ওসি মিজানুর যখন মুনটাইল বার থেকে বের হলেন তখন রাত বারোটার বেশি বাজে । আজকে একটু বেশি পরিমান মদ গেলা হয়ে গেছে। তবে ভাল কথা হচ্ছে এই মদের টাকা তার পকেট থেকে যায় নি। বেশ কয়েক দিন ধরেই তার স্ত্রী বাপের বাড়িতে গেছে। তাই এখন একটু মাতাল হয়ে বাসায় ফিরলে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয় না। আজকে সেই রকমই একটা দিন। রাত নয়টার দিকেই সে এখানে হাজির হয়েছিল। বাসা থেকে একটু দুরে হলেও এখানকার লোকজন তাকে বেশ করে। তবে আজকে অবশ্য বারের লোকজের খাতিরের দরকার পড়ে নাই। মিজানুর টেবিলে বসার পরপরই লোকটা তার টেবিলে এসে বসে তার অনুমতি নিয়েই। বৃহস্পতিবারে এই বারে ভীড়টা একটু বেশি থাকে। তাই বসায় জায়গা ছিল না। মিজানুরের কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু যখন সেই সুদর্শন মানুষটা তার দিকে একটা গ্লাস এগিয়ে দিল তখন প্রথমে একটু সন্দেহের চোখে তাকাল। এই দেশে কেউ কাউকে খুব একটা ড্রিংস অফার করে না। মিজানুরের যতই ঘুষের টাকা হোক তবুও এখানে বেশি দামী বোতল সে কিনতে সাহস পায় না।
সুদর্শন যুবক হেসে বলল, আরে নিন। আমি একা শেষ করতে পারব না। আর একা একা এসব খাওয়া যায় নাকি?
মিজানুর এক পেগ নিল। গলা দিয়ে নামতেই যেন পুরো গলা বুক জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। একেবারে খাঁসা জিনিস। কয়েক পেগ আপনা আপনিই চলল। এক সময়ে মিজানুর অনেকটাই মাতাল হয়ে গেল। সামনে বসা মানুষটা তাকে মানা করছিল না। একটার পর একটা বোতল এসে হাজির হচ্ছিল। ওসি মিজানুর পেগের পর পেগ মেরে দিচ্ছিল। মনে মনে ভাবছিলেন যে বেটা তো আসলেই বেকুব আছে। চেনা না জানা নাই এমন একজন এসে তাকে ইচ্ছে মত মাল খাওয়াচ্ছে ব্যাপারটা তার কাছে খানিকটা বেকুবিই মনে হচ্ছে তবে কয়েক পেগ ভেতরেই যেতেই এতো চিন্তা আর কাজ করছিল না মিজানুরের মাথায়।
বারটার সামনে কিছুটা সময় সে দাঁড়িয়ে রইলো। সে এখানে কি অফিসের গাড়ি নিয়ে এসেছিল নাকি নিজের বাইকটা নিয়ে এসেছিল সেটা কিছু সময় মনে করার চেষ্টা করল। কয়েকবার পকেট হাতড়ে দেখল যে মানিব্যাগ আর মোবাইল ছাড়া পকেটে আর কিছু নেই। তার মানে সে এখানে গাড়ি বা বাইক নিয়ে আসে নি। তাহলে এই রাতের বেলা সে যাবে কিভাবে?
ওসি মিজানুর আসে পাশে তাকালো। কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই বারের একটা পার্কিংও আছে। ওসি মিজানুর এখনও পরিস্কার ভাবে চিন্তা করতে পারছে না। মাথাটা একটু ভার ভার করছে তবে মনের ভেতরে একটা সুখানুভূতি ঠিকই কাজ করছে।
ঠিক এমন সময় একটা বাইক এসে দাড়াল তার সামনে। চালক হেলমেট খুলে তার দিকে তাকাল। ওসি মিজানুর সাথে সাথেই চিনতে পারল। এই লোকই তাকে একটু আগে বারের ভেতরে মদ খাইয়েছে।
ওসি মিজানুরের মুখের হাসি একটু বিস্তৃত হল। সে হাসি মুখে বলল, আরে ভাই সাহেব, আপনি আবার?
-হ্যা চলে যাচ্ছিলাম দেখলাম আপনি দাঁড়িয়ে এখানে। তা গাড়ি বা বাইক কিছু নাই সাথে?
-আরে ভাই সেইটাই তো মনে করতে পারছি না। পকেটে চাবি নাই। তার মানে কিছু আনি নাই । কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছে যে কিছু একটা এনেছিলাম।
-আরে তাই নাকি? তাহলে খুজে দেখা দরকার। হেল্প লাগবে?
-আরে থাকুক। এরা আমাকে চেনে। এখানে যদি পার্ক করা থাকে তাহলে কাল এসে নিয়ে যাবো।
-ও আচ্ছা। তা লিফট লাগবে? আপনার বাসা কোন দিকে?
-আমার বাবা ভাই উত্তরা। সেক্টর বারো।
-আরে বাহ। চলেন সাথে। আমিও ঐদিকেই যাবো। আমারটা আরেকটু দূরে।
ওসি মিজানুর আর কিছু চিন্তা না করেই বাইকের পেছনে উঠে বসল। চালক একটা হেলমেট তার দিকে এগিয়ে দিতেই ওসি মিজানুর বলল, আরে রাখেন, এটা নিতে হবে না।
-আরে কী বলেন? এখন রাস্তায় চেকিং হয়। হেলমেট ছাড়া ধরলে কেস দিয়ে দিবে।
-আরে রাখেন মিয়া। এই ঢাকা শহরে এমন কারো বুকের পাটা নাই যে আপনারে কেইস দিবে। আমি কে জানেন ? উত্তরা থানার ওসি আমি।
-আরে তাই নাকি? দেখছেন আপনার সাথে এতো কথা হল অথচ আপনি কী করেন সেইটাই জানা হয় নাই। ভেরি সরি ভাই।
-আরে কোন চিন্তা নাই ব্রাদার। সরি হওয়ার তো দরকারই নাই কারণ নাই।
দুই
ওসি মিজানুর যখন আবার চোখ মেলে তাকাল তখন প্রথম কয়েক মুহুর্ত ঠিক বুঝতে পারল না যে সে কোথায় আছে। চোখে আলো লাগছে। তাই ধরে নেওয়া যায় যে দিন হয়ে গেছে। কত সময় সে ঘুমিয়েছিল সেটা সে বলতে পারবে না। ঘড়ি দেখতে যাবে তখনই তীব্র একটা বিস্ময় কাজ করল তার ভেতরে । সে তার হাত সামনে নিয়ে আসতে পারছে না। তার হাত পেছন মুড়ো করে বাঁধা। ব্যাপারটা সে মেনে নিতে পারল না। তাকে কেউ কিডন্যাপ করে এখানে নিয়ে এসেছে?
এই জায়গাটা কোথায়?
তার ঘুম কেটে গেছে পুরোপুরি। সে চারিদিকে তাকিয়ে দেখল। মেঝেতে বসে রয়েছে। তার হাত খাটের পায়ার সাথে বাঁধা কয়েকবার শক্তি প্রয়োগ করে দেখল যে সেটা বেশ শক্ত করে বাঁধা আছে। তার নিজের পক্ষে খোলা সম্ভব হবে না।
মনের ভেতরে অনেক গুলো প্রশ্ন এসে জড় হল। তাকে কেউ কেন কিডন্যাপ করবে?
এতো বড় সাহস আসলে কার?
গতকাল রাতে সে সেই সুদর্শন পুরুষের সাথে ড্রিংঙ্কস করেছিল, তারপর বাইকে উঠেছিল এটা তার মনে আছে। বাইকটা চলতে শুরু করলে তার মাথাটা যেন একটু ঘুরে উঠেছিল। তার পরের সব কিছু মনে নেই তার। সেই সুদর্শন ছেলেটাই তাকে কিডন্যাপ করেছে। কোন সন্দেহ নেই। বেটাকে তার আগেই সন্দেহ করার দরকার ছিল। এতোগুলো টাকার মদ এমনি এমনি খাওয়াল সে! আগেই সন্দেহ করা দরকার ছিল।
আরও কিছু ভাবতে যাবে ঠিক সেই সময় ঘরে ঢুকল সে। ওসি মিজানুর দেখল গতকাল যে পোশাপ পরে ছিল সেই পোশাকই পরে আছে। মুখে একটা মেডিক্যাল ওয়ানটাইম মাস্ক পরা। নিজের চেহারা লুকাতে চাইছে।
-কে তুই?
সুদর্শন ছেলেটা হাসল। যদিও চেহারা ভাল করে দেখা যাচ্ছে না তবে ওসি মিজানুর সেই হাসি বুঝতে পারল। সে বলল, ওসি সাহেব, গতকাল সাত হাজার টাকার মদ খাওয়ালাম তার বদলে এই ব্যবহার?
-আমার হাত কেন বেঁঝেছিস? যখন ছুটবো তখন…
-এই কারণেই বেঁধেছি। যাই হোক, কাজের কথায় আসি। রিক্সা মাসুমকে আমার দরকার । আমি জানি আপনি ছাড়া আর কারো ডাকে সে আসবে না। আমি আপনার ফোনটা কানে ধরব আপনি কেবল তাকে বলবেন এখানে আসতে । একা । বাড়তি কোন কথা না।
ছেলেটা শান্ত এবং ঠান্ডা কন্ঠে কথাটা বলল। তবে সেটা অনেকটা হুমকির মতই শোনাল ।
-শুয়ের বাচ্চা একবার খালি ছাড়া পাই!
কয়েক সেকেন্ড কেবল পার হয়েছে এরই মধ্যে ঘটনাটা ঘটল। ওসি মিজানুর অনুভব করল তার কানের ঠিক পাশ দিয়ে একটা বুলেট সীস কেটে চলে গেছে। সেটা থপ অরে খাটের সাথে লাগল। সামনের ছেলেটা এতো দ্রুত পিস্তল বের করে গুলি করেছে যে মিজানুর সেটা দেখতেও পায় নি। গুলিটা নিখুঁত ভাবে গিয়ে লেগেছে খাটের কাঠের সাথে।
-আমি আবারও বলছি। বাড়তি কোন কথা না। সোজা কেবল এখানে আসতে বলবেন। আমি জানি আপনার মোবাইল দিয়ে তাকে মেসেজ পাঠালেও সে আসবে। তার পরেও আমি কোন রিস্ক নিতে চাচ্ছি না। বুঝতে পেরেছেন কি? ঝামেলা করবেন না। ঝামেলার জন্য আমি আপনাকে সাত হাজার টাকার মদ খাওয়াই নি।
##
নাম তার রিক্সা মাসুম হলেও, মাসুম সব সময় বাইকে করে ঘুরে বেড়ায়। আগে এক সময়ে সে রিক্সার দোকানে কাজ করতো বলেই তার নামের সাথে রিক্সা যোগ হয়েছে। তবে এতে অবশ্য মাসুমের কোন সমস্যা নেই। বরং এতে একটা গর্ববোধ হয়। সবাই তাকে এক নামে চেনে। এলাকার ওসির সে বিশেষ কাছের মানুষ। স্থানীয় এমপি সাহেবের ডান হাত। এমপির সব কুকাজ সেই করে থাকে।
বাড়িটার সামনে বাইকটা থামিয়ে একটু অবাক হল। বসিলার এই বাড়িতে আগে কোন দিন সে আসে নি। ওসি মিজানুরের সাথে সে অনেক স্থানেই দেখা করেছে। বিশেষ করে যখন বিরোধী কাউকে ধরতে হয় কিংবা এমন কেউ যাকে সরাসরি পুলিশ দিয়ে ধরা যায় না তেমন কাউকে গুম করার দরকার পড়ে তখন মিজানুর তার সাহায্য নেয়। তবে হুকুমটা যে এমপি সাহেবের কাছ থেকেই আসে সেটাও মাসুম জানে খুব ভাল করে। আজকে বসিলার এই বাড়িতে আসতে বলাতে একটু অবাকই হয়েছে মাসুম। তবে সম্ভব বিশেষ কোন দরকার।
বাড়ির ঠিক সামনেই একটা বাইক দাঁড়িয়ে আছে। মাসুম সেটা চিনতে পারল ।ওসি মিজানুরের বাইক। তাহলে ওসি সাহেব ভেতরেই আছে।
বাইকটার ইঞ্জিন থামতেই দেখতে ফর্সা মতন সুন্দর ছেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে এল। চুল একটু বড় আর মুখে একটা ওয়ানটাইম মাস্ক পরা। তার দিকে তাকিয়ে বলল, ওসি স্যার উপরে আছে। আসুন।
মাসুমের কাছে এসব নতুন না। প্রতিবারই কারো না কারো বাড়িতে গিয়ে সে হাজির হয়। মাসুন সেখানে গিয়ে দেখা করে আসে।
-কয় তলা?
-তিন তলা। চাবি মাইরেন ভাল করে। এইখানে বাইক চুরি হয়।
মাসুম হাসলো। তারপর বলল, আমার বাইক কেউ হজম করতে পারবো না।
মাসুম ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে সিড়ির দিকে উঠতে শুরু করল। ছেলেটা নিজের ফোন হাতে কী যেন দেখছে। তিন দলায় একটাই দরজা । সেটাও খোলা । দরজা দিয়ে সোজা ঢুকে পড়ল। দেখল পুরো ঘরে কোন কিছুই নেই। এখানে এখানে কেউ থাকে না। এমন একটা জায়গাতে ওসি মিজানুর কেন আসল সেটা ঠিক বোধগম্য হল না। সামনেই একটা দরজা দেখা যাচ্ছে। সেটা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই চমকে উঠল সে। ওসি মিজানুরকে খাটের সাথে ওভাবে হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় দেখে কয়েক সেকেন্ড সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। তবে সেটা সামলে নিতে খুব বেশি সময় লাগল না। কয়েক সেকেন্ড মাত্র। অবশ্য সুদর্শন যুবকের কয়েক সেকেন্ডই দরকার ছিল । মাসুমকে সে পেছন থেকেই গুলি করতে পারত তবে সেটা সে করে নি। মাসুম যখন ঘুরে দাড়ালো তখনই গুলিটা এসে তার কপালের ঠিক মাঝখানে লাগল। মাসুমের দেহটা গিয়ে সোজা পড়ল ওসি মিজানুরের পায়ের কাছে। ওসি মিজানুর বিস্মিত চোখে নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে রইল। জীবনে সে বেশ কয়েকটা ক্রস-ফায়ার করেছে। ঠান্ডা মাথায় খুন তার কাছে নতুন না। কিন্তু এই সুদর্শন যুবক যেভাবে মাসুমকে গুলি করে মারলো তাকে সত্যি বুকের ভেতরে একটা ভয় ধরে গেল। ভয় জিনিসটা কী সেটা ওসি মিজানুর একেবারে ভুলেই গিয়েছিলেন। আজকে এতোদিন পরে ওসি মিজানুর ভয়ের একটা তীব্র অনুভূতি অনুভব করতে পারলো। এমন কি একটু আগে যখন তার কানের পাশ দিয়ে গুলি চালিয়েছিল যুবক তখনও মিজানুরের এই ভয়টা আসে নি। তার মত একজন পুলিশ অফিসারকে মেরে ফেলার সাহস কেউ করবে না- এমন একটা বদ্ধমূল ধারণাই ছিল তার মনে । কিন্তু এখন তার মনে মৃত্যু ভয় এসে জকিয়ে বসেছে। এই যুবক তাকে মেরে ফেলবে। ছাড়বে না।
যুবক নিজেও যেন বুঝতে পারল যে ওসি মিজানুর ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে। সে কয়েক কদম এগিয়ে এল তার দিকে। তারপর মুখের মাস্কটা খুলে তার দিকে তাকাল। ওসি মিজানুর এবার ভাল করে তার চেহারার দিকে তাকাল। পুরুষ মানুষ এতো সুদর্শন হয় না সাধারনত। এই ছেলে নিশ্চিত ভাবেই যে কোন মুভির নায়ক কিংবা মডেল হতে পারবে। ঠিক তখনই তার মনে চিন্তাটা এসে হাজির হল। সে এই খুনীকে চিনতে পেরেছে।
রাজকুমার !
এক সুদর্শন খুনী।
কেউ জানে না তার চেহারা কেমন তবে সবাই জানে যে খুবই সুদর্শন দেখতে সেই খুনী। খুবই দক্ষতার সাথে সে মানুষ খুন করে। বছর দুয়েক আগে বান্দরবানে সবার নাকের দগা দিয়ে একজন মন্ত্রীকে মেরে ফেলেছিল সে যদিও বাইরে অন্য খবর প্রকাশ পেয়েছিল। আসল খবর কেবল ভেতরের লোকজন জানে। এছাড়া বেশ কিছু ব্যবসায়ী আর সন্ত্রাসী মারা পড়েছে তার হাতে।
এই লোক তাকে কেন মারতে এসেছে?
ওসি মিজানুরের চোখের দৃষ্টিতেই যেন সব প্রশ্ন ছিল। যুবক বলল, এটাকে সমাজ সেবা বলতে পারো। কারো ভাগে যখন পাপের পরিমান বেশি হয়ে যায় তখন তাকে তাকে এর পরিনাম ভোগ করতেই হয়।
যুবক আর বেশি কথা খরচ করলো না। নিঃশব্দ বুলেটটা ঢুকে গেল ওসি মিজানুরের ঠিক কপাল বরাবর।
তিন
অনেক দিন পরে এম পি হায়দায় আলী সন্ধ্যা বেলা আজকে বাসায় এসেছেন । নয়তো প্রতিদিন বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে যায়। ইদানীং আবার বিরোধী দলের কার্যক্রম বেড়েছে। এই ঝামেলা গুলো মেটাতে মেটাতেই অনেক দেরী হয়ে যায়। এছাড়া কত ঝামেলা যে আছে তার কোন ঠিক নেই। কিছু দিন আগেই তার ছেলেকে নিয়ে বেশ বড় রকমের একটা ঝামেলা সামাল দিতে হয়েছে । তবে সব কিছু যে ভাল মতই সামাল দেওয়া গেছে এটাই বড় ব্যাপার। এখন ছেলেটাকে বাইরে পাঠানোর কথা ভাবছেন । দেশে থাকলে আবার কোন অকাজ করে ফেলবে কে জানে ।
সন্ধ্যাবেলা নিজের বাড়ির বাগানে হেটে বেড়াচ্ছেন তিনি । সামনে তার পোশাক কুকুরটা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটা বছর দুয়েগ আগে কিনে এনেছিলেন জার্মানি থেকে। সেই সময় বয়স অনেক কম ছিল। দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন আর আগের মত কোলে তুলে নেওয়া যায় না। বেশির ভাগ সময়ে বাসায় থাকলেও কুকুরটা তাকে সবার থেকে বেশি মান্য করে। সেও যেন ঠিক ভাল করেই জানে যে কে তার আসল মনিব।
হাত নেড়ে একটু আদর করতেই কুকুরটা লেজ নেড়ে আরেকটা শরীর ঘেষে এগিয়ে এল তার দিকে। ঠিক এমন সময়ে তার পিএ জাহিদ হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এল। তার চেহারার দিকে তাকিয়েই হায়দার আলী বুঝতে পারলেন যে কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে।
-স্যার একটা সমস্যা হয়েছে।
-কী হয়েছে?
তার পিএ কথাটা বলতে যেন একটু দ্বিধা করল। তারপর বলল, স্যার মাসুমকে কেউ মেরে ফেলেছে।
-কী?
মাসুম হচ্ছে তার ডান হাত। প্রতিটা এমপির এমন কয়েকজন করে হাত থাকে যারা তার হয়ে কাজ করে। যে কাজ গুলো তারা সরাসরি করতে পারে না, নিজেদের হাত দুর্গন্ধ করে পারে না সেই কাজের জন্য এমন মাসুমদের পাঠাতে হয়। মাসুম অনেক দিন ধরেই তার হয়ে কাজ করে। তাকেই কেউ মেরে ফেলেছে? ব্যাপারটা একটু চিন্তার ব্যাপার।
এই এলাকাটা পুরোটাই তার নিয়ন্ত্রণে । বিরোধী দলের কারো পক্ষে এই কাজ করার সাহস হবে না। তবে এমন হতে পারে যে তারই রাজনৈতিক দলের কেউ এই কাজটা করিয়েছে। তাকে দূর্বল দেখানোর জন্য। সামনের বার নমিনেশন নেওয়ার জন্য এমনটা করতে পারে! ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই । তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। মাসুমের স্থানে এখনই কাউকে এনে বসাতে হবে। এমন চিন্তা যখন তার মাথায় কাজ করতে তখন তার চোখ গেল তার পিয়ের মুখের দিকে। তখনই তার মনে হল যে পিএর আরও কিছু বলার আছে।
-আর কিছু বলবে?
-জ্বী স্যার।
-বল।
এবার যেন পিএর মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না। হায়দার আলী এবার একটু ধমকে উঠলেন। বললেন কী হল কথা বলছো না কেন?
-স্যার যে বাসায় মাসুমের লাশ পাওয়া গেছে সেখানে ওসি মিজানুরেরও লাশ পাওয়া গেছে।
এবার হায়দায় আলী চমকে উঠলেন। এই সংবাদ তিনি মোটেই আশা করেন নি।
ওসি মিজানুর এখন তার এলাকার অধীনেই দায়িত্বপ্রাপ্ত। তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে ওসি মিজানুর সম্পর্কে তার শ্যালক হয়। এই অত্র এলাকায় শালা দুলাভাইয়ের রাজত্ব চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। আর তাকেই মেরে ফেলা হয়েছে। হায়দার আলীর ব্যাপারটা মেনে নিতে বেশ কিছুটা সময় লাগল। একই সাথে তার দুইজন কাছের মানুষকে কেউ মেরে ফেলেছে এটা তার জন্য ভতংকর একটা ঘটনা। হায়দায় আলী কিছুটা দিশেহারাবোধ করলেন।