কনফারেন্স রুমের দিকে যাওয়ার সময়ই সাজিদ একটা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল । কান্নার আওয়াহটা এড়িয়ে সে কনফারেন্স রুমের দিকে যেতে চাইলো কিন্তু কেন জানি যেতে পারলো না । পুরো অফিসের সবাই কনফারেন্স রুমের রয়েছে এখন । সেখানে সেলস ডিপার্টমেন্টের প্রেজেন্টেশন চলছে বিদেশী বায়ারদের সাথে । সাজিদেরও সেখানে থাকার কথা কিন্তু সে একটা কাজে আটকে গিয়েছিলো । তবে তার সেখানে না থাকাটা খুব একটা বড় ব্যাপার না । তার বাবা নিজে সেখানে আছে । ডিলটা আসলেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ।
সাজিস কান্নার উৎস খুজে হাজির হল কেবিনের সামনে । কেবিনটা কার সেটা সাজিদ চেনে । ভেতরে বাচ্চার কান্নার আওয়াজটাও সে চেনে । সাজিদ বা্চ্চা কাচ্চা পছন্দ করে না অনেক আগে থেকেই । বিয়ের ব্যাপারেও তার অনাগ্রহ এই কারণেই ।
তারপরেও সাজিদ কান্নাটা এড়িয়ে যেতে পারলো না । দরজা খুলে কেবিনের ভেতরে ঢুকে পড়লো । বাচ্চাটাকে দেখতে পেল সাথে সাথেই । ওর দরজা দিয়ে ঢুকতেই বাচ্চাও ওকে দেখতে পেয়েছে । টেবিলের পেছনে একটা ছোট বেবিবেডে বাচ্চাটা রয়েছে । ওকে দেখতে পেয়েই বাচ্চাটা কান্না থামিয়ে দিল । চোখ বড় বড় করে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো ওর দিকে । সাজিদও তাকিয়ে রইলো একভাবে । তারপরেই বাচ্চা ফিক করে হেসে দিল । সাজিদের মনে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল তখনই । এই অনুভূতির নাম সে জানে না । পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সে বাচ্চাটার দিকে । ওর কাছে যেতেই বাচ্চাটা এগিয়ে আসতে শুরু করলো । বেবিবেডের রেলিং ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করলোো ।
সাজিদের মনে তখন কেমন অনুভূতি হল সাজিদ নিজেই জানে না । সে কোন দিন যে কাজটা করে নি সেটাই করলো । দুই হাত দিয়ে খুব সাবধানে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো ।
নওরিন যখন নিজের প্রেজেন্টেশন শেষ করলো তখনই মনে হচ্ছিলো কাজ হবে এতে । বায়াররা খুশি হয়েছে । চেয়ারম্যান স্যারের দিকে তাকিয়েই মনে হল তিনিও সন্তুষ্ট হয়েছে । সব কিছু ভাল ভাবে শেষ হয়েছে দেখে মনের ভেতরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে গেল । ঠিক তখনই মনে পড়লো ওর পিউয়ের কথা । দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে । এখানে আসার আগে সে পিউকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছে । যদি এর ভেতরে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় তাহলে সে কান্নাকাটি শুরু করবে । সব বাচ্চার মত পিউয়েরও ঘুম ভাঙ্গার পরে কান্নার অভ্যাস । তবে কাছে কাউকে পেলে সে কান্নাকাটি করে না । এখন সবাই এই কনফারেন্স রুমে রয়েছে ।
নওরিন দ্রত নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো । দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই তার চোখ গেল বেডের দিকে । সেদিকে তাকাতেই নওরিনের মনে একটা আতংঙ্ক এসে ভর করলো । কারণ পিও সেখানে নেই ।
দরজা খুলে আবার বের হতে যাবে তখনই দেখতে পেল সাবিহা ওর দিকে আসছে । ওর মুখে একটা হাসিহাসি ভাব । সাবিহা দ্রুত এগিয়ে এসে নওরিনের হাত ধরলো । তারপর বলল, এদিকে এসো !
নওরিন বলার চেষ্টা করলো, আপু পিউ …
-আরে এসো তো ! পিউ কোথায় দেখাচ্ছি !
সাবিহার কথা শুনে নওরিনের জানে একটু পানি এল । বুঝতে পারলো যে কেউ ওকে রুম থেকে নিয়ে গেছে । পিউকে অফিসের সবাই খুব পছন্দ করে । তাই যে কেউ নিয়ে যেতে পারে । সাবিহার পেছন পেছন এগিয়ে গেল সে । অফিসের মিটিং রুমের পাশে একটা বারান্দা রয়েছে । সেখানে মাঝে মাঝে অফিসের কর্মীরা গিয়ে সিগারেটও খায় । সাবিহা নওরিনকে সেখানেই নিয়ে গেল টেনে । নওরিনও দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো । সাথেসাথেই একটা তীব্র বিস্ময় ওকে পেয়ে বসলো । পিউকে একজন কোলে নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে রয়েছে । ওকে একটু আদর করছে । আর সেই মানুষটা আর কেউ নয়, ওদের কোম্পানির এমবি সাজিদ আহমেদ । দৃশ্যটার দিকে তাকিয়ে নওরিন কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো ।
এই অফিসে বাচ্চা নিয়ে আসার ব্যাপারটা যদি একজন মাত্র পছন্দ না করে থাকে সেটা হচ্ছে সাজিদ আহমেদ । সাজিদ আহমেদ বাচ্চা কাচ্চা একদম সহ্য করতে পারেন না । তাদের কান্না শুনলে বড় বিরক্ত হন সব সময় ! তার বাবার কারণে সে কিছু বলে নি তবে সেটা না হলে সম্ভবত নওরিনের চাকরিই করা হত না এই অফিসে ।
কিন্তু আজকে কেমন ভাবে সে পিওকে আদর করছে । এই দৃশ্যটা প্রথম দেখেই নওরিনের কেবল মনে হল যেন একজন বাবা তার মেয়েকে আদর করছে । দৃশ্যটার দিকে কেবল ফ্রিজ হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । নিজের ভেতরেই কী হল নওরিন সেটা জানে না । সাজিদ আহমেদের প্রতি এতোদিন নওরিনের যা রাগ অপছন্দ ছিল সে সব কিছু একেবারে চলে গেল ।
সাজিদ আহমেদ নওরিনকে খেয়াল করলো একটু পরেই । সে পিওয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, এই দেখো তোমার আম্মু চলে এসেছে ।
নওরিন এগিয়ে গেল । পিওকে নওরিনের কোলে দিতে দিতে সাজিদ আহমেদ বলল, প্রেসেন্টেশন কেমন হল?
-ভাল । ডিলটা হয়ে যাবে আশা করছি ।
সাজিদ আহমেদ হাসলো একটু । তারপর বলল, এভাবে একা মেয়ে ফেলে যাবেন না । কাউকে না কাউকে রাখবেন ।
-জ্বী স্যার !
নওরিনের কোলে পিউকে দিয়ে সাজিস হাটা দিল নিজের কেবিনের দিকে । নওরিন কেবল একভাবে সাজিদের চলে পথের দিকে তাকিয়ে রইলো ।
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
গল্পটা বড় করলে ভালো হতো। ছোট গল্প থেকে গেল 😪