জাস্ট ফ্রেন্ড

oputanvir
4.7
(53)

আমি নিশির দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বললাম, তুমি কী বললে?
-শুনতে পাও নি কী বলেছি?
-তার মানে আমার থেকে তোমার কাছে তোমার ঐ বন্ধুর কথা বেশি বিশ্বাস যোগ্য মনে হল?
-শোন রিভু কখনও আমার খারাপ চায় না । বুঝেছো?
-তো আমি তোমার খারাপ চাই? এটা বলতে চাও ? তোমাকে কোন দিন মিথ্যা বলেছি আমি?
-আমি কী জানি !

কথাটা শুনে এমন মেজাজ গরম হল আমার ! এই জন্য শ্লার প্রেম করতে চাই নি । ঝামেলা বিহীন থাকতে চেয়েছি । কিন্তু হায় আমার কপাল । নিশিকে দেখে অন্তত মনে হয়েছিলো যে এই মেয়েটা আমাকে ঠিকঠাক মত বুঝবে । কিন্তু কোথায় কি ! এই মেয়ে দেখি আমার থেকে তার জাস্ট ফ্রেন্ডকে বেশি বিশ্বাস করে । এই জন্য পল্টু ভাই বলেছি যে যে মেয়ের জাস্ট ফ্রেন্ড সেই মেয়ের সাথে কোন দিন প্রেম করতে নাই । তাহলে জীবন ছাপাছাপা হয়ে যাবে । আমার সেদিন পল্টু ভাইয়ের কথা টা ঠিক বিশ্বাস করি নাই কিন্তু এখন আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি ! এই নিশির সাথে আর একদিনও না । আমি নিশির দিকে তাকিয়ে বললাম, ঠিক আছে ! ফাইন ! যেদিন থেকে তুমি ঐ রিভুর থেকে আমাকে বেশি গুরুত্ব দিতে শিখবে সেদিন আসবে আমার কাছে । ঠিক আছে ! এর আগে না !

আমি নিশিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাটা দিলাম ! যদিও মনে হল ব্যাপারটা একটু বেশিই হয়ে গেল । এতো কঠিন করে না বললেও চলতো । হয়তো আরও একটু শান্ত ভাবে বুঝিয়ে বললে মেয়েটা বুঝতো । আমি জানি ওকে এই কথা বলার জন্য ও হয়তো আমার সাথে ব্রেক আপ করে ফেলতে পারে । করুক ! কী আর করা । প্রতিদিন এই প্যারা আর ভাল লাগে না ।

অবশ্য দোষ নিশির না । আমি জানি নিশি আমাকে কখনই সন্দেহ করবে না । করতো না । কিন্তু ঐ রিভু নামের ছেলেটার কারণেই সব ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে । ঐ ছেলে নানান কথা আমার নামে নিশর কানে পৌছাচ্ছে । আমি কী করি না করি কোন মেয়ের সাথে কথা বলি, এই সব রিভুর মাধ্যমে নিশির কাছে যায় । পল্টু ভাইকে বলতেই পল্টু ভাই বলল, এক কাজ করা যাক ।
আমি বললাম, কী কাজ?
-বেটা ধরে একটা ছ্যাচা দেওয়া যাক !
-পাগল হয়েছেন নাকি! এই কথা যদি কোন ভাবে নিশির কানে যায় তাহলে আর উপায় আছে ! যাও একটু সম্ভবনা আছে তাও নষ্ট হয়ে যাবে । কোন দরকার নেই । আমি কোন খারাপ কাজ করি নাই । তাই আশা করি নিশি এক সময় বুঝতে পারবে ।

রিভু নামের ছেলেটা এমনিতে বেশ ভালই । আমার সাথে কি চমৎকার ভাবে হেসে হেসে কথা বলে । নিশির সময় বয়সীই হবে । আমার থেকে দুই বছরের ছোট হবে । এই ছেলের সাথে কি ঝগড়া করা যায় ! সমান হলে একটা মাইর দেওয়া যেত কিন্তু ছোট কাউকে মাইর দিলে কেমন দেখায় ব্যাপারটা !

তিনদিন একেবারে কোন যোগাযোগ রাখলাম না নিশির সাথে । ওর ফোন পর্যন্ত ধরলাম না । কয়েকবার যে ফোন দিয়েছে সেটা আমি দেখেছি । তবে সেটা ধরি নি ইচ্ছে করে । এইবার একটু বুঝবে সে ! আমি বেশি জরুরী নাকি ঐ বেটা রিভু !

চারদিন পর সন্ধ্যা বেলা হলের এক ছোট ভাই আমার রুমে এসে খবর দিল যে নিশি আমার সাথে দেখা করার জন্য হলের গেটে দাড়িয়ে আছে । সে আরও বলেছে আমি যদি না নামি তাহলে সে সারারাত সেখানে দাড়িয়েই থাকবে । বুঝতে পারলাম যে কাজ হয়েছে । এবার নিচে যাওয়া যায় !

আমাকে দেখে নিশি একটু হাসলো । শুকনো মুখের হাসি । বুঝলাম বেঁচারি কষ্টে আছে । আমি নিজেও কী কষ্টে নেই । এবার অন্তত এই ঝামেলাটা দুর হোক ! এই নিয়ে আর কোন প্যারা আমি নিতে রাজি নই । আজকে এটা নিয়ে সব কথা বলব পরিস্কার ভাবে !

নিশি আমার পাশাপাশি হাটতে লাগলো ! আমরা শালপা তলার পুকুর ঘাটে বসলাম । অনেক টা সময় আমরা কেউ কোন কথা বললাম না । কেবল চুপ করে বসেই রইলাম । তখনই মনে হল এবার একটু সামনে এগোনো যাক। মেয়েটা যেহেতু নিজ থেকে আমার কাছে এসেছে তার মানে ওর আমার প্রতি কদর আছে । আমার তো আছেই । তাই ইগো বাঁচিয়ে রেখে সম্পর্ক নষ্ট করার কোন মানে নেই ।

আমি নিজ থেকে ওর হাত ধরলাম । নিশির নরম হাত আমার সব সময়ই পছন্দ । নিশি আমার দিকে তাকালো । আমি বললাম, তুমি জানো আমি কখনও তোমার কাছে মিথ্যা বলি না । জানো না?
-হুম !
-তাহলে কেন অন্যের কথা শুনে কেন আমার সাথে ঝগড়া কর শুনি?
-আর করবো না কোন দিন !

নিশির কথা শুনে একটু চমকে গেলাম । নিশি এতো জলদি আমার কথা মেনে নিল কেন ঠিক বুঝলাম না ! বললাম, সত্যি?
-হ্যা । আর কখনও করবো না ।
-আর তোমার ঐ বেস্ট ফ্রেন্ড রিভু !

রিভুর নামটা শুনতেই দেখলাম নিশির মুখটা রাগে ফেটে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, খবরদার ঐ বদমাইশটার নাম আর আমার সামনে কোন দিন নিবে না ।
-মানে কি?

নিশি আমার দিকে তাকালো কঠিন চোখে । আমি অবাক করা চোখে বললাম, মানে কি ! সমস্যা কি শুনি !
-বেটা বদমাইশ ! বেটা যে তলে তলে এতো এই সেটা তো আমার জানা ছিল না ।
আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । বললাম, আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না ।
নিশি নিচু কন্ঠে বলল, রিভু তোমাকে পছন্দ করে ।
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না । বললাম, মানে ? আমি বুঝলাম ।
নিশি বিরক্ত কন্ঠে বলল, মানে বুঝো না । ও গে ! তোমাকে পছন্দ করে । এই জন্য আমার সাথে তোমার ব্রেক করাতে চেয়েছিলো !

আমার মাথা যেন ঘুরে উঠলো । বললাম কি সর্বোনাশ !

নিশি তারপর যা বলল সেটার সারমর্ম হচ্ছে । ঐদিন ঝগড়া করে আসার পরে নিশির মন খারাপ ছিল । রিভু ওকে সঙ্গ দিচ্ছিলো । নিশি নিজের ফোনটা রেখে একটু ওয়াশ রুমে গিয়েছিলো । ফিরে এসে দুর থেকেই দেখতে পেল যে রিভু কিছু যেন ওর ফোন থেকে নিজের ফোনে ট্রান্সফার করছে । ও চলে আসতেই সেটা লুকিয়ে ফেলল । ফোনটা দিয়ে দিল । তারপর নিশি নিজের ব্লুটুথ ট্রান্সফার হিস্টরিতে দেখতে পেল যে সেখানে বেশ কিছু ছবি রয়েছে । ঠিক মত যেয়ে পারে নি । নিশির মনে হয়েছিলো যে ওর নিজের ছবি হবে হয়তো । কিন্তু সেগুলো ওপেন করতেই অবাক হয়ে গেল । সেগুলো সব আমার ছবি । ওর কথা মত আমি ওকে নানান ভাবে ছবি তুলে পাঠাতাম । এর ভেতরে কিছু ছবিতে আমার শার্টও ছিল না । সেই ছবির একটাও রয়েছে । নিশির প্রথমে ঠিক বিশ্বাস হয় নি । পরে রিভুকে চেপে ধরতেই সে স্বীকার করে নেয় ।

আমি নিশির দিকে হঠাৎ হো হো করে হেসে ফেললাম ! নিশি বলল, খবরদার ঐ বেটার সাথে কোন দিন কথা বলবা না । একদম না । এমনিতেও মেয়েদের জ্বালায় বাঁচি না ! কে না আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছিনিয়ে নেয় এখন কেবল মেয়েরা না ছেলেরাও ! আবারও বলছিো খবরদার ঐ ছেলের ধারে কাছে যাবা না !

দেখলাম নিশি আরও একটু কাছে সরে এল । আমার হাত যেন আরও একটু শক্ত করে ধরলো । আমি কোন কথা বললাম না আর । রাত নেমে অন্ধকার নেমে এসেছে । ঝিঁঝিঁ ডাকা শুরু করেছে চারপাশে । এই সময়ে নিশির হাত ধরে বসে থাকতে ভাল লাগছে । সব চেয়ে ভাল লাগচে যে আমাদের মাঝের ঝামেলা একেবারে দুর হয়েছে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 53

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “জাস্ট ফ্রেন্ড”

Comments are closed.