রাত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানটা ছোট একটা রেস্টুরেন্টুে হল । ঠিক অনুষ্ঠান না আসলে । ওরা ৫ জন বন্ধু মিলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে হাজির হল । একটা কেক কাটা হল । খাওয়া দাওয়া হল ! এই হচ্ছে অনুষ্ঠান ! কেকটা একটু বড়ই কেনা হয়ে গিয়েছিলো । পাশের কুকার্স থেকে কেনা । এর থেকে ছোট কেক আর ছিল না । অনেক খানি কেকই রয়ে গেল । এখান থেকে সবার আবার আরেক স্থানে যাওয়ার প্লান রয়েছে । হাতে করে এই কেক নিয়ে যাওয়ার কোন মানে নেই । ঠিক হল যে রেস্টুরেস্টে আরও যত কাস্টোমার আছে সবাইকে এক পিচ করে কেক দেওয়া হবে ।
রাত্রী আর নিলয় আস্তে আস্তে সব টেবিলে গিয়ে একটু একটু করে কেক দিয়ে এল । অনেকেই খুশি হল । হ্যাপি বার্থ ডে বলল । তারপর রেস্টুরেন্ট স্টাফদের মাঝেও কেক দেওয়া হল । কেক বন্টন করে ওরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন গল্প করছিলো তখনই একজন কালো স্যুট পরা সুদর্শন মানুষ ওদের টেবিলের সামনে এসে দাড়ালো ।
মানুষটা রেস্টুরেন্টের গেস্টদের একজন । একটু আগে তাকেও কেক দেওয়া হয়েছে । টেবিলের সামনে দাড়িয়ে একটু হাসলো সবার দিকে তাকিয়ে । বলল, তোমাদের ভেতরে কার জন্মদিন? সরি তুমি করেই বললাম । বয়সে আমি তোমাদের থেকে একটু বড়ই হব ।
নিলয় বলল, না না ঠিক আছে সমস্যা নেই । আমরা আপনার ছোটই হব । এই যে আমার বন্ধু রাত্রীর জন্মদিন !
লোকটা বলল, হ্যাপি বার্থ ডে রাত্রী । অনেক দিন পরে আমি আসলে জন্মদিনের কেক খেলাম ! অনেক দিন পর । থ্যাঙ্কিউ ফর দ্য কেক !
নিলয় কিছু বলতে যাচ্ছিলো, রাত্রী একটু হেসে বলল, না না ঠিক আছে ভাইয়া । ইয়োর ওয়েলকাম !
-কেক যখন খাইয়েছো তখন উপহার তো দিতেই হবে !
-না না । কি যে বলেন !
রাত্রী সহ সবাইকে অবাক করে দিয়ে লোকটা নিজের স্যুটের ভেতরের পকেট থেকে একটা কালো কাগজে মোড়া একটা উপহার বক্স বের করলো । তারপর সেটা রাত্রীর দিকে এগিয়ে দিল ।
রাত্রী বলার চেষ্টা করলো যে ভাইয়া প্লিজ …
লোকটা বলল, মন থেকে দিচ্ছি নাও । কেউ উপহার দিলে নিতে হয় ! কেমন ! হ্যাপি বার্থ ডে এগেইন !
রাত্রী প্যাকেটটা হাতে নিল । লোকটা আরেকটু হেসে ওদের সামনে দিয়ে চলে গেল । ওরা সবাই একটু অবাক হয়েই কিছু সময়ের জন্য বসে রইলো । এভাবে একজন অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে এভাবে উপহার পাওয়াটা ওদের কাছে একেবারে নতুন একটা ব্যাপার । কিছু সময় সবাই তাকিয়ে রইলো রাত্রীর হাতে ধরে থাকা গিফট বক্সটার দিকে । একটু লম্বাটে ধরনের ।
সাফি বলল, কী আছে এর ভেতরে ?
-খুলে দেখ ।
রাত্রী আস্তে আস্তে প্যাকেটটা খুলল । সবাই খানিকটা অবাক হয়েই খেয়াল করলো যে ওটা একটা ঘড়ি এবং যেন তেন ঘড়ি না । টাইটান রাগা ! ঘড়িটা দেখতে খুবই চমৎকার আর দেখে মনে হচ্ছে বেশ দামী ।
নিলয় বলল, দাড়া দেখি তো দাম কত হতে পারে ঘড়িটার !
টাইটানের ওয়েব সাইটে ঢুকতেই পাওয়া গেল ঘড়িটা । দামের দিকে তাকিয়ে সবার চোখ কপালে উঠলো । বাংলাদেশি টাকায় ঘড়িটার দাম প্রায় ২১ হাজার টাকা !
রাত্রী বলল, সর্বনাশ । এতো দামী ঘড়ি নেওয়া যাবে না । ওনাকে ফেরৎ দিয়ে আসি ।
-আরে রাখ তো । কোন দরকার নেই ।
-তাই বলে …।
-শোন এটা একটা উপহার । উনি খুশি হয়ে দিয়েছেন । আর উপহারের বেলাতে দাম দেখতে নেই । কেবল মন দেখতে হয় । এতো চিন্তা করতে হবে না ।
রাত্রীর মনে তারপরেও একটু খুঁত খুঁত করতে লাগলো । এভাবে এতো দামী একটা জিনিস কেউ কাউকে দিয়ে দেয় । আর সব থেকে বড় যে প্রশ্নটা রাত্রীর মনে ঘুরপাক খেতে লাগলো যেটা হচ্ছে ঘড়িটা প্যাকেট করাই ছিল । এমন একটা ভাব যেন লোকটা জানতো যে আজকে রাত্রীর জন্মদিন হবে এবং সেখানে তাকে কেক খেতে দিবে । ফল স্বরূপ সে উপহার দেওয়ার জন্য সে ঘড়িটা প্যাকেট করে নিয়ে এসেছে ।
দুটো দিন কেটে গেল । তবে রাত্রীর মনের ভেতর থেকে অশান্তিটা চলে গেল না । বারবার মনের ভেতরে জেগে থাকা প্রশ্নটার জবাব জানতে ইচ্ছে করছিলো । ঘড়িটা সে এরই মাঝে পরে ফেলেছে । দারুন মানিয়েছে ওর হাতে । তবে সেটা পরে বাইরে যাওয়ার সাহস হয় নি কেন জানি । বারবার মনে হয়েছে এতো দামী জিনিস হাতে পরে বাইরে গেলে যদি হারিয়ে যায় !
তিন দিনের মাথায় রাত্রী আবারও সেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে হাজির হল । রাত্রীর কেন জানি মনে হচ্ছিলো যে লোকটা হয়তো রেস্টুরেন্টে নিয়মিত আসে । তার পরনের পোশাক দেখে মনে হয়েছে সে সম্ভবত অফিস থেকে এসেছে । তার অফিস যদি আসে পাশে হয়ে থাকে তাহলে খুব সম্ভবনা আছে যে সে নিয়মিত এই রেস্টুরেন্টে আসে । ঠিক গতদিনের সময়েই হাজির হল রেস্টুরেন্টে ।
এবং সত্যি সত্যিই তাকে দেখতে পেল ।
গতদিনের মতই ব্ল্যাক স্যুট পরে সে কোনার দিকের একটা টেবিলে বসে কফি খাচ্ছে । সামনে একটা ফাইলের দিকে চোখ ।
রাত্রী কিছু সময় চুপ করে দাড়িয়ে রইলো । এখানে সে কেন যে এসেছিলো সেটা সে নিজেই জানে না । এখানে সে এসেছিলো লোকটার সাথে দেখা হওয়ার আশাতেই কিন্তু এতো সহজে লোকটাকে দেখতে পাবে সেটা সে ভাবে নি ।
এখন কী করবে সে?
রাত্রীর মনে হল কোন দরকার নেই বাবা ! আবার ঘুরে চলে যাই । কোন অন্যায় সে করে নি, কোন ঝামেলার দরকার নেই । একজনকে কেক খাইয়েছে, সে উপহার দিয়েছে । ব্যাস ঝামেলা শেষ । যাই চলে যাই ।
পেছনে ঘুরে পা বাড়াতে যাবে তখনই লোকটা ওর দিকে ফিরে তাকালো । কয়েক মুহুর্তে লাগলো ওকে চিনতে । রাত্রীর বুঝতে পারলো সে রাত্রীকে চিনতে পেরেছে ।
-মিস রাত্রী !
রাত্রী একটু হাসলো ।
-এসো ।
রাত্রী যন্ত্রের মত এগিয়ে গেল । মুখে একটা অস্বস্তির ভাব ।
লোকটা ওকে কিছু সময় পর্যবেক্ষন করলো । তারপর বলল, বস । আই গেস তুমি এখানে আমাকে দেখার আশায় এসেছো । রাইট?
রাত্রী কোন কথা বলল না । তবে বসে পড়লো ।
লোকটা হাত তুলে ইশারা করতেই একজন ছুটে চলে এল । তার দিকে তাকিয়ে বলল, সুমন রাত্রীর জন্য কফি নিয়ে এতো তো ।
তারপর রাত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কফি খাও তো ?
রাত্রী কোন কথা না বলে কেবল মাথা ঝাকালো । ওয়েটার ছেলেটা বলল, স্যার কোনটা নিয়ে আসবো?
-আমি যেটা খাই সেটা নিয়ে এসো তবে একটু হালকা করে । এতো কড়া করে খেতে পারবে না ।
ওয়েটার চলে গেল । রাত্রীর কেন জানি মনে হল ছেলেটা যেন একটু বেশি মাত্রায় চিন্তিত সামনে বসা লোকটার ব্যাপারে । আচ্ছা এমন কি হতে পারে এই রেস্টুরেন্টটা এই লোকটারই । রাত্রীর মনের কথাই যেন লোকটা ধরে ফেলল । তারপর বলল, এটা আমারই রেস্টুরেন্ট । প্রতিদিন এই সময়ে এখানে আসি আমি কফির জন্য । নিজের বলে বলছি না, তবে এখানে কফি ভাল পাওয়া যায় । মাঝে মাঝে এসো এখানে । কেমন ?
-জ্বী আচ্ছা ।
-তুমি আমার সাথে কেন দেখা করতে চাইছিলে শুনি?
-আসলে…. আমি এর আগে এতো দামী ঘড়ি পরি নি কোন দিন । আমার জন্য অনেক বেশি দাম ।
লোকটা হেসে বলল, উপহারে দাম দেখতে নেই । মন দেখতে হয় । আমি খুশি হয়েই তোমাকে উপহার দিয়েছি ।
রাত্রীর মনে হল সামনে বসা মানুষটা আসলেই মন থেকেই উপহারটা দিয়েছে ওকে ।
কফি চলে এল একটু পরেই । রাত্রীর সাথে টুকটাক গল্প করতে লাগলো সে । নিজের নাম জানালো সাফওয়ান চৌধুরী । তবে পরিচিত মানুষেরা তাকে মুগ্ধ বলে ডাকে । তার একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে। এটা বাদে আরও কয়েকটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে ।
কফি খেতে খেতে রাত্রীর মনে প্রশ্নটা বারবার আসছিলো । তবে সেটা সে করবে কিনা বুঝতে পারছিলো না । কিন্তু ঠিক আগের মতই সাফওয়ান চৌধুরী রাত্রীর মনের কথা ধরে ফেলল । বলল, তোমার মনে আরও একটা প্রশ্ন জমা হয়ে আছে । তাই না ?
-হুম ।
-ভাবছো যে তোমাকে যে উপহার দিলাম সেটা এভাবে এতো সুন্দর করে র্যাপিং করা কিভাবে?
রাত্রী কৌতুহল নিয়ে তাকালো সাফওয়ান চৌধুরীর দিকে । সাফওয়ান বলল, আসলে তোমার জন্মদিন আর আমার স্ত্রীর জন্মদিন একই দিনে । গিফটটা আমি ওর জন্য কিনেছিলাম ।
-সেকি আমাকে দিয়ে দিলেন ! সে …
-ভয় নেই । তার জন্যও আবার কেনা হয়েছে । এই রেস্টুরেন্টের উপরেও টাইটানের একটা শো রুম আছে । সেখান থেকেই কিনে নিয়ে গিয়েছি । যদিও ও আর কোন দিনই উপহারটা পড়তে পারবে না ।
-কেন?
সাফওয়ান কিছু সময়ের জন্য নিশ্চুপ হয়ে গেল । কি যেন ভাবতে লাগলো । রাত্রী দেখলো সাফওয়ান চৌধুরীর চেহারাতে একটা বিষাদের ছায়া দেখা যাচ্ছে । রাত্রীর মনে হল যে প্রশ্নটা করা সম্ভব ঠিক হল না । তবে যা একবার মুখ দিয়ে বলা হয়ে গেছে সেটা ও আর ফেরৎ নিতে পারবে না।
সাফওয়ান বলল, আসলে ও মারা গেছে চার বছর আগে !
কথাটা রাত্রীর বুকে এসে লাগলো বেশ ভাল ভাবেই । সাফওয়ান বলল, আসলে তোমাদের একই দিনে জন্মদিন আর সব থেকে বড় কথা কি জানো তোমাদের নামও একই । রাত্রী । তোমার নাম যখন প্রথম শুনলাম, তোমার বন্ধুরা যখন তোমার নাম ধরে জন্মদিনের গান গাচ্ছিলো বুকের ভেতরে কেমন যে করে উঠলো তোমাকে বোঝাতে পারবো না ।
রাত্রী এবার আসলে বুঝতে পারলো যে কেন এতো দামী একটা উপহার সে রাত্রীকে দিয়েছিলো । সেই সাথে এটা জেনেও ভাল লাগলো সাফওয়ান তার স্ত্রীকে এখনও কত ভালবাসে । ওয়েটারকে আরেকবার ডাক দিলো সাফওয়ান চৌধুরী । তারপর রাত্রীকে দেখিয়ে বলল, মিস রাত্রী এর পর যখনই এখানে খেতে আসবে তার কাছ থেকে কোন প্রকার বিল না নেওয়া হয় !
রাত্রী বলতে গেল, সেকি কেন ! দেখুন এমনটা করবেন না ।
কিন্তু কোন কাজ হল না । রাত্রী তখন বলল, তাহলে আমি আর কোন দিন আসবোই না ।
সাফওয়ান হাসলো । তারপর বলল, সেটা তোমার সিদ্ধান্ত । না আসলে আমি তোমাকে কোন ভাবেই জোর করতে পারবো না । তবে এখানে যদি তাহলে তোমার কাছ থেকে কেউ বিল নিবে না ।
রাত্রী যদিও বলেছিলো যে আর যাবে না রেস্টুরেন্টে কিন্তু পরদিনই গিয়ে আবার হাজির হল । কফি খাওয়ার জন্য নয়, সাফওয়ান চৌধুরীর সাথে দেখা করতে । মানুষটার ভেতরে কিছু একটা যে আছে সেটা রাত্রী পরিস্কার নিজের ভেতরে বুঝতে পেরেছে । রাতভর কেবল তার কথাই রাত্রীর মনের ভেতরে এসেছে । মন থেকে সরিয়ে দিতে চাইলেও খুব একটা কাজ হয় নি । এরপর থেকে একটা রুটিনের মত হয়ে গেল যেন । ক্লাস শেষ করে প্রতিদিন বিকেলের এই সময়টা রাত্রী গিয়ে হাজির হত রেস্টুরেন্টটাতে । সাফওয়ানের সাথে ঘন্টাখানেক গল্প করতো । তারপর বাসায় ফিরতো । আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলো যে সে সাফওয়ান চৌধুরী অর্থ্যাৎ মুগ্ধের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে । নিজেকে বারবার সে মুগ্ধের কাছ থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না । তীব্র একটা একটা আকর্ষনবোধ করতে শুরু করলো সে মুগ্ধদের উপরে । এই আকর্ষনের উৎস রাত্রীর অজানা ।
দুই
রাত্রী আজকে ঠিক করে রেখেছে মনের কথা সে ঠিক ঠিক মুগ্ধকে বলে দিবে । এই যন্ত্রনা রাত্রীর আর ভাল লাগছে না মোটেও । জন্মদিনের পর থেকে প্রায় মাস দুয়েক পার হয়ে গেছে । এই সময়ে মুগ্ধের সাথে প্রায় প্রতিদিন দেখা করেছে সে । মাঝে যে কয়টা দিন রাত্রীর দেখা হয় নি সেদিন দিশেহারা বোধ করেছে কেবল ।
গতকালকে বিকেলে রাত্রী এসেছিলো রেস্টুরেন্টে দেখা করতে । কিন্তু কাল মুগ্ধ আসে নি । মুগ্ধের ফোন নম্বর রাত্রীর কাছে নেই । ও ইচ্ছে করে নেয় নি । ওর কাছে মনে হয়েছে যে ফোন নম্বর নেওয়ার কোন মানে নেই । এখানে এসে দেখা হচ্ছে সেটাই অনেক কিছু । সে বিকেল থেকে অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু মুগ্ধ এল না । প্রতিদিন যে আসবে সেটার কোন মানে নেই । সন্ধ্যা পার হয়ে রাত পার হয়ে গেল অথচ মুগ্ধ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হল না । বসেই রইলো ।
শেষে একেবারে বন্ধ হওয়ার সময় নিজের বাসায় ফিরে এল । সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারলো না । জেগে রইলো কিসের জন্য । ভোর বেলা রাত্রীর মনে হল যে মুগ্ধকে সব কিছু বলে দেওয়ার সময় এসেছে । আজও বিকেলেই এসে হাজির হল । সেই নির্দিষ্ট টেবিলে মুগ্ধকে বসে থাকতে দেখলো আগের মত । রাত্রীর খুব বেশি রাগ হল । মনে হল এখনই মুগ্ধের কাছে গিয়ে কৈফিয়ৎ দাবি করে যে গতকাল সে কেন আসে নি । তারপরেই ওর মনে হল যে ওর কি আসলেই অধিকার আছে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার ?
-রাতে ঘুম হয় নি?
রাত্রীর চোখ তুলে তাকালো । মুগ্ধ তার সামনে এসে দাড়িয়েছে ।
-না ।
-কাল অনেক সময় অপেক্ষা করে ছিলে । ফোন কর নি কেন?
-ফোন নম্বর নেই আমার কাছে ।
-স্টাফদের বললেই হত । ওরা ফোন করতো ।
রাত্রী চোখ তুলে তাকালো । বলল, কেন আপনার স্টাফরা আপনাকে ফোন করে নি?
মুগ্ধ হাসলো । তারপর বলল, হ্যা করেছিলো । আমি জানতাম বসে আছো আমার জন্য ।
-তাহলে কেন আসেন নি ?
-দেখার জন্য যে তুমি কত সময় অপেক্ষা কর । ভেবেছিলাম ঘন্টা খানেক বসে থেকে চলে যাবে কিন্তু যখন গেলে না তখন….. কৌতুহলটা আরও বেড়ে গেল ।
মুগ্ধ তারপর হাত তুলে সিসি টিভির দিকে ইশারা করে দেখালো । বলল, ঐ যে সিসিটিভি দেখতে পাচ্ছো, এটার ফুটেজ আমি আমার মোবাইল থেকেই দেখতে পাই । তোমাকে দেখছিলাম ।
রাত্রীর খুব বেশি রাগ হল । এতো রাগ যে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল । মুগ্ধ বলল, আমার জন্য অনেক দিন কেউ এতো ব্যকুলতা নিয়ে অপেক্ষা করে নি ।
রাত্রী মুগ্ধ চোখের দিকে কিছু সময় তাাকিয়ে থেকে বলল, ওয়েল । আপনার ধারণা ভুল । আমি আজকে বলতে এসেছি যে আজকের পরে আমি আর কোন দিন এখানে আসবো না ।
এই বলে সে ঘুরে হাটা দিল । রাত্রী ভেবেছিলো মুগ্ধ তাকে আটকানোর চেষ্টা করবে । কিন্তু মুগ্ধকে একই জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে খুব বেশি রাগ হল ওল । সে দ্রুত লিফটের দিকে হাটা দিল । আজকের পরে সে আর সত্যিই আর আসবে না । লিফটের দরজা খুলে গেল একটু পরে । ঠিক যখন সেটা বন্ধ হবে তখনই মুগ্ধ লিফটের ভেতরে ঢুকে পড়লো। তারপর রাত্রী কিছু বলার আগেই ওকে লিফটের দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো. রাত্রী কিছুই বলতে পারলো না । কেবল অনুভব করলো ওর পুরো শরীরে কেমন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেছে । সাথে সাথে এও অনুভব করলো যে মুগ্ধ ওর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরেছে।
তিন
রাত্রীর খুব ভেঙ্গে গেল । সাথে সাথেই বুঝতে পারলো কিছু যেন একটা ঠিক নেই । কোন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । একটু ভাল করে তাকলাতেই বুঝতে পারলো সমস্যাটা । চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে । রাত্রী একটুও নড়তে পারছে না । ওকে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে । দুই হাত দুই দিকে দিকে শক্ত করে বাঁধা রয়েছে । এতোটাই অবাক হয়েছে যে কিছু সময় রাত্রী কোন কথাই বলতে পারলো না । মনে হল এখানে ও কিভাবে এল? ওর কি এখানে কোন ভাবে থাকার কথা?
প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার পরপরই রাত্রীর মনে আসল ভয়টা চেপে বসলো । ওখানে কিভাবে এল? কেউ ওকে কেন এভাবে বেঁধে রাখবে? কি কারণে?
রাত্রী মনে করার চেষ্টা করলো যে কাল রাতে ও কোথায় ছিল ?
মুগ্ধের সাথে ছিল । মুগ্ধ ওকে লিফটের ভেতরে চুমু খেয়েছিলো । তারপর ?
ওরা গাড়িতে করে কোথাও যাচ্ছিলো?
তারপর রাত্রী মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই মনে করতে পারলো না । হয়তো ওদের গাড়ি এসিডেন্ট করেছিলো কিংবা অন্য কোন বিপদ হয়েছিল । মুগ্ধ কোথায়?
রাত্রী আরেকবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু কোন কাজ হল না । খুব বেশি শক্ত করে ওকে বাঁধা হয়েছে ?
কে ওকে এভাবে আটকে রেখেছে ?
আর কেনই বা রেখেছে?
আরও কিছু ভাবতে যাবে ঠিক তখনই ডান দিকের দরজাটা খুলে গেল । রাত্রীর চোখ চলে গেল সেদিকে । ঘরটা অন্ধকার হলেও দরজার ওপাশের ঘরটা আলোকিত। সেই আলোতেই দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে সে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে । সাথে সাথেই রাত্রীর কাছে সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেল । বুকের ভেতরে একটা তীব্র ভয় এসে জমা হল তখন । সামনের ঐ মানুষটাকে ওকে প্লান করেই এখানে এভাবে ধরে এনেছে । ওকে নিয়ে তার কি পরিকল্পনা ?
পরিশিষ্টঃ
রিয়া একটু অবাক হয়ে তাকালো সামনে দাড়ানো মানুষটার দিকে । স্যুট টাই পরা নিপাট ভদ্রলোক ! ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হাসি মুখে । তারপর বলল, তোমাদের ভেতরে জন্মদিন কার?
রিয়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, জ্বী আমার !
আজকে রিয়ার জন্মদিন । জন্মদিন টা রিয়ার কোন কালে ভাল যায় না । আজকে সাফিকের জোড়াজুড়িতে এখানে এসেছে । নিরিবিলি একটা রেস্টুরেন্টে বসে কেক কাটছে ওরা দুজন ! তখনই সামনে এই লোকটা এসে হাজির হল ।
লোকটা বলল, জন্মদিনের ব্যাপারটা আমার কাছে দারুন লাগে । আসলে আমি নিজের জন্মদিনের তারিখ টা ঠিক মত জানি না । এতিম খানাতে বড় হয়েছি । এই জন্য এই দিনটা যখন কেউ পালন করে তখন আমার খুব ভাল লাগে । মিস রিয়া শুভ জন্মদিন !
রিয়া হাসলো । সামনে দাড়ানো লোকটাকে ওর বেশ মনে হল । এভাবে অকপটে সবাই কথা বলতে পারে না ।
লোকটা বলল, আমার ব্যাগে আসলে সব সময় একটা উপহার আমি রেখে দিই । প্লিজ না করবেন না । আই ইনসিস্ট !
এই বলে সে নিজের ব্যাগ থেকে র্যাপিং করা একটা গিফট বক্স এগিয়ে দিল রিয়ার দিকে ।
রিয়া এমনটা মোটেই আশা করে নি । রিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লোকটা বলল, হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ মিস রিয়া ! জন্মদিন শুভ হোক !
রিয়া বলল, না না প্লিজ।
-না করবেন না । আমার রেস্টুরেন্ট যারা যারা জন্মদিন পালন করতে আসে সবাইকেই গিফট দেওয়া হয় । না করলে চলবে না !
রেস্টুরেন্টটা সামনে দাড়ানো লোকটার শুনে রিয়া আরও একটু অবাক হল । ওদের দিকে তাকিয়ে লোকটা একজন ওয়েটারকে ডাক দিল । ওয়েটার ছুটে এল । লোকটা বলল, ইনারা যা অর্ডার দেয়, কোন বিল হবে না । ঠিক আছে?
-জি স্যার !
রিয়া আসলেই কিছু বুঝতে পারছে না । তবে ওর কেন জানি বেশ মজা লাগছে ! এভবে ফ্রি ট্রিট পেয়ে যাবে তার উপরে আাবর উপহার ! ভাবতেই পারছে না !
লোকটা আরেকবার হেসে দরকার দিকে হাটা দিল । আরেকটা নতুন টোপ ফেলা গেছে । কাজ হবে আশা করা যায় !