দুজনের সংসারে…

oputanvir
4.6
(57)

নিশিতার মনটা কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে আছে দুদিন থেকে । শুভ আচরণ এরই ভেতরে বদলে গেছে কেমন যেন । অথচ প্রথম যখন ছেলেটার সাথে কথা বলেছিলো ছেলেেটা খুব বেশি আগ্রহ দেখিয়েছিলো । কথা বার্তা বলে নিশিতার নিজেরও খুব বেশি পছন্দ হয়েছিলো । তারপর পারিবারিক ভাবেই কথা বার্তা এগিয়েছিল । গত সপ্তাহে দুই পরিবার এক সাথে হল । এবং তারপরেই শুভর আচরণে কেমন যেন একটা পরিবর্তন দেখা গেল । আগে রাত নেই দিন নেই শুভ সব সময় ওর সাথে যোগাযোগ করতো অথচ গত সপ্তাহে পরিবারিক দেখা সাক্ষাতের পর সেটা কমে এলো একেবারে । ওর পরিবার কি বেঁকে বসেছে ?

প্রশ্নটা নিশিতার মনে কয়েকবার উঠলো । এমনটা হতে পারে । এদেশে ডিভোর্সী একটা মেয়েকে সহজে অন্য পরিবার মেনে নেয় না । বিশেষ করে যখন ছেলের আগে বিয়ে হয় নি । এমন ছেলে নিজে ডিভোর্সী হলেও বিয়ের জন্য অবিবাহিত মেয়ে খোজে । সেখানে ছেলে নিজে আগে একবার বিয়ে না হয়েও একজন ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়ার ঘটনা চোখেই পড়ে না ।

নিশিতা একটু অস্থির হয়েই শুভ জন্য অপেক্ষা করছে । গতকাল রাতে সে মেসেজ দিয়ে জানিয়েছে অফিসের পরে নিশিতা দেখা করতে পারবে কিনা ! একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার আছে ওর । নিশিতার মনে হল যে আজকে হয়তো শুভ ওকে জানাবে যে ওর পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না । ওর বাসার লোকজন ওকে ঠিক পছন্দ করে নি । এমন কথা মানসিক ভাবে শোনার প্রস্তুতি নিয়েই নিশিতা বসে অপেক্ষা করছে । শুভ ওকে সময় দিয়েছিলো । তার আগেই সে চলে এসেছে ।

শুভ এল নির্ধারিত সময়ের ভেতরেই । ওকে দেখে একটু শুকনো হাসি হাসলো । বসতে বসতে বলল, কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছো?
-বেশি সময় না । মাত্রই এসেছি ।
-কফি খাবে তো !

নিশিতার একবার মনে হল যে বলে কফি বাদ দাও । আগে বল কী জরূরী কথা । যা বলার সোজাসুজী বলবে । ঘুরিয়ে পেচিয়ে কিছু বলবে না । তবে তেমন কিছু বলল না । কেবল বলল, হ্যা ।

কফি চলে এল একটু পরেই । কফিতে চুমুক দিয়ে শুভ কিছু সময় বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো । এতো সময় সে হালকা পাতলা কথা বার্তা বলেছে । এখন একটু চুপ করে রইলো । নিশিতা বুঝতে পারলো যে এবার সে আসল কথা বলবে ।
শুভ একটা লম্বা দম নিয়ে বলল, দেখো আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না । যা বলি সরাসরি বলি ! ঠিক আছে । শুনতে হয়তো তোমার খারাপ লাগবে তারপরেও কথাটা আমি বলতে চাই কারণ তোমার আমার জীবনের প্রশ্ন ।
নিশিতা বলল, তুমি বল । কোন সমস্যা নেই । ঘুরিয়ে বলার দরকার নেই ।
শুব বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই । তোমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো কিনা এটা নিয়ে আমার আসলে কোন মাথা কখনও ছিল না । এখনও নেই ।
-তাহলে?
-কিন্তু গত সপ্তাহ তোমার পরিবারের সাথে দেখা সাক্ষাত করে আামর মনে হয়েছে যে তোমার সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে আমাদের মাঝেও ডিভোর্স হয়ে যাবে !

নিশিতা একটু বিস্ময় নিয়ে তাকালো শুভর দিকে । শুভ যে এমন একটা কথা বলবে সেটা সে ভাবতেও পারে নি । নিজের বিস্ময় লুকানোর চেষ্টা না করেই বলল, মানে কী বলছো এসব? ডিভোর্স কেন হবে !

শুভ যেন কী ভাবলো । তারপর বলল, দেখো দুটো মানুষ যখন এক সাথে সংসার করে তখন সেখানে মান অভিমান ঝগড়া হবেই । মানুষ কখনই পুরোপুরি মানুষের মনের মত হয় না । এছাড়া আরো কত ঘটনাই না ঘটে । তাই না?
-হ্যা ।
-এমন আমাদের বিয়ে হলে আমাদের ভেতরেও হবে । এটা স্বাভাবিক ।
-তা তো বুঝলাম । কিন্তু তুমি ওমন কথা কেন বলছো?
-বলছি কারণ আছে ।
-কী কারণ?
-এটা শুনতে হয়তো তোমার ভাল লাগবে না । তারপরেও বলি । আচ্ছা তোমার এক্স হাসব্যান্ডের সাথে তোমার যে ডিভোর্স হল এটার পেছনে মুখ্য ভূমিকা তোমার মায়ের ছিল তাই না?

নিশিতা চোখ বড় বড় করে তাকালো শুভর দিকে । শুভ এই ব্যাপারটা কিভাবে জানলো সেটা বুঝতে পারছে না ।
অনুমান করে বলেছে নাকি কারো কাছ থেকে শুনেছে?
নাদিম মানে ওর এক্স হাসব্যান্ডের সাথে কোন ভাবে যোগাযোগ করেছে সে?

নিশিতা কিছু বলতে পারলো না । কারণ শুভ যেভাবেই ঘটনা জানুক না কেন ঘটনা মিথ্যা না । নিশিতার দুই বোনের জীবনে ওর মায়ের প্রভাশ অপরিসীম । ওর মা রাবেয়া খাতুন এখনও সব কিছু নিয়ন্ত্রন করতে চায় ।

নিশিতাকে চুপ থাকতে দেখে শুভ যা বোঝার বুঝে নিল । শুভ বলল, এবার ভাত তো তোমার এক্স হাসব্যান্ডের সাথে আদৌও কি বিচ্ছেদ হত যদি তোমার মা তোমার উপর প্রভাব বিস্তার না করতো ! হত?

নিশিতা এবারও চুপ করে রইলো । এখনও ওর মনে হয় যে বিয়ের পর থেকেই ও মা যেভাবে ওর সংসারের উপরে প্রভাব বিস্তার করেছিলো সেটা যদি না করতো তাহলে নাদিকের সাথে ঝামেলা হত না । হলেও সেটা মানিয়ে দেওয়া যেত । এবারও নিশিতা চুপই রইলো । শুভ বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই । বলতো এখনই বিয়ে করতে চাই । এখন থেকে বের হয়ে আমরা সোজা কাজী অফিসে যেতে পারি । সেখান থেকে বিয়ে করতে পারি । তবে শর্ত একটা ।

নিশিতা মুখ তুলে তাকালো । শুভ কফির কাপে আরেকটা চুমুক দিল শান্ত ভাবে । তারপর বলল, আমাদের দুজনের জীবনে আমরা দুজন ছাড়া অন্য কেউ ইন্টাফিয়ার করবে না । না আমার পরিবার না তোমার পরিবার । হ্যা তারা আমাদের কাছের মানুষ । আমাদের সুখে দুঃখে তারা থাকবেন এটা স্বাভাবিক কিন্তু আমাদের যত ঝামেলা যত সমস্যা আমরা দুজন মিলে সমাধান করবো । এখানে অন্য কেউ আসবে না । এটা যদি তুমি নিশ্চিত করতে পারো তাহলে আমাদের বিয়ে হবে । আমি তোমার সাথে আনন্দে থাকতে চাই । অন্তত অন্য কারো প্রয়োচনাতে আমাদের সংসারে অশান্তি বাঁধবে এটা আমি কোন ভাবেই মেনে নিবো না !

নিশিতা শুভর দিকে তাকিয়ে রইলও এক ভাবে । ছেলেটা যে ওকে পছন্দ করে ওকে আসলেই বিয়ে করতে চায় ওর সাথে নতুন জীবন শুরু করতে চায় এটা নিয়ে কোন নিশিতার মনে কোন সন্দেহ জাগলো না । সে নিজেও তো তাই চায় । ঘটনা বিয়ে পর্যন্ত গড়ানোর আগে শুভ সাথে ও প্রায় ছয় মাস মিশেছে । আপনি থেকে সম্পর্ক তুমিতে নেমে এসেছে । শুভকে এতো মনে ধরেছে ওর সেটা বলে বোঝানোর মত না !

নিশিতা শুভ হাতটা ধরলো । তারপর বলল, চল এখনই বিয়ে করে ফেলি ।
-নিশ্চিত তো?
-হ্যা । আমি এই দুটো বছর একা থেকে বুঝেছি যে মানুষ একা থাকতে পারে না । তাদের সঙ্গী দরকার । এই কারণে শত ঝামেলার পরেও তারা এক সাথে থাকতে চায় । সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সংসার টিকিয়ে রাখার । আমি সেটা করি নি । সত্যি করি নি । আমার অন্যের বুদ্ধিতে না নেচে নিজের মনের কথা শোনা দরকার ছিল । আমি দ্বিতীয়বার আর সেই ভুল করতে চাই না

পরিশিষ্টঃ

শোবার ঘরে শুভ ঢুকে দেখলো নিশিতা দেওয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে । আলো বন্ধ করে নি যদিও । ফোনটা রয়েছে বিছানার উপরে । মোবাইল টিপছে না । একটু আগে নিশিতা ওর মায়ের সাথে ভয়ংকর ভাবে ঝগড়া করেছে । রীতিমত তার মাকে এই বাসা থেকে বের করে দিয়েছে । এমনটা শুভ মোটেও আশা করে নি ।

ওরা বিয়ে করেছিলো সেদিনই । সেটা আজ থেকে দুই বছর আগের ঘটনা । বিয়ের পর ওরা দুজনেই এটা বুঝতে পারছিলো যে ওরা দুজনের জন্য কত খানি এপ্রোপ্রিয়েট ! সংসার চলছিলো বেশ চমৎকার ভাবে । তবে টুকটাক ঝামেলা মান অভিমান যে হয় নি তা নয় । সব সংসারেই হয় । গত সপ্তাহেও ঠিক এমন একটা ঝগড়া হল দুজনের ভেতরে । অফিসের পরে ওদের এক স্থানে যাওয়ার কথা ছিল । সেটা শুভ যেতে চায় নি । এটা নিয়েই ঝগড়া । রাগ করে নিশিতা বাবার বাসায় চলে গিয়েছিলো । ফিরে এসেছিল গত কাল । আর আজকে তার মা হঠাৎ এসে হাজির । শুভর সাথে কথা বলতে এসেছে সে ।কয়েকটা লাইণ বলেছে ঠিক সেই সময়েই নিশিতার অগ্নি মূর্তি নিয়ে মায়ের সামনে এসে হাজির হল । নিশিতার মা তো বটেই শুভও বুঝতে পারে নি নিশিতা এমন ভাবে রিএক্ট করবে । নিশিতা কেবল বলে, খবরদার তুমি আমার সংসারে নাক গলাবে না ।
নিশিতার মা অবশ্য কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই নিশিতা সামনে রাখা কাঁচের গ্লাসটা মেঝেতে আছড়ে মারলো । তারপর বলল, তুমি এখনই বাসা থেকে বের হবা । এখনই !!

নিশিতা মা খানিকটা ভীত হয়েই ওদের বাসা থেকে চলে গেল । নিশিতা গেল নিজের ঘরে । শুভ কাঁচ পরিস্কার করে রুমে ফিরে এল ।
বিছানার উপরে উঠে নিশিতার একদম পাশেই শুয়ে পরলো । তারপর আলতো করে ওকে জড়িয়ে ধরলো । শুভর একটু ভয় ছিল যে যেভাবে নিশিতা রেগে ছিল হয়তো ওকে সরিয়ে দিবে । তবে দিলো না । শুভ সাহস পেয়ে ওকে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশিতার কানের নাক ঘষতে শুরু করলো ।
-ঢং করতে হবে না !
-ঢং কোথায় শুনি ! নিজের বউকে আদর করবো না ।
-এখন যেন খুব বউয়ের কথা মনে আসছে । তা শুনি ঐদিন কোথায় ছিল এতো আদর ! আর ….।
নিশিতা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু থেমে যেতে হল । শুভ বেশ শক্ত করে নিশিতার ঠোঁটটা বন্ধ করে দিয়েছে নিজেস্ব উপায়ে !

তারপর …. তারপর সে অন্য কোন গল্প.

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.6 / 5. Vote count: 57

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →