ দুই বন্ধুকে মেরে ফেলবো । এবং আমি যে মিথ্যা কথা বলছি না সেটা তুমি খুব ভাল করেই বুঝতে পারছো! তোমরা একটা অপরাধ করেছো এবং এই অপরাধের শাস্তি তোমাদের পেতে হবে ! পরিস্কার হয়েছে আমার কথা?
নাফি কেবল মাথা নাড়ালো?
-গুড ! আমি চাই না তোমার সাথে আমার আবার দেখা হোক । কারণ যদি দেখা হয় তাহলে সেটা তোমার জন্য মোটেও ভাল কিছু হবে না ।

আগন্তক আর কিছু না বলে চলে গেল দরজা দিয়ে । আনিকা এতো সময়ে ভয়ে ভয়ে ঘরের এক পাশে দাড়িয়ে ছিল । আগন্তক বেড়িয়ে যেতেই সে নাফির সামনে এসে দাড়ালো । তারপর বলল, লোকটা যা বলল সে সব সত্যি?
নাফি মাথা নিচু করে রইলো কেবল । আনিকা বলল, সেইম অন ইউ নাফি ! সেইম অন ইউ !
তারপর সেও দরজা খুলে বের হয়ে গেল ।

দুই

-হেই রাহাত কি খবর ?
ভিডিও কলে আরাজকে দেখতে পেল । আরাজের পেছন দিকটা দেখা যাচ্ছে । রাহাত বুঝতে পারলো আরাজ ওর ফার্ম হাউজে রয়েছে । রাহাত শুকনো কন্ঠে বলল, ওদিকে কী খবর?
-তুমি মিয়া একটা বোকা ! এমন ভীতুর ডিম হলে চলে ? কিভাবে লেজ গুটিয়ে পালালে ?
-বলা যায়! তুমি না হয় জোর খাটিয়ে কেস থেকে নিজের নাম সরিয়েছো আমি তো আর পারি নি । আমার নাম কেসে আছে । আর নাফি নিজে স্টেসমেন্ট দিয়েছে পুলিশের সামনে !
-আরে রাখো সব সামলানো যেত । কিসের না কিসের ভয়ে তুমি পালালে ওর নাফি ধরা দিল । দরকার ঐ মেয়েটাে গায়েব করে দেওয়া যেত ! বাবা দেখতো ব্যাপারটা !

রাহাত জানে আরাজের বাবা একজন উপমন্ত্রী । অনেক ক্ষমতা তার বাবার । রাহাতের বাবাও যদি বেশ ক্ষমতাবান । সরকারী আমলাদের একজন তবুও রাহাতের কেন জানি শান্তি লাগছিলো না । বিশেষ করে নাফির ঐ ভয়ার্থ কন্ঠস্বর শোনার পর থেকে একটা ভয় ঝেকে বসেছে ওর নিজের মাঝে । নাফি যে কী পরিমান ভয় পেয়েছে সেটা ওকে না দেখলে নিজে বিশ্বাস করতো না । নিজের দোষ সে স্বীকার করে নিয়েছে ।
রাহাত হঠাৎ চমকে উঠলো । আরাজের পেছনে একটা কালো আয়োবয় দেখতে পেল । রাহাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরাজের কন্ঠস্বর শুনতে পেল ।
-কে তুমি ? এখানে কীভাবে ঢুকলে ।

রাহাত দেখতে পেল ফোনটা পরে গেল । সোজা ছাদটা দেখা যাচ্ছে এখন । কিন্তু চিৎকার শোনা যাচ্ছে ঠিকই । আরাজের চিৎকার । চিৎকার এবার আর্তনাদে পরিনত হল । রাহাতের বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠলো । কিন্তু কিছুতেই সে ফোন কাটতে পারলো না । আর্তনাদের মাত্রা এক সময়ে তীব্র হল এবং আস্তে আস্তে মিইয়ে গেল । তারপর সব চুপচাপ । কোন আওয়াজ নেই ।

রাহাত কেবল অনুভব করলো যে ওর বুকের ভেতরটা হাতুড়ি পেটা খাচ্ছে । তখনই ছায়াটাকে দেখতে পেল । ফোনটা কেউ হাতে নিয়েছে । নড়ে উঠলো স্ক্রিন । তারপরই চেহারা টা দেখতে পেল সে । মুখে একটা সার্জিক্যাল মাস্ক পরা । চোখ দেখতে পেল কেবল !
-হেই রাহাত কেমন আছো ?
রাহাতের মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হল না । কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো সামনের মানুষটার দিকে । তোমার বন্ধুকে দেখবে না কী অবস্থা !

এই বলে ফোনের স্ক্রিনটা সরালো সে । সাথে সাথেই রাহাতের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল । কিন্তু ফোন পড়ার আগে সে ঠিকই দেখতে পেয়েছে সিলিং থেকে আরাজের ঝুলে থাকা দেহটা দেহে যে প্রাণ নেই সেটা বুঝতে কষ্ট হল না মোটেও ।
রাহাত এখন কী করবে ! কি করা উচিৎ ? ঐ লোকটা আরাজকে মেরে ফেলেছে । একেবারে খুন করে ফেলেছে । যেমনটা নাফি বলেছি । মেরে ফেলবে ! মেরে ফেলেছে !

রাহাত !
রাহাত !
ফোন থেকে আওয়াজটা ভেসে এল । রাহাত কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে নিল । লোকটার চোখ দেখতে পেল আবার ! লোকটা গাঢ় কন্ঠে বলল, বুঝতে পারছো তো কী হয়েছে তোমার বন্ধুর সাথে । আরাজ মরেছে কারণ সে নিজের অপরাধ স্বীকার করে নি । বরং প্রভাব খাটিয়ে কেস থেকে নিজের নাম মুছে দিয়েছে । তবে তোমার জন্য সুসংবাদ ! কেসে তোমার নাম আছে । তোমাকে সাত দিন সময় দিলাম আবারও । দেশে ফিরে আসো, পুলিশের কাছে ধরা দাও । জেল খাটো । নিজের অপরাধের শাস্তি পাও । কিন্তু যদি আমি শাস্তি দেই তাহলে অবস্থা ঠিক এই আরাজের মত হবে ! তোমার বাসার পেছনে একটা বড় অক গাছ রয়েছে । ওটা দুইনম্বট ডালটাতে লাল রং করা আছে । ঠিক ঐ ডালে তোমাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে ঠিক আট নম্বর দিনে ।

রাহাত তীব্র চোখে কেবল তাকিয়ে রইলও । নড়তে ভুলে গেছে । ওর বর্তমান বাড়িটার পেছনে আসলেই একটা বড় অক গাছ রয়েছে । নিচ থেকে দ্বিতীয় ডালটা গতদিন কে জানি লাল রং করে গেছে । এই লোকটা জানলো কিভাবে?
ও মাই গড ! তার মানে রাহাত যে এই বিদেশের এই খানে আছে সেটাও সে জানে !
আবার শোনা গেল আগন্তকের কন্ঠে । ভেবো না দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছো বলে তোমার কাছে পৌছাতে পারবো না । সাত দিন সময় দিলাম !

লাইন কেটে গেল !

ফোন হাতে নিয়ে রাহাত কেবল কিছু সময় চুপ করে বসেই রইলো । সে কোন ভাবেই আরাজের মত মরতে চায় না । যে লোকটা আরাজের নিজের বাসার ভেতরে শুকে আরাজকে খুন করতে পারে, যে লোকটা ওর বাড়ির পেছনের গাছের কথা জানতে পারে সে এখানে ওর কাছেও আসতে পারবে । ও বাঁচতে চায় । মরতে চায় না । দরজার হলে সব স্বীকার করে নিয়ে জেলে যাবে নাফির মত । তবুও বাঁচতে চায় ! তখনই ফোন দিল সে টিকিট বুকিং দিতে । ওকে যেতে হবে !

গল্পের নাম টি মার্ভেল কমিক্স দ্য পানিশার থেকে নেওয়া হয়েছে । এই সিরিজের এইটা দ্বিতীয় গল্প । আগুন্তক নামে এই সিরিজের প্রথম গল্পটা আপনারা পড়েছেন আশা করি !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 32

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →