কয়েকদিন আগেও ক্লাস আড্ডা বাদ দিয়ে খুব বেশি সময় থাকা হত না ক্যাম্পাসে । তারপর বাসা আর টিউশনী । সত্যি বলতে কি আমি আমার ঘরে পিসির সামনেই সময় কাটাতে ভালবাসতাম । কিন্তু কয়েকদিন আগেই আমার জীবনে এতো বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে যে আমার এখন আর বাসায় থাকতে মনে চায় না। যতটা সময় বাসা থেকে বাইরে থাকতে পারি ততই ভাল ।
ক্লাস শেষ করে তাই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম ডিপার্টমেন্টের সামনের মাঠে । সজিব, রুনু, মলি, আকিব রাফি সবাই রয়েছে । আমার মন মরা কেন কদিন ধরে ওরা বার কয়েক জানতেও চেয়েছে । অবশ্য প্রায় সপ্তাহ দুয়েক ধরেই আমার মন মেজাজের অবস্থা খুব বেশি ভাল না । আমি কোন জবাব না দিয়ে কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দেই । কথা আড্ডা চলতে থাকে ঠিক তখনই আমার চোখ নীষার দিকে যায় ।
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখেছিলাম ও টিয়া রংয়ের একটা সেলোয়ার কামিজ পরে রেডি হচ্ছিলো ক্যাম্পাসে আসার জন্য। সেই রংটা দেখেই ওকে দ্রুত চিনে ফেললাম । অবশ্য আরেকটু হলে এমনিতেই চিনতে পারতাম । কারন ও আমাদের দিকেই আসছে ।
কেন ?
এই ঝামেলা এই খানে কেন ?
কাধে ব্যাগ, ওড়না ভাল করে গলায় পেঁচানো । মুখে হালকা মেকাপও দিয়েছে । তবে ঠোটে লিপস্টিক দেয় নি । আমাদের আড্ডার ঠিক সামনে এসেই থামলো । কিছুটা সময় আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । আমি না দেখার ভান করে কথা চালিয়ে গেলাম । একবার ইচ্ছে হলে উঠে চলে যাই কিন্তু যাওয়া হল না ।
আস্তে আস্তে আড্ডার সবাই ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো যে তাদের মাঝে একজন অপরিচিত মানুষ দাড়িয়ে আছে । রুনুই প্রথমে জানতে চাইলো
-কিছু বলবা ?
রুনু অবশ্য নীষাকে চিনে না । তবুও ওকে তুমি করেই বলল । বলতে গেলে আমরা ক্যাম্পাসের প্রায় সিনিয়ার ব্যাচ । আমাদের থেকে প্রায় সবাই ছোট। তুমি করে বলাই যায় ।
রুনুর দিকে না তাকিয়ে নীষা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি বাসায় যাবো
রুন যেমন অবাক হল আড্ডার বাকী সবাই অবাক হল মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলার জন্য । তাও গলায় একটা আবদার মূলক কথা শুনে। আমি নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বললাম
-আমি এখন বাসায় যেতে পারবো না, একটু পরে আমার ক্লাস আছে ।
নীষা বলল
-মিথ্যা কথা, আমি তোমাদের ডিপার্টমেন্টে খোজ নিয়েছি । সব ক্লাস শেষ হয়ে গেছে।
এতু টুকু একটা মেয়ে আমাকে তুমি করে বলছে এই ঘটনা আসলেই সবাইকে অবাক করলো । মলি বিস্মিত কন্ঠে বলল
-এই অপু, মেয়েটা কে রে ? তোকে তুমি করে বলছে কেন ? চেনে তোকে ?
সজিব বলল
-আমিও চিনতে পারছি না । আমি যতদুর জানি ওর এই বয়সী কোন কাজিনও নেই । কে ?
পুরো আড্ডার ভেতরে একটা তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল, মেয়েটা কে সেটা জানার জন্য। আমার সাথে তার কি বা সম্পর্ক সেটাও জানার আগ্রহ সবার । আমি কোন কথা না বলে চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম । বুঝলাম আমার ক্যাম্পাসেও আসা বন্ধ করতে হবে । এই মেয়ের জন্য জীবন “ত্যাসপাতা” হইয়া গেল । এই মাইয়া আর এই মাইয়ার বাপের জন্য । সাথে আমার নিজের বাপও কম যায় না ।
রুনু এবার নীষার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই মেয়ে তুমি কে বলত ? অপুর সাথে এই ভাবে কেন কথা বলছো কেন ?
নীষা খুব শান্ত কন্ঠে বলল
-আপনাদের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন। সে কিছু বলে নাই আপনাদের ?
এবার সবার সন্দেহ আরও যেন একটু বেড়ে গেল । রুনু উঠে গিয়ে নীষাকে ওর পাশে বসালো। তারপর ওর চোখের দিকে কিছুক্ষান তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি ……অপুর বউ ?
নীষা কিছু বলল না । কেবল একটু হাসলো । সেই হাসিতে আর কারই বোঝার বাকি রইলো না যে আসলেই সে আমার বউ । বিয়ে করা বউ ।
সবাই আমার দিকে তাকালো এক ভাবে । আমি তাকিয়ে রয়েছি বদ মেয়েটার দিকে । আমার বিয়ের কথা প্রকাশ করে দিয়ে মেয়েটা যেন খুব মজা পাচ্ছে ।
থাপড়ায়া দাঁত ফেলে দেওয়া উচিৎ । বদ মেয়ে কোথাকার ।
এবার ঈদে গ্রামের বাসায় গিয়ে সময় গুলো বেশ ভাল করেই কাটছিল । বাবাও অনেক দিন পরে গ্রামে গিয়ে যেন পুরানো সব বন্ধুরদের সাথে মিলে মিলেশিসে একাকার হয়ে গেল । ঠিক এমন সময় আসল ঘটনা আমার সামনে এল । আমাদের গ্রামে নীষারা থাকতো । বাবার খুবই ভাল বন্ধু ছিলেন নীষার বাবা । আমিও ওকে চিনতাম । আমার থেকে কয়েক বছরের জুনিয়র ।
রাতে খাওয়ার সময় বাবা নীষার কথা বলল । মেয়েটা নাকি এবার আমার ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে, ফার্মেসীতে । মেয়েটাও পড়ালেখায় ভাল খুব কিন্তু মেয়েটার কেবল একটা সমস্যা । মেয়েটা কিছুতেই রাতে একা একা ঘুমাতে পারে না । ভয় পায় । তাও আবার রুমে থাকলে হবে না, তার খাটে কাউকে ঘুমাতে হবে । জন্মের পর থেকে মেয়েটা নাকি এখনও মায়ের সাথে ঘুমায় রাতে ।
মেয়ে এইজন্য ক্লাস করতে পারছে না । কারন ঢাকায় ওদের এমন কোন আত্মীয় নেই যেখানে ও থাকতে পারবে । হলেও থাকতে পারবে না এখন । মেয়েটা কয়েকদিন ঢাকায় ছিল তারপর ফিরে এসেছে । আর ওর বাবার এরকম পরিস্থিতি নেই যে ওরা ঢাকায় গিয়ে থাকবে ।
এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল । কিন্তু এরপর বাবা যা বলল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । বাবা ঠিক করেছে মেয়েটার ভবিষ্যৎ তিনি এভাবে নষ্ট হতে দিবে না ।
অতি উত্তম কথা । একটা না একটা উপায় বের করতেই হবে । এভাবে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হতে দেওয়া যায় নাকি ।
বাবা বলল
-আমি অনেক দিন থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম রকিবের মেয়ের সাথেই তোর বিয়ে দেব । কদিন পরেই দিতাম । এখন কদিন আগে বিয়ে টা হবে । এই আর কি ।
ঠিক আছে । কোন সমস্যা নেই । বিয়ে যখন হবে তখন কদিন আগে আর পরে কি ।। এ্যা ……
কেবল পানি খুখে নিয়ে ছিলাম । মুখ থেকে ফেলে দিয়ে বললাম
-এ্যা । কি বললে ? কার বিয়ে ?
-কেন তোর । তুমি এখন বড় হয়েছিস । কদিন পরে অনার্স শেষ হবে । বিয়ে করবি না ?
-মানে কি । কেউ একজন রাতে একলা ঘুমাতে পারে না তার জন্য তো আমাকে কুরবানি করার কোন মানে নেই । নাকি আছে ।
বাবা কঠিন চোখে আমার দিকে তাকালো । আমি আর কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম । আমাদের সংসারে এখনও বাবার উপরে কেউ কথা বলবে এখন কেউ নেই । তার উপর তিনি যদি একবার ভেবে নেন যে আমাকে বিয়ে দেবেন তাহলে আমার কিছুই করার নেই । আর এটা বাবার গ্রাম, তার নিজের এলাকা । অবশ্য আমার নিজেরও গ্রাম ।
সপ্তাহ খানেকের ভেতরেই আমার বিয়ে হয়ে গেলে নীষার সাথে । আমার কেবল বারবার মনে হচ্ছিলো যে আমি ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখছি এখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে । সব ঠিক হয়ে যাবে ।
নীষার আমাদের সাথে ঢাকায় চলে এল এবং আমাদের বাসায় থাকতে লাগলো । দুদিনের ভেতরেই দেখলাম মা আর বাবাকে পঁটিয়ে ফেলল । কিভাবে ফেলল কে জানে । আমার মনে হতে লাগলো যে আমি আসলে আমার মা বাবা সন্তান না । এই নীষাই এই বাড়ির মেয়ে আমি ঘরজামাই ।
এই মেয়েগুলা এমন চালু হয় কিভাবে ? রাতে অবশ্য নীষা আমার কাছে ভীড়তে পারে না । আমি সারা দিন বাইরে থাকি রাতে বাসায় যাই । খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি দরজা বন্ধ করে । রাতে নীষা মায়ের সাথে ঘুমায় । বাবা ঘুমায় গেস্ট রুমে ।
ঘুমাক । আমি কিছু বলবো না । দেখি কদিন এভাবে চলতে পারে । কাউকে বলি নি আমার এই বিয়ের কথা কিন্তু আজকে এই কথা সবাই জেনে গেল ।
বন্ধুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে বাইক নিয়ে বাসার দিকে এলাম । নীষাকে বাসায় না রেখে আসার আসতেই হল । রুনু আর মলি তো পারলে আমাকে চিবিয়ে খায়। সোজা বলে দিল যে নীষা পিছনে নিয়েই আমাকে বাসায় যেতে হবে নয়তো আজ থেকে গ্রুপের কেউ আমার সাথে কথা বলবে না । এতো মিষ্টি একটা বউয়ের কথা লুকিয়ে আমি এমনিতে তাদের কাছে বিরাট অপরাধ করেছি । আর এখন যদি নীষাকে এভাবে রেখে যায় তাহলে আমার খবরই আছে । কি আর করা বাইকের পেছনে ওকে নিয়ে আসতেই হল । বলতে গেলে বিয়ের পরে এই প্রথম ওকে আমার বাইকে তুললাম ।
বাসার সামনে ওকে নামিয়ে দিয়ে আবার যখন বাইক ঘুরাতে লাগলাম, নীষা বলল
-এখন কোথায় যাও ?
-সেটা জেনে তোমার কি দরকার ? তুমি বাসায় যাও ।
-দরকার আছে । এই রোদের ভেতরে কোথায় যাও বল ?
-আজিব তো । তুমি এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছো কেন ? আর এই রাইট তোমাকে কে দিয়েছে ? বাসায় যাও ।
-ভাত খাবা না ?
-না । আমার খিদে নাই ।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বাইক ঘুড়ালাম । বেশি প্যাঁচাল ভাল লাগে না ।
টিউশনী থেকে বাসায় আসতে আসতে মোটামুটি রাত আটটা বেজে যায় । আজকে আরও ঘন্টা খানেক পরে এলাম । খাবার টেবিলে দেখি মা বাবার সবার মুখ গম্ভীর । বুঝলাম এই বদ মেয়ে নিশ্চয়ই আমার নামে কিছু বলেছে । অবশ্য নীষার মুখও গম্ভীর ছিল ।
বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুই নীষার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস কেন ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করলাম । বলল
-কি বলছো তুমি ? আমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করলাম কই ? আজকে রবং ওকে বাইকে করে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় নিয়ে এলাম ।
-আমি এতো কথা শুনতে চাই না । এরপরে যেন ওর সাথে কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার না করা হয় । ব্যাপার টা ভাল হবে না ।
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে খেতে লাগলাম ।
রাতে ঘুমানোর আগে মা ঘরে এসে বলল
-মেয়েটার সাথে কঠিন করে কথা না বললেই হয় না ? বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থা ।
-মা, যখন বুঝতেই পারছো তাহলে কেন বলছো ?
-তুই মেয়েটার দিক টাও একটু দেখ । এতো মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করিস কিভাবে ?
আমি কোন কথা না বলে পিসির দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
মা বলল
-আজ তোর জন্য মেয়েরা সারা দুপুর না খেয়ে আছে । এভাবে কেউ কথা বলে ?
আমি তবুও কোন কথা বললাম না । চুপ করেই রইলাম । তবে একটা বার মনে হল আমার জন্য না খেয়ে থাকার কি হল এমন ?
পরদিন সকালে অবশ্য নীষাকে নিয়েই যেতে হল ক্যাম্পাসে । সেখানে পরিস্থিতি বদেল গেল । আমার বন্ধুদের আড্ডায় নীষা হাজির হতে লাগলো । এবং অবাক হয়ে দেখলাম আমার থেকে আমার বন্ধুরা ওর দিকেও বেশি এটেনশন দিচ্ছে । বুঝতে পারলাম আমার এখানেও থাকা চলবে না । আর দিন দিন নীষার খবরদারী যেন বাড়তে লাগলো । মা আবার বাবাকে এমন ভাবেই এই মেয়ে পটিয়ে ফেলল যে তাকে ছাড়া তারা যেন কিছুই বুঝে না । আর আমি যেন জলের বাঁনে ভেসে এসেছি ।
একদিন মেয়েটার সাহসের চুড়ান্ত করলো । আমি ঘরে বসে ছিলাম । একটু পরে টিউশনীতে বের হব । এমন সময় নীষা আমার ঘরে এসে হাজির । নীষা সব কিছু করলেও আমার ঘরে আসার সাহস পেত না । তবে সেই ভয়ই মনে হয় উঠড়ে গেল । আমার কাছে এসে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-এই, এক হাজার টাকা দাও ।
আমি প্রথমে কিছু বুঝতে পারলাম না । বললাম
-কি ?
-বললাম এক হাজার টাকা দাও ।
-তোমাকে আমি টাকা দেব কেন ?
-বারে তুমি টাকা দেবে না তো কে দিবে ? আমি অন্যের কাছে টাকা চাইবো নাকি ?
এরপর খুহব স্বাভাবিক ভাবে আমার মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টা বের করে নিল । আমি এতোটাই অবাক হয়ে গেলাম যে কিছু বলার মত ভাষাই খুজে পেলাম না । সে যে আমার বউ, স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে লাগলো ।
তবুও মেয়েটাকে একটু দুরে দুরে রাখলাম । নীষা এখনও মায়ের সাথেও ঘুমায় । কিন্তু সেই দিনও শেষ হয়ে এল । সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারলাম কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । মায়ের কাছে গিয়ে জানতে পারলাম যে নানার শরীর নাকি হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেছে । এখনই যেতে হবে । আমিও যাওয়ার জন্য তৈরি হতে গেলে মা বলল
-তোর যেতে হবে না ।
-কেন ?
-নীষার কাল পরীক্ষা আছে । ওকে থাকতে হবে । তুইও থাকবি ।
-মানে কি ?
বাবা পেছন থেকে বলল
-মানে কি রে গাধা । আমি আর তোমার মা যাচ্ছি । বউমা আর তুই থাক বাসায় । খুব বেশি সমস্যা হলে তোকে ফোন দিবো তুমি নীষাকে নিয়ে চলে আসবি ।
-কিন্তু মা …
-কোন কিন্তু না ।
বাবা মা চলে গেল । নীষা দরজা বন্ধ করতে করতে আমার দিকে অদ্ভুত চোখ তাকালো । দুষ্টামীর একটা ছায়া যেন আমি ওর চোখে দেখতে পেলাম ।
সেদিন ক্যাম্পাসে গেলাম না । আমি রাতের বেলা নিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে আছি । মেয়েটা রাতে কোথায় ঘুমাবে ? আমার সাথে নাকি ? মাই গড । এখন ?
তবে নীষাকে যতই কাছে আসতে দেই না কেন মেয়ে হিসাবে সে আসলেই একটা লক্ষ্যি মেয়ে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । দুপুরে চমৎকার ভাবে আমার জন্য রান্না করে টেবিলে খেতে দিল । রাতের খাবারের পর সব কিছু গোছাগাছ করে আমার আশে পাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম যে ওর ঘুম আসছে কিন্তু একা একা ঘুমাতে সাহস পাচ্ছে না ।
মা ফোন দিলেন । আমাকে নীষার সাথে ঘুমাতে বললেন । নিজের বউয়ের পাশে ঘুমাতে সমস্যা কোথায় বলে আরও কত কিছু বললেন ।
নীষা আমার ঘরের ভেতরে একবার আসে আবার চলে যায় । একবার বিছানার উপরে বসে আবার জানলার কাছে যায় । তারপর থাকতে না পেরে বলল
-আমি এই এক পাশে ঘুমাই ?
ওর দিকে তাকালাম । তারপর শান্ত কন্ঠে বললাম
-ঘুমাও ।
আমার অনুমুতি পেয়ে মেয়েটা যে কি পরিমান খুশি হল আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না । আরও ঘন্টা খানেক পিসি তে বসে থাকার পরে আমি নিজেও বিছানায় গেলাম । সত্যি বলতে কি নিজের কাছে একটু অস্বস্তি লাগছিল । আমার পাশেই একটা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে । যদিও আমারই বউ তবুও অস্বস্তি কাটলো না । লাইট বন্ধ করে চোখ বুঝে রইলাম কিছুটা সময় । ভাবতে লাগলাম সাত-পাঁচ । পাশে নীষা চোখ বন্ধ করে আছে । তবে আমার কেন জানি মনে হল ও ঘুমায় নাই । তারপর কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের পাই নি ।
হঠাৎ করেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ।
অনুভব করলাম নীষা আমার শরীরের খুব কাছে চলে এসেছে । আমাকে বলতে গেলে জড়িয়ে শুয়ে আছে । বাইরে ততক্ষনে জোছনা । জানলা দিয়ে আলো এসে নীষার ঘুমন্ত চেহারার উপরে পরছে । আমি নীষার ঘুমন্ত চেহারা দিকে তাকিয়ে কয়েকটা মুহুর্ত অন্য কোন চিন্তা এল না । এতো মায়াবী মুখ আমি এর আগে কোন দিন দেখেছি বলে মনে হয় না । কিছুতেই ওর দিক থেকে চোখ সরাতে পারলাম না । তাকিয়ে রইলাম । কেবল মনে হতে লাগলো যে এই চেহারার দিকে আমি সারা জীবন তাকিয়ে থাকতে পারবো ।
বুঝতে পারছিলাম আমার নিজের ভেতরে কিছু একটা পরিবর্তন আসছে । অদ্ভুত সেই অনুভুতির কোন তুলনা নেই । আমি কেবল নীষার দিকে তাকিয়েই রইলাম । নিজের কাছেই বড় বেশি অদ্ভুত লাগছিলো । ভোর বেলা পর্যন্ত আমি ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম এক ভাবে । তারপর ওর কপালে একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে ওর গা ঘেষে শুরু পড়লাম ।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো বেশ বেলা করে । পাশে দেখি নীষা নেই । ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে আসতে না আসতেই নাস্তা এসে হাজির । নীষার অন্যান্য দিনের মত আজকে সেলোয়ার কামিজ না পরে শাড়ি পড়েছে । চুল ভেজা তার মানে গোসল করেছে । ওকে যেন আরও একটু অন্য রকম লাগছে । গত রাতের ওর দিকে তাকিয়ে থাকাটার কথা মনে পড়ে গেল । আমি পরোটা মুখে দিতে দিতে বললাম
-তোমার পরীক্ষা কখন ?
-পরীক্ষা নেই ।
-মানে কি ?
-মানে আমি মিথ্যা বলেছি ।
-কেন ?
আমার কথা শুনে হেসে ফেলল । আমি ধরে ফেললাম ও কেন মিথ্যা বলেছে । কিছু বা বলে কেবল তাকিয়েই রইলাম ।
এই মেয়ে দেখছি আসলেই বিরাট বদ ।
নীষা পরোটা মুখে দিতে দিতে বলল
-আর থেঙ্কিউ ।
-কেন ?
এর কেনর উত্তর দিলো না । কেবল হাসলো । তারপর মুখ দিয়ে একটা ইশারা করেলো । আমি মোটেই বুঝতে কষ্ট হল না মেয়েটা কি বোঝাতে চাইছে ।
এই মেয়ে আসলেই চালু আছে । সামনের জীবনে আমার খবরই আছে ।
-দুষ্ট হয়েছো তাই না ?
-হুম ।
বলে আবার সেই দুষ্টামীর হাসি ।
-দাড়াও । তোমাকে মজা দেখাচ্ছি ।
-এই খবরদার উঠবে না । খবরদার বলছি কাছে আসবা না ?
আমি নিজের চেয়ার থেকে উঠি পর্যন্ত নাই । নীষা চাচ্ছে যেন আমি উঠি ওর দিকে যাই ।
দাড়াও নাস্তা আগে শেষ হোক । তোমার মজা দেখাচ্ছি ……..
তারপর …….. এতো কিছু জানতে হবে না ।
কতবার যে পড়েছি এটা..ওয়াটপ্যাডে সেভ করা আছে বড় গল্প..