টুকরো জীবন দৃশ্য ২

4.8
(47)

শরীফকে কেবিনে ঢুকতে দেখে একে একে সবাই কেবিন ছেড়ে বের হয়ে গেল । গত দুই দিনে শরীফ একবারও মিমির সামনে আসে নি । মিমি জানে শরীফ ওর সামনে না আসলেও আশে পাশেই ছিল । অবশ্য মিমির জ্ঞান ছিল না ঠিকঠাক মত । আজকে মিমির শরীর একটু ভাল । উঠে বসতে পারছে । বালিশ দিয়ে খাটের রেলিংয়ের উপরে হেলান দিয়ে বসেছে ।
শরীফ ওর বেডের কাছে এসে বসলো । একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে তারপর ওর চোখের দিকে তাকালো ।
মিমির মনে হল শরীফ হয়তো কান্নাকাটি করেছে । ছেলে মানুষের কান্নাকাটি নাকি করতে হয় না । কিন্তু মিমি কোন দিন বুঝতে পারে নি কেন করতে হয় না । শরীফের চোখ একটু যেন অন্য রকম লাগছে ।
কার জন্য?
মিমির জন্য?
নাকি যে সন্তানটা পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই মারা গেছে তার জন্য?

শরীফ বলল, কেমন আছো?
মিমি সেই প্রশ্নের জবাব দিল না । শরীফের দিকে তাকিয়ে বলল, আম্মা বলছিলো তোমাকে নাকি আরেকটা বিয়ে করাবে !
শরীফ বলল, আচ্ছা, মেয়ে কে খুজবে? তুমি বরং খুজে দিও । তুমি তো আমার পছন্দ ভাল করে জানো । তুমিই পার্ফেক্ট বউ খুজে আনতে পারবে !

মিমি শরীফের কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারলো যে সে ঠোট্টা করছে । এমন একটা সময়ে একজন মানুষ কিভাবে হাসি ঠোট্টা করতে পারে কে জানে ! মিমি একটু মুখ গম্ভীর করে বলল, আমি সিরিয়াস। একবার তো না । পরপর তিনবার । এই বার এতো সাবধান ছিলাম । তারপরেও …

বলতে বলতে মিমির চোখ পানি চলে এল । শরীফ এক ভাবে সেদিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি আমি । আসলে সমস্যাটা, ডাক্তার বলছে এখনও নাকি তোমার দেহ ম্যাচিউর না । আরেকটা দেহ ধারন করতে পারছে না । ১৮/১৯ হলেই মেয়েদের দেহ ম্যাচিউর হয়ে যায় বাচ্চা জন্মদানের জন্য । তোমার বেলাতে কি হচ্ছে কে জানে ! তাই আমি ঠিক করেছি আগামী চার পাঁচ বছর আমরা বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করবো না ।
মিমি বলল, তারপর?
-তারপর সব যদি ঠিক থাকে এবং তোমার শরীর যদি ঠিক থাকে তাহলে আরেকবার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।
-তারপরেও যদি নষ্ট হয়ে যায় ।
-তাহলে আর কি ! উপরওয়ালার ইচ্ছের উপর কার জোর আছে বল !
-আম্মা তো হার্টফেইল করবে !
-মা প্রতিদিনই চার পাঁচ বার করে হার্টফেইল করে । টেনশন নিও না ।

মিমি কি বলবে খুজে পেল না । কেন জানি ওর খুব কান্না আসছে । বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া একজন মেয়ের জন্য কতটা কষ্টের সেটা কেউ কোন দিন বুঝতে পারবে না । কিন্তু মিমির কান্না আসছে অন্য কারণে । শরীফ বলল, আচার খাবা?
-আচার !
-চালতার আচার !

চালতার আচার মিমির খুব পছন্দ । শরীর যখনই সুযোগ পেত সে কিনে নিয়ে আসতো মিমির জন্য । বাইরের খাবার খেতে দেখলে শরীফের আম্মা খুব রাগা রাগি করে । অনেক বার বলেছে বাইরের খাবারের সাথেই নাকি জ্বীন ভুত চলে আসে । পেটে গিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে দেয়। এইবার তাই বাচ্চা পেটে আসার পর থেকে বাইরের কিছু খায় নি । এতো সাবধান ছিল, তবুও শেষ রক্ষা হল না।

মিমি দেখলো শরীফ পকেট থেকে একটা পলিথিন ব্যাগ বের করলো । মিমির কাছে গিয়ে বসলো । চালতার আচারের দিকে হঠাৎ মিমির কি হল সে একটু উঠে বসলো এবং শরীফ কে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো । শরীফ পরম মমতায় মিমির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন শুনি?
-জানি না ।
-কান্না বন্ধ কর । কান্নাকাটি আমার পছন্দ না । এভাবে কান্নাকাটি করলে কিন্তু সত্যি সত্যিই আরেকটা বিয়ে করে ফেলবো !
-শরীফ ….
-আরে বাবা কান্না থামাও প্লিজ । এই নাও আচার খাও । বেশ ভাল বানিয়েছে ।

মিমি অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিল । নিজ হাতে অবশ্য খেতে হল না । শরীফ নিজ হাতেই ওকে আচার মুখে তুলে দিচ্ছিলো । মিমির কাছে সত্যিই মনে হল যে এমন স্বাধের আচার সে আর কোন দিন খায় নি । এতো বড় একটা দুঃখের পরে এই আনন্দটুকু ওর খুব বেশি দরকার ছিল ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 47

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →