আমি ২য় বার আফসোস করতে রাজি নই

oputanvir
4.9
(42)

ঈশিতা কি যেন একটা ফাইল দেখছিল তখন আমি ওর ডেস্কের সামনে গিয়ে দাড়াই । কি বলব কিভাবে বলব এই সব যখন ভাবছি তখন ও মুখ তুলে তাকালো । এবং আমি ওর চেহারায় এক অবিশ্বাস আর বিশ্মিত ভাব ফুটে উঠতে দেখলাম । অবাক কেন হবে না বলুন । যে মানুষটা গত এক বছরে একবার তার কাছে আসে নি আর আজ যদি নিজ থেকে সামনে এসে দাড়ায় আবাক হবারই কথা ।

আমি খানিকটা ইতস্ততঃ ভাব নিয়ে বললাম “আপনার সাথে কি কয়টা কথা বলা যাবে ?’

বিস্ময় ভাবটা কাটিয়ে উঠে ঈশতা বলল “হ্যা অবশ্যই । অফিসিয়াল কিছু ?’

“না অফিসিয়াল না । আন অফিসিয়াল । বলা যাবে ?’

“হ্যা যাবে না কেন ? বসুন । বসে বলুন ।‘

আমি বসলাম । কিভাবে বলব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । আসলে এরকম পরিস্থিতিতে আগে পড়ি নি তো । আর এর জন্য আমি নিজেই দায়ী । আমি নিজেই আমার চারিদিকে এমন আবহাওয়া তৈরী করে রেখেছি যে এরকম করাটা আমার জন্য বেমানান ।

ঈশিতা বলল “কোন সমস্যা হয়েছে নাকি ?’

“না না কোন সমস্যা হয় নি । আমি আসলে জানতে চাচ্ছিলাম যে আগামী কাল কি আপনার কোন স্পেশাল প্রোগ্রাম আছে?’

“কালতো ছুটির দিন । না তেমন কিছু নাই । কেন বলুন তো?’

আমি খানিকটা শংঙ্কা নিয়ে বললাম “আগামীকাল দুপুরে কি আমার সাথে লাঞ্চ করা যায় ? ইফ ইউ ডোন্ড হ্যাভ এনি প্রোবলেম! আমার কিছু বলার ছিল আপনাকে’।

ঈশিতা এবার সত্যি সত্যি অনেক অবাক হল । খানিকটা খুশিও হল মনে হল ।

“ওকে । নো প্রোবলেম ।‘

“গ্রেইট । তাহলে কাল দেড়টা দুইটার দিকে । স্টার কাবাবে !

ঈশিতা মাথা নাড়ালো । “আমি পৌছে যাবো ।”

” থ্যাঙ্কস ।”

নিজের ডেস্কে ফিরে এলাম । খানিকটা হালকা লাগছিল মনের ভিতর । যদিও এখনও জানি না কাল ঈশিতাকে সব কিছু বলতে পারবো কিনা ! যদি না বলতে পারি মনের মধ্যে শান্তি পাবো না কিছুতেই । আমি জানি এসব কথা বলার কোন মানে নেই । তবুও নিজের মনের শান্তির জন্য এটা আমাকে করতে হবে । জীবনে দ্বিতীয় বার আমি আর আফসোস করতে চাই না ।

ছোট বেলা থেকেই আমি খুব চুপচাপ স্বভারের ছিলাম । চুপচাপ থাকা একটা কারণ হল আমি কিছু বললে মানুষ কি ভাবে এটা খুব একটা ভাবার বিষয় ছিল । বিশেষ করে মেয়েদের এটা বেলায় এই বোধটা ছিল । আমি যদি কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে যাই মেয়েটা কি না কি ভাববে ? যদি ইগনোর করে ! যদি … এই রকম হাজারও “যদি” র কারনে কারো সাথেই ঠিক ভাবে মেশা হয়নি । তাই বলতে গেলে একা একাই কেটেছে আমার দিন গুলো । এখনও কাটছে । কলেজে পড়ার সময়ও আমি এরকম একাই ছিলাম ।

কিন্তু একটা পরিবর্তন আসল আমার মধ্যে সেটা হল হুট করে আমি একটা মেয়ে প্রেমে পড়ে গেলাম । মেয়েটার নাম ছিল লাবনী । লাবন্য । কিন্তু নিজের স্বভাবের কারনে কোন দিন লাবনীকে আমি বলতে পারি নি সে কথা । একা একাই ভালবাসতাম একা একাই কষ্ট পেতাম । দেখতে দেখতে আমাদের কলেজের দিন শেষ হয়ে গেল ।

আমাদের এইচ এস সি পরীক্ষার আগেই লাবনীর বিয়ে হয়ে যার । সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম । তার থেকে বেশী কষ্ট পেলাম আর একটা কথা জানার পর ।

ভার্সিটিতে আমাদের কলেজেরই একটা মেয়ে আমার ডিপার্টমেন্টে পড়তো । এই মেয়েটা লাবনীর বান্ধবী ছিল । একবার বাড়ি থেকে ঢাকা আসার সময় ঐ মেয়ের সাথে এসেছিলাম । ওর কাছ থেকে আমি জানতে পারি যে লাবনী মনে মনে আমাকে পছন্দ করতো । কিন্তু আমার দিক থেকে কোন সাড়া পায়নি বলে ও আর এগোয় নি । কথাটা জানার পর বুকের মাঝে যেন হু হু করে উঠল । যদি আমি একটু সাহস করে আমার পছন্দের কথা বলতাম তাহলে আজ জীবনটা কত সুন্দর হত ! তারপর এই আফসোসটা আমাকে খুব পীড়া দিত ।

আবার আর একটা আফসোসের কারন হতে চলেছে । একটু দেরি যদিও হয়ে গেছে তবুও মনকে এইটুকু বলতে তো পারবো যে আমি বলতে পেরেছি আমার মনের কথা । আমি ঈশিতাকে বলতে পেরেছি । হোক না একটু দেরি !

ঈশিতা বছর খানিক আগে আমাদের অফিসে জয়েন করেছে । তারপর আবার সেই একই কাহিনী হল । একা একাই কেটে যাচ্ছিল জীবন । তবুও ঈশিতা নতুন ভাবেই আবার আমার হৃদয় ছুয়ে গেল । আমি ঈশিতার প্রেমে পড়লাম । কিন্তু বলতে পারলাম না কিছু । একা একাই ওকে নিয়ে ভাবতাম । আর ওকে অনেক চিঠি লিখতাম । চিঠি না মেইল করতাম । কিন্তু মেইল গুলো পাঠানো হয়নি কোন দিন । হয়তো পাঠানো হবে না কোন দিন । কেবল সেভ করে রাখতাম ।

এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল । কিন্তু কয়দিন আগে শুনতে পেলাম যে ঈশিতার বাগদান হয়ে গেছে । হায় হায় ! এবারও একই ঘটনা ঘটবে? আমার কথা গুলো ওকে বলা হবে না ? আবার সেই আফসোস করতে হবে ?

তখনই সিদ্ধান্ত নেই যে ঈশিতাকে অন্ততঃ আমার মনের কথাটা আমি জানাবো । ও যাই ভাবুক ! বাকী জীবন আমি আর একটা আফসোসের বোঝা আমি আমি বইতে পারবো না ।

স্টার কাবাবে যেতে যেতে ভাবছি যে ঈশিতা কখন যে আসবে কে জানে । কিন্তু গিয়ে দেখলাম ও আমার আগে চলে এসেছে । আমাকে আসতে দেখে এগিয়ে এল হাসি মুখে ।

“একটু কি দেরি হয়ে গেল ?”

“না না ঠিক আছে । মাত্রই এলাম আমি ।”

দুতালায় প্রচুর ভীড় । তিন তালায় বসলাম কোনার দিককার একটা টেবিলে । মুখোমুখি ।

“কি যেন বলবেন বলেছিলেন ।”

আমি তখনই কোন কিছু বলতে পারি না । বললাম “হ্যা বলব । এই জন্যই আসা ।”

“আচ্ছা তার আগে আমার একটা কথার উত্তর দিন । আপনি এতো গম্ভীর হয়ে থাকেন কেন ? আমি আমার জীবনে এতো কম কথা বলার মানুষ দেখি নি । প্রত্যেকটা কথা মেপে মেপে । দরকারের একটা বেশি কথা না । এরকম কেন ?”

আমি কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছিলাম না । একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।

“আমার কি মনে হয় জানেন ?” ও আবার বলল শুরু করল “আপনার এমন একটা বাচাল মেয়ের সাথে বিয়ে হবে যে আপনাকে কথা বলে বলে বিরক্ত করে ফেলবে ।”

বলেই ঈশিতা হাসি শুরু করলো ।

“রাগ করলেন না তো ? আপনার বউকে বাচাল বললাম !”

এবার আমি একটু হাসলাম ।

“বউ ?”

“আচ্ছা জানেন আমি না খুব অবাক হয়েছিলাম যথন কাল আপনি এলেন । শুধু আমি পুরো অফিস এটা নিয়ে আলোচনা করছে।”

“কি বলেন এসব ? সত্যি ? কেন ?”

“কেন মানে ? এটা কোন আলোচনার বিষয় না ? যে মানুষটা কখনও বিনা প্রয়োজনে করো সাথে একটা কথাও বলে না সে যদি কাউকে লাঞ্চ করার জন্য নিজে থেকে বলে এটা আলোচনার বিষয় হবে না ?”

আমার খানিকটা অস্বস্তি লাগে । আল্লাহই জানে কাল অফিসে কি হবে ?

“আচ্ছা সেই কখন থেকে আমি বকবক করে যাচ্ছি । বলবেন তো আপনি ।”

“হু”

আজ অনেক কথা বলার আছে মনে শান্তির জন্য আমাকে বলতে হবে । আমি আমার কথা শুরু করি । একদম ছোট বেলা থেকে । কেমন ছিলাম । কেন এতো কম কথা বলি । তারপর লাবনীর কথা বললাম । সব কিছু শুনে ও বলল “আপনার জন্য খারাপ লাগছে । লাবনীর জন্যও । বেচারী কখনও জানলোও না যে আপনি তাকে পছন্দ করতেন ! আর একটু চেষ্টা করলে আজ সব কিছু অন্য রকম হতে পারতো !”

আমি বললাম “কিন্তু ও আমাকে বলতে পারতো ! ও তো আমাকে পছন্দ করতো !”

“আপনি কেন বলেন নি ।”

“আমি তো এমনই ।”

“দেখুন অপু, একটা কথা শোনেন নি ? মেয়েদের বুক ফাঁটে তো মুখ ফোঁটে না । আমরা মেয়েরা সব সময় প্রোপজ পেতে চাই । করতে নয় । এটাই স্বাভাবিক নিয়ম । এমনই হয়ে আসছে । আর আমাদের কালচার টাও এমন কথা বলে । যদিও মন কোন কথা শোনে না তবুও মেয়েদের পক্ষে আগ বাড়িয়ে মনের কথা বলার বড় কঠিন ।”

আমি বুঝলাম ঈশিতা কি বলতে চাইছে । যা বলার আমাকেই বলতে হবে ।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে ও বলল “আমাকে এতো কথা বললেন, ভাল লাগল । এভাবে নিজের মনের কথা গুলো মানুষের সাথে শেয়ার করবেন । বিশেষ করে বন্ধুদের সাথে তাহলে দেখবেন ভাল লাগবে ।”

খানিক নিরবতা ।তারপর ও বলল “আর কিছু বলবেন না ?”

মনে মনে বললাম, বলব না মানে । আসল কথা তো বলাই হয়নি । আমি যে তোমার প্রেমে পড়েছি । এটাতো বলতেই হবে ।

কিন্তু কিভাবে বলবো ?

কিভাবে ?

“আসলে আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলাম ।”

ঈশিতা খুশি খুশি গলায় বলল “বলুন । আমি তো শোনার জন্য এসেছি । যদিও আমি অনেক কথা বলি । কথা শুনতেও আমার অনেক ভাল লাগে । আর আপনার কথা শুনতেও আমার অনেক ভাল লাগছে ।”

“আসলে …”

বলতে চাইলাম আমি তোমাকে ভালবাসি কিন্তু মুখ দিয়ে বের হল “আপনার নাকি বাগদান হয়ে গেছে ?”

“কে বলল আপনাকে?”

“হয় নি?”

না হোক ! আল্লাহ যেন না ঠিক হয় ।

ও হাসলো । “না মানে এখনও হয়নি । তবে হবে ।”

আশার যে আলো জ্বলেছিল তা আবার নিভে গেল ।

তবে এখনও তো হয়নি ।

এখন যদি বলি ?

ও কি রাজি হবে ?

চান্স কি আছে ?

না হলে না হবে । বলবই । এখনই বলবো ।

“ঈশিতা ?”

“বলুন ।”

“খাবারের অর্দার দেই ?”

“হ্যা । দেওয়া যায় ।”

যাস শালা ! কি বলতে চাইলাম আর কি বের হল !

আমি তোমাকে ভালবাসি ।

আমি তোমাকে পছন্দ করি ।

এই লাইন গুলো বলা এতো কঠিন কেন ? না আমাকে বলতেই হবে । হবে ।

আবার চেষ্টা করা যাক । ওকে রেডি ১ ২ ৩…..

“কি খাবেন কাচ্ছি নাকি অন্য কিছু ?”

মনে হল নিজের গালে জোড়ছে একটা চড় মাড়ি । ব্যাটা বেয়ুকুফ ! এই সহজ কথাটা বলতে পারিস না ।

খাওয়ার সময়ও চেষ্টা করলাম । দুবার বলতে গেছি দুবারই গলায় ভাত আটকে গেছে । ভাত না বিরানী আটকে গেছে ।

খাওয়ার সময় ও টুকটাক কথা বলছিল । ওর পরিবারের কথা, বন্ধুদের কথা । শুনে ভাল লাগছিল বাট কামের কাম তো হচ্ছে না কিছুই ।

ওকে কি তাহলে বলতে পারবো না ?

এমন কেন ?

স্টার কাবাব থাকে যখন বের হলাম তখন প্রায় বিকেল ।

ঈশিতা এখনই চলে যাবে ।

ওকে কি বলতে পারবো না ?

ও হাটছে । আমি ওর পাশে ।

ওর জন্য রিক্সা ঠিক করতে যাবো এমন সময় ঈশিতা বলল “অপু সাহেব ।”

আমি ওর দিকে তাকালাম ।

“জি ।”

“আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আপনি আমাকে যা বলতে চেয়েছিলেন তার সবটা বলেন নি ।”

হ্যা তোমাকে বলা হয়নি যে তোমাকে ভালবাসি । কথাটা বললাম, মনে মনে । আমি কথা হারিয়ে ফেললাম । কি বলব বুঝতে পারছিলাম না ।

ও বলল “কোন কাজ নেই তো আর ?”

আমি মাথা নাড়াই ।

“চলুন লেক পাড়ে গিয়ে বসি । আরো কিছুক্ষন গল্প করা যাক আপনার সাথে !”

ওর সাথে হাটতে খুব ভাল লাগছিল । আমি আসলে ভাবতেই পারি নি যে ও লেক পাড়ে আসতে চাইবে । আমার তো মনে হল গেল, আর বুঝি ওকে বলা হল না । অবশ্য এখনও যে ওকে বলতে পারবো তার কোন নিশ্চয়তা নাই ।

“এ জায়গাটা সুন্দর না ?”

“হু । সুন্দর ।”

“আসুন ঐ জায়গাটায় বসি ।”

গাছের নিচে একটা ফাঁকা বেঞ্চ দেখিয়ে বলল । নিজের মনের মধ্যে অদ্ভুদ এক অনুভূতি হচ্ছে । আমরা এখানে বসে কথা বলছি । আর পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজন যাচ্ছে । আমাদের কে দেখে ভাবছে আমরা প্রেমিক প্রেমিকা । ঠিক যেমন টা আমি ভাবতাম যখন এখানে আসতাম । জোড়া দের কে দেখে ভাবতাম কত সুখেই না ওরা আছে ! আর আজ আমাদের কে একসাথে দেখে ওরা নিশ্চই এক কথাই ভাবছে ।

ইস্ ওদের ভাবনা টা যদি সত্যি হত !

“কি এতো ভাবছেন ?”

“কিছু না । এমনি ।”

“অপু সাহেব আপনি তো আজ অনেক কথা বললেন । যদিও আমার মনে হচ্ছে এখনও কিছু বলার বাকি আছে । এবার আমি কিছু কথা বলি ?”

“হ্যা অবশ্যই ।”

“কিন্তু আপনাকে কথা দিতে হবে যে আপনি রাগ করবেন না ।”

“রাগ করবো কেন ?” আমি খানিকটা অবাক হলাম ।

“না কথাটা রাগ করার মতই । আমি খানিকটা অন্যায় করেছি । অনেক দিন আপনাকে বলার চেষ্টা করেছি আপনাকে বলার জন্য কিন্তু আপনার গম্ভীর্যের জন্য সাহস হয় নি । আজ বলার একটা সুযোগ এসেছে । বলবো ?”

“বলুন ।”

“কিন্তু কথা দিন রাগ করবেন না ।”

“আচ্ছা কথা দিলাম ।”

“তবে আমি একটা কথা দিতে পারি যে আমার কথা গুলো শোনার পর আপনি আপনার বাকী থাকা কথা গুলো মনে হয় বলতে পারবেন ।”

ঈশিতার কথা শুনে আমি খানিকটা ধাঁধায় পড়ে গেলাম । বাকী থাকা কথা ? ও কি তাহলে বুঝতে পেড়েছে । গড নোজস ! আমি বললাম “আপনি নির্ভয়ে বলুন ।”

ঈশিতা খানিকটা সময় নিলো । তারপর ওর কথা শুরু করলো ।

“আপনার কি মনে আছে প্রায় মাস দুয়েক আগে আপনি ছুটি নিয়ে ছিলেন ?”

” হু । নিয়ে ছিলাম ।”

“তখন আপনার কাজ সামলানোর দায়িত্ব আমার উপর এসে পড়ে । আমি দরকার পড়লে মাঝে মাঝে আপনার ডেস্কে যেতাম । একদিন আমার পিসির নেট কানেকশনটা কেন চলে গেল । সবার টা ঠিক কেবল আমার টা নাই । তাই আমি আপনার পিসিতে বসে কাজ করছিলাম । এটা আমার আমার প্রথম অন্যায় ।”

ও খানিকটা চুপ করল ।

“আমি মেইল চেক করার জন্য ইয়াহু ওপেন করি কিন্তু আপনি আপনার একাউন্ট থেকে সাইন আউট করেছিলেন না তাই সরাসরি আপনার একাউন্টে ঢুকে পড়ি ।”

ঈশিতে আমার দিকে তাকায় । মনে হয় বোঝার চেষ্টা করে আমার মনের অবস্থা ।

“দেখুন এটা কিন্তু আপনার ভুল । আপনি সাইন আউট কেন করেন নি?”

“তারপর আপনি কি করলেন ?”

“আমি সাইন আউট করতেই যাচ্ছি লাম তখন ….” ও চুপ করে যায় ।

“তখন ?”

“তখন আমার চোখ গেল ড্রাফট ফোল্ডারের দিকে ।”

OMG!!! ঈশিতা এসব কি বলছে ওখানে তো সব মেইল গুলো সেভ করা আছে যেগুলো আমি ওকে পাঠাতে চেয়ে ছিলাম । কিন্তু পাঠাই নি ।

“তারপর ?” আমার হার্টবিট বেড়ে গেছে ততক্ষনে ।

ও বলল “ড্রাফটে ১৭১ টা মেসটজ ছিল । খুব কৌতুহল হল দেখার জন্য জানেন । জানি এটা অন্যায় । তবুও না করে পারলাম না। ফোল্ডার ওপেন করে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম । ১৭১ মেসেজই আমার কাছে লেখা । আমি এতো অবাক হলাম । এতো গুলো মেসেজ । প্রায় বছর খানেক ধরে আপনি লিখেছেন কিন্তু একটাও সেন্ড করেন নি । সেদিন সারা দিন আমি ঐ মেসেজ গুলো পড়েছি । আর অবাক হয়েছি । আমি কোন দিন কি পরে এসেছি কি খেয়েছি কার সাথে কথা বলেছি । সব আপনি লক্ষ্য করেছেন । সত্যি বলছি আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি । আপনি কিভাবে আমাকে দেখতেন বলেন তো ?”

আমি কি বলব ! আমার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না । ওর দিকে তাকাতেই আমার লজ্জা লাগছে । মেইল গুলোতে এমন কোন কথা নেই যে আমি লিখি নি । তারমানে ও সব জানে ।

ও বলল “আমি জানার পরও আমি লক্ষ্য করতাম । কিন্তু আমি এখনও বুঝতে পারি নি” ।

“এটা কি ঠিক করেছেন আপনি ?” কোন মতে বললাম কথাটা ।

“ঠিক করিনি ঠিক , কিন্তু …..” ও কথাটা শেষ করল না । রহস্যময় হাসি দিলো ।

আমার একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছা করল । বললাম “একটা কথা জানতে চাইবো ?”

“আমার এনগেইজমেন্ট ?” ও হেসে ফেলল ।

“হু”

“ওটা সত্যি না আমি কেবল দেখতে চেয়ে ছিলাম যে কথাটা আপনার কানে গেলে কি হয় ? এবং ফলাফল দেখতেই পাচ্ছেন ।”

আমি অপ্রস্তুতের মত খানিকটা হাসি ।

ঈশিতা বলল “তবে……….. !”

আবার কি হল ? আমি বললাম “তবে ?”

“তবে কথাটা কিন্তু আপনাকে বলতে হবে মুখ ফুটে ।”

আমি আবার ঝামেলায় পড়ে গেলাম ।

“কিন্তু তুমি তো জানো ।”

ও হাসল খানিকটা । বলল “এইটা ভাল । কিন্তু ঐ লাইনটা বলতেই হবে । তোমাকেই বলতে হবে ।”

আমার চেহারা দেখে ও আবার বলল “এরকম চেহারা করে লাভ নাই । যদি বল ভাল । না বললেও ভাল, আমাদের মধ্যে কলিগের রিলেশনই থাকবে । তুমি মেইল লিখে লিখে ফোল্ডার ভরে ফেলবে । এভাবেই চলতে থাকবে ।”

আমি যে কিভাবে বলি কথাটা । তবে পরিস্থিতি এখন আমার অনুকুলে । কেবল একটা লাইনই আমাকে বলতে হবে । আমি কিছু বলছি না দেখে ও বলল “তুমি বলবে না ? সব কিছু তোমার ফেভারে । তবুও এই একটা লাইনটা বলা এতো সমস্যা ? ওকে ফাইন । অপু সাহেব আমি যাই । অফিসের কলিগের সাথে এতো সময় বাইরে থাকাটা ঠিক না । আর শুনো সারা জীবন বসে বসে আফসোসই করো । টাটা ।”

ও উঠে যেতে চাইল । তখন ঠিক কি হল আমি জানি না আমি ঠিক বলতেও পারবো না ফট করে ওর হাত ধরে ফেললাম । “ভালবাসি ।”

একটু মনে জোড়ে বলে হয়ে গেছে । দেখি যে কয়েকজন ঘুরে তাকিয়েছে আমার দিকে ।

“কি বললে ?”

ওর হাত তখনও ধরা । এবার আস্তে বললাম “ভালবাসি ।” ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ।

ও বসল আমার পাশে । হাসি মুখে বলল “আবার বল ।”

“ভালবাসি । তোমাকে । ভালবাসি ।”

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 42

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →