অনু গল্পঃ টুকরো দৃশ্য

oputanvir
4.8
(48)

মিতুর খুব কান্না আসছে । এমন কোন কারন হয় নি তবুও কান্না আসছে । রান্না ঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অনেকটা সময় নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো ও । পুরো ফ্ল্যাটে ও ছাড়া আর কেউ নেই, তাই এখন যদি চোখ দিয়ে পানি বের হলেও কিছু যায় আসে না ।
ও নিজেই খানিকটা অবাক হয়ে যাচ্ছে যে এমন একটা সাধারন কারনে ওর কান্না আসছে । চুলায় হাড়ির দিকে আরেকবার তাকিয়ে দেখলো । মুরগিরটা একেবারে হয়ে গেছে । এখন নামিয়ে ফেললেই হয়ে যাবে । অথচ ওর ইচ্ছে করছে পুরো হাড়ি শুদ্ধ ড্রেনে ফেলে দিতে । যার জন্য রান্না করছে সেই চলে গেছে বাইরে খাওয়ার জন্য !
অবশ্য এর জন্য ওর নিজেরও দোষ যে নেই এমন না । আর কান্না টা ঠিক এই কারনেই ।
রাজিবের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে খুব বেশি দিন হয় নি । মাস খানেকেরও কম সময় । তার উপর ওরা নতুন বাসায় উঠেছে মাত্র দুদিন হল । ওর স্কুলটার কাছেই বাসাটা নেওয়া হয়েছে যদিও রাজিবের অফিসটা একটু দুর হয়ে যায় । রাজিব ইচ্ছে করেই এই বাসাটা নিয়েছে । মিতু অবশ্য মানা করেছিলো রাজিব শুনে নি । তার বক্তব্য হচ্ছে তুমি ঘর সামলাবে আবার চাকরিও করও করবে এই সুবিধা টুকু অন্তত তোমার পাওয়া উচিৎ যেন পাঁচ মিনিটেই বাসায় আসতে পারো ! একবার ভেবেছিলো যে বিয়ের কর স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিবে তবে রাজিবই বলেছে ছাড়ার কোন দরকার নেই । ওর ভাষ্য হচ্ছে প্রত্যেকের একটা নিজের পরিচয় থাকা উচিৎ ! অন্তত তার ছেলে মেয়ে যেন তার মায়ের পেশায় গৃহিনী না লেখে ! বলতে গেলে তখন থেকেই রাজিবের প্রতি ওর আকর্ষনটা আরও একটু বেড়ে যায় !
যদিও বিয়ের পর একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে যে রাজিব কথা বার্তা কম বলে । যেমন টা ও ভেবে রেখেছিলো তেমন রোমান্টিক নয় তবে মানুষ হিসাবে ভাল । মিতুর এই মাঝে ওর প্রতি কেমন একটা অন্য রকম টান শুরু হয়েছে । এই অনুভুতির কোন ব্যাখ্যা নেই ।
আজকে তেমন কিছু হয় নি । স্কুল থেকে দুপুরের ভেতরেই ফিরে আসে ও ! স্কুল থেকে ফিরে এসেই ও একটু শুয়ে পরেছিল । ভেবে রেখেছিলো যে সন্ধ্যার একটু আগে আগে ও রাজিবের জন্য ভুনা মাংশ আর খিচুড়ি রান্না করবে । এটা ও খব পছন্দ করে । শ্বাশুড়ির কাছ থেকে ফোন দিয়ে জেনে নিয়েছে গতকাল । দুপুরে রান্না করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই ঠিক করেছিলো বিকালে রান্না শুরু করবে !
কিন্তু কখন যে ঘুম চলে এসেছে ও বলতে পারবে না । তাই একটু দেরি হয়ে গেল । সন্ধ্যার রাজিব অফিস থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়েও দেখে যে রান্না তখন শেষ হয় নি । একবার জিজ্ঞেস করে, রান্না শেষ হয় নি শুনে বসার ঘরে চলে যায় আবার । তারপরই বলে যে ও একটু বাইরে থেকে আসছে ।

মিতু রাজিবকে আটকানোর চেষ্টা করে । ও ভাল করেই জানে রাজিব মুখে কিছু না বললেো ও বাইরে যাচ্ছে খাওয়ার জন্য । ওর নিশ্চয়ই খুব ক্ষুধা লেখেছে । আর বিয়ের আগে ও বাইরেই খাওয়া দাওয়া করতো সব সময় ।
রান্না শেষ করে মিতু মন খারাপ করে বসে রইলো বসার ঘরে । নিজের জন্য রুটি বানাতে ইচ্ছে করলো না । আজকে ও না খেয়েই থাকবে । এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো । মিতু দরজা খুলে দেখে রাজিব দাড়িয়ে । হাতে একটা কোকাকোলার বোতল । আরেকটা প্যাকেট !
মিতু কিছু তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছো ?
রাজিব অবাক হয়ে বলল
-বাইরে থেকে খেয়ে কেন আসবো ? তুমি রান্না করছো না ! তাও আবার খিচুড়ি আর ভুনা মাংস !
-সত্যিই খেয়ে আসো নি তো ?
-আরে বাবা না !

মিতুর কেন জানি আনন্দ হতে লাগলো খুব বেশি ! কোন সংকোচ ছাড়াই দরজার মুখেই রাজিবকে জড়িয়ে ধরলো ! রাজিব কিছুই বুঝতে পারছিলো না কি হচ্ছে । এই মেয়েটা এমনই বা কেন আচরন করছে ! কয়েক মুহুর্ত পরে মিতু ওকে ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বলল
-তুমি জলদি করে টেবিলে বস । আমি খাবার দিচ্ছি !
তারপর প্যাকেটের দিকে চোখ যেতে বলল
-এই প্যাকেটে কি ?
-তোমার জন্য । তুমি যে রাতে সিদ্ধ আটার রুটি খাও !
মিতু খানিকটা থেমে গেল । গতদিনই রাজিব ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলো । মিতু যখন টেবিলে ভাতের বদলে রুটি খাচ্ছিলো রাজিব বলল
-তুমি রাতে ভাত খাও না !
মিতু খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল
-আসলে বাবার ডায়াবেটিক্স ছিল । উনি রাতে রুটি খেতেন । ছোট বেলা থেকে আমিও রুটিই খেতাম বাবার সাথে । অভ্যাস হয়ে গেছে ।
রাজিব আর কিছু জানতে চায় নি ! আর আজকে সেটা সে মনে রেখেছে !
রাজিব বলল
-তুমি আমার জন্যও রান্না কর তার উপর নিজের জন্য রুটি বানাবে ! তাই ভাবলাম রুটি গুলো আমিই নিয়ে আসি ! গরম গরম আছে এখনও । দাড়িয়ে থেকে বানিয়ে নিয়ে এসেছি । তুমিও বসে পড় আমার সাথে
মিতু বলল
-তুমি এই জন্য বাইরে গেছিলে ?
-হ্যা ফেরার সময় মনে ছিল না !
-টেবিলে বস !
মিতু ওর হাত থেকে কোকাকোলা আর রুটির প্যাকেট টা নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল । লক্ষ্য করলো ওর চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো । সেটা সে আটকানো চেষ্টা করলো না । একটু আগে কান্নাটা ছিল কষ্টের আর এখনকার কান্নাটা আনন্দের !
——-
অনু গল্পঃ টুকরো দৃশ্য !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 48

No votes so far! Be the first to rate this post.


Discover more from অপু তানভীর

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “অনু গল্পঃ টুকরো দৃশ্য”

  1. ভাই, wattpad র গল্পগুলো এখানে দিচ্ছেন । খুবই ভালো । তবে রাজকুমার পর্বের দ্রুত update চাই ।

    1. এখন এখানে আগে গল্প পোস্ট করা হয় । তারপর অন্য সব স্থানে । তবে আগের প্রকাশিত কিছু পছন্দের গল্প এখানে পোস্ট করি মাঝে মাঝে । একটু ব্যস্ত আছি এই কদিন । ব্যস্ততা কমলে আশা করি আবার নিয়মিত গল্প পোস্ট করা হবে।

Comments are closed.