কর্মফল

4.6
(68)

ক্লাস শেষ করে হলের দিকে যাচ্ছিলাম তখনই একজন আমার নাম ধরে ডাক দিলো ।
-সুমন ভাইয়া!
আমি কন্ঠটা শুনে সত্যিই অনেক চমকে গেলাম । এই মেয়েটাকে আমি এখানে দেখতে পাবো কোনদিন ভাবতেও পারি নি । আমার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে । কত বড় হয়ে গেছে !
আমার কেবল মুখ দিয়ে একটা শব্দই বের হল, আলো ! তুই?
-চিনতে পেরেছো?
-তুই এতো বড় হয়ে গেছিস! কী আশ্চর্য্য । এখানে কী করছিস তুই?
-আমি এখন তোমার বিশ্ব বিদ্যালয়ের পড়ি ।

হিসাব করে দেখলাম আলোর এই বছর এইচ এস সি পাশ করার কথা। ও যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হবে সেটা আমি ভাবি নি । আমি ভালো করে আলোর দিকে তাকালাম । মেয়েটা সত্যিই বড় হয়ে গেছে । চোখ গুলো যেন আর সুন্দর হয়েছে । সেই সাথে চুল লম্বা হয়েছে গায়ের রংটা আগের থেকে আরও বেশি উজ্জ্বল হয়েছে । এই মেয়েটার সাথে এক সময় কত খেলা করেছি । একটা সময় ছিল আলো সব সময় আমার পেছন পেছন ঘুরতো । আমি যেখানে যেখানে সেও আমার পেছন পেছন সেখানে সেখানেই আসটো । আমাকে যে কত খামচি দিয়েছে সেটার কোন হিসাব নেই । আমিও ওকে মেরেছি কত । শেষে বাবার হাতে মারও খেতে হয়েছে । সেই মেয়ে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেছে । ভাবা যায় ! আমি বললাম, তোর বাবা আসতে দিলো এতোদুর?
-দিতে চায় নি। রাজি করিয়েছি ।
-যাক ভাল । কোথায় উঠেছিস?
-একটা হোস্টেলে উঠেছি কাছেই ।

এরপর আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । হঠাৎই পুরানো কথা মনে পড়ে গেল সব । আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আলো বলল, আমাকেও ঘৃণা কর বাবার মত?
-আরে কি বলিস? তোকে কেন ঘৃণা করবো?
-চাচী কই?
-মা আছে ভাল । এখানে একটা এতিম খানায় পড়ায় আর ওখানেই থাকে।

কথাটা শুনে আলোর মুখটা কেমন ছোট হয়েগেল । একটু পরেই দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । ওর সারা মুখ জুড়ে একটা তীব্র অপরাধবোধের রেখে দেখতে পেলাম । আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, তুই কাঁদছিস কেন? তোর উপর আমি কোন দিন রাগ করেছি? যা করেছে তোর বাবা করেছে । তুই তো আর করিস নি।
আলো কোন কথা বলল না । চুপচাপ ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো । আমি আরও একটু এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখলাম । তারপর বললাম, কাঁদিস না ।
আলো চোখ মুছলো । তারপর বলল, আমাকে চাচীর কাছে নিয়ে চল।
-এখনই ?
-হ্যা । এখনই।

আমি আর মানা করলাম না । একটা রিক্সা ভাড়া করলাম । ওকে নিয়ে এতিমখানার দিকে রওয়ানা দিলাম । রিক্সা চলতে শুরু করলে আলো নানা রকম কথা বলতে শুরু করলো । আমার সেই পুরানো দিনের কথা আবার এক ঝটকাতে মনে পড়ে গেল । যে কষ্টটা চাপা দিয়ে রেখেছিলাম সেটা বের হয়ে এল আবার ।

আলো আমার সম্পর্কে চাচাতো বোন হয় । ছোট চাচার মেয়ে। আলোর পরে আরও একটা বোন আছে । আমি আমার বাবার এক মাত্র ছেলে । ছোট বেলাতে যখন একটু বুঝতে শিখেছি তখন নিজ থেকেই খেয়াল করতাম যে আলোর বাবা অর্থ্যাৎ আমার ছোট চাচা আমাকে আর আমার মাকে ঠিক পছন্দ করেন না । কারণটা বুঝতে পেরেছি আরও কিছু সময় পরে ।

আমার মা আগে হিন্দু ছিল । আমাদের গ্রামেই তাদের বসবাস ছিল । দেখতে সুন্দর ছিল বেশ । আবার বাবার সাথেই তার প্রেম হয় এবং তাকেই সে বিয়ে করে । এলাকাতে বাবা চাচাদের বেশ প্রভাব ছিল । আমার দাদা এলাকার চেয়ারম্যান ছিল । কেউ সাহস করে কিছু বলতে পারলো না । মায়ের পরিবার মেয়েকে হারিয়ে সেই গ্রাম ছেড়ে ইন্ডিয়া চলে গেল সব কিছু বিক্রি করে । পরে আর কোন দিন মায়ের মুখ দেখেন নি । দাদা বাবার উপর অখুশি হলেও মা যখন মুসলিম হয়ে গেল তখন আর কিছু বলেন নি। কিন্তু ছোট চাচা কেন জানি ব্যাপারটা একদমই পছন্দ করেন নি । মাকে সে কোন দিন ভাবী হিসাবে মেনে নেন নি ।

সব কিছু তবুও চলছিলো । ছোট চাচা বিয়ে করলো । আমি হলাম । কয়েক বছর পরে আলোর জন্ম হল । এর ফাঁকে দাদা মারা গেল । এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল । আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আমার বাবা মারা গেলেন স্ট্রোক করে । এরপরেই ছোট চাচার ভয়ংকর রূপ দেখতে পেলাম । সে কোন দিন আমাদের আপন করে নেয় নি । আমাকে আর মাকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়েই সে বের করে দিল । আমার মা আর আমি অসহায়ের মত কত মানুষের কাছে সাহায্য চাইলাম, পুলিশের কাছে গেলাম কিন্তু কোন লাভ হল না । কেউ আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এল না । চাচা কিভাবে জানি প্রমান করেছিলো যে দাদা নাকি সব কিছু তার নামে লিখে দিয়ে গেছে । কেস যে করতে যাবো সেই সামর্থ্য আমাদের ছিল না । মায়ের পরিবার আগেই দেশ ছেড়েছে । যারা ছিল তারা মাকে কোন প্রকার সাহায্য করলো না । অবশ্য অনেক আগেই তারা মেয়ের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছিলো বাবাকে বিয়ে করার কারণে। বাধ্য হয়ে আমাদের এলাকা ছাড়তে হল ।

সেই সময়ে আমাদের চরম দুর্দশার মধ্যে কাটাতে হয়েছিলো । একটা সময়ে মা একটা এতিম খানাতে কাজ জুটিয়ে নেয় । আমিও সেখানেই থেকেছি কয়েক বছর । তারপর এসএসসির পরে আমিও টিউশনি করতে শুরু করি । বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তির পরে অবশ্য অনেকটাই সামলে নিয়েছি । এতোদিন সেভাবেই জীবন পার করে আসছিলাম । এই সময়ে আলোর সাথে আবার দেখা হল ।

এতিমখানাতে মাকে দেখে আলো কোন কথা না বলেই জড়িয়ে ধরলো । তারপর সে কী কান্না । মা যতবার বলতে যায় আরে বোকা মেয়ে কাঁদিস কেন, সে কিছুতেই শোনে না । একটা সময়ে আলোকে রেখে আমি বাইরে বের হয়ে এলাম । আলো হাওয়াই মিঠাই খুব পছন্দ করতো । কে জানে এখনও পছন্দ করে কিনা । এতিম খানার পাশেই একটা লোক হাওয়াই মিঠাই বানায় । দেখি লোকটাকে পাওয়া যায় কি না ।

পাওয়া গেল । দুটো হাওয়াই মিঠাই নিয়ে যখন আবার ফিরে এলাম দেখি দুজনের কান্নাকাটি পর্ব বন্ধ হয়েছে । মায়ের কোলে মাথা রেখে আলো বকবক করে যাচ্ছে । মা ওর চুলে হাত দিয়ে আদর করে যাচ্ছে । আমার হাতে হাওয়াই মিঠে দেখে সে ছুটে এল আমার দিকে । ছোঁ মেরে দুটি হাওয়াই মিঠাই নিয়ে নিল । এমন ভাবে ছোট বেলাতেও করতো ও ।

সন্ধ্যা সময়ে আলোকে ওর হোস্টেলের সামনে নামিয়ে দিয়ে এলাম । এরপর থেকে নিয়মিত রুটিন হয়ে গেল ওর সাথে দেখা করা । সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার এমন কি ডিনারও করতো ও আমার সাথেই । প্রায়ই মায়ের সাথে দেখা করতে যেত ।

একদিন নিয়মের ব্যতীক্রম ঘটলো । সকালবেলা সেদিন আলো আমার হলের সামনে এসে হাজির । আমাকে ফোন করে নামতে বলল। আর বলল যেন আমি একটু তৈরি হয়ে বের হই । আমাকে নিয়ে এক স্থানে যাবে ।
আমি একটু পরে বের হয়ে এলাম । দেখলাম আলো বেশ সেজে গুজেই এসেছে । কোথায় যাবে জানতে চাইলে বলল না । কেবল বলল যে চল । গেলেই দেখতে পাবে ।

আমাকে নিয়ে সে গাজীপুরের বাসে উঠলো । আমি আর বেশি প্রশ্ন করলাম না । গাজীপুরে সাফারি পার্ক আছে, জাতীয় উদ্যান আছে । সেখানেই হয়তো যাবে । ওর সাথে সময় কাটাতে আমার নিজেরও ভাল লাগে ।

কিন্তু গাজিপুর নেমে ও যখন ড্রিম ল্যান্ড রিসোর্টের কথা বলল তখন আমি খানিকটা অবাক হলাম । গাজীপুরে অনেক রিসোর্ট আছে । কেবল নামই শুনেছি কিন্তু আসা হয় নি । আসলে এতো টাকা খরচ করার মত সামর্থ্য আমার নেই । তাই আসার প্রশ্নই আসে না । কিন্তু আলো হঠাৎ এদিকে যাচ্ছে কেন?
-ঐদিকে হঠাৎ?
-ইচ্ছে হল । বেশ কিছু টাকা জমেছিলো । ভাবলাম একটু আরাম আয়েশ করে আসি ।

রিসোর্টে গিয়ে আমাদের সময়টা বেশ ভালই কাটলো । আমি ভেবেছিলাম যে সন্ধ্যা বেলা হয়তো ফিরে যাবো আমরা কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে আলো জানালো যে আজকে রাতে আমরা এখানেই থামবো । সেভাবেই ঘর বুক করা হয়েছে । এইবার আমার খানিকটা অস্বস্থি শুরু হল ।
রাতে ডিনার করার পর গান হল । রিসোর্টের নিজেস্ব শিল্পী আছে । গেস্টদের আপ্যায়ন করতে তারা ব্যবস্থা করেছে । রাত বারোটা দিকে রুমে এসে হাজির হলাম । আমার তখন কেন জানি অস্বস্থি লাগছে । আমি আলোর দিকে তাকিয়ে বলল, তুই খাটে ঘুমা আমি সোফাতে ঘুমাচ্ছি ।
আলো সাথে সাথেই বলল, কেন আমার শরীরে কি গন্ধ ?
-মানে কি?
-খাট টা এতো বড়, তুমি সোফাতে কেন শোবে?
-আলো এটা ঠিক হবে না ।
-সব সময় কেন ঠিক কাজটাই করতে হবে? তোমার সাথে তো ঠিক কাজটা করে নি । আমার বাবা তো তোমার সাথে বেঠিক কাজ করেছে তুমি কেন ঠিক কাজ করবে?

আমি ঠিক বুঝতে পারছি না আলো এসব কি বলছে ! আলো বলল, আমি চাই তুমি আমার সাথে কিছু কর।
-কি করবো?
-বুঝতে পারছো না কি করবে? বোকা তুমি?
-আলো তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ।
-হয়েছে । এটো গুলো বছর ধরে খারাপ হয়েছে । যতবার আমি ভাবি আমার আপন বাবা তোমার আর চাচীর সাথে কি অন্যায় করেছে তখন মেয়ে হিসাবে আমার নিজের উপর ঘেন্না হয় । কি যে ছোট মনে হয় নিজের কাছে । তুমি প্লিজ যেমন ইচ্ছে তেমন ভাবে ভোগ কর তারপর ছুড়ে ফেলে দাও । তোমার প্রতিশোধ নাও…..

এই বলে আলো নিজের শরীর থেকে ওড়ণাটা টান দিয়ে ছুড়ে ফেলে দিল । তারপর আস্তে আস্তে এগিয়ে এল আমার দিকে । মেয়েটির চোখ দিয়ে অনবরত পানি বের হচ্ছে । আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম । মেয়েটার জন্য হঠাৎই বুকটা আমার হাহাকার দিয়ে উঠলো । ইস কি কষ্ট আর অপরাধবোধ নিয়ে মেয়েটা এতোদিন বেঁচে আছে !

আমি এবার একটু এগিয়ে গেলাম । তারপর ওকে জড়িয়ে ধরলাম । অনুভব করলাম আমাকে জড়িয়ে ধরে আলো হুহু করে কেঁদে চলেছে আর বলছে, সুমন ভাই প্লিজ আমাকে এই অপরাধবোধ থেকে মুক্তি দাও । তোমার পায়ে পরি !
আমি এবার ওকে সামনে নিয়ে এলাম । ওর কপালে ছোট করে চুমু খেলাম । বললাম, তোর সাথে এই কাজটা করলেই তোর মুক্তি হবে? তুই কেন নিজেকে অপরাধি ভাবছিস? তুই কিছু করিস নি।
-আমার বাবা তো করেছে ।
-করুক । তার উপরে আমার কোন রাগ নেই । তোর উপরে তো রাগ থাকার প্রশ্নই আসে না । বুঝেছিস?

রাতে আসলে আর ঘুমানো হল আমাদের । কি করলাম দুজনে সেটা আর নাই বলি । সকালে ব্রেকফার্স্ট করে ঢাকায় ফিরে এলাম । এবং ঐদিনই আলোকে বিয়ে করে ফেললাম ।

আমাদের জীবনের অবশ্য খুব একটা পরিবর্তন হল না । এই ভাবে কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পরে আসল ঘটনা ঘটলো । একদিন দুপুরে হঠাৎ আলোর ফোন । এখনই সে আমাকে হলের সামনে যেতে বলল । আর বলল যে পারলে কয়েকজন যেন সাথে করে নিয়ে যাই । ওর কি কোন বিপদ হল ! কয়েকজন বন্ধু বান্ধব মিলে হাজির হতেই আসল ঘটনা টের পেলাম । শরীরের ভেতরে একটা রাগ দলা পেকে উঠলো ।
আমার ছোট চাচা এসেছে !
আলোকে সে নিয়ে যাবে । আমাকে দেখে আলো যেন ভরশা পেল । আমার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলল, সুমন আমি যাবো না বাসায়।
ছোট চাচা বলল, যাবি না মানে ! আজই যাবি । দেখি কে আটকায় আমাকে !
আমি চাচার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম, চাচা আলো যখন যেতে যাচ্ছে না ওকে আপনি নিয়ে যেতে পারবেন না ।
-আমার মেয়েকে আমি নিয়ে যাবো ।
-আপনার মেয়ে আমার বিয়ে করা বউ ।

আমি দেখলাম চাচা এই তথ্য শুনে চমকালেন না । তার মানে সে এই খবর জানে । সম্ভবত জেনেই এসেছে । চাচা আলোর হাত ধরে রেখেছিলেন । আমি সেটা ছাড়াতে গেলাম । চাচা আমাকে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলেন । আমার বন্ধুর ভেতরে রিয়াদ একটু রগ চটা । সে এগিয়ে আসতে গেল । আমি হাতের ইশারায় থামতে বললাম । তারপর চাচার দিকে তাকিয়ে বলল, চাচা এটা আপনার গ্রাম না যে যা ইচ্ছে তাই করবেন । আপনি বড় তাই আপনাকে আমি কোন ভাবেই অসম্মান করতে চাই না । দয়া করে আলোর হাত ছেড়ে দিন । ওকে আপনি কোন ভাবেই জোর করে নিয়ে যেতে পারবেন না ।
-তোকে আমি …..
এইবার দেখলাম আলো নিজের হাত এক ঝটকাতে ছাড়িয়ে নিল । আমার সামনে এসে খানিকটা চিৎকার করেই বলল, এই লোক আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে চায় আমি যেতে চাই না । আমি আমার স্বামীর সাথে থাকতে চাই ।
এইবার দেখলাম রিয়াদ সামনে চলে এল । বলল, চাচামিয়া শুনলেন তো ! এখন কেটে পড়েন । সোজা কেটে পড়েন ।

আমাদের ক্যাম্পাসে সব সময়ই পুলিশ থাকেই । চিৎকার চেঁচামিচি শুনে দেখলাম তারা এসে হাজির হল । রিয়াদই তাদের সামলে নিল । চাচা পুলিশের কাছে গিয়ে বলল, এই ছেলে আমার মেয়েকে জোর করে আটকে রেখেছে ।
পুলিশ কিছু বলবে তার আগেই রিয়াদ বলল, আপনার কি মনে হচ্ছে এই মেয়েকে আমরা আটকে রেখেছি? দেখুন এই মেয়ে আর সুমন একখন বিবাহিত । এই লোক আমার বন্ধুর বউকে জোর করে নিয়ে যেতে চায় ।
পুলিশ আরও বক্তব্য শুনলো । তারপর আলোর দিকে তাকিয়ে বলল, ইনি তোমার বাবা?
-জি?
-আর এই ছেলে তোমার স্বামী?
-জি ।
-তোমার ১৮ বছর হয়েছে?
-জি হয়েছে । সার্টিফিকেটে আমার বয়স উনিশ বছর । চাইলে দেখাতে পারি । হলেই আমার সার্টিফিকেট আছে । দেখাবো?

পুলিশ আরও কিছু কথা বললেন তারপর চাচার দিকে তাকিয়ে বলল, দেখুন আপনি চাইলে কেস করতে পারেন । কিন্তু এই কেস টিকবে না । মেয়ে সাবালিকা । মেয়ে যখন স্ব ইচ্ছেতে তার স্বামীর সাথে থাকতে চাচ্ছে এখানে আপনার কিছু করার নেই । বুঝতে পেরেছেন?

চাচা একবার পুলিশের দিকে আরেকবার আমাদের দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে রইলেন । বুঝতে পারলেন যে এখানে সে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না ।

পরিশিষ্টঃ

আলোর সাথে আমার সংসার শুরু করতে আরও বছর দুয়েক লেগে গেল । এই দুই বছরে সে একটা বারের জন্যও গ্রামে যায় নি । মাঝে মাঝেই দেখতাম ছোট চাচা ঢাকা আসতো । আলো তার সাথে দেখা পর্যন্ত করতো না । একটা আমি লক্ষ্য করতে শুরু করলাম যে চাচা কেমন যেন ভেঙ্গে পড়েছে । নিজের আদরের মেয়ে এভাবে তার তাকে ত্যাগ করেছে এটা বাবা হিসাবে সে মেনে নিয়েছে ।
আমি মাঝে মাঝে আলোকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে অন্তত কথা বল চাচার সাথে কিন্তু আলো সেটাতেও রাজি না । নিজের বাবার উপরে এমন কী এতো অভিান আমি জানি না । আমার মনে আসলে চাচার জন্য একটু করুণাই হল । আমাদের কে কিাভবে বিতাড়িত করেছিল আজকে তার নিজের মেয়ে তাকে ত্যাগ করে চলে গেল । এটাই বুঝি কর্মফল !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 68

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →