আমি তোমাদের মত নই

oputanvir
4.8
(25)

মাঝেমাঝে মানুষের জীবনে এমন কিছু মুহুর্ত আসে যখন মানুষ সামনের ঘটনা কিংবা ঘটনার ফলাফল নিয়ে খুব একটা ভাবে না । তখন সে কেবল তার মনের কথা শুনেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করে । আমার জীবনে সম্ভবত এমন একটা সময় ঠিক আমার সামনে হাজির হয়েছে । আমি এই রকম পরিস্থিতিতে কোন দিন পড়ব, ভাবি নি । অন্য স্বাভাবিক সময়ে হলে আমি হয়তো পালিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতাম। যেমনটা সব সময় করেছি কিন্তু আজকে আমি পালিয়ে যেতে পারলাম না । স্থির  হয়ে এক স্থানে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে । এখনই মেয়েটাকে গুলি করা হবে! 

আমার ভেতরে কী হল আমি জানি না । আমি সাইকেলটা এক পাশে ফেলে সোজা সেদিকেই দৌড় দিলাম । চারিদিকে মানুষজন যে যেদিকে পারছে সেদিকে দৌড়াচ্ছে । এতো চিৎকার চেঁচামিচি যে কারো কোন দিকে তাকানোর সময় নেই। সবাই নিজের প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত। আমারও নিজের প্রাণ বাঁচানোর কথাই ভাবা দরকার ছিল কিন্তু আমি সেদিকে না চিন্তা করে মেয়েটার দিকে দৌড়াচ্ছি ! কেন দৌড়াচ্ছি আমি নিজেও জানি না ! একেবারে শেষ মুহুর্তে আমি মেয়েটির দিকে ঝাপিয়ে পরলাম। আর ঠিক তখনই আমার কাধের কাছে একটা তীব্র ব্যাথা অনুভব করলাম। এতোটাই তীব্র যে আমার চেতনা মনে হল লোপ পেল । আমার কাধটা যেন আমার শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে, এমন মনে হল! আমি সেটা না ভাবার চেষ্টা করলাম। ব্যাথাটাকে উপকেক্ষা করার চেষ্টা করলাম কেবল । নিজের শরীর দিয়ে মেয়েটার শরীর পুরোপুরি ভাবে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করলাম । যদি আরেকটা গুলি আসেও সেটা আমার শরীরে লাগবে । আরও দুটো গুলি এসে অবশ্য চলল। তবে আমাদের শরীরে লাগল না । যে গাড়িটার পাশে মেয়েটা ছিল সেটাতে লাগার শব্দ শুনতে পেলাম । 

আমার মনে হল এই আমার জীবনের শেষ সময় চলে এসেছে। আমি মেয়েটিকে খুব কাছ থেকেই জড়িয়ে ধরেছি। মেয়েটি কাঁপছে ভয়ে। আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম, ভয় পেও না । কিছু হবে না।

যদিও আমি নিজেও এই কথাটা বিশ্বাস করি না । আমি জানি এখনই ওরা চলে আসবে।  এখনই হয়তো মেয়েটাকে মেরে ফেলবে। সেই সাথে আমাকেও !

তখনই আরেকটা গুলি এসে লাগল আমার পিঠে। আমার মনে হল যেন আমি এখনই মারা যাবো । সম্ভবত মেয়েটা নিজেও বুঝতে পেরেছে আমার শরীরে গুলি লেগেছে । সেই জড়িয়ে ধরে থাকা অবস্থাতে মেয়েটির চোখের সাথে আমার চোখ মিলল । অশ্রুমিশ্রিত সেই চোখের দিকে আমার শেষ বারের মত মনে এই চোখ দুটো যেন আমার অনেক দিনের চেনা । এই এমন ভাবে আমার দিকে অনেক আগে তাকিয়ে থাকত । অভিমান করত আবার রাগও করত !

জীবনের শেষ  সময়ে এসে আমার একটা অনুভূতিই কেবল হল ! কিছু একটা তো করেছি অন্তত । মেয়েটাকে বাঁচাতে পেরেছি । পেয়েছি কি ! অন্তত চেষ্টা তো করেছি!

আমার আর কিছু মনে নেই । আমি চোখ বুঝলাম !

দুই

চোখ মেলে সাদা সিলিংয়ের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলাম । এখানে কেন আমি এলাম সেটা মনে করার চেষ্টা করলাম। কিছু সময় আমি কিছুই মনে করতে পারলাম না । আমার মনে পড়ল আমি যেখানে থাকি সেই ঘরের সিলিং সাদা নয় । কিন্তু এই সিলিংটা একেবারে সাদা । এছাড়া ঘরটা সম্পূর্ন ভাবে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত । আমি এসি একদম পছন্দ করি না। ট্যুরের সময়টা বাদ দিলে কোন এসিওয়ালা রুমে আমি কখনো ঘুমাই নি। তাহলে আমি এখানে কেন?

আমি একটু নড়তে গেলাম আর তখনই ব্যাথায় আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠল আর তখনই চট করে আমার সব কিছু মনে পড়ে গেল । আমি গুলি খেয়েছিলাম ।  আমার সব কিছু কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে মনে পড়ল  । আমি তো ভেবেছিলাম যে আমি মারা যাব । মারা কি গেছি? এটা কি বেহেস্ত? 

কারণ, দোজকে তো এতো সুন্দর সুযোগ সুবিধা থাকার কথা না । আর আমার মত মানুষ তো বেহেস্তে যাওয়ার কথা না । তার মানে হচ্ছে আমি এখনও মরি নাই। 

আমি আরও কিছু ভাবতে যাব তখনই দেখতে পেলাম মেয়েটাকে । আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে । মেয়েটাকে পরিচিত মনে হল ! কয়েক সেকেন্ড লাগল মেয়েটার চেহারা মনে করতে ! আমার সেই শেষ সময়ে আমি এই মেয়েটির চোখই দেখেছিলাম । এই মেয়েটিকেই বাঁচাতে গিয়ে আমি গুলি খেয়েছিলাম !

মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এখন কেমন লাগছে?

আমি নিজের শরীরটা আরেকটু নাড়ানোর চেষ্টা করলাম আর সেই সময়ে আবারও সেই ব্যাথাটা অনুভব করলাম ! মেয়েটির কেমন আছি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আমি মেয়েটির কাছে জানতে চাইলাম, আমি হাসপাতালে কত দিন ধরে আছি?

-আপনি ছয়দিন অজ্ঞান ছিলেন!

-ছয় দিন!

-হ্যা । আপনাকে বাবা সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তবে আপনার অবস্থা এতোটাই নাজুক ছিল যে আপনাকে মুভ করানোর রিস্ক নেওয়া যায় নি। 

-আপনার বাবা ! 

মেয়েটা কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইল । তারপর বলল, আপনি আমাকে চিনতে পারেন নি, তাই না?

আমি এবার মেয়েটির দিকে ভাল করে তাকালাম । মেয়েটিকে কি আমি এর আগে কোন দিন দেখেছি? সেইদিন হামলার সময়ে মেয়েটিকে দেখেছি মাত্র । তার আগে তো মেয়েটিকে আমার দেখার কথা না ! কিন্তু খানিকটা কি পরিচিত মনে হচ্ছে মেয়েটাকে?

আমি সেদিনের কথা আবার মনে করার চেষ্টা করলাম । সেদিন বিকেল বেলা আমি পড়ানোর জন্য বের হয়েছিলাম সাইকেল নিয়ে। মানিক মিয়া এভিনিউয়ের মাঝ বরাবর আসার সাথে সাথেই ঘটনাটা আমার চোখের সামনে ঘটল । ছুটির দিন ছিল বলে গাড়ির সংখ্যার কম ছিল কম । আমি দেখতে পেলাম একটা বড় হ্যামার গাড়ি আরেকটা সাদা পারেজো গাড়িকে পেছন থেকে ধাক্কা দিল । সাদা পাজেরোটা উল্টে গেল । তারপরই হ্যামার গাড়ি থেকে কয়েকজন বন্দুরধারী নেমে এসে গুলি চালানো শুরু করল । এই সব ঘটনা আমার চোখের সামনে ঘটে গেল কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে । 

আমি দেখতে পাচ্ছিলাম ততক্ষণে মানুষজন সব দৌড়ানো শুরু করে দিয়েছে । আমার নিজেরও তখন সাইকেল ঘুরিয়ে পালানোর কথা । আমি তাই করতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তখনই মেয়েটাকে দেখতে পেলাম । উল্টে যাওয়া গাড়ি থেকে কোন মতে বের হয়ে এসেছে । কয়েক জায়গাতে কেটে গিয়েছে। তার আশে পাশের বডিগার্ড যারা ছিল তারা সবাই মারা পড়েছে । এখন কেবল তার পালা ! 

আমার তখন কী করার দরকার ছিল আমার জানা নেই । এখানে মেয়ে না হয়ে যদি কোন পুরুষ থাকত তাহলে আমি নির্দ্বিধায় সেখান থেকে কেটে পড়তাম কিন্তু মেয়ে বলেই হয়তো আমি যেতে পারলাম না । আর এক হিসাবে আমার জীবনে আসলে কোন মূল্য খুব একটা নেই । আমি সাইকেল থেকে নেমে সরাসরি মেয়েটির দিকে দৌড় দিলাম । 

আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, আমার কি আপনাকে চেনার কথা?

মেয়েটি হাসল । তারপর বলল, একেবারে না চিনে একজনের জন্যে ভাবে গুলি খেয়ে মরতে বসেছিলেন?

আমি কথাটার জবাব দিতে পারলাম না । আমি আসলে এখনও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারব না যে আমি কেন ওভাবে মেয়েটির সামনে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম । সত্যিই আমি জানি না । আমার কাছে কোন ব্যাখ্যা নেই । তবে ঐ যে এমন কিছু আমাদের জীবনে আসে যখন আমরা কোন চিন্তা ভাবনা না করেই কেবল আমাদের মনের কথা শুনে কাজ করি। আমার কাজটাও বুঝি সেই একই রকম !

মেয়েটি বলল, আপনার আব্বা মায়ের কোন খোজ বের করতে পারি নি আমরা ! 

-পারার কথাও না । আমার বাবা মা কেউ বেঁচে নেই । আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন বাবা মারা যায় । এসএসসির পরে পরে মা চলে যায় । আমি আমার ছোট মামার কাছে মানুষ হয়েছি। উনি এখন সৌদি থাকেন । সেই হিসাবে দেশে আমার কেউ নেই বলা চলে ! 

তখনই আমার অফিসের কথা মনে পড়ল । আমি যদি ছয়দিন এখানে থাকি তার মানে আমার চাকরি সম্ভবত চলে যাবে । এমনিতেও আমার অফিসের বস আমাকে ছাটাই করার ধান্দায় আছে । এই যে ছয় দিনের কামাই সেটা সে ভাল কারণ হিসাবে বের করবে। বুঝলাম যে নতুন চাকরি খুজতে হবে । টিউশনিটা থাকলে হয় ! অবশ্য সপ্তাহে দুইদিন ওখানে যাই । তার মানে কামাই হয় নি খুব একটা । তবে শরীরের যা অবস্থা তাতে সামনে কদিন যেতে পারব বলে মনে হয় না । সেই হিসাবে সেটাও চলে যেতে পারে। 

তখনই আমার মনে পড়ল যে আমার সে সাইকেলটা ওখানে ছিল? সেটা কোথায়?

আমি অবশ্য আর নতুন করে কিছু ভাবার সময় পেলাম না । কারণ দেখলাম কেবিনে একজন মানুষ এসে ঢুকেছে। মেয়েটি তার দিকে ফিরে তাকাল তবে উঠে দাড়াল না । আমি পাশ ফিরে তার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। আর তখনই আমি মেয়েটিকে চিনতে পারলাম ! তীব্র একটা বিস্ময় আমার মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। আমার কাছে সব কিছু ধীরে ধীরে পরিস্কার হয়ে উঠল । 

আমার মনে এই প্রশ্নটা সব সময়ই ছিল যে মেয়েটির উপরে হামলা কেন হল ! আমাদের এই দেশে দিনের আলোতে এভাবে কার উপরে হামলা হওয়ার কথা না । খুব নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় সে গুরুত্বপূর্ণ কেউ হবে । তবে এতো গুরুত্বপূর্ণ কেউ যে হবে সেটা আমি ভাবতেও পারি নি।

-হাউ আর ইউ ইয়াংম্যান ?

আমি কোন জবাব দিতে পারলাম না । আসলে আমার বিস্ময়ের ভাবটা তখনও যায় নি। আমি কেবল অবাক হয়েই মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলাম । 

আমার সামনে দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান বিরোধী দলের নেতা আতাউল আজিজ দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবং খুব নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যায় যে আমার বিছানার উল্টোদিকে যে মেয়েটি বসে আছে সে প্রেসিডেন্টের মেয়ে নামিয়া আজিজ।  

-তুমি তো ন্যাশনাল হিরো হয়ে গেছ?

আমি এবারও চুপ করে রইলাম । আতাউল আজিজ বললেন, তুমি হয়তো জানো না যে সন্ত্রাসীরা এই পুরো ব্যাপারটাই ভিডিও করছিল । মূলত ওরা চেয়েছিল যে আমার মেয়েকে হত্যা করে  সেই ভিডিও পুরো বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে দিবে । তবে তুমি মাঝখান দিয়ে এসে সব কিছু পন্ড করে দিলে । ওদের সবাই মারা পরেছে । ওদের কাছ থেকেই সেই ভিডিও আমরা উদ্ধার করেছি । সেটা এখন সব টিভি টিভিতেই প্রচার হচ্ছে  যে কিভাবে তুমি আমার মেয়েকে বাঁচিয়েছো ! এছাড়া ওখানে থাকা অনেকেই ভিডিও করেছে পুরো ব্যাপারটা । 

এসব শুনতে শুনতে আমি খানিকটা অবাক হলাম বটে । তবে সেই অবাক আর বিস্ময়ের ভাবটা আমার ভেতরে খুব বেশি সময়ে থাকল না । পআতাউল আজিজ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ে  খোজ নিয়ে জানতে পারলাম যে তুমি নাকি ছাত্র থাকা অবস্থায় আমার দল করতে । সত্যিই নাকি? তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা সভাপতি আমাকে তাই জানাল । তোমার সাথে তার নাকি পরিচয়ও আছে ।  সবাই তো বলছে দলের জন্য তুমি তোমার জান দিতেও প্রস্তুত !

আমি এবার অন্য কারণে বিস্মিত হলাম। তিনি আবার বললেন, তোমার ইন্টারভিউয়ের জন্য কয়েকজন মুকিয়ে রয়েছে । আশা করি একটু সুস্থ হলেই সব কথা বলবে!

আমি এবার বললাম, জ্বী বলব ।

-তোমার কাছে একটা প্রশ্ন করব?

-জ্বী করুন ।

-ধর ঐদিন নামিয়ার স্থানে যদি আমি থাকতাম, তাহলে তুমি কী করতে?

আমি প্রশ্নটা নিয়ে ভাবলাম। যদি ঐ দিন কোন মেয়ে না থেকে অন্য কেউ থাকত তাহলে আমি কি এই কাজটা করতে পারতাম ?

আমি এবার বললাম, আমি আপনাকে বাঁচাতাম না । সাইকেল ঘুরিয়ে চলে যেতাম । আপনার জন্য নিজের জীবন খোয়ার প্রশ্নই আসে না!

আমি দেখতে পেলাম সে আমার দিকে একভাবে কিছু সময় তাকিয়ে রইল । তারপর একটু মুচকি হেসে বলল, আই লাইক ইয়োর অনেস্টি ! যাই হোক, আমি একটু ব্যস্ত মানুষ। আমার মেয়ের উপর হামলা নিয়ে দেশে বড় আন্দোলন শুরু হয়েছে। সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। আজকে আসি । আবার আসব । তোমার জন্য কিছু করতে পারি? বিশেষ করে আমার মেয়েকে তুমি রক্ষা করেছ ! 

-আমার সাইকেলটা খুজে দিবেন প্লিজ । ঐদিন আমি সাইকেলটা ওখানে ফেলে এসেছি। নতুন সাইকেলের দরকার নেই । আমার ঐটা খুজে দিলেই চলবে !

আমার এই কথা শুনে আতাউল আজিজ খুব হাসলেন । তারপর বললেন, তুমি আসলেই মজার মানুষ । চিন্তা কর না তোমার সাইকেল যে কোন মূল্যেই আমি উদ্ধার করে দিব ।

আমার কেন জানি মনে হল সুস্থ হওয়ার পরে আমার জীবন আর আগের মত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে না ।

তিন

প্রায় মাস দেড়েক পরে আমি আবার অফিসে যোগ দিলাম । আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমার চাকরিটা থাকবে না তবে আমাকে অবাক করে দিয়ে সপ্তাহ খানেক পরেই দেখলাম আমার বস হাসপাতাল এসে হাজির । আমাকে সে জানাল যে আমার কাজে সে খুবই খুশি। এমন সাহসি মানুষ তার অফিসে চাকরি করে, এটাতে সে খুব গর্ববোধ করছে। অবশ্য কারণটাও বুঝতে পারলাম সেইদন রাতেই । দেখলাম আমাদের  কোম্পানীর ফেসবুক পেইজে আমার কয়েকটা ছবি ছাপা হয়েছে । আমি সে তাদের কোম্পানীর একজন কর্মচারি সেটা নিয়ে একটা পোস্টও হয়েছে । লাইক কমেন্টের বন্যা বয়ে গেছে।

আমি আমার ফেসবুক একাউন্টটা লক করে রেখেছি। কত যে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসেছে তার কোন হিসাব নেই । সবাই আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চায়  । অথচ এর আগে আমার লিস্টে দুইশ জনের মত মানুষ ছিল ।  আমি নতুন করে আর কারো সাথেই যুক্ত হলাম না । বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আমার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাইছিল। আমি কারো সাথেই কথা বললাম না। তবে যে কয়টা কথা আজিজ সাহেবের দল ছড়িয়েছিল সেই ব্যাপারে একটা পরিস্কার বক্তব্য জানিয়ে আমি একটা পোস্ট দিলাম । পোস্টটার বক্তব্য ছিল যে আমি মোটেই সাবেক প্রেসিডেন্টের দল মৈত্রী দল করতাম না । তাদের দলের কোন সমর্থকও নই আমি । আমি কেবল ঐদিন স্পটে হাজির হয়েছিলাম । তখন আমার মনে আসলে কী চলছিল আমি জানি না । আমি যে কাজটা করেছি সেটা কোন সাহসীকতা থেকে করি নি । তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া থেকে করেছি। আমাকে দয়া করে কেউ যেন হিরো নায়ক না ভাবে। সেই সাথে এটাও জানালাম যে বর্তমান সরকারের কোন কর্মী নই আমি। আমি কোন দলের সাথেই নেই।

মাস দুয়েকের ভেতরে আমার জীবন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এল । তবে আমি রাস্তা চলাচলের সময় এবার থেকে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করতে শুরু করলাম যাতে কেউ আমাকে সহজে চিনতে পারে না । তবে অফিসে আমার অবস্থান বেশ ভাল ভাবেই বদলে গেল । সবাই আমাকে এখন খানিকটা সমীহ করেই কথা বার্তা বলতে শুরু করল । 

এই সবের সাথে নতুন একটা ঝামেলা এসে হাজির হল । সেটা হচ্ছে ডিএফআইয়ের নজরদারী । আমি একটা ব্যাপার সব সময়  খেয়াল করতে শুরু করলাম যে আমার উপরে একটা চোখ যেন সব সময় রয়েছেই। একদিন রাতের বেলা আমি বের হয়েছি সাইকেল নিয়ে । আমি আগে সময় পেলেই বের হতাম তবে এখন আর দিনের বেলা বের হই না । রাতের বেলা এদিক ওদিক যাই । আজও সেই ভাবে এদিক ওদিক সাইকেল চালাতে বের হয়েছিলাম । বেশ কিছু সময় সাইকেল চালানোর পরে চন্দ্রিমা উদ্দানে গিয়ে এক অন্ধকার স্থানে বসলাম । সেই সময়েই আমি তাকে দেখতে পেলাম । এই মানুষটাকে আমি আগেও দেখেছি। বিশেষ করে যখন হাসপাতালে ছিলাম তখন আমাকে দেখতে বর্তমান প্রেসিডেন্টও এসেছিলেন। এই লোকটা তখন সাথে ছিল। সম্ভবত ব্যক্তিগত সিকিউরিটি প্রধান উনি । নাম আমি জানি না । হাসপাতালে থাকা কালে সিকিউরিটির অন্য কেউ কেবিনের ভেতরে না ঢুকলেও এই মানুষটা ঢুকেছিল প্রেসিডেন্টের সাথে। কিছু পুরানো ভিডিও দেখছিলাম ইউটিউবে । সেখানেও আমি সব সময় এই মানুষটাকে প্রেসিডেন্টের পাশেই দেখেছি । 

সে কোন কথা না বলে আমার পাশে বসল। আমিও কোন কথা বললাম না । চুপচাপ বসে থাকলাম যেমন ছিলাম।

-আমি আপনার ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না ঠিক মিস্টার রাশেদ হাসান !

আমি তার দিকে না তাকিয়েই বললাম, আমার ব্যাপারে বোঝার  কিছু নেই । আমি তো বুঝতেই পারছি না যে আপনারা আমার পেছনে সময় কেন নষ্ট করছেন? সব সময় আমার পেছনে লোক লাগিয়ে রাখার কি কোন দরকার আছে?

লোকটা হাসল । তারপর বলল, কিছুটা দরকার তো আছেই । আপনাকে স্বয়ং বর্তমান এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট তাদের বাসায় ডেকেছেন ! ডাকছেন ! সাবেক প্রেসিডেন্টের মেয়ের জন্য আপনি শরীরে গুলি খাচ্ছেন । আপনার ব্যাপারে তো খোজ খবর নেওয়া আমাদের কর্তব্য !

-তো খোজ খবর নিয়ে কী জানলেন? কিছু পেয়েছেন?

-সেটাই তো ! কিছুই পাই নি । অন্য আর দশটা সাধারণ মানুষের থেকে আর বেশি কিছু নন । 

-কারণ আমি তাই। আমি মহান কেউ নই । এই কথাটা দয়া করে মাথায় ঢুকিয়ে নিন। ঐদিন আমি যে কাজটা করেছি সেটা কেন করেছি আমি নিজেও জানি না ।

-বুঝলাম। স্যার যে আপনাকে দুইবার তার বাস ভবনে যেতে বলল আপনি গেলেন না কেন?

-আমি কি যেতে বাধ্য?

আমার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো সে। তারপরে বলল, না বাধ্য না । তবে দেশ প্রধান যদি ডাক দেয় শোনা উচিৎ !

-আমার মানুষের সাথে বেহুদা কথা বার্তা বলতে ভাল না । বিশেষ করে যারা আমার কাছের মানুষ না তাদের সাথে।  আর আপনার দেশ প্রধান এবং সাবেক দেশ প্রধানদের সাথে আমার কোন আলাপ নেই । আর তারা আমার সাথে আলাপ করতে চাচ্ছে এর ভেতরেও তাদের না কোন রাজনীতি আছে, স্বার্থ আছে । আমি তাদের রাজনীতির টুল হতে চাই না। এই জন্যই আমি দুরে আছি। আমি সাধারণ মানুষ সাধারণই থাকতে দেন । 

লোকটা উঠে দাড়াল । তবে যাওয়ার আগে বলল, নামিয়া আপনাকে পছন্দ করা শুরু করেছে। এটা স্বাভাবিক আসলে । আপনি যাই ব্যাখ্যা দেন না কেন আপনি যে কাজটা করেছেন সেটা সম্ভবত তার বাবাও করতো না । তার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন । মেয়েটা তার বাবার মত না । আর আজকের পর থেকে আপনার উপরে নজরদারি বন্ধ হবে । এই টুকু বলি । 

ঐদিনের পরে আমার উপর থেকে নজরদারী বন্ধ হয়ে গেল । তবে নামিয়ার সাথে আমার টুকটাক কথা হতে লাগলাম । মেয়েটা প্রায়ই আমাকে মেসেজ করতে হোয়াটসএপে কিংবা রাতে টুকটাক কথা হত । সে অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করে । সে আমাকে জানাল যে পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে একটা পার্টটাইম কাজও করে । নিজের খরচ নিজেই চালানোর চেষ্টা করে । এটা বাবার যদিও পছন্দ না তারপরেও করে । 

তার বাবার জন্মদিন উপলক্ষ্যে নামিয়া দেশে এল ।  এবং আমাকেও যেতে হল সেই অনুষ্ঠানে । আমি সেখানে কাউকে চিনি না । তবে অবাক হয়েই দেখলাম অনেকেই আমাকে চেনে । কয়েকজন মন্ত্রী এমপি পর্যন্ত আমার সাথে এসে কথা বলল। আমি অবশ্য খুবই অস্বস্তি নিয়ে বসে রইলাম এক কোণে । সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শেষ হলেও নামিয়া আমাকে যেতে দিল না । সে আমাকে তাদের বাসার ভেতরে নিয়ে গেল। রাতের ঘরোয়া ডিনারেও আমাকে উপস্থিত থাকতে হল। সেই সময়েই আতাউল আজিজ আমাকে আবারও তার অফারটা দিল । তার মৈত্রী দলের যুব শাখার প্রেসিডেন্ট পদটা তিনি আমাকে দিতে চান । এটা তার দলের জন্য একটা ভাল কাজ হবে । আমার মত সাহসী লোক নাকি সেখানে দরকার ! সামনে তারা সরকার পতনের আন্দোলন করবেন । সেখানে আমি যদি থাকি তাহলে এটা তার দলের জন্য ভাল হবে !

আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই নামিয়া বলল, বাবা  তোমাকে না বলেছি এই সব কথা বার্তা না বলতে !

আতাউল আজিজ বললেন, সমস্যা কী শুনি? আমি তো বুঝছি না ও রাজি কেন হচ্ছে না ?

-কেউ যদি তোমার দল না করতে চায় তাহলে তাকে জোর কেন করছো ?

সেদিন রাতের বেলা আমি যখন বের হয়ে এলাম বাসভবন থেকে তখন আমার মনে হল যে আমাকে আবারও আসতে হবে। এবং সত্যিই আমাকে আরও কয়েকবার যেতে হল। 

এবং তারপরই একদন সেই সুযোগ এল ……

চার

আজকের ঘটনার পরিস্থিতি একেবারে আলাদা । মাস ছয় পার হয়ে গেছে। এর ভেতরে অনেক কিছুই পরিবর্তি হয়েছে। নামিয়াদের বাসায় আমার যাওয়া যাসা বেড়েছে অনেক বেশি।

ছুটি কাটাতে আতাউল আজিজ এসেছেন কক্সবাজারে । এখানে তার নিজেস্ব একটা বাংলোবাড়ি রয়েছে এবং নামিয়ার সাথে আমি নিজেও এসেছি এখানে । পিস্তলটা জোগার করা আমার জন্য খুব বেশি সমস্যা হয় নি । সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলটা আমি ঢাকা থেকেই নিয়ে এসেছি। সব সময় আতাউল আজিজের সাথে ছিলাম বলেই আমাকে বিন্দু মাত্র চেকও করা হয় নি। 

পিস্তলের নলটা সিকিউরিটি চিফ জামিলের দিকে তাক করে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছু সময় । সে তখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমি এমন একটা কাজ করতে পারি। তবে সে ভেবে নিয়েছে যে আমি হয়তো গুলি চালাব না । এই ভাবনা থেকেই সে আমার দিকে এক পা এগোতে গেলেই আমি সোজা গুলি চালিয়ে দিলাম। গুলিটা লাগল ঠিক তার পায়ের সামনে রাখা ফুলদানীতে। সে ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেল । আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, এটা অন্তত বুঝতে পেরেছেন যে আমার হাতের নিশানা ভাল । এরপরের কিন্তু আপনার বুকে লাগবে । দয়া করে অন্যের জন্য নিজের জীবন দিবেন না ।

আতাউল আজিজ তখনও আমার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে । দুই মুখোমুখী সোফাতে এক পাশে আতাউল আজিজ আর অন্য দিকে নামিয়া বসে রয়েছে । দুইজনের চোখ আমার দিকে । আরও ভাল করে বললে আমার হাতে ধরা পিস্তলের দিকে। 

আতাউল আজিজ নিজের সামলে উঠেই হুংকার দিয়ে বললেন, তোমার সাহস তো কম না ! এখনই পিস্তল রাখো এখনই ! 

আমি পিস্তলটা এবার তার দিকে তাক করলাম এবং কোন কথা না বলেই সোজা গুলি চালিয়ে দিলাম । গুলিটা একেবারে আতাউল আজিজের কানের কাছ দিয়ে চলে গেল । আমি নিশ্চিত সে সেই গুলিটাকে অনুভব করতে পারলেন খুব ভাল ভাবেই।

আমি তার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম, আমি আপনার দলের কর্মী না ! গলা নিচে নামিয়ে কথা বলুন ! এরপরেরটা কিন্তু একেবারে আপনার কপাল ভেদ করবে।

নামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে যেন একেবারে শক খেয়েছে আমার আচরণে ! আতাউল আজিজ বললেন, তাহলে সব কিছু প্লান ছিল ? এত দিন এই সব নাটক !

-না, ওসব কিছুই নাটক ছিল না । বলতে পারেন আপনাকে খুন করার যে তীব্র ইচ্ছে আমার মনে ছিল সেটার জন্য উপরওয়ালা আমার জন্য একটা সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। 

-তুমি ভেবেছ আমাকে মেরে তুমি বেঁচে যাবে ?

-নাহ ! আমার বাঁচার কোন ইচ্ছেও নেই । আপনি আমার বাঁচার সেই ইচ্ছেটা খুন করেছেন । এই জন্য সেদিন বন্দুকের সামনে ঝাপ দিয়েছিলাম। আপনিই বলেন যে যার বাঁচার ইচ্ছে থাকে সে কি এমন কাজ করতে পারে? 

দেখলাম আতাউল আজিজ আমার দিকে তীব্র চোখে তাকিয়ে আছে। আমি তার দিকে পিস্তল তাক করেই বললাম, আপনাকে খুন করার আগে একটা কনফেশন চাই । আজ থেকে ছয় বছর আগে আপনার বিরুদ্ধে যে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেটা ঠেকাতে আপনি পুলিশকে সরাসরি গুলি চালানোর অর্ডার দিয়েছিলেন । দেন নি? 

-যখন মেরেই ফেলবে তখন কনফেশ করব কেন?

-কারণ না করলে, আপনার পরে আপনার মেয়েকে আমি মেরে ফেলবে। বরং বলা যায় আপনার চোখের সামনেই আগে তাকেই মেরে ফেলব । 

নামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে এবার বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রয়েছে । চোখের কোণে পানি জমতে শুরু করেছে ওর ! সম্ভবত আমার কাছ থেকে এমন কোন বক্তব্য সে আশা করে নি।

আমি সেদিকে না তাকিয়ে আবার আতাউল আজিজের দিকে তাকালাম । বলুন, মিস্টার আজিজ। সেই গুলির আদেশ আপনি দেন নি ? তারপর সেই লাশ গুম করে ফেলেন নি? ১২০ জনের মত ছেলে মেয়ের লাশ কেউ খুজেই পায় নি। নিজের গদি বাঁচাতে এতোগুলো মানুষকে আপনি মেরে ফেলেছিলেন । একবারও বুক কাঁপে নি ? একবারও চিন্তা করেন নি নিজের মেয়ের কথা?

আমি দেখলাম তিনি কোন কথাই বললেন না । আমি আরেকবার তাগাদা দিলাম । 

-আমার হাতে সময় কম । আমি কেবল গুলি চালাব । কিছু ভাবব না । 

এই বলে আমি যখন পিস্তলটা নামিয়ার দিকে নিলাম তখনই আতাউল আজিজ বললেন, ওয়েট ! আমি বলছি। ওকে কিছু করবে না। আমি বলছি। 

একটু থামলেন তিনি । তারপর একটা জোরে দম নিয়ে বললেন, হ্যা । সেইবার আন্দোলন এতোটাই তীব্র হয়েছিল সেটা ঠেকাতে আমি আমার কিছু পছন্দের পুলিশদের গুলির অর্ডার দিয়েছিলাম। তাদের আলাদা টিম ছিল। আমার লক্ষ্য ছিল কিছু লাশ পরলেই সব ভয় পেয়ে যাবে। হয়েছিলও তাই। পুরো দেশের বিদ্যুৎ আর নেটওয়ার্ক ডাউন করে দিয়েই হামলা চালানো হয়েছিল । লাশগুলো গুম করে ফেলা হয়েছিল। 

আমার মনে এক তীব্র ঘৃণা এসে জড় হল । ইচ্ছে হল যে এখনই আমি ট্রিগার চেপে দিই। এখনই এই খুনীটার জীবন শেষ করে দিই। আমার চোখের সামনে সেই চোখ জোড়া আবার ভেসে উঠল । আমার সেই কাছের মানুষটার চোখ ! 

সে যেন আমাকে বলছে, না, তুমি এমন নাও । তুমি মোটেই এমন নও !

আমি আসলে ওদের মত হতে চেয়েছিলাম । কিন্তু আমার সেই ভালবাসার মানুষটা আমাকে ওদের মত হতে দেয় নি।

-আপনার ভালবাসার মানুষটিকে যদি কেউ মেরে ফেলে তাহলে আপনার কেমন লাগবে? এই  আপনার ভালবাসার মেয়ের দিকে পিস্তল তাক করতেই আপনি সব স্বীকার করে নিলেন! তেমনি ভাবে আপনার সেই দিনের হত্যাযজ্ঞে আমার ভালবাসার মানুষটি মারা গিয়েছিল। ওরা রাতে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছিল । আমি সব সময় আন্দোলন থেকে দুরে থেকেছি। কিন্তু নীরু থাকে নি। সে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছিল আন্দোলনে। সেই হামলার প্রথমের দিকেই সে মারা গিয়েছিল। তারপর আপনার খুনে বাহিনী তার লাশটা পর্যন্ত নিয়ে যায় । কোথায় কবর দিয়েছে সেটা পর্যন্ত আমি জানি না । আদৌও দিয়েছে কিনা সেটাও জানি না। আপনি যদি আমার অবস্থানে থাকতেন তাহলে আপনার কেমন লাগত?

আমি চাইলেই এখন গুলি চালাতে পারি । পৃথিবীতে আমি যাকে সব থেকে বেশি ঘৃণা করি সে মানুষটাকে এখন আমি গুলি করে মেরে ফেলতে পারি । আমাকে বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই। এতোদিন এই মানুষটার প্রতি পুষে রাখা ঘৃণার শেষ হতে পারে আজই ! একটা মাত্র ট্রিগার চাপলেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।

কিন্তু আমি সেটা করলাম না । আমি করতে পারলাম না । পিস্তলটা নামিয়ে নিয়ে উঠে দাড়ালাম। তারপর নামিয়ার সামনে গিয়ে বললাম, আমি তোমার বাবার মত খুনী না । 

তারপর পাশ কাটিয়ে দরজার দিকে হাটা দিলাম । 

পরিশিষ্টঃ

তারপর কেটে গেছে প্রায় ছয় মাস । এই সময়ের ভেতরে আমি নামিয়ার সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করি নি । সেও আমার কাছ থেকে দুরে থেকেছে। সেই দিন আমি ভেবেছিলাম হয়তো আমাকে পেছন থেকে আটক করা হবে । কিন্তু অদ্ভত কারণে জামিল সাহেব আমার পেছনে আসেন নি । ঢাকায় আসার পরেও আমার পেছনে পুলিশ আসে নি । তার মানে ঐদিনের ঘটনা নিয়ে আতাউল আজিজ কোন অভিযোগ করে নি। কেন করে নি সেটা আমি জানি না । 

আমি আমার আগের জীবনে ফিরে এসেছি আবার । অফিস যাই, বাসায় আসি । মাঝে মাঝে সাইকেলে করে ঘুড়ি । আর কোন কাজ নেই আমার জীবনে আর কোন লক্ষ্য নেই । তবে একদিন আবার আমার সাথে নামিয়ার দেখা হল। সন্ধ্যায় সময় তার ফোন এসে হাজির হল । বাসায় নিচে সে এসেছে ।

একটু অবাক হলাম বটে । তবে নিচে নেমে এলাম ।  দেখলাম গাড়িটা আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে । নামিয়া গাড়িতেই বসে রইল । আমি কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে নিজেই উঠে বসলাম গাড়িতে। আমি উঠে বসতেই গাড়িটা চলতে শুরু করল ।  

গাড়ি কত সময় চলল আমি জানি না । পুরো সময়ে আমাদের মাঝে কোন কথা হল না। যখন গাড়িটা থামল তখন বেশ রাত হয়ে গেছে । আমি জানিও না কোথায় এসে হাজির হয়েছি। গাড়ি থেকে নেমেই দেখতে পেলাম  আমরা একটা নির্জন গ্রামের পথে এসে থেমেছি। পথটা মাটির তৈরি। পথের ঠিক পাশেই একটা দেয়াল দেখতে পেলাম । গাড়ির আলোতেই পুরানো দেয়ালটার দিকে তাকিয়ে আমার যেন একটা হার্টবিট মিস করল । এটা একটা কবরস্থান !

নামিয়া আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে । আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, একেবারে কোনার দিকের কবরগুলো সেদিনের নিহতদের। কোনটা যে নীরুর আমি বলতে পারব না তবে এখানি থাকার সম্ভবনা বেশি !

আমি কিছু সময় বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম । অনুভব করলাম যে আমার ভেতরে একটা আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমার পা যেন একটু কাঁপছে।

আমি আস্তে আস্তে কবরস্থানে ঢুকলাম । অন্ধকারেও কেন জানি আমার চলতে অসুবিধা হচ্ছে না । আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম কবরগুলোর দিকে । এগুলোর একটার ভেতরে নীরু শুয়ে আছে !

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

সরাসরি মেসেজ পাঠাতে চিঠি.মি এপ ব্যবহার করুন।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 25

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →