নাওমি মেয়েটাকে শিমুন মোটেই পছন্দ করে । তার প্রধান কারণ বলা যায় গায়ে পড়া স্বভাবের কারণে । সবার সাথে এক গায়ে পড়া স্বভাব মেয়েটার । বিশেষ করে এখন রাফির সাথে মেয়েটা যমেন ঢলাঢলি করছে সেটা শিমুনের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না । শিমুনের খুব ইচ্ছে করছে এখনই রাগ করে এখন থেকে চলে যেতে । কিন্তু যেতেও পারছে না কারণ এতে রাফি রাগ করতে পারে !
আচ্ছা ও কি রাফির রাগের কারণে এমন অনেক কিছুই মেনে নিবে যা ওর পছন্দ নয় !
শিমুন জানে না এই প্রশ্নের উত্তর । তবে রাফির মত ছেলেকে হারাতে চায় না সে । এই কদিনে রাফি ওর প্রতি একটু যেন বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে । আর ছেলে হিসাবে রাফির কাছে সব কিছু আছে । বড়লোকের ছেলে, গাড়ি বাইক সব রয়েছে । ওর পেছনে হাত খুলে খরচ করে ! এমন ছেলের সাথে থাকতে কে না যায় ! নওমিও যে এমন কারণেই রাফির পেছনে ঘোরে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । এমন অনেক মেয়েই ঘুরতে চায় রাফির সাথে । কিন্তু রাফি সবাইকে রেখে ওকে পছন্দ করেছে ।
এর আগে শিমুন অনেক জায়গাতেই গিয়েছে । তবে আজকে ওরা এসেছে গাজিপুরের একটা রিসোর্টে । আজকের রাতটা এখানেই থাকার ইচ্ছে ওদের । শিমুন বোকা নয় । রাত এখানে থাকার মানে যে কী হতে পারে সেটা সে ভাল করেই জানে । তারপরেও সে আসতে রাজি হয়েছে । এখন এসব তো স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে । সবাই করে । ও নিজেও করলে সমস্যা কী !
তবে শিমুন ভেবেছিলম যে এই রিসোর্টে আজকে কেবল শিমুন আর রাফিই আসবে । দুজন একান্তে কিছু সময় কাটাবে । কিন্তু এখানে আসার পরেই ওর ভুলটা ভাঙ্গলো । এখানে রাফির আরও চারজন বন্ধু এসেছে । সাথে নাওমি মেয়েটাও এসেছে । আগেও নাওমিকে দেখেছে বন্ধুদের আড্ডায় । মেয়েটাকে শুরু থেকেই পছন্দ হয় নি শিমুনের । তবে রাফির কারণে কিছু বলতেও পারে নি । সহ্য করে নিয়েছে । তবে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে যখন রাফির সাথে ব্যাপার গুলো আরো একটু গাঢ় হবে তখন এই মেয়েটাকে আর মিশতে দিবে না রাফির সাথে । তবে এর জন্য সময় লাগবে ।
রাত একটু বাড়লেই শিমুনের মনটা কেমন যেন করে উঠলো । বিশেষ করে ঘরের ভেতরে ঢুকেই ওরা সবাই মিলে যখন মদের বোতল খুলল তখন শিমুনের একটু অস্বস্তি লাগা শুরু করলো । এলকোহল ব্যাপারটার সাথে শিমুন এখনও অভ্যস্ত হতে পারে নি । রাফি নিয়মিত সিগারেট খায় । সেখানে গাজা ভরা থাকে । একটু গন্ধ তার নাকে আসে । সেটা সে কোন মতে মেনে নিয়েছে বটে তবে এলকোহল এখনও পারে নি ।
শিমুনের মনে হল যে ওর এখন চলে যাওয়া উচিৎ । এলকোহল পেটে পড়লে মানুষের আচরণ স্বাভাবি থাকে না । শিমুন ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এল । বারান্দার খোলা বাতাসে এসে ওর মনে হল একটু শান্তি লাগলো । ভেতরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না এখন । তবে এক সময়ে যখন রাফি ডাকবে ভেতরে তখন না গেলে রাফি রাগ করতে পারে ।
-তুমি এখানে কেন এসেছো?
শিমুন ফিরে তাকালো । দেখলো নাওমিও বাইরে বের হয়ে এসেছে । ওর পাশে এসে দাড়িয়েছে । শিমুন বলল, মানে? কেন এসেছি বলতে?
-তুমি জানো না আজকে এখানে কী হবে?
এই প্রশ্নটা করার সময়ে নাওমির কন্ঠে একটা উদ্বেগ লক্ষ্য করলো শিমুন । কঠিন কিছু বলার প্রস্তুনি নিচ্ছিলো সে কিন্তু থেমে গেল । তারপর বলল, আমি বুঝতে পারছি না তুমি কী বলতে চাচ্ছো?
-তুমি বোকা না শিমুন ! বোকা কি? রাফি তোমার সাথে কেন আছে সেটা কি তুমি জানো না ?
-জানি !
-দেখো রাফি তোমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে কেবল আজকের জন্য । ওর মোট পাঁচ জন আজকে । তোমার সাথে কী করবে হিসাব আছে ?
তীব্র একটা বিস্ময় নিয়ে তাকালো নাওমির দিকে । বলল, রাফি কখনই এমন করবে না ।
-তাই? তোমার আগে আমি ওর গার্লফ্রেন্ড ছিলাম । আমাকেও ঠিক এই স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে । আমাকে ড্রাগড করা হয়েছে এবং আমার সাথেও এই কাজ করা হয়েছে ।
শিমুন কী বলবে খুজে পাচ্ছে না । নাওমি বলল, এর কী হয়েছে জানো? এই পুরো ব্যাপারটা ওরা ভিডিও করে রেখেছে । আমি যাতে ওদের ছেলে না যেতে পারি সেই জন্য । আমি চলে যেতে চাইলে কিংবা না আসতে চাইলে ওরা এটা অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে । আমার কোন উপায় নেই দেখে আমি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি । তুমি কেন এসেছো? রাফি সম্পর্কে কি আগে শোননি ও কেমন ছেলে?
শিমুন শুনেছে অনেক কথাই কিন্তু রাফির মিষ্টি কথায় ওর মনে হয়েছে সব কিছু মিথ্যা । নাওমি এবার নিজের ফোন বের করে ওর সামনে ধরলো । সেখানে একটা এডাল্ট ভিভিও চলছে । অবাক হয়ে দেখলো সেখানকার মেয়েটা নাওমি নিজে । ওকে ঘিরে আর চারজন মানুষ । তাদের একজনকে সে ঠিকই চিনতে পারলো । চোখ সরিয়ে নিল সে ।
মোবাইলটা আবার নিজের কাছে নিয়ে নিল সে । তারপর শিমুনের দিকে তাকিয়ে বলল, এই টুকুই দেখতে পারছো না । যখন তোমার সাথে এটা হবে তখন কী করবে শুনি?
শিমুনের মনের ভেতরে একটা তীব্র অনুভূতি এসে জড় হল । সেটার ভেতরে একটা ভয় ছিল । ওর সাথে ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে সেটার ভয় । এখন ও কী করবে?
পালাবে এখান থেকে ?
কিভাবে পালাবে?
শিমুনের চেহারা দেখেই নাওমি ব্যাপারটা ঠিক ঠিক বুঝতে পারলো যে ওর মনের ভেতরে কী চলছে । শিমুনকে বলল, এসো আমার সাথে !
-কোথায়?
-এসো তো?
এই বলেই হাত ধরে শিমুনকে নিয়ে চলল রিসোর্টের পেছনের দিকে । যেতে যেতে বলল, এটা রাফিদের রিসোর্ট । আজকে এখানে কেউ নেই । কেউ আসবেও না । আজকে স্পেশালি তোমার জন্য ওরা এসেছে এখানে । বুঝেছো কি?
শিমুনের শরীর কেঁপে উঠলো ভয়ে । সত্যিই রাফি এমন ? সত্যিই ওর সাথে এসব হত আজকে ! যদি ঠিক মত না পালাতে পারে তাহলে ওর সাথে এসব কিছুই তো হবে আজকে?
শিমুন আর কিছুই ভাবতে পারলো না । সামনের দিকে দৌড়ে চলল । ওরা চলে এসেছে একেবারে রিসোর্টের দেওয়ালের পাশে । সেখানেই একটা ছোট দরজা দেখতে পেল ও । সেটাতে তালা মারা তবে শিমুন দেখতে পেল যে নাওমির কাছে একটা চাবি ঠিকই আছে ।শিমুন কিছু জানতে চাওয়ার আগেই নাওমি বলল, আমি এখানে প্রায় আসি । মানে আসতে হয় আর কি ! আমি একটা চাবি জোগার করে রেখেছি ।
চাবি ঘোরাতেই তালা খুলে গেল । দরজা খুলে যেতেই শিমুন বের হয়ে গেল । তারপর নাওমির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি চল ।
-না । আমি না যাই । আমাকে না পেলে তোমার পেছনে ওরা পাগলা কুকুরের মত ছুটে যাবে । আমি চেষ্টা করবো ওদের আটকে রাখতে । যাও চলে যাও । আর এখানে একা আসবে না । খবরদার ! একদম সোজা যাবে । আধা ঘন্টার মত পরে দুইটা রাস্তা পাবে । ডান দিকেরটায় যাবে । যাও !
শিমুন দেখতে পেল দরজাটা বন্ধ করে দিল নাওমি । শিমুন কয়েক মুহুর্ত সেখানেই দাড়িয়ে রইলো । ওর তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে এমন কিছু ওর সাথে ঘটতে যাচ্ছে । ও পালাচ্ছে । কয়েক মুহুর্ত পরেই শিমুন দৌড়াতে শুরু করলো নাওমির দেখানো পথে । দৌড়ে চলল । আাধা ঘন্টা পরে ঠিক ঠিক দুইটা পথও পেল ।
কত সময় শিমুন হেটেছে দৌড়েছে সে নিজেও জানে না । যত সময় না গাজিপুর চৌরাস্তার কাছে এসেছে তত সময় বারবার ওর ভয় হচ্ছিলো যে এই বুঝি এখনই ওর পেছন থেকে কেউ এসে ওকে ধরে নিয়ে যাবে । তবে শেষ পর্যন্ত ও ঠিক ঠিক পৌছাতে পারলো চৌরাস্তায় । যখন চৌরাস্তায় পৌছালো ঠিক তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠলো । এমন ভাবে চমকে উঠেছিলো সে হাত থেকে সেটা পড়ে গেল রাস্তার উপরে । তুলে দেখে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে । কাঁচটাও ফেটে গেছে । অন্য সময় হলে অবশ্য চিন্তা করতো তবে এখন এসব নিয়ে শিমুনের কোন চিন্তা হল না । মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটা বাসে উঠে পড়লো । কোন বাসে উঠলো সেটাও খেয়াল করলো না । ফার্মগেটের কাছে যখন বাস থেকে নামলো তখন রাত প্রায় সাড়ে দশটা । সেখান থেকে আরেকটা বাসে উঠে এল মোহাম্মাদপুর । নিজের বাসায় এসে জোড়ে জোড়ে দম নিল কেবল । তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে ও ঠিক মত বাসায় পৌছে গেছে । ওর মেসের রুমমেট ওর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো যে এমন করছে কেন সে ! আজকে তো ওর ফেরার কথা ছিল না । কোন ঝামেলা হয়েছে কিনা ! শিমুন কিছু বলল না । কেবল বলল যে একটু শরীর খারাপ । এখন আর কিছু খাবে না ।
রাতে শুয়ে পড়লো সে । তবে রাতে ঘুম এলো না খুব একটা । বারবার কেবল নাওমির কথা মনে পড়লো । মেয়েটার সাথে যে কী হয়েছে কে জানে ! এই ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো রাতে । তবে ঘুম ভাঙ্গলো বেশ কয়েকবার । আবার ঘুমিয়ে পড়লো । পরদিন সন্ধ্যা বেলা ফেসবুকে একটা সংবাদ শিমুনের নজরে পড়লো । গাজিপুরের একটা রিসোর্ট থেকে একটি মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে । মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে কয়েকজন মিলে বারংবার ধর্ষণ করেছে । মূলত গ্রামের একজন রিসোর্টে ঢুকেছিলো রাতে ফল চুরি করতে । সেই একটি মেয়ের তীব্র চিৎকার শুনতে পায় । সেই পালিয়ে গ্রামে গিয়ে লোকজনকে নিয়ে আসে । কিন্তু যখন তারা আসে তখন সব শেষ হয়ে গেছে । মেয়েটি মারা গেছে ।
শিমুন আর পড়তে পারলো না । হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে ওর । খবরে মেয়েটির নাম কোথাও নেই তারপরেও শিমুন জানে যে মেয়েটি কে । আজকে ঐ মেয়েটির স্থানে ও নিজে থাকতে পারতো । নাওমি ওকে বাঁচিয়ে দিয়ে নিজে মারা গেছে ।
শিমুন আর চিন্তা করতে পারলো না । তীব্র উত্তেজনার কারণে জ্ঞান হারিয়ে পড়লো ।