নায়িকার বয়ফ্রেন্ড

4.4
(58)

নিশি চৌধুরী দেশের নাম করা নায়িকা । যেমন তার চেহারা তেমনই তার অভিনয় গুণ । একেবারে শূন্য থেকে নিশি আজকে এতোদুর উঠেছে । দেশের সবাই তাকে এক নামে চিনে। তার ছবি বুকে নিয়ে ঘুমায় । কত মানুষের স্বপ্নের নায়িকা যে নিশি চৌধুরী, তার কোন হিসেব নেই । 

নিশি নিজের এই জনপ্রিয়তাটা উপভোগ করে । তবে লোকে তাকে বেশি পছন্দ করে তার ক্লিন ইমেজের জন্য । নায়িকা হলেও তার পেছনে এখনও পর্যন্ত কোন স্ক্যান্ডেল ছড়ায় নি । এই ব্যাপারে নিশি সব সময় সে সজাক । নিজেকে দূরে রেখেছে এসব থেকে । অনেক সহকর্মী অনেক বন্ধু আছে তার । কিন্তু মনের মানুষ হিসাবে কাউকেই সে এখনও ঠায় দেয় নি ।

আজকে নিশি চৌধুরীর একটা ইন্টারভিউ লাইভ প্রচারিত হবে । নিশি জানে সবার চোখ আজকে থাকবে টিভিতে । নির্ধারিত সময়েই ইন্টারভিউ শুরু হল । অনেক কথা বার্তা হল । আপকামিং মুভি নিয়েও অনেক কথা বার্তা হল । এবং সবার শেষে এল প্রেমিকের ব্যাপারে । কেন কাউকে এখনও ভাল বাসছে না, মনের মানুষের খোজ কবে সবাই পাবে। এমন কথা উঠতেই নিশির মুখ একটু যেন মলিন হয়ে গেল । হোস্ট বলল, কী ব্যাপার ? মন খারাপ হল কি?

নিশি একটু দম নিল । তারপর বলল, এই প্রশ্নটা যতবার আমার সামনে আসে ততবার আমার মন খারাপ হয় ।

-কেন ? কেন মন খারাপ হবে?? তুমি যদি একবার বল তাহলে কত শত হাজার হাজার ছেলে তোমার জন্য জীবন দিয়ে দিবে । তুমি চাইলেই যে কাউকে নিজের জীবন সঙ্গী করে নিতে পারো । তাহলে মন খারাপ হয়?

নিশি জোড়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো । তারপর বলল, এই কথাটা মনে হতেই নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়।

হোস্ট অবাক হয়ে বলল, আমি ঠিক বুঝলাম না ।

নিশি বলল, এই যে বললে না হাজার হাজার ছেলে আমাকে পছন্দ করে, আমার জন্য জীবন দিয়ে দিবে । আমি জানি তারা দিবে । কিন্তু কেন দিবে? কারণ এখন আমার সব আছে । এমন সব থাকা মানুষকে সবাই ভালোবাসে । কিন্তু ধর আমার কিছু নেই । আমি কোণ নায়িকা নই, আমাকে কেউ চিনে না তখন ? তখন কি এতো মানুষ আমার জন্য জীবন দিয়ে দিতো? 

প্রশ্নটা হোস্টের দিকে ছুড়ে দিলেও নিশি নিজেই সেটার উত্তর দিল । বলল, না । দিতো না । কিন্তু জানো কি এমন একজন ছিল যে আমাকে ভালোবাসতো যখন আমার কিছু ছিল না । কেউ আমাকে চিনতো না । আর কি করেছি জানো, যখন আমি জনপ্রিয় হতে শুরু করেছি তখন তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি । তার কোন দোষ ছিল না তবুও তাকে ছেড়ে দিয়েছি । ভেবেছি যে ঐ ছেলে আর আমার যোগ্য না ।

সবাই চুপ করে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে । নিশি আবার বলা শুরু করলো, এই এতো জনপ্রিয়তা এই খ্যাতি এতো পরিচিত জানো যখন আমি কাউকে ভালোবাসতে যাই কিংবা বিয়ের কথা ভাবি তখনই সেই ছেলেটার কথাটা আমার মনে পড়ে । আমার মনে পড়ে যে তার মত করে আমাকে আর কেউ ভালবাসবে না । কেউ না ।

টিভি স্ক্রিনের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে । সবাই দেখলো নিশির চোখ দিয়ে যেন পানি বের হয়ে এল । সবার মনেই একটা কষ্টের আনুভূতি ছেঁয়ে গেল ।

হোস্ট বলল, কবেকার ঘটনা এটা?

-এই যখন আমি কলেজে পড়তাম । ও আমার সাথে কোচিংয়ে যেত । সেখানেই আমাদের পরিচয় । তারপর ভাললাগা । জানো আমরা এতো লুকিয়ে দেখা করতাম, চিঠি লিখতাম কি যে ভাল লাগতো । তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম । ও বুয়েটে চান্স পেল আমি ঢাবিতে । তখনও আমাদের প্রেম চলতো বেশ । তারপর একদিন আমি একটা টিভিসি করার অফার পাই । তারপরে তো কিভাবে সামনে গিয়েছি কত কিছু পেয়েছি । কিন্তু তাকে হারিয়ে ফেলেছি । প্রথমে আমিই তাকে ইগ্নোর করা শুরু করলাম । তারপর এক সময়ে বুঝে গেল আমি কি চাই । সে নিজ থেকেই দূরে চলে গেল। 

-সে এখন কোথায়?

-জানি না । ওর স্বপ্ন ছিল বাইরে গিয়ে পড়বে । হয়তো এখন দেশের বাইরে আছে ।

-তাহলে কি আর কাউকে ভালোবাসবে না কোন দিন?

-জানি না । হয়তো কোন দিন আসবে না আমার জীবনে প্রেম । আমি হয়তো মন থেকে কাউকে ভালোবাসতে পারবো না । 

গাড়ি করে যাওয়ার সময় নিশির ম্যানেজার তাকে বলল, ম্যাম এমন কথা কি বলা ঠিক হল?

-কেন ? ঠিক হয় নি বলছো?

-না মানে মানুষ জন এখন কেমন রিএকশন দিবে!

-শোন যে রিএকশনই দিক না কেন সেটা আম্র পাব্লিসিটি হবে। বিশেষ করে সবাই এখন আমাকে আরও বেশি পছন্দ করবে।  ভুল করেছে কিন্তু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। প্রেমে কষ্ট পাচ্ছে । সিম্প্যাথি ।

ম্যানেজার রাকিব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নিশির দিকে । নিশি বলল, অভিনয় ঠিক ছিল তো?

রাকিব যেন আরো একটা ধাক্কা খেল । কোন মতে বলল, এটা অভিনয় ছিল?

নিশি হাসলো । সে নিজের অভিনয় সম্পর্কে বেশ ভালই জানে । রাকিবের মত অন্য সবাই যে এমনই ভেবেছে সেটা নিশি জানে । সবাই বিশ্বাস করবে । তার জন্য একটা সিম্প্যাথি তৈরি হবে সবার মনে । এটা নিয়ে সে আলোচনায় থাকতে পারবে আরও অনেক দিন । সামনে আর একসপ্তাহ পরেই নতুন মুভি মুক্তি পাবে । এটা তার মুভির জন্য ভাল হবে । 

সত্যিই হল তাই । ইন্টারভিউ শেষ হতেই পুরো সোস্যাল মিডিয়া নিশি চৌধুরীকে নিয়ে হইচই বাঁধিয়ে দিল । অনেকে তাকে খারাপ কথা বলল যে গ্লামার পেয়ে সে আসল ভালোবাসা কে নষ্ট করেছে কিন্তু বেশির ভাগই নিশির পক্ষে কথা বলল। সে ভুল করেছে কিন্তু এখনও সেই একজনকেই ভালবাসছে । কী চমৎকার একটা স্যাড প্রেম কাহিনী । 

অনেকে তো এই ঘোষণা ডিল যে নিশি কিছু না থাকলেও নিশিকে সে বিয়ে করতে চায়, তার ক্যানিয়ার নষ্ট হলেও তাকে ভালবাসবে । 

এভাবেই আলোচনা সমালোচনা চলতে থাকলো। নিশি চৌধুরীর জনপ্রিয়তা বাড়তে লাগলো আরও বেশি বেশি । ঠিক সেই সময়ে ঘটলো আসল ঘটনা। 

নিশি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেছে । নাস্তার টেবিলে বসতে যাবে তখনই রাকিব হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলো । ওর চেহারা দেখেই নিশি খানিকটা কৌতুহলী হয়ে বলল, কী ব্যাপার তোমার চেহারা এমন কেন লাগছে?

-আপনি অনলাইনে ঢোকেন নি?

-না । মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম । কেন কী হয়েছে?

-আপনার প্রেমিকা এসে হাজির হয়েছে ।

-মানে ? প্রেমিক মানে?

-আপনার সেই প্রথম আর এক মাত্র প্রেম । বুয়েটে পড়ে যাকে আপনি ছেড়ে গিয়েছিলেন !

নিশির প্রথম কিছু সময় লাগলো বুঝতে । যখন বুঝতে পারলো তখন নিজের কাছেই চমকে উঠলো । রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল, কী বাজে বকছো? তেমন কেউ ছিল না । ওটা বানানো ছিল ।

-কিন্তু ম্যাম সবাই বিশ্বাস করেই নিয়েছে সেই আপনার সেই ছেড়ে আসা বয়ফ্রেন্ড । কয়েকটা পত্রিকাতে নিয়জ পর্যন্ত হয়ে গেছে !

চোখ বড় বড় করে নিশি নিজের মোবাইল বের করলো । হোম পেইজের পাওয়া গেল খবর টা । দ্বিতীয় আলোর ফেসবুক পেইজের সংবাদটা চোখে পড়ছে । 

অবশেষে দেখা মিলল নায়িকা নিশির সেই বয়ফ্রেন্ডের…

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 58

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “নায়িকার বয়ফ্রেন্ড”

Comments are closed.