তুমি কি ফিরে এসেছিলে? (পর্ব দুই)

oputanvir
4.6
(37)

নওরিনের চোখ তখন আবিরের দিকে । আজকে ওদের ক্লাস আর কলেজের বড় ভাইদের ভেতরে ম্যাচ হচ্ছে । যদিও ওর পাশে বসে থাকা সব ছেলে মেয়ে গুলোই ওদের ক্লাসকে সমর্থন করছে নওরিনের সমর্থন কলেজের বড় ভাইদের দিকে । কারণ সেখানে আবির খেলছে । আবিরই এখন ব্যাট করছে । এশ ভাল ক্রিকেট খেলে সে । বেশ কয়েকটা মেরেছে এর ভেতরেই। যদিও নওরিন চিৎকার করতে পারছে না । যদি করে তাহলে ওর পাশের মেয়েরা ওকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। যদিও সাদিয়া জানে ব্যাপারটা । সাদিয়া বসে আছে ওর পাশে বসে আছে । আবির একটা একটা করে রান নিচ্ছে আর সাদিয়া ওকে গুতো দিচ্ছে । নওরিনের অবশ্য খারাপ লাগছে না । 

খেলা শেষ হল । নওরিনদের ক্লাস হেরে গেল চার উইকেটে । যদিও নওরিন বাইরে থেকে মুখ ভার করে রাখল তবে মনে মনে ওর খুব মজা লাগছে । বেশ কয়েকবার আবির ফিরে তাকাল ওদের দিকে । ওকেই যে দেখছে সেটা বলে দিতে হল না । স্কুল শেষ করে যখন বাসার দিকে রওয়ানা দিল তখন টের পেল যে আবির ঠিক ওর পেছন পেছন আসছে । 

অন্য দিন সে রিক্সা নিয়েই বাড়ির দিকে যায় তবে আজকে নিল না । আস্তে আস্তে হাটতে লাগল । নওরিন ঠিক জানে ঠিক কোন স্থানে আসলেই আবির একেবারে ওর সামনে চলে আসবে । 

-কী ব্যাপার এতো জোড়ে কেন হাটছো?

-আস্তে কেন হাটব?

-রাগ করেছো?

-কেন রাগ করবো?

-এই যে তোমাদের ক্লাসকে গো হারা হারালাম !

-ইস আমার গো হারা ! মাত্র চার উইকেটে । আর বড় হয়ে এটা হতে পারে । আরেকটু হলে তো হেরেই যেতেন । আগ্যিস সুমন ক্যাচটা মিস করেছিল। নয়তো …

নওরিন বাক্যটা শেষ করতে পারলো না । তার আগেই আজকে আবির একদম ওর কাছে চলে এল । তারপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর ঠোঁটে চুমু খেল । নওরিন সত্যিই ভাবে নি যে আবিরের এতো সাহস হবে । এই স্থানে এসে আবির বড়জোড় হাত ধরে কিন্তু আজকে একেবারে চুমু !

একটু জোড়ে করেই সরিয়ে দিল!

আবির যেন অবাক হল। তারপর বলল, কী হল এটা?

-কী হল মানে? আপনার সাহস তো কম না! এমনটা আর করবেন না কখনও?

-কেন করব না?

-আমি বলেছি তাই। 

-এখন থেকে অনুমুতি নিতে হবে?

-হ্যা হবে ।

-ওকে ফাইন আর আসব না ।

শেষ লাইনটা যেন একটু কঠিন কন্ঠেই বলল। তারপর একটু জোড় কদমেই হেটে গেল সে । নওরিন দাঁড়িয়ে পড়ল । বুঝতে পারল না আবির রাগ কেন করল ? এভাবে চুমু খায় নাকি কেউ ? যতই নির্জন রাস্তা হোক মানুষ জন তো চলে আসতে পারে। তখন ? আর মেয়ে ও কি একটু এমন করতে পারে না? 

তাই বলে এভাবে রাগ করতে হবে !

নওরিন দেখল আবির আর ফিরেই তাকাল না । হন হন করে চলে গেল । 

বাসায় ফিরে নওরিনের মন আরও খারাপ হল । কান্না আসতে লাগল । ভেবেছিল আজকে পুরো রাস্তাটা গল্প করতে করতে আসবে কিন্তু এভাবে সামান্য ব্যাপার নিতেই যে এমন হয়ে যাবে সেটা ভাবতেই পারে নি । পুরো বিকেল তারপর রার নওরিন মন খারাপ করে রইলো । পরের দুই দিন আবিরের সাথে ওর দেখাই হল  না । কলেজে দেখা হল বটে তবে আবির এমন ভান করল যেন ওকে চেনেই না । এমন কী ছুটির পর ফেরার সময়েও দেখা হল না । আবির অন্য পথ দিয়ে বাসায় গিয়েছে ।

শেষে দুইদিন পরে নওরিন সাহস করে নিজের বের হল । রাত তখন প্রায় বারোটা । আবিরদের বাসা ওদের বাসা থেকে খুব বেশি দূরে না । হাসপাতাল কলোনিতে থাকে না ওরা । নওরিনদের বাসার কাছেই । আস্তে করে বের হয়ে এল বাসা থেকে । তারপর আবিরদের বাসার সামনে গিয়ে হাজির হল। নওরিন দেখল আবিরের ঘরের আলো তখনও জ্বলছে । তার মানে এখনও জেগে আছে সে ! 

একটা ছোট ইট সে মারল জানলায় । প্রথম ঢিলটা অবশ্য জায়গা মত লাগল না । পরেরটা কাজ হল । আবিরকে জানালার কাছে আসতে দেখল এবং ওকে দেখতে আবিরের চোখে বিস্ময়টাও চোখে পড়ল ওর । আবির কিছু সময় পরেই বের হয়ে এল । ওর সামনে এসে বলল, এতো রাতে এখানে কী?

-আপনি আমার উপরে রাগ করেছেন?

-কই না তো !

-হ্যা আমি জানি রাগ করেছেন । ঐদিন ওভাবে কেন আপনি চুমু খেলেন ! আমি কী একটু রাগ করতে পারি না । ওভাবে চলে গেলেন !

আবির কিছু সময় তাকিয়ে রইলো নওরিনের দিকে । মেয়েটার সাহস দেখে একটু অবাকই হয়েছে। এতো রাতে মেয়েটা এভাবে এখানে আসবে সেটা ও ভাবতেই পারে নি । সেই সাথে এটাও মনে হল যে ঐদিন আসলে ওমন করে রাগ করে চলে আসা মোটেই উচিৎ হয় নি । মেয়েটা ঐ রকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটাই স্বাভাবিক । 

আবির বলল, রাগ করে নেই। 

-আমি জানি রাগ করে আছেন।

-কী করলে প্রমান হবে যে রাগ করেনেই?

-আমাকে চুমু খান একটা !

আবির হাসল । বলল, খুব দুষ্টু হয়েছে!

অবশ্য এই সুযোগ সে ছাড়ল না । নওরিনকে গভীর ভাবে চুমু খেল। তারপর নিজেই ওকে বাসায় পৌছে দিল । 

তবে নওরিন তখনও জানে না যে ওদেরকে বাসার ভেতর থেকে একজন খেয়াল করছে । পুরো দৃশ্যটাই সে দেখেছে ।

পরের দিন নওরিন যখন স্কুল থেকে বাসায় এল এখন অবাক হয়ে দেখল ওদের বসার ঘরে দুইজন বসে রয়েছে । সামনা সামনা না দেখা হলেও এদের দুইজনকেই সে খুব ভাল করেই চেনে । এটা আবিরের বাবা আর মা।

ও ঘরে ঢুকতেই আবিরের মা বলল, আপনার মেয়ে এসেছে । ওকে জিজ্ঞেস করেন । কাল রাতে আমাদের বাসায় গিয়েছিল কিনা ! আমি এই টুকু মেয়ের সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি । 

নওরিনের মা তখন এসে কষে ওর গালে একটা চড় মারল । আবিরের মা আরও কয়েকটা কথা শুনিয়ে তারপর সেখান থেকে চলে গেল । 

কয়েকদিন নওরিনের স্কুলে যাওয়া হল না । তবে এক সময়ে আবারও স্কুলে গিয়ে হাজির হল সে । আবিরের মা ওদের বাসায় গিয়েছিল সত্য আর বাইরের কাউকে বলে নি ব্যাপারটা । তাই সেটা বাইরে জানা জানি হয় নি । 

দুইদিন পরে আবিরের মায়ের সাথে ওর আবার দেখা হল । সে স্কুলের গেটে অপেক্ষা করছিল । নওরিনের সাথেই কথা বলার জন্য । নওরিন কাছে আসতেই ওকে একটু আড়ালে নিয়ে গেল। তারপর বলল, শোন মেয়ে আমার ছেলে কখনই আমার অবাধ্য হবে না । বুঝতে পেরেছো কি ! তাই এরপর থেকে তুমি ওর পেছনে আসবে । ওর সাথে দেখা করার চেষ্টা করবে না । যে কয়টা দিন এখানে আছি আমি মোটেই চাই না  ও তোমার সাথে দেখা করুক । আমি তোমাকে কখনই আমার ছেলের বউ হিসাবে মেনে নিব না । ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছো ! তোমাকে হয়তো আমি মেনেও নিতাম কিন্তু তোমার ফ্যামিলির দিকে তাকিয়ে দেখেছ তুমি? আমার ছেলে কখনই ঐ বাড়িতে বিয়ে করবে না !

নওরিনের মনে হচ্ছিল যেন একেবারে মাটির সাথে মিশে যায় । ওর বাবা মা খুব বেশি পড়াশোনা জানে না । ওদেরকিছু জমিজমা আছে আড়ত আছে । কিন্তু খুব বেশি শিক্ষিত না । অন্য দিকে আবিরের বাবা জেলার সিভিল সার্জন । আর আবিরের মা মহিলা অধিদপ্তরে চাকরি করে । দুইজনের বিসিএস ক্যাডার । 

নওরিনের চোখ দিয়ে টপটপ করে কেবল পানি বের হয়ে এল । ওকে ওখানেই রেখে আবিরের মা চলে গেল । 

নিজেকে নওরিন বুঝেছিল যে আবিরের মা ঠিকই বলেছিলেন । আবিরের পরিবারের সাথে সত্যিই ওদের পরিবার কোন ভাবেই যায় না । মেশে না । নিজেকে সে আটকে রেখেছিল । কিন্তু কয়েকদিন পরেই যখন জানতে পারলো আবির ঢাকা চলে যাচ্ছে তখন শেষ বারের মত আর দেখা না করে থাকতে পারল না । স্টেশনে দৌড়ে গিয়েছিল । যখন স্টেশনে হাজির হল তখন আবিরকে দেখতে পেল । আবিরও দেখতে পেয়েছিল ওকে । তবে ওর মায়ের কারণে কাছে আসতে পারল না । নওরিন কেবল দুর থেকেই দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে । 

যখন ট্রেন এল নওরিনের ইচ্ছে হচ্ছিল দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে একবার । আবির ট্রেনে উঠে আবারও দরজার কাছে এল । ওর দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল । 

যখন ট্রেনটা একটু নড়ল তখন নওরিনের পুরো শরীরে যেমন একটা তীব্র কষ্টের অনুভূতি জেগে উঠল । আস্তে আস্তে সেও পা চালাতে লাগল । এক সময় দৌড়াতে শুরু করল ট্রেনের পেছনে । 

আবির চোখের দিকে সে তাকিয়ে দেখল সেখান থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে ।

একেবারে প্লাটফর্মের শেষ অংশ পর্যন্ত দৌড়ে গেল নওরিন । ট্রেনটাকে চোখের আড়ালে চলে যেতে দেখল ।

###

নওরিন অনুভব করল কিছু একটা ওর কোল ঘেষে নড়াচড়া করছে । একটু চমকে উঠল তবে সাথে সাথেই বুঝল সেটা কী !

আবিরের বেড়াল । বেড়ালটার নাম আবির রেখেছে নওরিন । ওর নামের সাথে মিলিয়ে । 

রাতের বেলা যখন ওর বাসায় এসে হাজির হল তখন মনে মনে সত্যিই ভয়ে ছিল যে হয়তো বাসায় দেখতে পাবে যে ওর একটা বউ রয়েছে । তার বদলে ছিল এই বেড়ালটা । নওরিন নামের বেড়াল । 

রাতে ঘুম একটা কথা হয় নি আর । দীর্ঘ জার্নির কারণে ক্লান্ত ছিল খুব । অল্প কিছু মুখে দিয়েই শুয়ে পড়েছিল। আর এখন বিছানার ভেতরে দেখতে পাচ্ছে নওরিন ওর গা ঘেসে নড়াচড়া করছে । 

-ঘুম ভাঙ্গল ?

নওরিন দেখল আবির ওর বিছানার পাশে এসে দাড়িয়েছে । এখনও নওরিনের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ও আবিরের বাসায় রয়েছে । 

-হুম ।

-নওরিন দেখি তোমাকে খুব পছন্দ করেছে । 

নওরিন বেড়ালটার দিকে তাকাল । একটা বাদামী আর সাদা মিলিয়ে মিক্স ব্রিডের বেড়াল । একেবারে ওর শরীরে ঘেষে শুয়ে আছে।

আবির বলল, শোন আজকে বাইরে যেতে হবে না । আগামী দুইজন তুষারের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ । তোমার ব্যাপারে আমি কথা বলেছিল ।

-থ্যাঙ্কিউ । 

-চা খাবে নাকি কফি? আর বাসায় ফোন করেছো কাল?

-এয়ারপোর্টে পৌছেই জানিয়েছিলাম । আর বলেছিলাম যে ওয়াইফাইয়ের ভেতরে না আসা পর্যন্ত আর কথা হবে না । 

-এখন জানাতে পার। ওখানে এখন রাত ।

বাসার কথা মনে হতেই ফোনটা বের করল নওরিন । বেশ কয়েকটা মেসেজ এসেছে একটা নম্বর থেকে । নম্বরটা ওর হবু বর রাহাতের । 

চলবে…

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 37

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →