বেবিসিটিং ২.০

oputanvir
4.7
(54)

কনফারেন্স রুমের দিকে যাওয়ার সময়ই সাজিদ একটা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল । কান্নার আওয়াহটা এড়িয়ে সে কনফারেন্স রুমের দিকে যেতে চাইলো কিন্তু কেন জানি যেতে পারলো না । পুরো অফিসের সবাই কনফারেন্স রুমের রয়েছে এখন । সেখানে সেলস ডিপার্টমেন্টের প্রেজেন্টেশন চলছে বিদেশী বায়ারদের সাথে । সাজিদেরও সেখানে থাকার কথা কিন্তু সে একটা কাজে আটকে গিয়েছিলো । তবে তার সেখানে না থাকাটা খুব একটা বড় ব্যাপার না । তার বাবা নিজে সেখানে আছে । ডিলটা আসলেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ।
সাজিস কান্নার উৎস খুজে হাজির হল কেবিনের সামনে । কেবিনটা কার সেটা সাজিদ চেনে । ভেতরে বাচ্চার কান্নার আওয়াজটাও সে চেনে । সাজিদ বা্চ্চা কাচ্চা পছন্দ করে না অনেক আগে থেকেই । বিয়ের ব্যাপারেও তার অনাগ্রহ এই কারণেই ।

তারপরেও সাজিদ কান্নাটা এড়িয়ে যেতে পারলো না । দরজা খুলে কেবিনের ভেতরে ঢুকে পড়লো । বাচ্চাটাকে দেখতে পেল সাথে সাথেই । ওর দরজা দিয়ে ঢুকতেই বাচ্চাও ওকে দেখতে পেয়েছে । টেবিলের পেছনে একটা ছোট বেবিবেডে বাচ্চাটা রয়েছে । ওকে দেখতে পেয়েই বাচ্চাটা কান্না থামিয়ে দিল । চোখ বড় বড় করে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো ওর দিকে । সাজিদও তাকিয়ে রইলো একভাবে । তারপরেই বাচ্চা ফিক করে হেসে দিল । সাজিদের মনে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হল তখনই । এই অনুভূতির নাম সে জানে না । পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সে বাচ্চাটার দিকে । ওর কাছে যেতেই বাচ্চাটা এগিয়ে আসতে শুরু করলো । বেবিবেডের রেলিং ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করলোো ।
সাজিদের মনে তখন কেমন অনুভূতি হল সাজিদ নিজেই জানে না । সে কোন দিন যে কাজটা করে নি সেটাই করলো । দুই হাত দিয়ে খুব সাবধানে বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিলো ।

নওরিন যখন নিজের প্রেজেন্টেশন শেষ করলো তখনই মনে হচ্ছিলো কাজ হবে এতে । বায়াররা খুশি হয়েছে । চেয়ারম্যান স্যারের দিকে তাকিয়েই মনে হল তিনিও সন্তুষ্ট হয়েছে । সব কিছু ভাল ভাবে শেষ হয়েছে দেখে মনের ভেতরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে গেল । ঠিক তখনই মনে পড়লো ওর পিউয়ের কথা । দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে । এখানে আসার আগে সে পিউকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছে । যদি এর ভেতরে তার ঘুম ভেঙ্গে যায় তাহলে সে কান্নাকাটি শুরু করবে । সব বাচ্চার মত পিউয়েরও ঘুম ভাঙ্গার পরে কান্নার অভ্যাস । তবে কাছে কাউকে পেলে সে কান্নাকাটি করে না । এখন সবাই এই কনফারেন্স রুমে রয়েছে ।

নওরিন দ্রত নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো । দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতেই তার চোখ গেল বেডের দিকে । সেদিকে তাকাতেই নওরিনের মনে একটা আতংঙ্ক এসে ভর করলো । কারণ পিও সেখানে নেই ।
দরজা খুলে আবার বের হতে যাবে তখনই দেখতে পেল সাবিহা ওর দিকে আসছে । ওর মুখে একটা হাসিহাসি ভাব । সাবিহা দ্রুত এগিয়ে এসে নওরিনের হাত ধরলো । তারপর বলল, এদিকে এসো !
নওরিন বলার চেষ্টা করলো, আপু পিউ …
-আরে এসো তো ! পিউ কোথায় দেখাচ্ছি !

সাবিহার কথা শুনে নওরিনের জানে একটু পানি এল । বুঝতে পারলো যে কেউ ওকে রুম থেকে নিয়ে গেছে । পিউকে অফিসের সবাই খুব পছন্দ করে । তাই যে কেউ নিয়ে যেতে পারে । সাবিহার পেছন পেছন এগিয়ে গেল সে । অফিসের মিটিং রুমের পাশে একটা বারান্দা রয়েছে । সেখানে মাঝে মাঝে অফিসের কর্মীরা গিয়ে সিগারেটও খায় । সাবিহা নওরিনকে সেখানেই নিয়ে গেল টেনে । নওরিনও দরজার কাছে গিয়ে দাড়ালো । সাথেসাথেই একটা তীব্র বিস্ময় ওকে পেয়ে বসলো । পিউকে একজন কোলে নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে রয়েছে । ওকে একটু আদর করছে । আর সেই মানুষটা আর কেউ নয়, ওদের কোম্পানির এমবি সাজিদ আহমেদ । দৃশ্যটার দিকে তাকিয়ে নওরিন কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো ।
এই অফিসে বাচ্চা নিয়ে আসার ব্যাপারটা যদি একজন মাত্র পছন্দ না করে থাকে সেটা হচ্ছে সাজিদ আহমেদ । সাজিদ আহমেদ বাচ্চা কাচ্চা একদম সহ্য করতে পারেন না । তাদের কান্না শুনলে বড় বিরক্ত হন সব সময় ! তার বাবার কারণে সে কিছু বলে নি তবে সেটা না হলে সম্ভবত নওরিনের চাকরিই করা হত না এই অফিসে ।
কিন্তু আজকে কেমন ভাবে সে পিওকে আদর করছে । এই দৃশ্যটা প্রথম দেখেই নওরিনের কেবল মনে হল যেন একজন বাবা তার মেয়েকে আদর করছে । দৃশ্যটার দিকে কেবল ফ্রিজ হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । নিজের ভেতরেই কী হল নওরিন সেটা জানে না । সাজিদ আহমেদের প্রতি এতোদিন নওরিনের যা রাগ অপছন্দ ছিল সে সব কিছু একেবারে চলে গেল ।
সাজিদ আহমেদ নওরিনকে খেয়াল করলো একটু পরেই । সে পিওয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, এই দেখো তোমার আম্মু চলে এসেছে ।
নওরিন এগিয়ে গেল । পিওকে নওরিনের কোলে দিতে দিতে সাজিদ আহমেদ বলল, প্রেসেন্টেশন কেমন হল?
-ভাল । ডিলটা হয়ে যাবে আশা করছি ।
সাজিদ আহমেদ হাসলো একটু । তারপর বলল, এভাবে একা মেয়ে ফেলে যাবেন না । কাউকে না কাউকে রাখবেন ।
-জ্বী স্যার !

নওরিনের কোলে পিউকে দিয়ে সাজিস হাটা দিল নিজের কেবিনের দিকে । নওরিন কেবল একভাবে সাজিদের চলে পথের দিকে তাকিয়ে রইলো ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 54

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “বেবিসিটিং ২.০”

  1. গল্পটা বড় করলে ভালো হতো। ছোট গল্প থেকে গেল 😪

Comments are closed.