ব্লাকমেইল ভাল নয়

oputanvir
3.9
(11)

রাফির মনটা আজকে বেশ ফুরফুরে। দেশের আসার পর থেকে তার দিনগুলো বের ভালই যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহেই কাউকে না কাউকে পাওয়া যাচ্ছে। কেউ বা আসছে নিজের ইচ্ছেতেই। আবার কাউকে কিছুটা জোর করেই নিয়ে আসতে হচ্ছে ফ্লাটে। প্রতিবারই সময় কাটছে বেশ ভাল। আজকেও একজনের আসার কথা।
নাইরাকে সে চেনে অনেক দিন ধরেই। নাইরাকে পটাতে তার বেশ সময় লেগেছি। বেশ টাকা পয়সাও খরচ হয়েছিল তবে শেষ পর্যন্ত প্রেমটা হয়েছিল। ইচ্ছে ছিল যে নাইরার সাথে সম্পর্কটা দীর্ঘ করবে। তবে সমস্যা হল যে নাইরা মেয়েটা অন্য মেয়েদের মত না। মেয়েটা বেশ চালাক। অনেক কিছু বুঝে ফেলত। তাই বেশ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়েছিল ওর। তবে শেষ পর্যন্ত মেয়েটা সব কিছু জেনে যায়। কিভাবে জেনে গিয়েছিল সেটা অবশ্য রাফি বুঝতে পারে নি তবে জেনেছিল। সেদিন থেকেই সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন অবশ্য একজনের পেছনে বেশি সময় দেওয়ার সময় ছিল না রাফির কাছে। সে অন্য মেয়ের দিকে ছুটেছিল। তখন তার কাছে অপশনের কোন অভাব ছিল না।
কিন্তু দেশে আসার পর থেকে সে নতুন কারো পেছনে যাওয়ার থেকে পুরানো সবাইকে খুজে বের করতে শুরু করল। তারপর একে একে তাদের সাথে আবার যোগাযোগ করতে আরাম্ভ করল। এবার অবশ্য এতো লুকোচুরি ধৈর্য্য ছিল না তার। তখন সে তাদের কাছে কি চায় সেটা সরাসরিই বলত। আর না দিতে চাইলে তাদের ভয় দেখাতে শুরু করে যে তার কাছে এমন কিছু ছবি আছে যা বাইরে প্রকাশ পেলে তারের মান সম্মান আর থাকবে না।
এভাবেই বেশ কয়েকজন এসে রাফির কাছে ধরা দিয়েছে। আজকে নাইরার ধরা দেওয়ার পালা। তবে মেয়েটা কিছুতেই এই ফ্লাটে আসতে চাইছে না। সে রাজি হয়েছে বটে জায়গাটা তার নিজের পছন্দের হতে হবে। সেই শর্তে রাজি হয়েছে। রাফি প্রথমে একটু ইতস্তর করলেও পরে রাজি হয়েছে। বিশেষ করে নাইরা যখন গাজিপুরের রিসোর্টের ঠিকানা দিল তখন রাফি আর দ্বিমত করে নি। নাইরাদের গাজীপুরে একটা নির্জন রিসোর্ট আছে। এই কথা সে একবার তাকে বলেছিল। এই জায়গাতে মজাটা বুঝি আর ভাল হবে। সেই চিন্তা করেই রাফি আর কিছু চিন্তা করে নি। সে রাজি হয়ে গেছে। অনেক দিন পরে আজকে নাইরাকে মনের মত করে পাওয়া যাবে। এই কথাটা ভাবতেই মনের ভেতরে একটা অনন্দ দিচ্ছে।

দুই
মিমি বাইকে খুব একটা চড়ে নি। কয়েকবার পাঠাও রাইড অবশ্য নিয়েছে তবে সেটা অল্প সময়ের জন্য। আজকে বাইকে করে গাজিপুরে এসে এসেছে। প্রথমে একটু ভয়ই লাগছিল নাইরার পেছনে বসে থাকতে। তবে এক সময়ে মিমি বুঝতে পারে যে নাইরা খুবই ভালা বাইক চালায়।
বাইকটা যখন একটা নির্জন বাড়ি সামনে এসে থামল তখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। তবে আলো চলে যায় নি। মিমি জানেও না যে ভেতরে সে কী দেখতে পারবে। তার মনে একটা তীব্র কৌতুহল এসে জড় হয়ে হয়েছে। কদিন আগেও মিমির কাছে মনে হচ্ছিল যে এই বিপদ থেকে একমাত্র মরণই তাকে রক্ষা করতে পারে অথচ এখন মনে হচ্ছে সে বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছে। অনেকটা অলৌকিক ভাবেই নাইরা নামের এই মেয়েটা তার কাছে এসে হাজির হয়েছে। কিন্তু মেয়েটা কিভাবে এই সব করল?
মেয়েটাকে মিমির কাছে একটু অন্য রকম মনে হয়েছে। মেয়েটা চোখে মুখে একটা অন্য রকম ভাব আছে। মেয়েটা ওর মত ননীর মত পুটুল টাইপের মেয়ে না। তার ভেতরে একতা তেজি ভাব আছে। নিশ্চিত ভাবেই এই মেয়ে রাফির কাছে হার মানে নি। সে নিশ্চিত ভাবে কোনো না কোনো ভাবে রাফিকে ধরে ফেলেছে। তাই তো এভাবে রাফির ল্যাপটপটা ওদের কাছে চলে এসেছে। কিন্তু কিভাবে করল সে কাজটা।
-কই এসো।
মিমি চারপাশটা আরেকবার ভাল করে দেখল। জায়গাটা একেবারে নির্জন। বাড়িটার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে যে কোন ভুতুরে গল্পের পুরানো বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে। এই জায়গাটা লাশ গুম করার জন্য একেবারে আদর্শ একটা জায়গা। ঠিক তখনই মিমির মনের হল এখানে এভাবে একা একা চলে আসা কি ঠিক হল ওর জন্য?
ল্যাপটপ আনার ব্যাপারটা শহরের ভেতরেই ছিল। সেটা না হয় করা গেছে। সেখানে নাইরার একা পক্ষে কিছু করাটা সহজ ছিল না, কিন্তু এখানে? আচ্ছা যদি রাফি আর নাইরা একই দলের হয় তখন? হয়তো নাইরা রাফির হয়েই কাজ করছে। তাই তো এতো সহজে মিমির কাছে ল্যাপটপ দিয়ে দিল। এটা একটা টোপ হতে পারে?
নাইরা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকাল। তারপর বলল, তুমি কি আসবে? যদি মনের ভেতরে সন্দেহ থাকে তবে চলে যেতে পারো। কোনো সমস্যা নেই। এই রাস্তা দিয়ে মিনিট বিশেক হাটলেই তুমি মুল রাস্তায় উঠে যাবে। সেখান থেকে অটো পাবে বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার জন্য। আর যদি কৌতুহলী হও তবে ভেতরে আসতে পার।
নাইরা তালা খুলল। তারপর মিমির জন্য আর অপেক্ষা না করেই ভেতরে ঢুকে পড়ল। মিমি ঠিক কী করবে সেটা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। চাইলেই এখনই এখান থেকে সে চলে যেতে পারে। সেটা করলেই বুঝি সব থেকে ভাল হয় তবে মনের ভেতরে একটা কৌতুহল রয়েই গেছে। তার মনে হচ্ছে এই দরজার পেছনে এমন কিছু আছে যা ওকে দেখতেই হবে । মিমি ধীরে পায়ে সেদিকেই হেটে গেল।

তিন
মিমি যখন গেট খুলে ভেতরে ঢুকল তখন তার মনে হল যেন সে একেবারে অন্য একটা জগতে চলে এসেছে। দেয়াল ঘেরা বাড়িটা বাইরে থেকে যতটা না নির্জন মনে হয় ভেতরে সেটার নির্জনতা আরও বেশি। মিমি অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। নাইরা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। ওকে অবাক হতে দেখে বলল, জায়গাটা দারুন না?
-হ্যা। অনেক সুন্দর।
-আমার বাবা বানিয়েছিলেন। তার ইচ্ছে ছিল ছুটির দিনে এখানে কিছু মৌজ মাস্তি করবেন। তবে সেই সুযোগ আর তিনি পান নি।
-পান নি বলতে?
-মানে এটা পরিপূর্ণ ভাবে চালু হওয়ার আগেই সে গাড়ি এক্সিডেন্ট করে মারা যান। তারপর থেকে এখানে আমি আসি মাঝে মধ্য। একজন কেয়ার টেকার রাখা আছে। সে প্রতিদিন এসে সব ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে রেখে যায়। আসো।
গেটে আবার তালা দিয়ে নাইরা হাটতে লাগল। মিমি নাইরার পেছন পেছন হাটতে লাগল। তবে নাইরা বাড়ির ভেতরে না গিয়ে বাড়ির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ছোট একটা রাস্তা দিয়ে বাড়ির পেছনে চলে গেল। মিমি বাড়ির পেছনে এসে দেখল সেখানে একটা গ্যারাজ মত ঘর রয়েছে। সেটার সামনেও একটা বড় তালা ঝুলছে। নাইরা সেই গেটের কাছে গিয়ে দাড়াল। তারপর পকেট থেকে তালার চাবি করল। তবে তালাটা খোলার আগে সে তাকাল মিমির দিকে। তারপর বলল, একটা কথা মনে রাখবে, এর ভেতরে যা দেখবে সেটা দেখে অবাক হবে না। মনে রাখবে আমি যা করেছি আমার নিজেকে বাঁচানোর জন্য করেছি। মানুষটা তোমার সাথেও ঠিক একই কাজ করত। বুঝতে পেরেছো কী?
মিমি মাথা ঝাকাল। সে খুব ভাল করেই জানে তার সাথে রাফি কী করতে চাইছিল। সেটা যদি সত্যিই সে করে ফেলত তাহলে মিমির আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন উপায় থাকতো না। সে আর কোন দিন নিজের মুখ দেখাতে পারত না। তার পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যেত।
নাইরা দরজা খুলল। ভেতরটা অন্ধককার হয়ে আছে বটে তবে বাইরে থেকে আলো গিয়ে ভেতরে যেতেই অনেকটা মিমি সেদিকে তাকাতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সেখানে একজনকে দেখা যাচ্ছে। এতোদিন পরেও রাফিকে চিনতে তার মোটেই কষ্ট হল না। একটু বয়স বেড়েছে ঠিক তবে চেহারার ভাবটা আগের মতই আছে।
নাইরা ভেতরে ঢুকে আলো জ্বেলে দিল। মিমি কাঁপা পায়ে সেদিকে এগিয়ে গেল। তার চোখ যেন রাফির উপর থেকে সরছে না।
রাফির হাতদুটো হ্যান্ডকাফ দিয়ে আটকানো। সেটা সিলিং থেকে ঝুলছে। মুখে একটা মেডিক্যাল টেপ দিয়ে আটকানো যাতে আওয়াজ বের না হয়। আর ওর পরনে ছোট একটা আন্ডারওয়্যার ছাড়া আর কিছুই নেই। সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। এই কাজ যে নাইরার সেটা বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না।
মিমি সেদিকে তাকিয়ে রইলো স্থির হয়ে। এই মেয়ে রাফিকে এখানে কিভাবে আটক করল সেটা সে জানে না। এমন চিন্তা মিমির মাথায় কোনো দিন আসবেও না।
নাইরা বলল, এটাকে এখানে কিভাবে আটকালাম?
মিমি কোন উত্তর দিল না। তার চোখ তখনও রাফির দিকে। নাইরা বলল, তোমার সাথে যা করতে চেয়েছিল আমার সাথেও একই কাজ করতে চেয়েছিল। আমাকেও ভয় দেখিয়েছিল। প্রথমে মনে হল যে ও যা চাচ্ছে তাই করি। তারপরই মনে হল যে আমাকে সে ছাড়বে না। বারবার ওর কাছে আমাকে আসতেই হবে। তখন এই বুদ্ধি করলাম। আমিই এখানে আসতে বললাম। বেটা নাচতে নাচতে চলেও এল। আমি তার ড্রিংকে কিছু মিশিয়ে দিতে পারি সেটা ভাবতেও পারে নি।
-তারপর?
-তারপর আর কী? বাকি কাজ করতে তো খুব বেশি কষ্ট হয় নি। ফোন থেকে সব কিছু এক্সেস নিলাম। তবে আমি জানতাম যে আর ক্লাউডেই না তার কাছেও কিছু না কিছু থাকবে। প্রথমে অবশ্য স্বীকার করতে চাইছিলো না তবে পরে সব স্বীকার করেছে।
কিভাবে সব কিছু স্বীকার করেছে সেটা মিমির বুঝতে কষ্ট হল না। সে কেবল রাফির দিকে তাকিয়ে রইলো একভাবে। নাইরা আবার বলল, তোমার সাহায্য আমার দরজার হত না। আমি নিজেই গিয়ে নিয়ে আসতাম ল্যাপটপটা তবে আমার সাথে প্রথম যেদিন সে দেখা করতে গিয়েছিল বেটা তার ঐ রুমমেটকে নিয়ে গিয়েছিল। তাই আমিই যদি ল্যাপটপটা নিতে যেতাম তাহ্লে বেটা সন্দেহ করতে পারত। এই কারণে তোমার সাহায্য নিয়েছি।
-আমার পরিচয় তুমি কোথায় পেলে?
-তোমার ব্যাপার সব কিছু রাফি খোজ নিয়েছে। তুমি কোথায় থাকো কী কর সব কিছু। শুধু তোমার না, আরও সাতজন মেয়ের ব্যাপারে পূর্নাঙ্গ তথ্য ওর কাছে ছিল। ওর ফোন থেকেই সব কিছু নিয়েছি।
মিমির মুখটা কিছুটা হা হয়ে গেল। সাথে সাথেই মনের ভেতরে একটা আক্রোশ এসে জড় হল। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সে রাফির দিকে তারপর কষে একটা চড় মারল রাফির মুখে। এতোই জোরে যে মিমির নিজের হাতেই ব্যাথা লাগল। তবে এতো জোরে আঘাত পেয়েও রাফির যেন ঠিক জ্ঞান ফিরল না। মিমির মনে হল রাফিকে সম্ভবত কোন ড্রাগস দেওয়া হয়েছে।
নাইরা পেছন থেকে বলল, আরে নিজের হাতে ব্যাথা কেন দিচ্ছো, ঐ যে একটা ব্যাট রয়েছে। এটা ব্যবহার কর।
ডান দিকে তাকাতেই মিমি কাঠের ব্যাটটা দেখতে পেল। সেটা তুলে নিল সে। তারপর সেটা দিয়ে আঘাত করতে গিয়েও কেন জানি আঘাতটা করতে পারল না। নাইরা এগিয়ে এসে মিমির হাত থেকে ব্যাটটা নিয়ে নিল। তারপর সেটা দিয়ে রাফির পেছন পার্শে আঘাত করল। এতো জোড়ে যে রাফি এবার চিৎকার করে উঠল।
মিমি একটু চমকে উঠল। মুখ দিয়ে একটা অস্ফুটে শব্দও বের হয়ে এল। নাইরা পেছন ফিরে তাকিয়ে বলল, আরে ভয় পেও না। শুধু ব্যাথাই পাবে। এমন জায়গাতে মেরেছি। হাতের সুখ মেটানো বলতে পারো।
-ওকে কি ড্রাগস দিয়েছো?
-হ্যা। নয়তো হুস থাকলে ওকে কাবু করা সহজ ছিল না। তবে এখন অবশ্য আমাদের কাজ শেষ। বেটাকে এখন ছেড়ে দিব?
-ছেড়ে দিবে?
-হ্যা। সারাজীবন তো আটকে রাখব না।
-ছেড়ে দেওয়ার পরে যদি তোমার পেছেন আসে?
-আসবে ? আসতে দাও সেই ব্যবস্থা করে রেখেছি।
-কী?
নাইরা অবশ্য এই প্রশ্নের উত্তর দিল না। তার বদলে মুচকি হাসল কেবল। এরপর সে ঘরের একদিকে চলে গেল। সেখানে কিছু মেডিক্যাল জিনিস পত্র রাখা আছে। মিমি সেখানে বেশ কিছু সিরিঞ্জ আর ছোট ছোট বোতল দেখতে পেল। নাইরা সেখান থেকেই একটা সিরিঞ্জ আর ছোট বোতল তুলে নিল। সিরিঞ্জে তরল ভরে এগিয়ে এল রাফির দিকে। রাফির তখন অল্প অল্প জ্ঞান ফিরেছে। সে নাইরাকে দেখে পেছনে ফিরতে চাইলো বটে তবে কাজ হল না। নাইরা কষে একতা চড় মারল। তারপর বলল, স্থির হয়ে বসে থাকত, নয়তো আবার…
আবার শব্দটার পরে নাইরা আর কিছু বলল না। তবে এটা পরিস্কার যে নাইরা রাফির সাথে এমন কিছু করেছে যা রাফি চায় না আবার তার সাথে করা হোক। তাই সে স্থির হয়ে গেল। আর নড়াচড়া করল না। নাইরা সিরিঞ্জের পুরো তরলটুকুই তার শরীরে ঢুকিয়ে দিল।
-কী দিলে এটা?
নাইরা হাসল আবার। তারপর বলল, ভয় পেও না। মরবে না। তবে বেশ কিছু সময় অজ্ঞান থাকবে। ভুলে যাচ্ছো কেন যে আমি প্রায় ডাক্তার। আমি জানি আমি কী করছি।
মিমি ভুলেই গিয়েছিল যে এই মেয়েটা মেডিক্যালে পড়ছে। এসব ব্যাপারে তার জ্ঞান থাকাটা স্বাভাবিক। মিমি বলল, এখন কী করবে?
-এখন এই ঝামেলা দূর করতে হবে।
-কীভাবে?
-এটাকে আমরা এখন দুরের জঙ্গলের ভেতরে ফেলে আসব। পরে সকালে কেউ না কেউ খুজে পাবে বা নিজে নিজেই এর জ্ঞান ফিরে আসবে।
মিমি কেবল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো। তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না তার সামনের এই মেয়েটা কী ভয়ংকর একটা কথা বলছে। আর এখন সে নিজেও এর সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। নিজের কপালটাকে দেয়ালে ঢুকতে ইচ্ছে করল ওর।
নাইরা বলল, ভয় পেও না তো। কোন কিছুই হবে না।
-যদি ও পুলিশের কাছে যায়?
নাইরা হাসল। তারপর বলল, যাবে না। গেলে ও নিজেই ধরা খাবে। এই যে ল্যাপটপ আর ওর ফোন আমার কাছে রয়েছে। সব প্রমান থাকবে এখানেই।
এরপর শুরু হল আসল খেলা। নাইরা আর মিমি মিয়ে রাফির দেহটা একটা চাকাওয়ালা স্লেজের উপরে তুলল। মালপত্র টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এবার সেই গাড়িতে তোলা হল রাফির দেহটা।
ওরা যখন বাড়িটা থেকে বের হল তখন বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। দুজন মিলে গাড়িটা টেনে নিয়ে চলল ওরা। মিমির বারবার মনে হচ্ছিল যে এই বুঝি কেউ তাদের দেখে ফেলবে নয়তো রাফির এখনই জ্ঞান ফিরে আসবে আর সে তাদের উপর হামলা করে বসবে। তবে তেমন কিছু হল না। প্রায় আধা ঘন্টা খানেক চলার পরে একটা খালের পাড়ে এসে নাইরে স্লেজ থেকে ধাক্কা দিয়ে রাফিকে ফেলে দিল। তারপর কিছুই হয় নি এমন ভাব করে ফিরতি পথ ধরল।
নাইরা অবশ্য তাকে বাড়িতেই থেকে যেতে বলেছিল তবে মিমি রাজি হল না। শেষে নাইরে নিজের বাইরে করে মিমিকে বাসস্ট্যান্ডে পৌছে দিল।

পরিশিষ্টঃ
পরের একটা সপ্তাহ মিমির দারুন উঠকন্ঠায় কাটল। প্রায়ই মনে হল যে এই এখনই পুলিশ আসবে, এই বুঝি তাকে ধরে নিয়ে যাবে তবে তেমন কিছুই হল না। প্রায় মাস খানেক পরে মিমির কৌতুহনে নিয়ে রাফির সেই ফ্লাটের সামনে গিয়ে হাজির হল। দরজায় কড়া নাড়তেই কিছু সময় পরে দরজা খুলে দিল স্বয়ং রাফি নিজে। ওর দিকে কিছু সুয় শূন্য দৃষ্টিতে রাকিয়ে রইল। মিমির মনে একটা সন্দেহ ছিল যে রাফি বুঝি তাকে দেখা মাত্রি রেগে যাবে তবে রাফির চোখে তেমন রাগের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেল না।
মিমির তখন মনে হল যে রাফি সুস্থ মস্তিস্কে ওকে ঠিক দেখেই নি। মিমি যতটা সময় রাফির সামনে ছিল ততটা সময় সে ড্রাগড অবস্থাতেই ছিল। এমন কি মিমিকে সে এখনও ঠিক চিনতে পারছে না। চোখের ভাষা দেখে তাই মনে হল।
-আমাকে চিনতে পারছো?
রাফি কিছু সময় তাকিয়ে রইলো মিমির দিকে। তারপর বলল, চেনা চেনা লাগছে। আসলে আমি ঠিক চিনতে পারছি না। কদিন আগে আমার সাথে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তারপর থেকে অনেক কিছুই আমি মনে করতে পারছি না। তুমি …
মিমি বলল, আমি তোমার পরিচিত একজন। তোমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে তোমাকে দেখতে এলাম।
-ও আচ্ছা। এসো ভেতরে এসো।
-না থাক। তোমাকে দেখতে চেয়েছিলাম। দেখলাম। এখন চলে যাবো।
এই কথা রাফির মনে একটু যেন দ্বিধার জন্ম দিল। সে এখনও মিমিকে ঠিক চিনতে পারছে না। তবে মিমির সেটা নিয়ে আর খুব একটা চিন্তা করল না । এতোদিন যে মানসিক উৎকন্ঠা ছিল সেটা এখন আর নেই। রাফির এখন স্ব-শরীরেই টিকে আছে এবং তাকে সে চিনতেও পারছে না। সেই হিসাবে তার আর কোনো ভয় নেই, চিন্তার কোন কারণও নেই।

আগের পর্ব

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

অপু তানভীরের নতুন অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে

বইটি সংগ্রহ করতে পারেন ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে থেকে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 3.9 / 5. Vote count: 11

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →