বৃষ্টির পর..

অপু তানভীর
0
(0)

চাকরির ঠিক প্রথম দিনেই যে নীলার সঙ্গে এমন একজনের দেখা হয়ে যাবে, সেটা নীলা কোনোদিন ভাবেনি। শুভ ওকে দেখেছে কিনা, কে জানে। তবে সে এই বিল্ডিংয়ের কোনো ফ্লোরে চাকরি করে সম্ভবত। নয়তো এত সকালে সে এখানে আসবে কেন? লিফটের ভেতরে একটা তীব্র অস্বস্তি নিয়েই সে দাঁড়িয়ে রইল। আজকে প্রথম দিনের যে উত্তেজনা নীলার ভেতরে কাজ করছিল, সেটা এখন এই অস্বস্তিতে রূপান্তরিত হলো। শুভ কি তাহলে সত্যিই এই অফিস বিল্ডিংয়ে চাকরি করে?
আচ্ছা, সে যদি ওর অফিসেই কাজ করে, তাহলে?
চিন্তা নীলা মাথা থেকে বের করে দিল। এই বড় বিল্ডিংয়ে অনেকগুলো অফিস রয়েছে। শুভ সম্ভবত সেগুলোর ভেতরে কোনো একটায় চাকরি করে। নিজের ভাগ্যকে সে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। দুনিয়ার এত অফিস বিল্ডিং থাকতে শুভকে এই জায়গাতেই চাকরি করতে হলো? আর ওর নিজেরও যেমন কপাল, এত চাকরি থাকতে এইখানেই চাকরি পেতে হলো?

পুরো দিন একটু উৎকণ্ঠায় কাটল নীলার। তবে একটা সময়ে শান্ত হয়ে এল মন। সে নিজেকে বোঝালো যে শুভ থাকবে শুভর জায়গায়, সে থাকবে তার জায়গায়। ওদের ভেতরে যা ছিল এক সময়ে, তা সব শেষ হয়ে গেছে। এখন সে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবার কোনো কারণ নেই। নীলা মনে মনে ঠিক করে নিল যে শুভর সঙ্গে যদি দেখাও হয়ে যায়, তবে সে এমন ভাব করবে, যেন তাকে সে চেনেই না। চেনার কোনো কারণ নেই। সেই ইন্টারমিডিয়েটের পরে ওদের আর দেখাই হয়নি।

পরের সপ্তাহটা কেটে গেল একভাবে। নীলার উত্তেজনা অনেকটাই কমে এসেছে। সে নিজের কাজে মন দিয়েছে বেশ ভালোভাবে। অফিসের পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে আস্তে আস্তে। অফিসে কয়েকজনের সঙ্গে এরই মধ্যে ভাবও হয়ে গেছে। ঠিক যখন নীলার মন থেকে শুভর সঙ্গে দেখা হওয়ার ভয়টা চলে গেল, ঠিক সেদিনই লিফটে ওর সঙ্গে শুভর দেখা হয়ে গেল। শুভ ওর দিকে একটু বিস্ময় নিয়েই তাকিয়ে ছিল। শুভর চেহারা দেখেই নীলা বুঝতে পারছিল যে ওকে এখানে দেখে সে বেশ অবাক হয়েছে।
সেদিন অফিস ছুটির পরে আবারও শুভর সঙ্গে নীলার দেখা হলো। আরও ভালো করে বললে, শুভ ওর জন্য অপেক্ষা করছিল। ওকে দেখতে পেয়ে একটু হাসল। এগিয়ে এসে বলল, তুমি এখানে কবে থেকে চাকরি করো?
নীলা যে ভেবে রেখেছিল যে কঠিনভাবে শুভর জবাব দেবে না, না চেনার ভাব করবে, সেটা নীলা করতে পারল না। নিজের ভেতরে একটা উত্তেজনার অনুভূতি সে টের পাচ্ছিল। নীলা বলল, এই বেশি দিন না। সবে মাত্র জয়েন করেছি।
-বাহ। আমাদের তাহলে আবার দেখা হয়েই গেল!
-হ্যাঁ। কিছু বলবে?
-তোমার কি তাড়া আছে?
-কেন?
-আসলে সকালে তোমাকে দেখে মনে হলো কিছু কথা বলি।
-তোমার সঙ্গে আমার আর কী কথা বলার থাকবে শুভ! আমি এখন বাসায় যাবো!

শুভ একটু থমকে গেল। তবে নিজেকে সামলে নিল সঙ্গে সঙ্গেই। বলল, আচ্ছা আচ্ছা, বুঝতে পারছি। তবে বেশি সময় নেব না, কথা দিলাম। প্লিজ!
নীলা কেন জানি আর কোনো কথা না বলে রাজি হয়ে গেল। হাজার হলেও শুভর সঙ্গে ওর একটা ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। যদিও সেই সম্পর্কটা ঠিকভাবে শেষ হয়নি, তারপরেও একটা কিছু মনের সম্পর্ক সব সময় থেকেই যায়।
অফিস বিল্ডিংয়েই একটা ক্যাফে রয়েছে। সেখানেই বসল ওরা। নীলা আসলে কিছুই ভাবতে পারছে না। ওর মনের ভেতরে পুরানো দিনের সব কথাবার্তা ভেসে বেড়াচ্ছে। নীলার কোনো ধারণা নেই যে শুভ ওর সঙ্গে ঠিক কী কথা বলবে!
তবে শুভ যখন কথা বলা শুরু করল, তখন নীলা একটু অবাকই হয়ে গেল। অতীতে ওদের সম্পর্কটা নষ্ট হওয়ার জন্য ও নিজেকে দায়ী করল, তারপর ওর কাছে ক্ষমা চাইলো। সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে শুভ বলল, ভালোবাসার মানুষটাকে যেভাবে আগলে রাখতে হয়, তার কিছুই আমি করিনি তখন। আসলে আমি তোমাকে টেকেন ফর গ্রান্টেড নিয়ে নিয়েছিলাম।
নীলা কিছু সময় কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শুভর দিকে। সত্যি বলতে কী, শুভর কথাগুলো ওর কাছে মোটেই মিথ্যা মনে হলো না। সে যে সত্যিই অনুতপ্ত, সেটা নীলা বুঝতে পারল। তারপরই কেন জানি শুভর ওপরে সেই অস্বস্তি, রাগ, অভিমান সব চলে গেল। নীলা বলল, ইটস ওকে। অনেক দিন হয়ে গেছে। তোমার ওপরে আমার কোনো রাগ নেই।

সেদিন শুভ ওকে রিকশা পর্যন্ত তুলে দিল। জানাল যে কালকে একসঙ্গে লাঞ্চ করতে চায়। নীলা কেন জানি আপত্তি করল না।
এরপর থেকে ওদের ভেতরে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠল। নীলা শুভর ভেতরে পরিবর্তনটা বেশ ভালোভাবে লক্ষ করল। সেই সময়ে শুভ একটু অ্যারোগান্ট টাইপের ছিল। নিজের বক্তব্য অন্যের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া, জোর খাটানো—সব কিছুই ছিল ভেতরে। তবে এখন শুভর কথাবার্তা একেবারে অন্যরকম হয়ে গেছে। হয়তো বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভেতরের ভুল সে বুঝতে পেরেছে। তবে আসল কারণটা নীলা আরও কয়েকদিন পরে জানতে পারল। সেদিনও দুপুরের লাঞ্চে ওরা তখনই নীলা জানতে চাইলো।
-তোমার ভেতরে এত পরিবর্তন কীভাবে এল?
-আসলে ……।
শুভ কিছু সময় থামল। নীলার মনে হলো যে প্রশ্নটা করা তার উচিত হয়নি। শুভর মুখ দেখেই মনে হচ্ছে যেন তার কোনো কষ্টের স্মৃতি মনে পড়ে গেছে। নীলা তাড়াতাড়ি করে বলল, তুমি বলতে না চাইলে বলার দরকার নেই।
-না, ঠিক আছে। আমি তোমাকে অন্তত বলি।
শুভ একটা জোরে দম নিল। তারপর আবার বলা শুরু করল, তুমি আমাকে যেভাবে চিনতে, আমার সেইরকম হওয়ার পেছনে আমার বাবা-মায়ের বেশ হাত ছিল। বিশেষ করে আমার মায়ের। তিনি আমাকে এমনভাবে আগলে রাখতেন, আমার মনে হতো যে আমি আসলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। আসলে মাকেও দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমার জন্মের আগে মায়ের দুটো মিসক্যারেজ হয়েছিল। তাই আমাকে খুব আগলে রাখতেন। আমার কোনো দোষ তার কাছে দোষ মনে হতো না। কিন্তু আমার মা মারা যাওয়ার পরে…
এই খবরটা নীলাকে একটা বিস্মিত করল। সে কোনোভাবেই জানতো না যে শুভর মা মারা গেছেন। নীলা বলল, আমি জানতাম না। আই অ্যাম সরি!
-সরি হওয়ার কিছু নেই। তোমার জানার কোনো উপায় ছিল না। মা মারা যাওয়ার পরে বাবা যেন কেমন হয়ে গেলেন। কয়েকদিন পরে আমি টের পেলাম যে আমার সবকিছু মেনে নেওয়ার মানুষ আসলে কেউ নেই। কয়েকবার যখন আমার নামে রিপোর্ট এল বাসায়, বাবা তখন খুব রেগে গেলেন। একবার আমাকে বাসা থেকে বেরই করে দিলেন। সেদিন সারারাত আমি বাসার সামনে রাস্তায় বসে ছিলাম। সেদিনই আসলে টের পেলাম যে আমি যদি আমার আচরণ না বদলাই, তাহলে কেউ আমাকে মেনে নেবে না, আমার সঙ্গে কেউ আর মিশবে না। তারপর থেকেই নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করেছি। যাদের সঙ্গে আগে খারাপ ব্যবহার করেছি, সবাইকে সরি বলেছি।
শুভ নিজের গল্প বলে থামল। নীলার এই প্রথমবারের মতো শুভর জন্য খারাপ লাগল। সে শুভর হাতের ওপর নিজের হাতটা রেখে বলল, গুড টু নো। তোমার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে আমার ভালো লাগছে।

পরের মাসে নীলার সামনে আরেকটা ঘটনা এসে হাজির হলো। ওদের অফিসের কয়েকজন মিলে শুক্রবার গাজিপুরের রিসোর্টে যাওয়ার প্রোগ্রাম করল। সবাই যাবে তাদের পার্টনার নিয়ে। নীলাকে যখন ওরা বলল যে সে যাবে কিনা, তখন প্রথমে নীলা যেতে চাইল না, কারণ তার না আছে স্বামী, আর না আছে বয়ফ্রেন্ড। তখন কলিগদের ভেতর থেকে একজন বলল, কেন, তোমার ঐ দশ তলার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে চল।
নীলা আর শুভকে একসঙ্গে লাঞ্চ করতে কিংবা গল্প করতে ওদের অফিসের অনেকেই দেখেছে। নীলার কাছে জানতে চাইলে নীলা তাদের বলেছে যে শুভর সঙ্গে সে স্কুল আর কলেজে পড়েছে। এখানে এসে অনেকদিন পরে দেখা হয়েছে। নীলা বলল, আরে, ও আমার বয়ফ্রেন্ড না।
-আরে, তাতে কী! আমরা সবাই কাপল আকারে যাচ্ছি, ওকে টেম্পোরারি ভাবে পার্টনার করে নিলে চল। কোনো সমস্যা নেই।

নীলা কিছু সময় কেবল ভাবল। তারপর বলল, আচ্ছা, দেখি ওকে বলে। ও যদি রাজি হয়, তবে হবে।
নীলার যদিও যেতে ইচ্ছেই করছিল। ঘোরাঘুরি করতে ওর ভালোই লাগে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে যখনই সুযোগ পেত, তখনই সে বন্ধুদের সঙ্গে এদিক-ওদিক চলে যেত। তাই অফিসে এসেও এই সুযোগ সে হাতছাড়া করতে চাইল না।
দুপুরে যখন নীলা শুভকে ব্যাপারটা জানাল, তখন শুভ একটু অবাকই হলো। সে বলল, তুমি চাও আমি তোমার সঙ্গে যাই?
-মানে হ্যাঁ, ওরা সবাই যাচ্ছে ওদের পার্টনার নিয়ে, তুমি চল আমার সঙ্গে। মানে, ঢাকায় আমার এইরকম কেউ নেই আসলে, যাকে নিয়ে আমি যেতে পারি।
নীলা দেখল, শুভর চোখে বেশ ভালো রকমের বিস্ময় দেখা দিয়েছে। সে নীলার কাছ থেকে এই কথা আশা করেনি। নীলাও যে কেন এই কথাটা শুভকে বলল, সেটা নীলা নিজেও জানে না। যদিও বলার পরে একবার মনেও হয়েছিল যে হয়তো সে ভুল করে ফেলেছে। তবে একবার যখন বলে ফেলেছে, সেই কথা আর ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই। তার ওপরে শুভর চোখে-মুখে একটা আনন্দের আভা দেখে নীলার ভালো লাগছিল।
নির্ধারিত দিনে যখন সবাই এসে হাজির হলো, আগে থেকে ঠিক করা একটা মাইক্রোবাসে করে রওনা দেওয়া হলো। রাস্তা ফাঁকা হওয়ার কারণে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় লাগল না। পুরো দিনটা আনন্দে কাটল সবার। নীলার অনেক দিন পরে ভালো লাগছিল।
পরিকল্পনা ছিল যে সন্ধ্যার দিকেই সবাই আবার ফিরে আসবে। তবে ঝামেলা বাঁধল ফিরে আসার সময়ে। তীব্র ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলো। একটা বৃষ্টির ফলে অনেক অংশেই পানি উঠে গেল। রিসোর্ট থেকে জানানো হলো যে এই অবস্থায় আসলে ঢাকায় ফেরার কোনো উপায় নেই। শেষে বাধ্য হয়েই সবাই রাতে রিসোর্টে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হলো। ভাগ্য ভালো যে সবাই সঙ্গে করে একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে এসেছিল। রিসোর্টের সুইমিং পুলে গোসলের জন্যই এমনটা করা হয়েছিল।

রাত যখন এগারোটা, তখন বৃষ্টি কমল। ওরা তখন সবাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়েছে। সন্ধ্যা থেকেই সবাই আড্ডা দিয়ে এসেছে একটানা। তাই রাতের খাওয়ার পরে আর বেশি গল্প করার ইচ্ছে কারো ছিল না। দুটো রুম নেওয়া হয়েছিল—ছেলেদের জন্য একটা, মেয়েদের জন্য একটা। নীলার কেন জানি এত তাড়াতাড়ি শুয়ে মন চাইল না। কিছু সময় বিছানায় শুয়ে থেকেই সে উঠে পড়ল, ঘর ছেড়ে যখন বারান্দায় এল, তখনই শুভকে দেখতে পেল। শুভ প্যান্ট গুটিয়ে রিসোর্টের ঘাসের ওপরে হাঁটাহাঁটি করছে। অনেক রিসোর্টের অনেক জায়গাতেই পানি জমে গেছে। সেই পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটছে। এই দৃশ্যটা নীলার কাছে পরিচিত। নীলা শুভর এই পছন্দের কথা জানে। যখন তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, তখন থেকেই জানতো যে শুভ এইভাবে পানিতে হাঁটতে পছন্দ করে। বিশেষ করে বৃষ্টির পরপরই সে বাইরে বের হয়ে যেত। হাফপ্যান্ট পরে বা প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটাহাঁটি করত। নীলা নিজেও অনেকটা দিন শুভর সঙ্গে এইভাবে বৃষ্টির পরে হেঁটেছে। সেই সময়ে নীলা আর ওদের বাসার খুব দূরত্ব ছিল না। তাই বৃষ্টি হলে প্রায়ই শুভ চলে আসতো নীলাদের বাসার পেছনে। বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় যদি বৃষ্টি হতো, তাহলে তো আর কথাই নেই। নীলাও যখন পাশের বাসার বান্ধবীর কাছে যাচ্ছি বলে বের হয়ে আসতো। দুজন জমে থাকা পানির রাস্তার ওপরে হাঁটাহাঁটি করত। নীলার ভালো লাগতো হাঁটতে। এই হাঁটার সময়ই শুভ যেন অন্যরকম মানুষ হয়ে যেত। মাঝে মাঝে ওরা হাত ধরেও হাঁটতো।

নীলাও নিজে নেমে এল বারান্দা থেকে। শুভ ওর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, ঘুমাওনি?
নীলা বলল, এত তাড়াতাড়ি কী ঘুম আসে। ঢাকায় আমার একটু দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস। বিশেষ করে শুয়ে শুয়ে একটু বই না পড়লে ভালো লাগে না। আজকে এখানে রাতে থাকতে হবে জানলে একটা বই নিয়ে আসতাম সঙ্গে করে। তা, তোমার এই অভ্যাস এখনও যায়নি।
শুভ বলল, মনে আছে তোমার?
-কেন থাকবে না। আমিও হেঁটেছি!
-আজকে হাঁটবে?

শুভর কণ্ঠে এমন একটা আকুলতা ছিল, সেটা নীলার বুকের ভেতরে গিয়ে যেন বিঁধল। কী তীব্র সেই আহ্বান। নীলার মনে হলো যে কোনোভাবেই এই আহ্বান সে উপেক্ষা করতে পারবে না। উপেক্ষা করা সম্ভবও নয়।
হাঁটতে হাঁটতে ওরা রিসোর্ট থেকে বের হয়ে এল। এতটা সময় বৃষ্টি হলেও এখন একেবারে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। আকাশের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে যেন অনেক বৃষ্টিই হয়নি। বড় চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থাকলে একটু নেশার মতো মনে হয়। নীলার কাছে সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো মনে হলো। নীলার মনে হলো যেন শুভর সঙ্গে তার সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায়নি। শুভ এখনও তার সেই প্রেমিকই রয়েছে। দুজন পাশাপাশি হাঁটল অনেকটা। রাস্তায় অনেক জায়গায় পানি উঠে আছে। শুভ সেগুলো পা মাড়িয়ে হাঁটছে। নীলাও তাই করছে।
-তুমি আর কাউকে ভালোবাসোনি কেন, নীলা?
প্রশ্নটা হঠাৎ করেই আসতেই নীলা যেন একটু থতমত খেয়ে গেল। নীলা যে শুভর পরে আর কারো সঙ্গে কোনো সম্পর্ক করেনি, সেটা শুভ জানে। এবং নীলাও জানে যে শুভর আর কোনো প্রেমিকা ছিল না।
-তুমিও তো কাউকে ভালোবাসোনি আর!
-আমার কারণটা তো তুমি জানো, তাই না? কিন্তু তোমার কারণটা আমি জানি না।

শুভ কিছুটা সময় চুপ করে রইলো। দুজনেই একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো কেবল। শুভ এরপর বলল, যেদিন থেকে আমি প্রাক্তন প্রেমিকার অন্য ভালোবাসার মানুষ হয়েছে, এমন সংবাদ পেলে কারোই ভালো লাগার কথা না। তবে যখন আবারও তোমার সঙ্গে আমার দেখা হলো, তখন আমি খুব করে চেয়েছিলাম যে তোমার যেন ভালোবাসার কেউ থাকুক। এতগুলো বছর যেন একা না থাকো!
-কেন? এমন কেন চেয়েছিলে?
-কারণ, যদি কেউ থাকত, তখন আমি মনে মনে এই ভেবে শান্তি পেতাম যে আমার কারণে তোমাকে কষ্ট পেতে হয়নি। কিন্তু যখন থেকে আমি জানলাম যে তুমি আর কাউকে ভালোবাসোনি, তখন মনের ভেতরে একটা কষ্ট এসে জড়ো হলো। মনে হলো যে, যদি আমি তোমার সঙ্গে ওমন আচরণ না করতাম, তবে বুঝি আজকে তোমার জীবন অন্যরকম হতো। আমার সঙ্গে তোমার প্রেমটা না হলে আজকে ঠিক তোমার কেউ না কেউ থাকত। আমিই যেন দায়ী! এই চিন্তা থেকে আমি কখনোই নিজেকে বের করতে পারিনি। নিজেকে আমার বড় বেশি অপরাধী মনে হতো, হয়! বারবার কেবল মনে হয়, যদি আমি সেই আগের সময়টা চলে যেতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমি সব ঠিক করে দিতে পারতাম। তোমার সঙ্গে ঐ আচরণ আমি আর করতাম না।
নীলা একভাবে তাকিয়ে রইলো শুভর দিকে। শুভর যে এই কথাগুলো মন থেকে বলছে, সে বুঝতে নীলার অসুবিধা হলো না। নীলার মনের ভেতরে যে কী হলো, সেটা সে নিজেও জানে না। সে এক প্রকার দৌড়েই গেল শুভর দিকে। তারপর শুভকে জড়িয়ে ধরল। মনে হলো যেন কতশত বছর সে এভাবে শুভকে জড়িয়ে ধরেনি। কোনো কথা বলতে হলো না। সময় যেন ওদের সামনে থমকে গেছে। নীলার মনে হলো ওরা সেই আগের সময়ে চলে গেছে। সেই অতীতে, বৃষ্টির পরে যখন ওরা একসঙ্গে হেঁটে বেড়াতো, ঠিক সেই সময়ের মতো!

রাতের বেলা ওরা আর রুমে ফিরে এল না। রিসোর্টের পাশেই গ্রামের রাস্তা, ধানক্ষেত। সেই ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। যদিও বৃষ্টির কারণে রাস্তাটা একটু কাদায় জমে রয়েছে, তবে দুজনের কারোই সেদিকে খেয়াল রইলো না। ওদের দুজনের সামনেই তখন নতুন দিনের স্বপ্ন। সেই ভোর রাত থেকেই সেই স্বপ্নের আবার পুনর্জাগরণ হলো।

আমার ফেসবুক আইডিটি ডিজেবল হয়ে যাওয়ার কারণে এর সাথে যুক্ত পেইজটিও গায়েব হয়ে গেছে। এই কারণে ফেসবুকে আপনারা পেইজটি খুজে পাচ্ছেন না। চেষ্টা চলছে পেইজটি ফিরিয়ে আনার। যদি সম্ভব না হয় তবে এই ওয়েবসাইট তো রইলো। এখন থেকেই গল্প পড়তে পারবেন। এছাড়া হোয়াটসএপ আর টেলিগ্রাম চ্যানেল তো আছেই।

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

অপু তানভীরের নতুন অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে

বইটি সংগ্রহ করতে পারেন ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে থেকে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *