নায়িকার বয়ফ্রেন্ড

4.4
(59)

নিশি চৌধুরী দেশের নাম করা নায়িকা । যেমন তার চেহারা তেমনই তার অভিনয় গুণ । একেবারে শূন্য থেকে নিশি আজকে এতোদুর উঠেছে । দেশের সবাই তাকে এক নামে চিনে। তার ছবি বুকে নিয়ে ঘুমায় । কত মানুষের স্বপ্নের নায়িকা যে নিশি চৌধুরী, তার কোন হিসেব নেই । 

নিশি নিজের এই জনপ্রিয়তাটা উপভোগ করে । তবে লোকে তাকে বেশি পছন্দ করে তার ক্লিন ইমেজের জন্য । নায়িকা হলেও তার পেছনে এখনও পর্যন্ত কোন স্ক্যান্ডেল ছড়ায় নি । এই ব্যাপারে নিশি সব সময় সে সজাক । নিজেকে দূরে রেখেছে এসব থেকে । অনেক সহকর্মী অনেক বন্ধু আছে তার । কিন্তু মনের মানুষ হিসাবে কাউকেই সে এখনও ঠায় দেয় নি ।

আজকে নিশি চৌধুরীর একটা ইন্টারভিউ লাইভ প্রচারিত হবে । নিশি জানে সবার চোখ আজকে থাকবে টিভিতে । নির্ধারিত সময়েই ইন্টারভিউ শুরু হল । অনেক কথা বার্তা হল । আপকামিং মুভি নিয়েও অনেক কথা বার্তা হল । এবং সবার শেষে এল প্রেমিকের ব্যাপারে । কেন কাউকে এখনও ভাল বাসছে না, মনের মানুষের খোজ কবে সবাই পাবে। এমন কথা উঠতেই নিশির মুখ একটু যেন মলিন হয়ে গেল । হোস্ট বলল, কী ব্যাপার ? মন খারাপ হল কি?

নিশি একটু দম নিল । তারপর বলল, এই প্রশ্নটা যতবার আমার সামনে আসে ততবার আমার মন খারাপ হয় ।

-কেন ? কেন মন খারাপ হবে?? তুমি যদি একবার বল তাহলে কত শত হাজার হাজার ছেলে তোমার জন্য জীবন দিয়ে দিবে । তুমি চাইলেই যে কাউকে নিজের জীবন সঙ্গী করে নিতে পারো । তাহলে মন খারাপ হয়?

নিশি জোড়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো । তারপর বলল, এই কথাটা মনে হতেই নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয়।

হোস্ট অবাক হয়ে বলল, আমি ঠিক বুঝলাম না ।

নিশি বলল, এই যে বললে না হাজার হাজার ছেলে আমাকে পছন্দ করে, আমার জন্য জীবন দিয়ে দিবে । আমি জানি তারা দিবে । কিন্তু কেন দিবে? কারণ এখন আমার সব আছে । এমন সব থাকা মানুষকে সবাই ভালোবাসে । কিন্তু ধর আমার কিছু নেই । আমি কোণ নায়িকা নই, আমাকে কেউ চিনে না তখন ? তখন কি এতো মানুষ আমার জন্য জীবন দিয়ে দিতো? 

প্রশ্নটা হোস্টের দিকে ছুড়ে দিলেও নিশি নিজেই সেটার উত্তর দিল । বলল, না । দিতো না । কিন্তু জানো কি এমন একজন ছিল যে আমাকে ভালোবাসতো যখন আমার কিছু ছিল না । কেউ আমাকে চিনতো না । আর কি করেছি জানো, যখন আমি জনপ্রিয় হতে শুরু করেছি তখন তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছি । তার কোন দোষ ছিল না তবুও তাকে ছেড়ে দিয়েছি । ভেবেছি যে ঐ ছেলে আর আমার যোগ্য না ।

সবাই চুপ করে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে । নিশি আবার বলা শুরু করলো, এই এতো জনপ্রিয়তা এই খ্যাতি এতো পরিচিত জানো যখন আমি কাউকে ভালোবাসতে যাই কিংবা বিয়ের কথা ভাবি তখনই সেই ছেলেটার কথাটা আমার মনে পড়ে । আমার মনে পড়ে যে তার মত করে আমাকে আর কেউ ভালবাসবে না । কেউ না ।

টিভি স্ক্রিনের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে । সবাই দেখলো নিশির চোখ দিয়ে যেন পানি বের হয়ে এল । সবার মনেই একটা কষ্টের আনুভূতি ছেঁয়ে গেল ।

হোস্ট বলল, কবেকার ঘটনা এটা?

-এই যখন আমি কলেজে পড়তাম । ও আমার সাথে কোচিংয়ে যেত । সেখানেই আমাদের পরিচয় । তারপর ভাললাগা । জানো আমরা এতো লুকিয়ে দেখা করতাম, চিঠি লিখতাম কি যে ভাল লাগতো । তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা আলাদা হয়ে গেলাম । ও বুয়েটে চান্স পেল আমি ঢাবিতে । তখনও আমাদের প্রেম চলতো বেশ । তারপর একদিন আমি একটা টিভিসি করার অফার পাই । তারপরে তো কিভাবে সামনে গিয়েছি কত কিছু পেয়েছি । কিন্তু তাকে হারিয়ে ফেলেছি । প্রথমে আমিই তাকে ইগ্নোর করা শুরু করলাম । তারপর এক সময়ে বুঝে গেল আমি কি চাই । সে নিজ থেকেই দূরে চলে গেল। 

-সে এখন কোথায়?

-জানি না । ওর স্বপ্ন ছিল বাইরে গিয়ে পড়বে । হয়তো এখন দেশের বাইরে আছে ।

-তাহলে কি আর কাউকে ভালোবাসবে না কোন দিন?

-জানি না । হয়তো কোন দিন আসবে না আমার জীবনে প্রেম । আমি হয়তো মন থেকে কাউকে ভালোবাসতে পারবো না । 

গাড়ি করে যাওয়ার সময় নিশির ম্যানেজার তাকে বলল, ম্যাম এমন কথা কি বলা ঠিক হল?

-কেন ? ঠিক হয় নি বলছো?

-না মানে মানুষ জন এখন কেমন রিএকশন দিবে!

-শোন যে রিএকশনই দিক না কেন সেটা আম্র পাব্লিসিটি হবে। বিশেষ করে সবাই এখন আমাকে আরও বেশি পছন্দ করবে।  ভুল করেছে কিন্তু নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। প্রেমে কষ্ট পাচ্ছে । সিম্প্যাথি ।

ম্যানেজার রাকিব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নিশির দিকে । নিশি বলল, অভিনয় ঠিক ছিল তো?

রাকিব যেন আরো একটা ধাক্কা খেল । কোন মতে বলল, এটা অভিনয় ছিল?

নিশি হাসলো । সে নিজের অভিনয় সম্পর্কে বেশ ভালই জানে । রাকিবের মত অন্য সবাই যে এমনই ভেবেছে সেটা নিশি জানে । সবাই বিশ্বাস করবে । তার জন্য একটা সিম্প্যাথি তৈরি হবে সবার মনে । এটা নিয়ে সে আলোচনায় থাকতে পারবে আরও অনেক দিন । সামনে আর একসপ্তাহ পরেই নতুন মুভি মুক্তি পাবে । এটা তার মুভির জন্য ভাল হবে । 

সত্যিই হল তাই । ইন্টারভিউ শেষ হতেই পুরো সোস্যাল মিডিয়া নিশি চৌধুরীকে নিয়ে হইচই বাঁধিয়ে দিল । অনেকে তাকে খারাপ কথা বলল যে গ্লামার পেয়ে সে আসল ভালোবাসা কে নষ্ট করেছে কিন্তু বেশির ভাগই নিশির পক্ষে কথা বলল। সে ভুল করেছে কিন্তু এখনও সেই একজনকেই ভালবাসছে । কী চমৎকার একটা স্যাড প্রেম কাহিনী । 

অনেকে তো এই ঘোষণা ডিল যে নিশি কিছু না থাকলেও নিশিকে সে বিয়ে করতে চায়, তার ক্যানিয়ার নষ্ট হলেও তাকে ভালবাসবে । 

এভাবেই আলোচনা সমালোচনা চলতে থাকলো। নিশি চৌধুরীর জনপ্রিয়তা বাড়তে লাগলো আরও বেশি বেশি । ঠিক সেই সময়ে ঘটলো আসল ঘটনা। 

নিশি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেছে । নাস্তার টেবিলে বসতে যাবে তখনই রাকিব হন্তদন্ত হয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকলো । ওর চেহারা দেখেই নিশি খানিকটা কৌতুহলী হয়ে বলল, কী ব্যাপার তোমার চেহারা এমন কেন লাগছে?

-আপনি অনলাইনে ঢোকেন নি?

-না । মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম । কেন কী হয়েছে?

-আপনার প্রেমিকা এসে হাজির হয়েছে ।

-মানে ? প্রেমিক মানে?

-আপনার সেই প্রথম আর এক মাত্র প্রেম । বুয়েটে পড়ে যাকে আপনি ছেড়ে গিয়েছিলেন !

নিশির প্রথম কিছু সময় লাগলো বুঝতে । যখন বুঝতে পারলো তখন নিজের কাছেই চমকে উঠলো । রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল, কী বাজে বকছো? তেমন কেউ ছিল না । ওটা বানানো ছিল ।

-কিন্তু ম্যাম সবাই বিশ্বাস করেই নিয়েছে সেই আপনার সেই ছেড়ে আসা বয়ফ্রেন্ড । কয়েকটা পত্রিকাতে নিয়জ পর্যন্ত হয়ে গেছে !

চোখ বড় বড় করে নিশি নিজের মোবাইল বের করলো । হোম পেইজের পাওয়া গেল খবর টা । দ্বিতীয় আলোর ফেসবুক পেইজের সংবাদটা চোখে পড়ছে । 

অবশেষে দেখা মিলল নায়িকা নিশির সেই বয়ফ্রেন্ডের…

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 59

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “নায়িকার বয়ফ্রেন্ড”

Comments are closed.