আমি নিশির দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বললাম, তুমি কী বললে?
-শুনতে পাও নি কী বলেছি?
-তার মানে আমার থেকে তোমার কাছে তোমার ঐ বন্ধুর কথা বেশি বিশ্বাস যোগ্য মনে হল?
-শোন রিভু কখনও আমার খারাপ চায় না । বুঝেছো?
-তো আমি তোমার খারাপ চাই? এটা বলতে চাও ? তোমাকে কোন দিন মিথ্যা বলেছি আমি?
-আমি কী জানি !
কথাটা শুনে এমন মেজাজ গরম হল আমার ! এই জন্য শ্লার প্রেম করতে চাই নি । ঝামেলা বিহীন থাকতে চেয়েছি । কিন্তু হায় আমার কপাল । নিশিকে দেখে অন্তত মনে হয়েছিলো যে এই মেয়েটা আমাকে ঠিকঠাক মত বুঝবে । কিন্তু কোথায় কি ! এই মেয়ে দেখি আমার থেকে তার জাস্ট ফ্রেন্ডকে বেশি বিশ্বাস করে । এই জন্য পল্টু ভাই বলেছি যে যে মেয়ের জাস্ট ফ্রেন্ড সেই মেয়ের সাথে কোন দিন প্রেম করতে নাই । তাহলে জীবন ছাপাছাপা হয়ে যাবে । আমার সেদিন পল্টু ভাইয়ের কথা টা ঠিক বিশ্বাস করি নাই কিন্তু এখন আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি ! এই নিশির সাথে আর একদিনও না । আমি নিশির দিকে তাকিয়ে বললাম, ঠিক আছে ! ফাইন ! যেদিন থেকে তুমি ঐ রিভুর থেকে আমাকে বেশি গুরুত্ব দিতে শিখবে সেদিন আসবে আমার কাছে । ঠিক আছে ! এর আগে না !
আমি নিশিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাটা দিলাম ! যদিও মনে হল ব্যাপারটা একটু বেশিই হয়ে গেল । এতো কঠিন করে না বললেও চলতো । হয়তো আরও একটু শান্ত ভাবে বুঝিয়ে বললে মেয়েটা বুঝতো । আমি জানি ওকে এই কথা বলার জন্য ও হয়তো আমার সাথে ব্রেক আপ করে ফেলতে পারে । করুক ! কী আর করা । প্রতিদিন এই প্যারা আর ভাল লাগে না ।
অবশ্য দোষ নিশির না । আমি জানি নিশি আমাকে কখনই সন্দেহ করবে না । করতো না । কিন্তু ঐ রিভু নামের ছেলেটার কারণেই সব ঝামেলা সৃষ্টি হচ্ছে । ঐ ছেলে নানান কথা আমার নামে নিশর কানে পৌছাচ্ছে । আমি কী করি না করি কোন মেয়ের সাথে কথা বলি, এই সব রিভুর মাধ্যমে নিশির কাছে যায় । পল্টু ভাইকে বলতেই পল্টু ভাই বলল, এক কাজ করা যাক ।
আমি বললাম, কী কাজ?
-বেটা ধরে একটা ছ্যাচা দেওয়া যাক !
-পাগল হয়েছেন নাকি! এই কথা যদি কোন ভাবে নিশির কানে যায় তাহলে আর উপায় আছে ! যাও একটু সম্ভবনা আছে তাও নষ্ট হয়ে যাবে । কোন দরকার নেই । আমি কোন খারাপ কাজ করি নাই । তাই আশা করি নিশি এক সময় বুঝতে পারবে ।
রিভু নামের ছেলেটা এমনিতে বেশ ভালই । আমার সাথে কি চমৎকার ভাবে হেসে হেসে কথা বলে । নিশির সময় বয়সীই হবে । আমার থেকে দুই বছরের ছোট হবে । এই ছেলের সাথে কি ঝগড়া করা যায় ! সমান হলে একটা মাইর দেওয়া যেত কিন্তু ছোট কাউকে মাইর দিলে কেমন দেখায় ব্যাপারটা !
তিনদিন একেবারে কোন যোগাযোগ রাখলাম না নিশির সাথে । ওর ফোন পর্যন্ত ধরলাম না । কয়েকবার যে ফোন দিয়েছে সেটা আমি দেখেছি । তবে সেটা ধরি নি ইচ্ছে করে । এইবার একটু বুঝবে সে ! আমি বেশি জরুরী নাকি ঐ বেটা রিভু !
চারদিন পর সন্ধ্যা বেলা হলের এক ছোট ভাই আমার রুমে এসে খবর দিল যে নিশি আমার সাথে দেখা করার জন্য হলের গেটে দাড়িয়ে আছে । সে আরও বলেছে আমি যদি না নামি তাহলে সে সারারাত সেখানে দাড়িয়েই থাকবে । বুঝতে পারলাম যে কাজ হয়েছে । এবার নিচে যাওয়া যায় !
আমাকে দেখে নিশি একটু হাসলো । শুকনো মুখের হাসি । বুঝলাম বেঁচারি কষ্টে আছে । আমি নিজেও কী কষ্টে নেই । এবার অন্তত এই ঝামেলাটা দুর হোক ! এই নিয়ে আর কোন প্যারা আমি নিতে রাজি নই । আজকে এটা নিয়ে সব কথা বলব পরিস্কার ভাবে !
নিশি আমার পাশাপাশি হাটতে লাগলো ! আমরা শালপা তলার পুকুর ঘাটে বসলাম । অনেক টা সময় আমরা কেউ কোন কথা বললাম না । কেবল চুপ করে বসেই রইলাম । তখনই মনে হল এবার একটু সামনে এগোনো যাক। মেয়েটা যেহেতু নিজ থেকে আমার কাছে এসেছে তার মানে ওর আমার প্রতি কদর আছে । আমার তো আছেই । তাই ইগো বাঁচিয়ে রেখে সম্পর্ক নষ্ট করার কোন মানে নেই ।
আমি নিজ থেকে ওর হাত ধরলাম । নিশির নরম হাত আমার সব সময়ই পছন্দ । নিশি আমার দিকে তাকালো । আমি বললাম, তুমি জানো আমি কখনও তোমার কাছে মিথ্যা বলি না । জানো না?
-হুম !
-তাহলে কেন অন্যের কথা শুনে কেন আমার সাথে ঝগড়া কর শুনি?
-আর করবো না কোন দিন !
নিশির কথা শুনে একটু চমকে গেলাম । নিশি এতো জলদি আমার কথা মেনে নিল কেন ঠিক বুঝলাম না ! বললাম, সত্যি?
-হ্যা । আর কখনও করবো না ।
-আর তোমার ঐ বেস্ট ফ্রেন্ড রিভু !
রিভুর নামটা শুনতেই দেখলাম নিশির মুখটা রাগে ফেটে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল, খবরদার ঐ বদমাইশটার নাম আর আমার সামনে কোন দিন নিবে না ।
-মানে কি?
নিশি আমার দিকে তাকালো কঠিন চোখে । আমি অবাক করা চোখে বললাম, মানে কি ! সমস্যা কি শুনি !
-বেটা বদমাইশ ! বেটা যে তলে তলে এতো এই সেটা তো আমার জানা ছিল না ।
আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না । বললাম, আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না ।
নিশি নিচু কন্ঠে বলল, রিভু তোমাকে পছন্দ করে ।
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না । বললাম, মানে ? আমি বুঝলাম ।
নিশি বিরক্ত কন্ঠে বলল, মানে বুঝো না । ও গে ! তোমাকে পছন্দ করে । এই জন্য আমার সাথে তোমার ব্রেক করাতে চেয়েছিলো !
আমার মাথা যেন ঘুরে উঠলো । বললাম কি সর্বোনাশ !
নিশি তারপর যা বলল সেটার সারমর্ম হচ্ছে । ঐদিন ঝগড়া করে আসার পরে নিশির মন খারাপ ছিল । রিভু ওকে সঙ্গ দিচ্ছিলো । নিশি নিজের ফোনটা রেখে একটু ওয়াশ রুমে গিয়েছিলো । ফিরে এসে দুর থেকেই দেখতে পেল যে রিভু কিছু যেন ওর ফোন থেকে নিজের ফোনে ট্রান্সফার করছে । ও চলে আসতেই সেটা লুকিয়ে ফেলল । ফোনটা দিয়ে দিল । তারপর নিশি নিজের ব্লুটুথ ট্রান্সফার হিস্টরিতে দেখতে পেল যে সেখানে বেশ কিছু ছবি রয়েছে । ঠিক মত যেয়ে পারে নি । নিশির মনে হয়েছিলো যে ওর নিজের ছবি হবে হয়তো । কিন্তু সেগুলো ওপেন করতেই অবাক হয়ে গেল । সেগুলো সব আমার ছবি । ওর কথা মত আমি ওকে নানান ভাবে ছবি তুলে পাঠাতাম । এর ভেতরে কিছু ছবিতে আমার শার্টও ছিল না । সেই ছবির একটাও রয়েছে । নিশির প্রথমে ঠিক বিশ্বাস হয় নি । পরে রিভুকে চেপে ধরতেই সে স্বীকার করে নেয় ।
আমি নিশির দিকে হঠাৎ হো হো করে হেসে ফেললাম ! নিশি বলল, খবরদার ঐ বেটার সাথে কোন দিন কথা বলবা না । একদম না । এমনিতেও মেয়েদের জ্বালায় বাঁচি না ! কে না আমার বয়ফ্রেন্ডকে ছিনিয়ে নেয় এখন কেবল মেয়েরা না ছেলেরাও ! আবারও বলছিো খবরদার ঐ ছেলের ধারে কাছে যাবা না !
দেখলাম নিশি আরও একটু কাছে সরে এল । আমার হাত যেন আরও একটু শক্ত করে ধরলো । আমি কোন কথা বললাম না আর । রাত নেমে অন্ধকার নেমে এসেছে । ঝিঁঝিঁ ডাকা শুরু করেছে চারপাশে । এই সময়ে নিশির হাত ধরে বসে থাকতে ভাল লাগছে । সব চেয়ে ভাল লাগচে যে আমাদের মাঝের ঝামেলা একেবারে দুর হয়েছে ।
Very nice it