আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে এসেছি। নাহ, কথাটা সম্ভবত বলা ভুল হল। মেয়ের বাবার কাছ থেকে ত্রিশ লাখ টাকা যৌতুক নেওয়ার বিনিময়ে তার মেয়েকে বিয়ে করার কথা পাঁকাপাকি করতে এসছি। বর্তমান পরিস্থিতিকে এক লাইনে এর থেকে ভাল ভাবে আর প্রকাশ করা সম্ভব না মনে হয়।
নিজেকে খানিকটা ছোট মনে হচ্ছে। হবু শ্বশুরের কাছ টাকা নিয়ে চাকরিতে ঘুষ দিতে হবে। সেই চাকরি হলে তার মেয়েকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারব। এই জন্য মেয়ের বাবাও এই যৌতুক দিতে রাজি হয়েছে।
সব কথা খুলেই বলা যাক। সম্প্রতি চাকরি পরীক্ষায় আমি বেশ ভাল একটা সরকারি চাকরি প্রায় পেয়ে গেছি। একবার চাকরিটা হলেই বাকি জীবন আমার আর পিছনে তাকাতে হবে না। আমি কেন আমার ছেলে মেয়ে নাতি নাতনিদেরও আর কিছু করতে হবে না, এমনই এক সোঁনার হরিণ এই চাকরি। এই চাকরির লিখিত আর ভাইভা পরীক্ষা বেশ ভাল ভাবেই পার করেছি। তবে পোস্টের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে এই চাকরিটা হাতে পাওয়া একটু কঠিন। সব কিছুর উপায় থাকে। চাকরির দাতাদের ভেতর থেকেই একজন আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। সে জানিয়েছে যে ৩০ লাখ টাকা যদি যোগার করতে পারি তবে এই চাকরিটা আমার হবে। আর টাকার পরিমানটা বেশি কারণ এই চাকরিতে উবড়ি আয় অনেক বেশি। তাই এই ত্রিশ লাখ তুলতে আমার কোনো সময় লাগবে না।
বাসায় বলতে একটু সঙ্কোচ হচ্ছিল। সারা জীবন সৎভাবে জীবন যাপন করে আসা আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়ে আমি এই কাজ কিভাবে করব। আমার মনে হয়েছিল যে এই কথা বলার পর হয়তো বাসায় আমাকে বেশ ভাল ভাবেই তিরস্কার করা হবে কিন্তু আমি অবাক হয়ে খেয়াল করে দেখলাম যে আমার পুরো পরিবার টাকার যোগার করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে ধারের জন্য ফোন করতে লাগল। আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ শুরু হল। এক সময়ে ঠিক হল যে আমাদের গ্রামে যে কিছু জমি আছে সেই জমি বিক্রি করে দেওয়া হবে। তাতে কিছু টাকা আসবে। ঠিক সেই সময়েই নীতুর বাবা অর্থ্যাৎ আমার হবু শ্বশুরমশাই আমার বাবার সাথে যোগাযোগ করলেন। তিনি আমাদের গ্রামেরই লোক। তার কাছেই জমি বিক্রি করার কথা চলছিল। আমার ছোটচাচা ব্যাপারটা দেখছিলেন। সেখান থেকেই তিনি এই আমার এই চাকরির ব্যাপারটা এবং চাকরিতে টাকা লাগার ব্যাপারটা জানতে পেরেছেন। তখন তিনি একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন।
প্রস্তাবটা হচ্ছে চাকরিতে যে ত্রিশ লাখ টাকা লাগবে সেই টাকাটা তিনি আমাকে দিবেন। এবং এই টাকাটা তিনি আমাকে উপহার হিসাবে দিবেন। এর বিনিময়ে আমাকে তার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে।
আমাদের মত ছাপোশা মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে ৩০ লাখ অনেক টাকা। আর সত্যি বলতে কি জমিজমা বিক্রি করে এবং ধার দেনা করেও ত্রিশ লাখ টাকা যোগার হবে বলে মনে হচ্ছিল না। আমার বাবা মোটেই এই সুযোগ হাত ছাড়া করলেন না। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়ে গেল। আজকেই সেই আনুষ্ঠানিকতা করতে আমরা সবাই এসেছি মেয়ের বাড়িতে। আজকেই আংটি বদল হয়ে যাবে। এর কদিন পরেই আমাদের বিয়ে হবে।
চারিদিকে একটা আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি বসার ঘরের এক কোণে চুপচাপ বসে আছি। নিজের কাছে কেন জানি খুব অস্বস্তি লাগছে। এটাই আমার প্রথম মেয়ে দেখতে আসা। আমার এখনও বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই ছিল না। কিন্তু পরিস্থির কারণে সেটাই করতে হচ্ছে।
আরও কিছু সময়ে অপেক্ষা করার পরে আমি নীতুকে দেখতে পেলাম। সে নীল রংয়ের একটা সেলোয়ার কামিজ পরে, হাতে চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকল। আমার দিকে একবার চোখ পড়তেই চোখ সরিয়ে নিল। আর তখনই আমার মনে হল যে নীতু এই বিয়েতে রাজি নয়। ওর চোখে মুখে একটা বিষাদ দেখতে পেলাম না।
নীতুর কি কোনো প্রেমিক আছে? সেই প্রেমিক হয়তো নীতুর সাথেই পড়ে। এখনও হয়তো পড়াশোনা শেষ হয় নি নীতুর মতই। এরই মাঝে আমি উড়ে এসে বসলাম। নীতু ঢাকাতেই পড়াশোনা করে, এখনও পড়াশোনা শেষ হয় নি, তাই তার প্রেমিক থাকা অস্বাভাবিক না।
বড়রা কথা বলতে থাকল। আমি তখন নীতুর দিকেই তাকিয়ে রইলাম। ট্রে টেবিলের উপরে রেখে সে সোফার উপরে মাথা নিচু করে বসে রইলো। নীতুর বাবা এদিকে মেয়ের সুনাম করতে ব্যস্ত। নীতু কী নিয়ে পড়াশোনা করছে, কী কী রান্না পারে ঘরের কাজ কেমন পারে এইসব! আমার অবশ্য সেসব কান দিয়ে ঢুকছে না। আমি কেবল নীতুর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
তারপর এক সময়ে আমার ভেতরে কী হল জানি না আমি বললাম, আপনাদের কারো আপত্তি না থাকলে আমি নীতুর সাথে একটু কথা বলতে চাই।
বাবার দিকে চোখ যেতেই দেখতে পেলাম তিনি একটু যেন বিরক্ত হলেন। বড়রা কথা বলছে, বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, আজকে কেবল আনুষ্ঠানিকতা বাকি। এখন আবার আলাদা করে কথা বলার দরকার কী? দেখলাম আমার ছোট চাচা একটু হেসে বলল, হ্যা হ্যা অবশ্য ছেলে মেয়েদের জীবন। তাদের অবশ্যই প্রাইভেসী দরকার।
নীতুর বাবা বললেন, তা ঠিক। নীতু সাব্বিরকে তুই তোর ঘরে নিয়ে যা। চা পাঠিয়ে দিচ্ছি ওখানে।
নীতুকে খুব বেশি প্রসন্ন মনে হল না। সে যেমন মুখ করে এসেছিল সেমন ভাবে উঠে দাঁড়াল। আমার চোখে একবার তাকিয়ে তারপর হাটতে শুরু করল। আমি তার পিছু নিলাম।
নীতুর ঘরটা যেমন আশা করেছিলাম তেমনই। আমি খাটের উপর বসলাম। নীতুর ওর পড়ার টেবিলের চেয়ারের উপরে বসল কিছুটা আড়ষ্ট ভাবে। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু সময় অতিবাহিত করলাম কেবল। আসলে আমি নিজেও জানি না যে ওর সাথে একা আমি কী কথা বলতে এসেছি আর কেনই বা এসেছি। তবে প্রথম কথাটা মুখ থেকে আপনা আপনিই বের হয়ে গেল আমার, বললাম, আপনি বিয়েতে রাজি না?
নীতু এই প্রশ্নের জবাব দিল না। আমার চোখের দিকে তাকাল কেমন। সেই তাকানোর ভাব দেখেই আমি বুঝে গেলাম যে নীতু এই বিয়েতে রাজি না।
আমি কিছুটা অস্বস্তিবোধ নিয়েই বললাম, আপনার কী পছন্দের কেউ আছে? মানে এমন কেউ যাকে আপনি ভালোবাসেন?
নীতু এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, থাকলে কী করবেন? বিয়ে করবেন না?
আসলেই তো?
থাকলে কী করব? বিয়ে করব না? বিয়ে না করে চলে যাবো?
আমি বললাম, আপনার এমন কেউ থাকলে প্লিজ আমাকে বলুন। আমি কোন ভাবেই চাই না যে আমার কারণে এমন কিছু হোক। আমি না করে দিবো।
-সত্যিই দিবেন?
-জ্বী!
নীতু একটু হাসল। ওর হাসিতে একটু বিদ্রুপের আভাস পেলাম আমি। নীতু বলল, আপনার ভয় নেই। আমার এমন কেউ নেই। আমি কাউকে আমার মন দেই নি। কারো সাথে এই টাইপের কোন সম্পর্ক আমার নেই।
-তাহলে আপনি বিয়েতে রাজি না কেন?
-আপনি জানেন না কেন আমি বিয়েতে রাজি না?
এই বলেই নীতু আমার দিকে তীব্র চোখে তাকাল। সেই তাকানোর ধরণ দেখেই আমি ভেতরে খানিকটা কুকড়ে গেলাম যেন। আমার কাছে মনে হল নীতু তীব্র ভাবে অপমানিতবোধ করছে। কাউকে যদি আপনি ছোট করেন তখন তার চেহারায় যে একটা অসহায়ত্বের ভাব ফুটে ওঠে সেই চেহারা নিয়ে নীতু আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
নীতু আমার দিকে তাকিয়ে বলল, মেয়ে মানুষ হয়ে জন্মালে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। মেনে নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়। তাই না? আপনার আর কিছু জানার আছে?
আমি বললাম, আপনি চাইলে আমি সত্যিই বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিব।
-কী লাভ বলুন! আপনি না হলে অন্য কেউ আসবে! যেখানে আমার আব্বাই আমাকে বিক্রি করে দিচ্ছে আপনি কেন কিনবেন না বলুন?
ঘরের ভেতরে কিছু সময় নিরবতা কাজ করল। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম তখন দেখলাম একজন ট্রে হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকল।
আমি চা হাতে তুলে নিলাম। ঘরের পরিবেশ একটু যেন ভারি হয়ে গেছে। আমি প্রসঙ্গ বদলার জন্য বললাম, আপনি দেখি অনেক বই পড়েন! অপু তানভীরের বইও দেখি আছে আপনার কাছে! পড়েছেন?
নীতু আমার কাছে তাকাল। বলল, হ্যা পড়েছি। এই লেখক এই একটু বেশিই পজেটিভ।
-হ্যা। তার কাছে মনে হয় ভালোবাসা দিয়েই বুঝি বিশ্ব জগত জয় করা যায়!
-কিন্ত বাস্তবে এসব হয় না। তাই তো ? তার গল্পের যে দিকটা আমার সব থেকে প্রিয় সেটা হচ্ছে সে মেয়েদের ইচ্ছের ব্যাপারটা খুব বড় করে দেখে। কিন্তু বাস্তব জীবনে সে নিজেও এমন কিনা সন্দেহ। বাস্তবে কেউ এমন হতেই পারে না।
দুই
আবার যখন আমরা বসার ঘরে ফিরে এলাম তখন দেখলাম সবাই মোটামুটি আংটি বদলের জন্য প্রস্তুত। টেবিলের উপরে দুটো আংটির বক্স দেখতে পেলাম যার একটা আমরা নিয়ে এসেছি। আমি নিজের ভেতরে একটা তীব্র উত্তেজনা বোধ করতে লাগলাম। বারবার মনে হল এই কাজটা এখন আমার করার দরকার নেই। জীবন মোটেও কোন গল্প না।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলাম না। আমি একটু গলা খায়েরী দিয়ে বললাম, আমার কিছু বলার ছিল।
সবার চোখ আমার উপরে এসে পড়ল। আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে নীতুর দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে নেই। সে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বলল, আমার এই বিয়ের ব্যাপারটা দুটো শর্ত আছে।
আমি আমার বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি তার চেহারায় একটা পরিবর্তন আসা শুরু করেছে। নীতুর বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনিও খানিকটা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি আবার নীতুর দিকে তাকালাম। সে তখনও আমার দিকে তাকায় নি। আমি নীতুর বাবার দিকে তাকালাম। তারপর বললাম, আমার প্রথম শর্ত হচ্ছে, আঙ্কেল আপনি যে টাকাটা আমাকে দিতে চেয়েছেন আমার চাকরির জন্য, এই টাকা আমি নিব না। এতে যদি আমার চাকরি না হয় না হবে।
এবার দেখলাম নীতু আমার দিকে চোখ তুলে তাকাল। ঘরের প্রতিটা চোখ আমার দিকে। আমি আবার বললাম, নীতু যদি স্ব-ইচ্ছে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয় তবেই এই বিয়ে হবে। নয়তো না।
ঘরের ভেতরে পিন পতন নিরবতা। কেউ কোন কথা বলছে না। আমার বাবা আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছেন। নীতুর বাবা আসলে কী বলবেন সেটা সম্ভব বুঝতে পারছেন না। তবে নীতুকে দেখলাম আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে।
সবাইকে অবাক করে নীতু বলল, যদি বলি যে আপনাকে বিয়ে করতে রাজি না, তবে কি চলে যাবেন?
-হ্যা। চলে যাবো।
-আচ্ছা, তাহলে আমি এই বিয়েতে এখন রাজি না।
তিন
আমার বাবা সেদিন পর থেকে আমার সাথে মোটামুটি কথা বলা একেবারে বন্ধ করে দিলেন। সপ্তাহ খানেক পরে চাকরির রেজাল্টে যথারীতি চাকরিটা হল না। বউ এবং চাকরি দুইটো হারালাম। আম ছালা দুটো গেল।
জীবন আসলেই অপু তানভীরের গল্প না। গল্প হলে নীতু নিশ্চিত ভাবেই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যেত আর দেখা যেত আমার চাকরিটাও হয়ে গেছে।
ঢাকায় ফিরে এসে আবারও পড়ালেখায় মন দিলাম। তবে মনের ভেতরে কেন জানি আমার কোন আফসোস ছিল না। সত্যি বলতে কি নীতুর প্রেমে আমি পড়ি নি। একদিন আমি মাত্র দেখেছি ওকে। এর বাইরে আর কিছুই ছিল না। কিন্তু যদি আমি নীতুর বাবার থেকে টাকা নিয়ে চাকরি পেয়ে ওকে বিয়ে করতাম তাহলে সারা জীবন আমি আমার নিজের কাছে ছোট হয়ে থাকতাম। নীতুর মনেও এই ভাবনা থাকত আজীবন যে তাকে আমি কেবল টাকার জন্যই বিয়ে করেছি। এই ভাবনা টা আমাকে মোটেই শান্তি দিত না কোনোদিন।
মাস দুয়েক পরে আরেকটা চাকরি ইনটাভিউতে ডাক এল। এটা অবশ্য আগেরটার মত সরকারী না। তবে চাকরি শুরুর ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকের এমটিও পোস্টও বেশ। আমি প্রস্তুতি নিয়ে যখন ব্যাংকটির হেড অফিসে গিয়ে হাজির হলাম তখন তীব্র বিস্ময়ের একটা ঘটনা ঘটল। আমি তাকিয়ে দেখি নীতু সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম যে আমার জন্যই অপেক্ষা করছে।
-আপনি এখানে?
-আপনাকে শুভ কামনা জানাতে এলাম?
-আপনি কিভাবে জানেন যে আজকে আমার এখানে ইন্টারভিউ আছে?
-চাইলেই জানা যায়।
নীতু একটু থেমে বলল, আপনি মাস খানেক আগে যখন এটার লিখিত পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন তখনও আমি সেখানে ছিলাম।
আমি তীব্র বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম নীতুর দিকে। আমি যে কী বলব বা আমার কী বলা উচিত সেটা আমি বুঝতে পারলাম না। কেবল একভাবে নীতুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। নীতু হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
নীতু বলল, এখন কিছু বলতে হবে না। ভেতরে যান। আত্মবিশ্বাসের সাথে ভাইভা দিন। আমি এখানে অপেক্ষা করছি।
-এতো সময় অপেক্ষা করব?
নীতু এবার ঠিক গল্পের মত করে কথাটা বলল, দরকার হয়ে সারাজীবন অপেক্ষা করব।
ভাইভা শেষ করে আমি যখন আবার বাইরে বের হয়ে এলাম দেখলাম নীতু রাস্তার আইল্যান্ডের উপরে চুপচাপ বসে বসে ফোন টিপছে। পাশে কয়েকটা ওয়ান টাইম কফির কাপ। এখানে বসে বসেই এই কফি শেষ করেছে। আমাকে আসতে দেখেই হাসিমুখে উঠে এল। তারপর বলল, কেমন হল ভাইভা?
-জানি না কেমন হয়েছে। আসলে আমি সারাটা সময় কেবল তোমার কথা ভাবছিলাম। মনে হচ্ছিল যে এই সব তুচ্ছ জিনিস পাওয়া না পাওয়ায় কিছু যায় আসে না। আমি সব থেকে বড় পাওয়াটা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছি।
নীতু বলল, ইস ঢং! বাবা পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছে, আপনার মত গাধার সাথে আমার বিয়ে দিবে না। যে এতো বড় সুযোগ হাতছাড়া করে, তাকে বিয়ে করার কোনো মানে নেই।
-আচ্ছা তুমি কী বলেছো?
নীতু এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে হাসল।
নীতুর এই হাসিতেই অনেক কিছু লুকিয়ে ছিল।
পুরো দুপুরে এক সাথে লাঞ্চ করে আমরা একেবারে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক সাথে রইলাম। তারপর নীতুকে ওর হলের সামনে নামিয়ে দিলাম। যখন ফিরে আসছিলাম তখন বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছিলাম। প্রতিবারই দেখলাম সে আমার গেটের কাছে দাড়িয়ে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এতোদুর থেকে তার চোখ আমি দেখতে পাচ্ছি না তবে আমি নিশ্চিত সেই চোখে আমার জন্য অসম্ভব ভালোবাসা রয়েছে। সেদিন আমি আমি বিয়েতে রাজি হয়ে যেতাম তাহলে এই ভালোবাসা আমি কোন দিন দেখেতে পেতাম না।
বিঃদ্রঃ জীবন অপু তানভীরের গল্প নয়।