ভুল পথে যেও না

অপু তানভীর
4.5
(44)

নাওমি মেয়েটাকে শিমুন মোটেই পছন্দ করে । তার প্রধান কারণ বলা যায় গায়ে পড়া স্বভাবের কারণে । সবার সাথে এক গায়ে পড়া স্বভাব মেয়েটার । বিশেষ করে এখন রাফির সাথে মেয়েটা যমেন ঢলাঢলি করছে সেটা শিমুনের মোটেও পছন্দ হচ্ছে না । শিমুনের খুব ইচ্ছে করছে এখনই রাগ করে এখন থেকে চলে যেতে । কিন্তু যেতেও পারছে না কারণ এতে রাফি রাগ করতে পারে !
আচ্ছা ও কি রাফির রাগের কারণে এমন অনেক কিছুই মেনে নিবে যা ওর পছন্দ নয় !
শিমুন জানে না এই প্রশ্নের উত্তর । তবে রাফির মত ছেলেকে হারাতে চায় না সে । এই কদিনে রাফি ওর প্রতি একটু যেন বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে । আর ছেলে হিসাবে রাফির কাছে সব কিছু আছে । বড়লোকের ছেলে, গাড়ি বাইক সব রয়েছে । ওর পেছনে হাত খুলে খরচ করে ! এমন ছেলের সাথে থাকতে কে না যায় ! নওমিও যে এমন কারণেই রাফির পেছনে ঘোরে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । এমন অনেক মেয়েই ঘুরতে চায় রাফির সাথে । কিন্তু রাফি সবাইকে রেখে ওকে পছন্দ করেছে ।

এর আগে শিমুন অনেক জায়গাতেই গিয়েছে । তবে আজকে ওরা এসেছে গাজিপুরের একটা রিসোর্টে । আজকের রাতটা এখানেই থাকার ইচ্ছে ওদের । শিমুন বোকা নয় । রাত এখানে থাকার মানে যে কী হতে পারে সেটা সে ভাল করেই জানে । তারপরেও সে আসতে রাজি হয়েছে । এখন এসব তো স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে । সবাই করে । ও নিজেও করলে সমস্যা কী !

তবে শিমুন ভেবেছিলম যে এই রিসোর্টে আজকে কেবল শিমুন আর রাফিই আসবে । দুজন একান্তে কিছু সময় কাটাবে । কিন্তু এখানে আসার পরেই ওর ভুলটা ভাঙ্গলো । এখানে রাফির আরও চারজন বন্ধু এসেছে । সাথে নাওমি মেয়েটাও এসেছে । আগেও নাওমিকে দেখেছে বন্ধুদের আড্ডায় । মেয়েটাকে শুরু থেকেই পছন্দ হয় নি শিমুনের । তবে রাফির কারণে কিছু বলতেও পারে নি । সহ্য করে নিয়েছে । তবে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে যখন রাফির সাথে ব্যাপার গুলো আরো একটু গাঢ় হবে তখন এই মেয়েটাকে আর মিশতে দিবে না রাফির সাথে । তবে এর জন্য সময় লাগবে ।

রাত একটু বাড়লেই শিমুনের মনটা কেমন যেন করে উঠলো । বিশেষ করে ঘরের ভেতরে ঢুকেই ওরা সবাই মিলে যখন মদের বোতল খুলল তখন শিমুনের একটু অস্বস্তি লাগা শুরু করলো । এলকোহল ব্যাপারটার সাথে শিমুন এখনও অভ্যস্ত হতে পারে নি । রাফি নিয়মিত সিগারেট খায় । সেখানে গাজা ভরা থাকে । একটু গন্ধ তার নাকে আসে । সেটা সে কোন মতে মেনে নিয়েছে বটে তবে এলকোহল এখনও পারে নি ।

শিমুনের মনে হল যে ওর এখন চলে যাওয়া উচিৎ । এলকোহল পেটে পড়লে মানুষের আচরণ স্বাভাবি থাকে না । শিমুন ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এল । বারান্দার খোলা বাতাসে এসে ওর মনে হল একটু শান্তি লাগলো । ভেতরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না এখন । তবে এক সময়ে যখন রাফি ডাকবে ভেতরে তখন না গেলে রাফি রাগ করতে পারে ।

-তুমি এখানে কেন এসেছো?

শিমুন ফিরে তাকালো । দেখলো নাওমিও বাইরে বের হয়ে এসেছে । ওর পাশে এসে দাড়িয়েছে । শিমুন বলল, মানে? কেন এসেছি বলতে?
-তুমি জানো না আজকে এখানে কী হবে?

এই প্রশ্নটা করার সময়ে নাওমির কন্ঠে একটা উদ্বেগ লক্ষ্য করলো শিমুন । কঠিন কিছু বলার প্রস্তুনি নিচ্ছিলো সে কিন্তু থেমে গেল । তারপর বলল, আমি বুঝতে পারছি না তুমি কী বলতে চাচ্ছো?
-তুমি বোকা না শিমুন ! বোকা কি? রাফি তোমার সাথে কেন আছে সেটা কি তুমি জানো না ?
-জানি !
-দেখো রাফি তোমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে কেবল আজকের জন্য । ওর মোট পাঁচ জন আজকে । তোমার সাথে কী করবে হিসাব আছে ?
তীব্র একটা বিস্ময় নিয়ে তাকালো নাওমির দিকে । বলল, রাফি কখনই এমন করবে না ।
-তাই? তোমার আগে আমি ওর গার্লফ্রেন্ড ছিলাম । আমাকেও ঠিক এই স্থানে নিয়ে আসা হয়েছে । আমাকে ড্রাগড করা হয়েছে এবং আমার সাথেও এই কাজ করা হয়েছে ।

শিমুন কী বলবে খুজে পাচ্ছে না । নাওমি বলল, এর কী হয়েছে জানো? এই পুরো ব্যাপারটা ওরা ভিডিও করে রেখেছে । আমি যাতে ওদের ছেলে না যেতে পারি সেই জন্য । আমি চলে যেতে চাইলে কিংবা না আসতে চাইলে ওরা এটা অনলাইনে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে । আমার কোন উপায় নেই দেখে আমি এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি । তুমি কেন এসেছো? রাফি সম্পর্কে কি আগে শোননি ও কেমন ছেলে?

শিমুন শুনেছে অনেক কথাই কিন্তু রাফির মিষ্টি কথায় ওর মনে হয়েছে সব কিছু মিথ্যা । নাওমি এবার নিজের ফোন বের করে ওর সামনে ধরলো । সেখানে একটা এডাল্ট ভিভিও চলছে । অবাক হয়ে দেখলো সেখানকার মেয়েটা নাওমি নিজে । ওকে ঘিরে আর চারজন মানুষ । তাদের একজনকে সে ঠিকই চিনতে পারলো । চোখ সরিয়ে নিল সে ।
মোবাইলটা আবার নিজের কাছে নিয়ে নিল সে । তারপর শিমুনের দিকে তাকিয়ে বলল, এই টুকুই দেখতে পারছো না । যখন তোমার সাথে এটা হবে তখন কী করবে শুনি?

শিমুনের মনের ভেতরে একটা তীব্র অনুভূতি এসে জড় হল । সেটার ভেতরে একটা ভয় ছিল । ওর সাথে ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে সেটার ভয় । এখন ও কী করবে?
পালাবে এখান থেকে ?
কিভাবে পালাবে?

শিমুনের চেহারা দেখেই নাওমি ব্যাপারটা ঠিক ঠিক বুঝতে পারলো যে ওর মনের ভেতরে কী চলছে । শিমুনকে বলল, এসো আমার সাথে !
-কোথায়?
-এসো তো?

এই বলেই হাত ধরে শিমুনকে নিয়ে চলল রিসোর্টের পেছনের দিকে । যেতে যেতে বলল, এটা রাফিদের রিসোর্ট । আজকে এখানে কেউ নেই । কেউ আসবেও না । আজকে স্পেশালি তোমার জন্য ওরা এসেছে এখানে । বুঝেছো কি?

শিমুনের শরীর কেঁপে উঠলো ভয়ে । সত্যিই রাফি এমন ? সত্যিই ওর সাথে এসব হত আজকে ! যদি ঠিক মত না পালাতে পারে তাহলে ওর সাথে এসব কিছুই তো হবে আজকে?

শিমুন আর কিছুই ভাবতে পারলো না । সামনের দিকে দৌড়ে চলল । ওরা চলে এসেছে একেবারে রিসোর্টের দেওয়ালের পাশে । সেখানেই একটা ছোট দরজা দেখতে পেল ও । সেটাতে তালা মারা তবে শিমুন দেখতে পেল যে নাওমির কাছে একটা চাবি ঠিকই আছে ।শিমুন কিছু জানতে চাওয়ার আগেই নাওমি বলল, আমি এখানে প্রায় আসি । মানে আসতে হয় আর কি ! আমি একটা চাবি জোগার করে রেখেছি ।

চাবি ঘোরাতেই তালা খুলে গেল । দরজা খুলে যেতেই শিমুন বের হয়ে গেল । তারপর নাওমির দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি চল ।
-না । আমি না যাই । আমাকে না পেলে তোমার পেছনে ওরা পাগলা কুকুরের মত ছুটে যাবে । আমি চেষ্টা করবো ওদের আটকে রাখতে । যাও চলে যাও । আর এখানে একা আসবে না । খবরদার ! একদম সোজা যাবে । আধা ঘন্টার মত পরে দুইটা রাস্তা পাবে । ডান দিকেরটায় যাবে । যাও !

শিমুন দেখতে পেল দরজাটা বন্ধ করে দিল নাওমি । শিমুন কয়েক মুহুর্ত সেখানেই দাড়িয়ে রইলো । ওর তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে এমন কিছু ওর সাথে ঘটতে যাচ্ছে । ও পালাচ্ছে । কয়েক মুহুর্ত পরেই শিমুন দৌড়াতে শুরু করলো নাওমির দেখানো পথে । দৌড়ে চলল । আাধা ঘন্টা পরে ঠিক ঠিক দুইটা পথও পেল ।

কত সময় শিমুন হেটেছে দৌড়েছে সে নিজেও জানে না । যত সময় না গাজিপুর চৌরাস্তার কাছে এসেছে তত সময় বারবার ওর ভয় হচ্ছিলো যে এই বুঝি এখনই ওর পেছন থেকে কেউ এসে ওকে ধরে নিয়ে যাবে । তবে শেষ পর্যন্ত ও ঠিক ঠিক পৌছাতে পারলো চৌরাস্তায় । যখন চৌরাস্তায় পৌছালো ঠিক তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠলো । এমন ভাবে চমকে উঠেছিলো সে হাত থেকে সেটা পড়ে গেল রাস্তার উপরে । তুলে দেখে সেটা বন্ধ হয়ে গেছে । কাঁচটাও ফেটে গেছে । অন্য সময় হলে অবশ্য চিন্তা করতো তবে এখন এসব নিয়ে শিমুনের কোন চিন্তা হল না । মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটা বাসে উঠে পড়লো । কোন বাসে উঠলো সেটাও খেয়াল করলো না । ফার্মগেটের কাছে যখন বাস থেকে নামলো তখন রাত প্রায় সাড়ে দশটা । সেখান থেকে আরেকটা বাসে উঠে এল মোহাম্মাদপুর । নিজের বাসায় এসে জোড়ে জোড়ে দম নিল কেবল । তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে ও ঠিক মত বাসায় পৌছে গেছে । ওর মেসের রুমমেট ওর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো যে এমন করছে কেন সে ! আজকে তো ওর ফেরার কথা ছিল না । কোন ঝামেলা হয়েছে কিনা ! শিমুন কিছু বলল না । কেবল বলল যে একটু শরীর খারাপ । এখন আর কিছু খাবে না ।

রাতে শুয়ে পড়লো সে । তবে রাতে ঘুম এলো না খুব একটা । বারবার কেবল নাওমির কথা মনে পড়লো । মেয়েটার সাথে যে কী হয়েছে কে জানে ! এই ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো রাতে । তবে ঘুম ভাঙ্গলো বেশ কয়েকবার । আবার ঘুমিয়ে পড়লো । পরদিন সন্ধ্যা বেলা ফেসবুকে একটা সংবাদ শিমুনের নজরে পড়লো । গাজিপুরের একটা রিসোর্ট থেকে একটি মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে । মৃত্যুর আগে মেয়েটিকে কয়েকজন মিলে বারংবার ধর্ষণ করেছে । মূলত গ্রামের একজন রিসোর্টে ঢুকেছিলো রাতে ফল চুরি করতে । সেই একটি মেয়ের তীব্র চিৎকার শুনতে পায় । সেই পালিয়ে গ্রামে গিয়ে লোকজনকে নিয়ে আসে । কিন্তু যখন তারা আসে তখন সব শেষ হয়ে গেছে । মেয়েটি মারা গেছে ।

শিমুন আর পড়তে পারলো না । হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে ওর । খবরে মেয়েটির নাম কোথাও নেই তারপরেও শিমুন জানে যে মেয়েটি কে । আজকে ঐ মেয়েটির স্থানে ও নিজে থাকতে পারতো । নাওমি ওকে বাঁচিয়ে দিয়ে নিজে মারা গেছে ।

শিমুন আর চিন্তা করতে পারলো না । তীব্র উত্তেজনার কারণে জ্ঞান হারিয়ে পড়লো ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 44

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →