অনুরূপা

অপু তানভীর
4.3
(23)

অনুরূপা কথা বলতে পারত না। কেবল কালো দীঘির মত গভীর চোখে সে তাকিয়ে থাকত। আমি প্রথম যেদিন অনুরূপাকে দেখেছিলাম আমার মনে হয়েছিল যে এতো মায়াময় চোখ বুঝি আর কারো হতেই পারে না। আমি যখন প্রথম এই কথা না বলতে পারার ব্যাপারটা জানতে পারলাম তখন মনের ভেতরে যে তীব্র একটা হাহাকার জন্মেছিল সেটা বলে বোঝাতে পারব না। বারবার কেমন মনে হয়েছিল এতো চমৎকার একটা মেয়ে কেন কথা বলতে পারবে না? কেন কেন কেন?
অনুরূপা যদিও জন্ম থেকে এমন ছিল না। ছোট বেলাতে নাকি সে কথাও বলত। তারপর গলাতে কী জানি একটা ইংফেকশন হয়েছিল তারপরই নাকি ওর ভোকালকর্ডে সমস্যা দেখা দেয়! তারপর থেকেই অনুরূপা ঠিক কথা বলতে পারে না।
অনুরূপার আরেকটা গুণ ছিল। সে অসম্ভব ভাল ছবি আঁকতে পারত। আমাদের অফিসের গ্রাফিক্স ডিজাইনার সে। সফটওয়্যার ছাড়াও সে হাতে খুবই চমৎকার ছবি আঁকে। এরই ভেতরে বেশ কয়েকবার ছবি এক্সিভিশনও হয়েছে। আমাদের অফিসের দেয়ালে তার আঁকা বেশ কিছু ছবি রয়েছে।
অনুরূপার সাথে আমার প্রথম সরাসরি কথা হয় ওর একটা এক্সিবিশনেই। আমি তখনও আসলে জানতাম না যে অনুরূপার এক্সিবিশন চলছে। সেদিন শুক্রবারে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে ঘুরতে ধানমণ্ডির একটা আর্ট গ্যালারিতে ঢুকে পড়েছিলাম। সেখানেই কয়েকজন শিল্পীর বেশ কিছু ছবি প্রদর্শিত হচ্ছিল। তখনই আমাকে অনুরূপাকে দেখতে পেলাম। সেও আমাকে দেখতে পেল। আমি ভেবেছিলাম বুঝি সে আমাকে ঠিক চেনে না। কারণ আমার আর ওর ডিপার্টমেন্ট আলাদা। আমার খুব একটা যাওয়া লাগে না ওর কাছে।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়েই অনুরূপা হাত নাড়ল। আমি ওখানে গিয়েছি দেখে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি হয়েছে খুব। আমি কাছে গিয়ে হাই বললাম, আমার বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। সেদিনই মূলত আমি জানতে পেরেছিলাম যে অনুরূপা কেবল কম্পিউটার গ্রাফিক্সে নয়, হাতে খুব ভাল আঁকে। সেদিন অনেকটা সময় আমি সেখানে থাকলাম। যদিও আমার আর্টের ব্যাপারে জ্ঞান অতোটা ভাল নয় তবে এটা বুঝতে কশট হল না যে অনুরূপা দারুন ছবি আঁকতে পারে।
তারপর আমাদের মাঝে অফিসে হাই হ্যালো হতে লাগল। হাই হ্যালো বলতে আগে যেমন অফিসে আমাদের দেখা হয়ে গেলে আমরা অচেনার মত আচরণ করতাম এখন আর সেটা করতাম না। ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসত আমিও হেসে হাত নাড়তাম। তবে একদিন এই সম্পর্কটা আরেকটু এগিয়ে গেল। আমি ওর কাছে একটা ব্যক্তিগত কাজ নিয়ে হাজির হলাম। সামনেই আমার বাবা মায়ের বিবাহ বার্ষিকী আসছি। আমি বাবা মায়ের বিয়ের একটা পুরানো ছবি ওর কাছে নিয়ে গিয়ে বললাম যে সে এই ছবিটা একে দিয়ে পারবে কিনা। অনুরূপা খুশি মনেই রাজি হয়ে গেল হাতের ইশারাতে আমাকে জানালো যে দিন সাতেক মত সময় লাগবে।
সপ্তাহ খানেক পরে অনুরূপা ছবিটা নিয়ে একে এনে দিল। এতো চমৎকার একটা হল, আমি ওকে কিভাবে ধন্যবাদ দিব সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। অনুরূপা অবশ্য কিছুই নিতে রাজি হল না। তবে শেষ পর্যন্ত ওকে এককাপ কফির জন্য রাজি করালাম। বললাম যে অফিসের পরে কিংবা যে কোন ছুটির দিন ওকে কফি খাওয়াব।
পরের শুক্রবারেই অনুরূপা সময় দিল। ঠিক হল যে আমর বিকেলে একটা ক্যাফেতে বসব। অনুরূপার বাসার কাছেই একটা ক্যাফে ঠিক করা হল। আমি একটু আগে আগেই ক্যাফেতে গিয়ে হাজির হলাম। আমার পৌছানোর কিছু সুয় পরেই অনুরূপা এসে হাজির হল। সত্যি বলতে কি, সেদিনই প্রথম বারের মত আমি ওকে দেখে একটু চমকে গেলাম।
অফিসে অনুরূপা সব সময় সিম্পল পোশাক পরেই আছে। বেশির ভাগ দিনেই সেলোয়ার কামিজ অথবা মাঝে মাঝে জিন্স টিশার্ট। সে সব সব সময়ই একটি ঢিলাঢোলা হয়ে থাকে। তবে আজকে অনুরূপার পোশাক পরিচ্ছদ বেশ আবেদনময়ী মনে হল। সাদা রংয়ের কামিজের সাথে ও সাদা লেগিংস পরেছে। সাথে সাদা ওড়না। মনে হচ্ছে যেন এই পোশাকটা কেবল অনুরূপার জন্যই তৈরি হয়েছে। একটু সাজগোজও করেছে। আমি একপ্রকার মুগ্ধ হয়েই তাকিয়ে রইলাম।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনুরূপা যেন একটু লজ্জাই পেল। লজ্জার হাসি দিল আমার দিকে তাকিয়ে। আমি বললাম, আপনি এতো সুন্দর আগে তো খেয়াল করি নি।
আমার এই কথা শুনে অনুরূপার লজ্জার পরিমান যেন বাড়লো আরও একটু। এই লজ্জার ভাব চেহারাতে ফুটে উঠাতে ওর চেহারার সৌন্দর্য যেন আরও একটু বাড়ল।
ইচ্ছে ছিল যে কফি খাওয়ার পরে ঘন্টাখানেক গল্প করে আমরা চলে আসব। তবে সেটা আর হল না। একেবারে ডিনার করে ওকে বাসায় পৌছে দিয়ে তারপর বাসায় এলাম। এরই মাঝে ওর কাছে ভিডিও করে ওর বাসা থেকে ফোন এল। অনুরূপা হাতের ইশারায় ওর মায়ের সাথে কথা বলে আশ্বস্ত করে বলল যে সে ঠিক আছে। একটু পরেই চলে আসবে। আমি ওর সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বলতে দেখেই মনে মনে ঠিক করে ফেললাম যে আমিও এই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শিখব।
এরপরেই অনুরূপার সাথে আমার সম্পর্কে আরও উন্নত হতে শুরু করল। তবে আমি যেদিন প্রথম ওর সাথে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে কথা বললাম সেদিন ওর চেহারায় আমি অদ্ভুত এক আনন্দ দেখতে পেলাম। আমরা একে অন্যের প্রেমে পড়েছি সেটা আমরা যদিও কেউ কাউকে মুখ ফুটে বললাম না তবে এটা বুঝতে আমাদের দুইজনের কারোই অসুবিধা হল না।
অনুরূপাও যে আমার প্রেমে পড়েছে সেটা আমি পাকাপোক্ত ভাবে বুঝতে পারলাম আরও মাস দুয়েক পরে। এই সময়ের ভেতরে অনুরূপার সাথে আমার মেলামেশা বেড়েছে অনেকগুণে। প্রতিদিন অফিসের পরেই আমরা এদিক ওদিক যেতাম। ওর সাথে নানান আর্টগ্যারারিতে ঘুরে বেড়াতাম, কিংবা কোন দিন শিল্পকলাতে যেতাম নাটক দেখতে। একদিন এমনই নাটক দেখে ফিরে আসছি দুজন, এমন সময় তীব্র বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। রিক্সার ভেতরে পলিথিন ধরে কোন মতে বৃষ্টির হাত থেকে আমরা বাঁচার চেষ্টা করছি তখনই অনুভব করলাম যে অনুরূপা আমার খুবই কাছে চলে এসেছে। এতো কাছে যে আমি ওর নিঃশ্বাসের শব্দ পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছি। এই ঠান্ডা আবহাওয়ার ভেতরে ওর গরম নিঃশ্বাস আমার গলার কাছে এসে লাগছে।
আমরা যখন একে অন্যের ঠোঁট থেকে আলাদা হয়েছি তখন অনুভব করলাম যে আমরা অর্ধেকের বেশি ভিজে গেছি। অনুরূপা আমার দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। আমি বুঝতে পারছিলাম যে ওর লজ্জা লাগছে খব বেশি।
ওকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আমি আবার সেই রিক্সায় ফিরে গেলাম। পুরো রাস্তা জুড়ে কেবল অনুরূপার সেই নরম ঠোঁটের কথাই আমি ভাবছিলাম। এভাবেই আমাদের প্রেম শুরু হল। এবং একটা সময়ে সে গভীর থেকে গভীরে যেতে লাগল। তবে আমাদের মেলামেশার ব্যাপারটা যেন অফিসে না জানে সেই ব্যাপারে আমরা দুইজনের একটু সাবধান থাকতাম। তার প্রধান কারণ ছিল যে এই অফিসের বস অনুরূপার বড় মামা ছিল। সে যদি আমাদের মেলামেশাটা ভাল ভাবে নাও নিতে পারে। তাই এই ব্যাপারে আমরা সাবধান ছিলাম।
তবে আমাদের সুখের দিন কেন জানি শেষ হতে চলেছিল। আমি একদিন অনুরূপাকে আমাদের বাসায় নিয়ে এলাম। মাকে বলেছিলাম তাদের ছবিটা কে একেছে। সেই পরিচয়েই আমি অনুরূপাকে বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। যদিও আমি আমার মাকে কিছুই বলি নি কিন্তু আমার মা ঠিকই বুঝতে পারলেন যে অনুরূপার সাথে আমার কিছু চলছে।
রাতের বেলা মা আমার কাছে পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিলেন যে এই মেয়েকে সে কোন ভাবেই তার বাড়ির বউ করে আনবেন না। কেন আনবেন না সেটাও তিনি বলে দিলেন।
আমি জানতাম এমন ব্যাপার আমাদের সামনে আসবে। এটা জেনেই আমি অনুরূপার দিকে এগিয়েছিলাম। আমি জানতাম এমন কথা আমাকে শুনতে হবে।
পরের দিন অফিস গিয়ে অনুরূপার গম্ভীর মুখটা দেখতে পেলাম। প্রতিদিনের মত হাসিখুশি মুখ আমি আজকে দেখতে পেলাম না। আচ্ছা অনুরূপা কি কোন কিছু বুঝতে পেরেছে? মায়ের চেহারাতে এমন কিছু কি ছিল যেটা দেখে আমার মানে সেটা বুঝে ফেলেছে আমার মানের মনভাব? যারা কথা বলতে পারে না তাদের শুনেছি অন্য অনেক অনুভূতি অনেক তীব্র থাকে। আমার মায়ের মুখের ভাব দেখেই কি অনুরূপা সব বুঝতে পেরেছিল?
সেদিন দুপুরে অনুরূপা ক্যান্টিনে এল না। আমাদের নিয়মিত দুপুরের লাঞ্চও হল না। আমি কয়েকবার ওকে ফোন দিলাম বটে কিন্তু তাকে কোন কাজ হল না। এপরের একটা সপ্তাহ একই রকম ভাবে কেটে গেল। অনুরূপা আমার কাছ থেকে দুরে দুরেই থাকল। এক সপ্তাহ পরে অফিস থেকে ঠিক বের হওয়ার আগে দেখলাম অনুরূপা মন খারাপ করে আমার ডেস্কের সামনে এল। তারপর একটা ছোট খাম আমাকে দিয়ে আবার চলে গেল। আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ সে দিল না।
আমি ছাদে গিয়ে চিঠিটা খুললাম,
অপু, শুনেছি মানুষ প্রেমে পড়লে ঠিকঠাক চিন্তা করতে পারে না। আমি এই ব্যাপারটা এতোদিন ঠিকমত বুঝতে পারি নি। তবে এখন এই ব্যাপারটা আমার কাছে পরিস্কার হয়েছে। আমি কী ভাবছিলাম আমি নিজেই জানি না। কেন ভাবছিলাম সেটাও জানি না। তোমার মায়ের কাছ থেকে আমি এমন আচরণ আসাই স্বাভাবিক। আমি এই ব্যাপারটাই ভুলে গিয়েছিলাম। কেবল তোমার মা কেন দুনিয়ার যে কোন মা ই তার ছেলেকে কোন বোবা মেয়ের সাথে বিয়ে দিবেন না, দিতে চাইবেন না। আমি যদি মা হতাম আমিও ঠিক এই একই কাজটা করতাম। এই স্বাভাবিক চিন্তা থেকে আমি কিভাবে দুরে সরে গিয়েছিলাম আমি জানি না। কিন্তু এখনও খুব একটা দেরি হয়ে যায় নি। আমাদের মনে হয় এখনই সব কিছু বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আজকের পরে তুমি আর আমি ঠিক সেই আগের মত আচরণ করা শুরু করব। তুমি আমাকে চেনো আর আমিও তোমাকে চিনি না। আমরা কেবলই এখন থেকে কলিগ যারা কেবল একই অফিসে কাজ করে। তুমি যদি এরপর থেকে আমার সাথে আলাদা ভাবে আবার কথা বা দেখা করতে চাও তবে আমি এই অফিস ছেড়ে চলে যাব। আমি এখানে চাকরি করতে পছন্দ করি, তাই আমাকে বাধ্য করবে না প্লিজ।
ভাল থেকো।

দুই
অনুরূপার মন আজকে খারাপ। অপুকে চিঠিটা দেওয়ার পরেই ওর মনে হয়েছিল যে অপু বুঝি তার ডেস্কের সামনে এসে কিছু বলার চেষ্টা করবে বা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করবে। তবে অপু সেটা করে নি। অনুরূপা একটু যেন আশা করেছিল তবে সেটা না হওয়াতে এক ধরণের স্বস্তিও পেয়েছে। অপুকে তার সত্যিই মনে ধরেছিল। প্রথমবারের মত অনুরূপার মনে হয়েছিল এই মানুষটা তাকে সব কিছু থেকেই আগলে রাখবে, তাকে সবার আগেই বেছে নেবে। তবে সেদিন ওর মায়ের চোখের দৃষ্টি দেখেই অনুরূপা বুঝতে পেরেছিল যে ওর আশা আসলে কোন দিন পূরণ হবে না। পূরণ না হওয়াটাই বরং স্বাভাবিক ঘটনা।
অনুরূপা নিজ থেকেই তাই সরে এসেছে। অনুরূপা জানে যে এক সময়ে অপু তাকে নিয়ে তার পরিবারের সাথে যে দ্বন্দ্ব বাধবে সেটার মাঝে পড়ে দিশেহারাবোধ করবে। তখন সে পা পারবে পরিবারকে ছেড়ে আসতে আর না পারবে তাকে গ্রহন করতে। এই ভয়ানক কষ্টের ভেতরে সে অপুকে ফেলতে চায় না। এরপর চেয়ে বরং এখান থেকেই সব কিছু শেষ হোক। অনুরূপা এটাই চেয়েছিল। তবে এতোকিছুর পরেও তার মনের ভেতরে একটা সুক্ষ আশা ছিল যে অপু হয়তো তার জন্য লড়াই করবে, তাকে আবারও ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টাটা অন্তত করবে। কিন্তু অপু এল না।
অফিস শেষ করে এদিক সেদিক এলোমেলো ভাবে হাটল । অপুর সাথে সম্পর্ক ভাল হওয়ার পর থেকে অফিসের পরের সময়টা তারা এক সাথে কাটিয়ে এসেছে। তাই এখন এই সময়টা কাটাতে অনুরূপার একটু কষ্ট হয়। বারবার মনে হয় অপুর সাথে সময় কাটাতে। তবে অনুরূপা জানে যে সময়ের সাথে অভ্যাস হয়ে যাবে। সময়ের সাথে সব কিছুই আসলে সয়ে যায়।
আজকে একটু দেরি করেই সে বাসায় ফিরল। কিন্তু যখনই দরজা দিয়ে সে ভেতরে ঢুকতে গেল তখনই তার মনের ভেতরে একটা অচেনা অনুভূতি হল। এই অনুভূতির কোনো ব্যাখ্যা অনুরূপার কাছে নেই তবে হল। তার নিজের পরিচিত বাসাটাও কেমন যেন মনে হল তার কাছে!
এবং ঠিক তারপরেই অনুরূপা দেখতে পেল অপুকে। অনুরূপা কোন কিছুই বুঝতে পারছিল না। সে কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অপুর দিকে। তার বাবার সাথে বসে অপু গল্প করছে। ওকে ঢুকতে দেখেই ওর বাবা আর অপু দুজনেই হাসল। অনুরূপার কাছে মনে হল এই দৃশ্য যেন খুব স্বাভাবিক একটা দৃশ্য, এই দৃশ্য যেন প্রতিদিনই দেখতে পায় অথচ এটা এই প্রথমবার অনুরূপা দেখছে। আচ্ছা, সে কি স্বপ্নে দেখছে? এমন হতে পারে যে উবারে করে আসার সময়ে সে একটু ঘুমিয়ে পড়েছে এবং সেখানেই সে এই স্বপ্নটা দেখছে। এখনই সে হয়তো বাসার সামনে এসে হাজির হবে এবং উবার ড্রাইভার তাকে ডেকে তুলবে। অনুরূপার মনে হল যেন স্বপ্নটা আরেকটু লম্বা সময় ধরে চলুক। এই স্বপ্নটা তার ভাল লাগছে।
রাত দশটার দিকে যখন কাজী এসে অনুরূপার সাথে অপুর বিয়ে পড়াল তখনও অনুরূপার বিশ্বাস হচ্ছিল না। অনুরূপা দেখল অপুর মা না আসলেও তার বাবা আর ঢাকায় থাকা এক ভাই আর ভাইয়ের বউ এসে হাজির। বিয়ে হয়ে গেল ঘরোয়া ভাবেই।
অপুর বাবা অনুরূপাকে দোয়া করে বলল, তোমার শাশুড়ি হয়তো একটু রাগ করে আছে তবে চিন্তা কর না, সে তোমার কাছ থেকে দুরে থাকতে পারবে না।
অপুর ভাই আর ভাইয়ের বউও একই কথা বলল। ভাইয়ের বউ অনুরূপা অনেকটা সময়ে জড়িয়ে ধরে রেখে বলল, কোনো চিন্তা কর না। আম্মু দেখবে ঠিক ঠিক তোমাকে নিজেই ডেকে নিবে।

পরিশিষ্টঃ
বাসররাতে অপুর কাছ থেকে সব কিছু শোনার পরেও অনুরীপার ঠিক যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না যে অপু সত্যিই এই কাজটা করেছে। ওর চিঠি পড়েই সে নিজের বাসায় গিয়ে হাজির হয়। পরিস্কার ভাবে মা বাবাকে জানায় যে অনুরূপাকেই সে বিয়ে করবে। এবং যদি তারা রাজি না হয় তবে একা একাই করবে। তার মা এই গো ধরেই আছে এখনও। সে এই বিয়েতে রাজি না। তার বাবা মায়ের সামনে কিছু না বললেও পরে অপুকে জানায় যে তার কোন আপত্তি নেই। জীবনটা অপুর তার অপুই ঠিক করবে তার জীবন সঙ্গী কে হবে।
অনুরূপার তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে অপু আর তার বাসররাত আজকে। ওরা দুজন পাশাপাশি বসে আছে। সত্যিই কি এটা হচ্ছে নাকি সত্যিই অনুরূপা এখনও উবারে ঘুমিয়ে আছে, স্বপ্নে দেখছে!

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.3 / 5. Vote count: 23

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →