কামরুল আহমেদ কয়েক মুহুর্ত চুপ করে রইলেন। তার মাথার ভেতরে এখন চিন্তা চলছে। তাকে যে এমন কেউ ফোন করতে পারে সেটা সে ভাবতেও পারে নি। প্রথমে একটু দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করলেও নিজেকে সামলে নিলেন মূহুর্তেই । এমন ফোনকল তিনি আগেও পেয়েছেন । তবে সেটা সামলে নিতে তার খুব একটা সমস্যা হয় নি।
একটু গলা খায়েরী দিয়ে কামরুল আহমেদ বললেন, কে ?
যদিও তিনি প্রথম বারের পরিস্কার ভাবেই শুনতে পেয়েছেন যে কে ফোন করেছে। এবং এই ফোন করার পেছনের কারণটাও তিনি জানেন খুব ভাল করেই।
-হ্যালো, আমি জাহিদ বলছি। আমি নীরার বয়ফ্রেন্ড। নীরা আপনার অফিসে চাকরি করে।
নীরা নামটাকে তিনি ভাল করেই জানেন। মেয়েটার চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠল। তার নামে মেয়েটা তার বয়ফ্রেন্ডকে এই সব কথা বলে দিয়েছে। মেয়েটার সাহস আছে বলতে হবে। কাল অফিসে গিয়ে আরেকটু টাইট দিতে হবে। অবশ্য নাটাই এখনও তারই হাতে। ঘুড়ি যতই উড়াউড়ির চেষ্টা করুক না কেন নাটাই যখন গুটানো শুরু করবেন তখন ঘুড়িকে আসতেই হবে তার হাতে।
-হ্যা চিনতে পেরেছি। বল ।
তুমি করেই বললেন ছেলেটাকে। বয়সে সে নিশ্চিত কমই হবে। আর তার তুমি করে বলার আরেকটা কারণ হচ্ছে নিজের ওজন ঠিক রাখা। তিনি জাহিদ নামের এই ছেলেটাকে বুঝিয়ে দিতে চান যে তিনি ক্ষমতাধর একজন মানুষ । তিনি অনেকটা নিশ্চিত যে এই ছেলে তাকে হুমকি দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছে।
-আমি আসলে আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাচ্ছিলাম।
-কী বিষয়ে?
-বিষয়টা আপনি জানেন ? জানেন না?
-দেখো আমার হাতে সময় নেই এতো। আর দেখা করতে হলে আমার সেক্রেটারির সাথে যোগাযোগ কর। সে তোমাকে এপোয়েন্টমেন্ট দিলে তারপরে।
-দেখুন আপনি যা চান সেটা আপনি কখনই পাবেন না। নীরা কালকেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসবে। বুঝেছেন ।
কামরুল আহমেদ একটু চুপ করে রইলেন। হ্যা, এই সম্ভবনাটা তার মাথাতেও এসেছে। কিন্তু এতো ভাল একটা চাকরি ছেড়ে দেওয়া চাট্টিখানি কথা না। তাহলে কি ঘুড়ির সুতো ছিড়েই যাবে। কামরুল আহমেদের হাত একটু নিশপিস করতে লাগল। চাকরি ছেড়ে দিলে অবশ্য আর কারোই কিছু করার থাকবে না।
-কিন্তু আমি চাইলে নীরা রাজি হবে।
এবার কামরুল আহমেদ একটু অবাক হলেন। নিজের বয়ফ্রেন্ড কিনা তার প্রেমিকাকে তার বসের কাছে পাঠাচ্ছে। বাহ, এটা তো ভাবেন নি তিনি। একটু নড়ে চড়ে বসলেন। তারপর বললেন, বল আমি শুনছি।
-এসব কথা আসলে সামনা সামনি বলাই ভাল। আমি এই কারণেই আপনার সাথে দেখা করতে চাই। মিউচুয়্যাল বেনিফিট বলতে পারেন। আপনি যা চান তা পাবেন আর বিনিময়ে আমার একটু উপকার করবেন। ব্যাস । আর কিছু না।
কামরুল আহমেদের মাথার ভেতরে এবার চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল। ছেলেটা কোন ফাঁদ পাতার চেষ্টা করছে না তো? হতে পারে তবে যদি সে নিজের পছন্দের জায়গাতে তাকে আসতে বলে তাহলে কোন ফাঁদেই কাজ হবে না। আর কথা যখন বলতে চাইছে তখন কথা বলতে কোন সমস্যা নেই। কথা বার্তা কোন দিকে যায় সেটাই আগে দেখার দরকার ।
কামরুল আহমেদ বললেন, ঠিক আছে। আমার উত্তরার ফ্লাটে চলে এসো। ঠিকানা টেক্স করে দিচ্ছি। আর খবরদার কোন চালাকীর চেষ্টা করবে না।
-আরে কী যে বলেন! এই রকম সুযোগ কি বারবার আসে ! আপনার থেকে আমার নিজের দরকারটা বেশি বলতে পারেন।
দুই
নীরা কাল রাতেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। এই অফিসে সে আর চাকরি করবে না। সিদ্ধান্তটা নেওয়া সহজ ছিলনা। এই চাকরীর বাজারে এতো ভাল একটা চাকরি আর পাওয়া সম্ভব না। তাকে যে এই কোম্পানীতে ইন্টারভিউ দিতে ডাকবে সেটাই সে ভাবতে পারে নি। তবে ইন্টারভিউটা বেশ ভাল হয়েছিল। এই কারণেই চাকরিটা হয়েছিল। ওর চাকরিটা হওয়ার কারণেই বাসার পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গিয়েছে। এখন যদি চাকরিটা ছেড়ে দেয় তাহলে আবার সব কিছু ওলট পালট হয়ে যাবে।
কিন্তু তার পরেও নীরা এখানে চাকরিটা চালিয়ে যেতে পারবে না। নীরা কোন দিন ভাবতেও পারে নি যে ভদ্র পোশাক পরা অফিসের ফুল বাবুদের ভেতরের অবস্থাটা এতো কুৎসিত হবে। নীরার চাকরি নেওয়ার পর থেকেই ম্যানেজার কামরুল আহমেদের চোখ পড়েছিল তার দিকে। নীরা সেই দৃষ্টি বেশ ভাল ভাবেই বুঝতে পেরেছিল। প্রথম কিছু দিন কামরুল আহমেদ ওর সাথে মিষ্টি ভাবেই কথা বলত। তাকে নানান ভাবে সাহায্যের চেষ্টা করত তবে কামরুল আহমেদকে নীরার কখনই ভাল লাগে নি। তার চোখের দৃষ্টির ভেতরেই কেমন একটা লোলুপ ভাব ছিল। তাই শুরু থেকেই যতটা সম্ভব সে কামরুল আহমেদকে এড়িয়েই চলত। কিন্তু একটা অফিসের জেনারেলকে ম্যানেজারকে কি চাইলেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ? বিশেষ করে সেই মানুষটা যখন তার পেছনে লেগে আছে?
মিষ্টি আচরণের পরে এবার শুরু হল আকারে ইঙ্গিতে নীরাকে তার উদ্দেশ্য বোঝানো। প্রথম প্রথম নীরা কামরুল আহমেদের এই ইঙ্গিত দেখেও না দেখার ভান করতো। কিন্তু এক সময়ে সেটাও আর পারল না। তখন কামরুল আহমেদ তাকে একেবারে সরাসরি প্রস্তাব দেওয়া শুরু করল । এরপরই ভেতরে নীরার কানে এই কথাও এসেছে যে ওদের অফিসের আরও কয়েকজন মেয়ের সাথেই নাকি কামরুল আহমেদ এই কাজ করেছে। তাদের কয়েকজন উপর মহলে অভিযোগ করেও কোন ফল হয় নি। কামরুল আহমেদ কেমন করে জানি সব কিছুর থেকেই মুক্তি পেয়ে গেছে। কেউ তার কিছু করতে পারে নি। অদ্ভুত কোনো কারণে বোর্ড অব ডিরেক্টরস কিংবা কোম্পানীর প্রধানেরা কামরুল আহমেদ সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে। বরং যে মেয়েটি অভিযোগ করেছিল সেই মেয়েটিকেই চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিয়েছে। মূলত এই ঘটনার পরে আর কেউ কামরুল আহমেদের নামে কোন অভিযোগ করে নি। কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দিয়েছে নয়তো তার প্রস্তাবে রাজি হয়েছে।
নীরার সামনেও এই দুইটা পথ খোলা রয়েছে। এখানে চাকরি করতে গেলে তার অনৈতিক প্রস্তাব মেনে নিতে হবে নয়তো চাকরি ছেড়ে দিতে হবে। নীরা চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোন ভাবেই সে এই বদমাইশটার কাছে নতি স্বীকার করবে না।
বাসা থেকেই সেই নিজের ইস্তফা পত্র লিখে নিয়ে এসেছিল। অফিসে বসে শেষবার সেটা চেক করতে দেখল । এইচআরকে মেইল করতে যাবে ঠিক এই সময়েই পিয়ন দরজায় কড়া নাড়ল ।
-কী হল?
-আপু আপনাকে ম্যানেজার স্যার ডাকছেন।
ম্যানেজারের নামটা শুনেই বিরক্তি এসে ভর করল মনের ভেতরে। একবার মনে হল যে মেইলটা করার পরে ম্যানেজার কামরুলের সাথে দেখা করতে যায়। কিন্তু কী মনে করে সেটা করল না। মেইলটা ড্রাফট করে হাটা দিল ম্যানেজারের কেবিনের দিকে।
রুমে অনুমতি না নিয়ে প্রবেশ করল । কামরুল আহমেদ তার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। নীরা যখন কেবিনে এসে হাজির হল তিনি নড়ে চড়ে বসলেন। নীরা তখনই খেয়াল করে দেখল যে কামরুল আহমেদের মাথায় ডান দিকে একটা পট্টি মারা। কোন ভাবে সম্ভবত দূর্ঘটনার শিকার হয়েছেন তিনি। নীরাআ এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তা করল না । সে কামরুল আহমেদের দিকে তাকিয়ে বলল, স্যার ডেকেছেন আমাকে?
-হ্যা। তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
নীরা এবার একটু রুক্ষ কন্ঠেই বলল, আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই। আমি চাকরি ছেড়ে দিব আজকেই।
চাকরি ছাড়ার কথাটা বলতেই কামরুল আহমেদ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়াল । তারপর বলল, না না না। এমনটা খবরদার করবে না।
-আপনি আমাকে বলতে পারেন না যে আমি কী করব বা না করব! আপনার আর কিছু বলার আছে? আমি এখনই মেইল করব এইচআর কে
-না শোনো প্লিজ একটু শোনো! এমনটা করো না। আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে।
তখনই নীরা ব্যাপারটা ধরতে পারল। কামরুল আহমেদের কন্ঠে আগের মত আর সেই প্রতাপ নেই। বরং সেখানে একপ্রকার অনুনয় রয়েছে। ব্যাপারটা নীরার ক্কাছে বেশ অবাক লাগল। ওর রিজাইন দেওয়ার কথা শুনে এমন মনভাব হওয়ার তো কোন কারণ নেই। তাহলে অন্য কোনো কারণ আছে কি?
কামরুল আহমেদ বললেন, প্লিজ এমন করো না। চাকরি ছেড়ো না। আমি কথা দিচ্ছি আর কোন দিন তোমার সাথে কোন বাজে আচরণ করব না প্লিজ । এই বারের মত আমাকে মাফ করে দাও। প্লিজ ! বলতো আমি তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইছি।
এই বলে কামরুল আহমেদ সত্যিই সত্যি নীরার পা ধরতে এগিয়ে এল। নীরা চট জলদি করেই তাকে মানা করল। বলল যে তার আসার কোন দরকার নেই।
নীরা সত্যিই বুঝতে পারছে না এই লোক রাতারাতি এইভাবে পরিবর্তিত হয়ে গেল কিভাবে? নতুন কোন বুদ্ধি আটছে কি?
নীরা বলল, কথা দিচ্ছেন ?
-হ্যা। একদম সত্যি।
নীরা এবার লম্বা একটা দম নিয়ে বলল, ঠিক আছে। আর যদি ঐ সব কথা না বলেন তাহলে আমি চাকরি ছাড়ছি না। তবে রিজাইন লেটার আমি ড্রাফট করেই রাখলাম। জাস্ট এক ক্লিকেই চলে যাবে।
-আচ্ছা ঠিক্ক আছে। ড্রাফট করে রাখ। আমি কথা দিলাম যে এমন কিছু আর হবে না।
নীরা সত্যি সত্যিই বুঝতে পারছিল না। হঠাৎ করেই সামনের এই মানুষটার কী হল? এতো পরিবর্তন কিভাবে এল ? তবে নীরার কেন জানি মনে হচ্ছে যে এই লোক মিথ্যে বলছে না। এমন কোন কিছু ঘটেছে যার ফলে কামরুল আহমেদ সত্যিই বদলে গেছেন কিংবা বদলে যেতে বাধ্য হয়েছেন? কপালের এই পট্টির সাথে কি এই পরিবর্তনের কোন সম্পর্ক আছে? নীরা জানে না।
নীরা যখন ঘুরে চলে যেতে পা বাড়াল তখন কামরুল আহমেদ জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি কোন বয়ফ্রেন্ড আছে?
-কী বললেন?
-কোন প্রেমিক কিংবা বয়ফ্রেন্ড?
-না স্যার।
-আচ্ছা।
নীরা ঘুরে নিজের ডেস্কের দিকে চলে গেল । সে সত্যিই বুঝতে পারছে না কিছু। কিন্তু যা হয়েছে ভালই হয়েছে। অন্তত এখনও পর্যন্ত তো তাই মনে হচ্ছে। সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে ওকে চাকরিটা ছাড়তে হচ্ছে না।
তিন
কামরুল আহমেদের মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করে উঠল। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। কী হচ্ছে তার সাথে? তার নিজের ফ্লাটেই জাহিদ নামের ঐ ছেলে তার উপর আক্রমন করে বসেছে। টেবিলের উপরে একটা বই ছিল । বইটা একটা মোটা আর কাভার শক্ত। সেটা দিয়েই মাথার ডান দিকে শক্ত করে একটা আঘাত করে বসল । এতো জলদি যে ছেলেটার হাত চলবে সেটা তিনি ভাবতেও পারেন নি। তিনি ভাবতেও পারেন নি তার নিজের বাসায় কেউ এভাবে তাকে মারতে পারে।
তিনি যখনই উঠতে যাবেন তখন আরেকটা আঘাত এল। জাহিদ একেবারে তার অন্ডকোষ বরাবর একটা লাথি দিল। কামরুল আহমেদের মনে হল যেন তার দম বন্ধ হয়ে যাবে। এখনই তিনি মারা যাবেন। তিনি চোখে মুখে অন্ধকার দেখলেন। তারপর মেঝেতে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। সম্ভবত কিছু সময়ের জন্য চেতনাও হারিয়েছিলেন। যখন তার কাছে আবার সব কিছু একটু স্বাভাবিক হয়ে এক তখন দেখতে পেলেন যে জাহিদ নামের সেই ছেলেটা এখনও তার ড্রয়িংরুমেই বসে আছে। তার সোফার উপরে বসা। তার ল্যাপটপ্টা খোলা । সেখানে সে কিছু যেন করছে। তার জ্ঞান ফিরতেই দেখে একটু হাসল। তারপর বলল, আরে ঘুম ভাঙ্গল দেখি।
কামরুল আহমেদ নিজেকে আরও একটু সময় দিলেন। তারপর বললেন, তোকে আমি দেখে নেব। তুই আর তোর ঐ প্রেমিকা নীরা! তোদেরকে যদি আমি জেলে ভাত খাইয়েছি!
-জেল পুলিশ !
যেন শব্দ গুলো খুব হাসির এমন একটা ভাব করেই জাহিদ নামের ছেলেটা হেসে উঠল। ছেলেটার বয়স ত্রিশ মত হবে। দেখতে সুন্দর আর সুঠম দেহী। মুখে সব সময় একটা হাসি লেগেই থাকে। প্রথম যখন ফ্লাটের দরজায় সে এসে হাজির হল, তাকে দেখে কামরুল আহমেদের মনে হয়েছিল যে পাড়ার ভদ্র কোন ছেলে। সোফাতে বসে একটু সংকুচিত ভাবেই প্রথমে হেসে কথা বলছিল। কামরুল আহমদে তখন অন্য সোফার উপরে পায়ের উপর পা দিয়ে কথা বলছে। যখনই নীরার প্রসঙ্গ তখনই কী হল ছেলেটা এক লাফে উঠে দাড়াল তারপর টিটেবিলের উপরে রাখা বইটা দিয়ে তার মাথার ডান দিয়ে শক্ত করে বাড়ি মারল। এক ঝাটকায় তিনি সোফা থেকে মেঝেতে পড়ে গেলেন। উঠতে যাওয়ার সময় একটা লাঠি খেলেন আন্ডোকোষ বরাবর। তারপরই সব অন্ধকার।
ছেলেটা এবার তার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার ল্যাপটপ দেখি একেবারে আনপ্রোকেটেড! আর ফোন
তখন তার চোখ গেল ল্যাপটপের পাশে রাখা ফোনের উপর। ফোনটার ভেতরে একটা মাইক্রো ইউএসবি ঢোকানো!
কামরুল আহমেদ চিৎকার করে উঠলেন, কী করছো তুমি?
-আমি ? আমি আপনার জীবনের উপর এক্সেস নিয়ে নিচ্ছি। এখন থেকে আপনার সব কিছু আমার হাতে। এই যেমন এসএসবি ব্যাংকের একাউন্টে ছয় কোটি টাকা। পুরোটাই ব্লাক মানি, ওটা আমি বিটকয়েনে ট্রান্স করে নিয়েছি।
কামরুল আহমেদ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন। ছেলেটা আবার বলল, তারপর এই ল্যাপটপে এই ফ্ল্যাটের বেশ কয়েক হিডেন ক্যামেরার ফুটেজ আছে। আপনি এখানে আপনার কোম্পানির বসদেরও আসতে দেন। তাদের জন্য মেয়ে ভাড়া করে নিয়ে আসেন। সেই ভিডিও ফুটেজ আপনার কাছে রয়েছে। এই ভাবেই তো তাদের হাত করেছেন। আপনার নিজেরও কিছু ফুটেজ আছে এখানে। এই সব এখন ক্লাইড স্টোরোজে।
কামরুল আহমেদ একটা ক্রোধ অনুভর করলেন। কিন্তু তার এখন কিছু করার নেই। শোবার ঘরের ক্লোজেটের ভেতরে একটা রিভালবার আছে। ওটা হাতে পেলে বেটাকে দেখে নেওয়া যেত।
কামরুল আহমেদের মনের কথা ছেলেটা অদ্ভত ভাবে যেন টের পেয়ে গেল। কোমড় থেকে পিস্তলটা বের করে সে সামনে ধরল। বলল, এটার কথা চিন্তা করছেন তো? হাহাহা !
তারপর হাসি থামিয়ে বলল, শুনুন মিস্টার আহমেদ, আমি ভাল মানুষের কোন ক্ষতি করি না। কিন্তু আপনার মত নিকৃষ্ট প্রজাতির মানুষের খোজ পেলে তাদের শেষ দেখে ছাড়ি। আপনার এক ছেলে এক মেয়ে আছে তাই না? রাইয়ান আর রিমি। আমি রিমি আর রাইয়ানের সব বন্ধুদের ফোন নম্বর জোগার করেছি। সব মিলিয়ে প্রায় ২৫টা নম্বর। আপনার এই যে কয়েক মেয়েটার সাথে সেক্স ভিডিও, সেটা আমি ওদেরকে কাছে পাঠাব। তারপর আপনার অফিসের প্রতিটা মানুষের কাছে এই ভিডিও যাবে। কয়েকটা পর্ন সাইটেও আপলোড হবে।
কামরুল আহমেদের মনে হল তিনি ঠিক মত শুনতে পেলেন না ছেলেটা কী বলছে। তার কাছে কেমন যেন দুঃস্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। এটা কোন ভাবেই হতে পারে না। ছেলেটা যা বলছে সেটা যদি সে করে তাহলে তার জীবন একেবারে শেষ হয়ে যাবে। আর কিছুই থাকবে না।
জাহিদ বলল, তবে আপনার ছেলে মেয়েদের কথা চিন্তা করেই আপনাকে আমি একটা সুযোজ্ঞ দিতে চাই। সুযোগ হচ্ছে, আজ থেকে এই সব বদমাইশি সব বন্ধ করে দিতে হবে। নীরার কাছে ক্ষমা চাইবেন এবং অন্য যে কয়টা মেয়ের ক্ষতি আপনি করেছে তাদের সবাইকে ক্ষতিপুরণ দিবেন। দুই দিনের মধ্যে। নয়তো পুরো ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাবে। আর যদি নীরা চাকরি ছেড়ে দেয় তাহলে আপনার খবরই আছে।
এবার ছেলেটা উঠে দাড়াল। দরজা পর্যন্ত হেটে গিয়ে আবারও ফিরে তাকাল। বলল, নীরা আমার গার্লফ্রেন্ড নয়। তবে ওর সব কিছু আমি জানি। ওকে পাঠানো প্রতিটা মেসেজ আমার কাছে আসে। এখন থেকে আপনার কাছে কে কি মেসেজ পাঠায় সেটাও আমি জানব। সুতরাং সাবধান। আমাকে খোজার চেষ্টা করে দেখতে পারেন তবে লাভ হবে না।
পরিশিষ্টঃ
নীরা এখন অফিসে নিরাপদ বোধ করে। কামরুল আহমদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সে এখন সব নির্জিত ভাবে অফিসে আসে। কোন মেয়ের দিকেই আর বাজে দৃষ্টিতে তাকায় না। নীরার কানে এসেছে যে অফিসের যে কয়টা মেয়ের সাথে সে অনৈতিক কাজ অরেছিল তাদের সবার কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়েছে। নীরা সত্যিই অবাক হয়েছিল।
নীরা মানে একটা প্রশ্ন প্রায় জাগে যে সেদিন কামরুল আহমেদ তার প্রেমিকের ব্যাপারে জানতে কেন চাইল। অনেক বার ভেবেছে এই কথাটা তার কাছে জানতে চাইবে। তবে সময় করে আর জিজ্ঞেস করা হয় না।
এদিকে নীরা কোন দিন হয়তো জানতেও পারবে না যে কামরুল আহমেদের ভেতরে হঠাৎ করেই এমন পরিবর্তন কেন হল? সেই সাথে সে কোন দিন জানতেও পারবে না যে একজন অদৃশ্য ভাবে সব সময় তার উপর নজর রেখে চলেছে। তার সব কিছু সে দেখছে। সম্ভব সকল বিপদ থেকে রক্ষা করে চলেছে।
ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।
সরাসরি মেসেজ পাঠাতে চিঠি.মি এপ ব্যবহার করুন।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.