দুজনের সংসারে…

oputanvir
4.6
(53)

নিশিতার মনটা কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে আছে দুদিন থেকে । শুভ আচরণ এরই ভেতরে বদলে গেছে কেমন যেন । অথচ প্রথম যখন ছেলেটার সাথে কথা বলেছিলো ছেলেেটা খুব বেশি আগ্রহ দেখিয়েছিলো । কথা বার্তা বলে নিশিতার নিজেরও খুব বেশি পছন্দ হয়েছিলো । তারপর পারিবারিক ভাবেই কথা বার্তা এগিয়েছিল । গত সপ্তাহে দুই পরিবার এক সাথে হল । এবং তারপরেই শুভর আচরণে কেমন যেন একটা পরিবর্তন দেখা গেল । আগে রাত নেই দিন নেই শুভ সব সময় ওর সাথে যোগাযোগ করতো অথচ গত সপ্তাহে পরিবারিক দেখা সাক্ষাতের পর সেটা কমে এলো একেবারে । ওর পরিবার কি বেঁকে বসেছে ?

প্রশ্নটা নিশিতার মনে কয়েকবার উঠলো । এমনটা হতে পারে । এদেশে ডিভোর্সী একটা মেয়েকে সহজে অন্য পরিবার মেনে নেয় না । বিশেষ করে যখন ছেলের আগে বিয়ে হয় নি । এমন ছেলে নিজে ডিভোর্সী হলেও বিয়ের জন্য অবিবাহিত মেয়ে খোজে । সেখানে ছেলে নিজে আগে একবার বিয়ে না হয়েও একজন ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়ার ঘটনা চোখেই পড়ে না ।

নিশিতা একটু অস্থির হয়েই শুভ জন্য অপেক্ষা করছে । গতকাল রাতে সে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে অফিসের পরে নিশিতা দেখা করতে পারবে কিনা ! একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে ওর । নিশিতার মনে হল যে আজকে হয়তো শুভ ওকে জানাবে যে ওর পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না । ওর বাসার লোকজন ওকে ঠিক পছন্দ করে নি । এমন কথা মানসিক ভাবে শোনার প্রস্তুতি নিয়েই নিশিতা বসে অপেক্ষা করছে । শুভ ওকে সময় দিয়েছিলো । তার আগেই সে চলে এসেছে ।

শুভ এল নির্ধারিত সময়ের ভেতরেই । ওকে দেখে একটু শুকনো হাসি হাসলো । বসতে বসতে বলল, কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছো?
-বেশি সময় না । মাত্রই এসেছি ।
-কফি খাবে তো !

নিশিতার একবার মনে হল যে বলে কফি বাদ দাও । আগে বল কী জরূরী কথা । যা বলার সোজাসুজী বলবে । ঘুরিয়ে পেচিয়ে কিছু বলবে না । তবে তেমন কিছু বলল না । কেবল বলল, হ্যা ।

কফি চলে এল একটু পরেই । কফিতে চুমুক দিয়ে শুভ কিছু সময় বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো । এতো সময় সে হালকা পাতলা কথা বার্তা বলেছে । এখন একটু চুপ করে রইলো । নিশিতা বুঝতে পারলো যে এবার সে আসল কথা বলবে ।
শুভ একটা লম্বা দম নিয়ে বলল, দেখো আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না । যা বলি সরাসরি বলি ! ঠিক আছে । শুনতে হয়তো তোমার খারাপ লাগবে তারপরেও কথাটা আমি বলতে চাই কারণ তোমার আমার জীবনের প্রশ্ন ।
নিশিতা বলল, তুমি বল । কোন সমস্যা নেই । ঘুরিয়ে বলার দরকার নেই ।
শুব বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই । তোমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো কিনা এটা নিয়ে আমার আসলে কোন মাথা কখনও ছিল না । এখনও নেই ।
-তাহলে?
-কিন্তু গত সপ্তাহ তোমার পরিবারের সাথে দেখা সাক্ষাত করে আামর মনে হয়েছে যে তোমার সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে আমাদের মাঝেও ডিভোর্স হয়ে যাবে !

নিশিতা একটু বিস্ময় নিয়ে তাকালো শুভর দিকে । শুভ যে এমন একটা কথা বলবে সেটা সে ভাবতেও পারে নি । নিজের বিস্ময় লুকানোর চেষ্টা না করেই বলল, মানে কী বলছো এসব? ডিভোর্স কেন হবে !

শুভ যেন কী ভাবলো । তারপর বলল, দেখো দুটো মানুষ যখন এক সাথে সংসার করে তখন সেখানে মান অভিমান ঝগড়া হবেই । মানুষ কখনই পুরোপুরি মানুষের মনের মত হয় না । এছাড়া আরো কত ঘটনাই না ঘটে । তাই না?
-হ্যা ।
-এমন আমাদের বিয়ে হলে আমাদের ভেতরেও হবে । এটা স্বাভাবিক ।
-তা তো বুঝলাম । কিন্তু তুমি ওমন কথা কেন বলছো?
-বলছি কারণ আছে ।
-কী কারণ?
-এটা শুনতে হয়তো তোমার ভাল লাগবে না । তারপরেও বলি । আচ্ছা তোমার এক্স হাসব্যান্ডের সাথে তোমার যে ডিভোর্স হল এটার পেছনে মুখ্য ভূমিকা তোমার মায়ের ছিল তাই না?

নিশিতা চোখ বড় বড় করে তাকালো শুভর দিকে । শুভ এই ব্যাপারটা কিভাবে জানলো সেটা বুঝতে পারছে না ।
অনুমান করে বলেছে নাকি কারো কাছ থেকে শুনেছে?
নাদিম মানে ওর এক্স হাসব্যান্ডের সাথে কোন ভাবে যোগাযোগ করেছে সে?

নিশিতা কিছু বলতে পারলো না । কারণ শুভ যেভাবেই ঘটনা জানুক না কেন ঘটনা মিথ্যা না । নিশিতার দুই বোনের জীবনে ওর মায়ের প্রভাশ অপরিসীম । ওর মা রাবেয়া খাতুন এখনও সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে চায় ।

নিশিতাকে চুপ থাকতে দেখে শুভ যা বোঝার বুঝে নিল । শুভ বলল, এবার ভাত তো তোমার এক্স হাসব্যান্ডের সাথে আদৌও কি বিচ্ছেদ হত যদি তোমার মা তোমার উপর প্রভাব বিস্তার না করতো ! হত?

নিশিতা এবারও চুপ করে রইলো । এখনও ওর মনে হয় যে বিয়ের পর থেকেই ও মা যেভাবে ওর সংসারের উপরে প্রভাব বিস্তার করেছিলো সেটা যদি না করতো তাহলে নাদিকের সাথে ঝামেলা হত না । হলেও সেটা মানিয়ে দেওয়া যেত । এবারও নিশিতা চুপই রইলো । শুভ বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই । বলতো এখনই বিয়ে করতে চাই । এখন থেকে বের হয়ে আমরা সোজা কাজী অফিসে যেতে পারি । সেখান থেকে বিয়ে করতে পারি । তবে শর্ত একটা ।

নিশিতা মুখ তুলে তাকালো । শুভ কফির কাপে আরেকটা চুমুক দিল শান্ত ভাবে । তারপর বলল, আমাদের দুজনের জীবনে আমরা দুজন ছাড়া অন্য কেউ ইন্টাফিয়ার করবে না । না আমার পরিবার না তোমার পরিবার । হ্যা তারা আমাদের কাছের মানুষ । আমাদের সুখে দুঃখে তারা থাকবেন এটা স্বাভাবিক কিন্তু আমাদের যত ঝামেলা যত সমস্যা আমরা দুজন মিলে সমাধান করবো । এখানে অন্য কেউ আসবে না । এটা যদি তুমি নিশ্চিত করতে পারো তাহলে আমাদের বিয়ে হবে । আমি তোমার সাথে আনন্দে থাকতে চাই । অন্তত অন্য কারো প্রয়োচনাতে আমাদের সংসারে অশান্তি বাঁধবে এটা আমি কোন ভাবেই মেনে নিবো না !

নিশিতা শুভর দিকে তাকিয়ে রইলও এক ভাবে । ছেলেটা যে ওকে পছন্দ করে ওকে আসলেই বিয়ে করতে চায় ওর সাথে নতুন জীবন শুরু করতে চায় এটা নিয়ে কোন নিশিতার মনে কোন সন্দেহ জাগলো না । সে নিজেও তো তাই চায় । ঘটনা বিয়ে পর্যন্ত গড়ানোর আগে শুভ সাথে ও প্রায় ছয় মাস মিশেছে । আপনি থেকে সম্পর্ক তুমিতে নেমে এসেছে । শুভকে এতো মনে ধরেছে ওর সেটা বলে বোঝানোর মত না !

নিশিতা শুভ হাতটা ধরলো । তারপর বলল, চল এখনই বিয়ে করে ফেলি ।
-নিশ্চিত তো?
-হ্যা । আমি এই দুটো বছর একা থেকে বুঝেছি যে মানুষ একা থাকতে পারে না । তাদের সঙ্গী দরকার । এই কারণে শত ঝামেলার পরেও তারা এক সাথে থাকতে চায় । সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সংসার টিকিয়ে রাখার । আমি সেটা করি নি । সত্যি করি নি । আমার অন্যের বুদ্ধিতে না নেচে নিজের মনের কথা শোনা দরকার ছিল । আমি দ্বিতীয়বার আর সেই ভুল করতে চাই না

পরিশিষ্টঃ

শোবার ঘরে শুভ ঢুকে দেখলো নিশিতা দেওয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে । আলো বন্ধ করে নি যদিও । ফোনটা রয়েছে বিছানার উপরে । মোবাইল টিপছে না । একটু আগে নিশিতা ওর মায়ের সাথে ভয়ংকর ভাবে ঝগড়া করেছে । রীতিমত তার মাকে এই বাসা থেকে বের করে দিয়েছে । এমনটা শুভ মোটেও আশা করে নি ।

ওরা বিয়ে করেছিলো সেদিনই । সেটা আজ থেকে দুই বছর আগের ঘটনা । বিয়ের পর ওরা দুজনেই এটা বুঝতে পারছিলো যে ওরা দুজনের জন্য কত খানি এপ্রোপ্রিয়েট ! সংসার চলছিলো বেশ চমৎকার ভাবে । তবে টুকটাক ঝামেলা মান অভিমান যে হয় নি তা নয় । সব সংসারেই হয় । গত সপ্তাহেও ঠিক এমন একটা ঝগড়া হল দুজনের ভেতরে । অফিসের পরে ওদের এক স্থানে যাওয়ার কথা ছিল । সেটা শুভ যেতে চায় নি । এটা নিয়েই ঝগড়া । রাগ করে নিশিতা বাবার বাসায় চলে গিয়েছিলো । ফিরে এসেছিল গত কাল । আর আজকে তার মা হঠাৎ এসে হাজির । শুভর সাথে কথা বলতে এসেছে সে ।কয়েকটা লাইণ বলেছে ঠিক সেই সময়েই নিশিতার অগ্নি মূর্তি নিয়ে মায়ের সামনে এসে হাজির হল । নিশিতার মা তো বটেই শুভও বুঝতে পারে নি নিশিতা এমন ভাবে রিএক্ট করবে । নিশিতা কেবল বলে, খবরদার তুমি আমার সংসারে নাক গলাবে না ।
নিশিতার মা অবশ্য কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই নিশিতা সামনে রাখা কাঁচের গ্লাসটা মেঝেতে আছড়ে মারলো । তারপর বলল, তুমি এখনই বাসা থেকে বের হবা । এখনই !!

নিশিতা মা খানিকটা ভীত হয়েই ওদের বাসা থেকে চলে গেল । নিশিতা গেল নিজের ঘরে । শুভ কাঁচ পরিস্কার করে রুমে ফিরে এল ।
বিছানার উপরে উঠে নিশিতার একদম পাশেই শুয়ে পরলো । তারপর আলতো করে ওকে জড়িয়ে ধরলো । শুভর একটু ভয় ছিল যে যেভাবে নিশিতা রেগে ছিল হয়তো ওকে সরিয়ে দিবে । তবে দিলো না । শুভ সাহস পেয়ে ওকে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশিতার কানের নাক ঘষতে শুরু করলো ।
-ঢং করতে হবে না !
-ঢং কোথায় শুনি ! নিজের বউকে আদর করবো না ।
-এখন যেন খুব বউয়ের কথা মনে আসছে । তা শুনি ঐদিন কোথায় ছিল এতো আদর ! আর ….।
নিশিতা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু থেমে যেতে হল । শুভ বেশ শক্ত করে নিশিতার ঠোঁটটা বন্ধ করে দিয়েছে নিজেস্ব উপায়ে !

তারপর …. তারপর সে অন্য কোন গল্প.

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 53

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →