মিতুর খুব কান্না আসছে । এমন কোন কারন হয় নি তবুও কান্না আসছে । রান্না ঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অনেকটা সময় নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো ও । পুরো ফ্ল্যাটে ও ছাড়া আর কেউ নেই, তাই এখন যদি চোখ দিয়ে পানি বের হলেও কিছু যায় আসে না ।
ও নিজেই খানিকটা অবাক হয়ে যাচ্ছে যে এমন একটা সাধারন কারনে ওর কান্না আসছে । চুলায় হাড়ির দিকে আরেকবার তাকিয়ে দেখলো । মুরগিরটা একেবারে হয়ে গেছে । এখন নামিয়ে ফেললেই হয়ে যাবে । অথচ ওর ইচ্ছে করছে পুরো হাড়ি শুদ্ধ ড্রেনে ফেলে দিতে । যার জন্য রান্না করছে সেই চলে গেছে বাইরে খাওয়ার জন্য !
অবশ্য এর জন্য ওর নিজেরও দোষ যে নেই এমন না । আর কান্না টা ঠিক এই কারনেই ।
রাজিবের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে খুব বেশি দিন হয় নি । মাস খানেকেরও কম সময় । তার উপর ওরা নতুন বাসায় উঠেছে মাত্র দুদিন হল । ওর স্কুলটার কাছেই বাসাটা নেওয়া হয়েছে যদিও রাজিবের অফিসটা একটু দুর হয়ে যায় । রাজিব ইচ্ছে করেই এই বাসাটা নিয়েছে । মিতু অবশ্য মানা করেছিলো রাজিব শুনে নি । তার বক্তব্য হচ্ছে তুমি ঘর সামলাবে আবার চাকরিও করও করবে এই সুবিধা টুকু অন্তত তোমার পাওয়া উচিৎ যেন পাঁচ মিনিটেই বাসায় আসতে পারো ! একবার ভেবেছিলো যে বিয়ের কর স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিবে তবে রাজিবই বলেছে ছাড়ার কোন দরকার নেই । ওর ভাষ্য হচ্ছে প্রত্যেকের একটা নিজের পরিচয় থাকা উচিৎ ! অন্তত তার ছেলে মেয়ে যেন তার মায়ের পেশায় গৃহিনী না লেখে ! বলতে গেলে তখন থেকেই রাজিবের প্রতি ওর আকর্ষনটা আরও একটু বেড়ে যায় !
যদিও বিয়ের পর একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে যে রাজিব কথা বার্তা কম বলে । যেমন টা ও ভেবে রেখেছিলো তেমন রোমান্টিক নয় তবে মানুষ হিসাবে ভাল । মিতুর এই মাঝে ওর প্রতি কেমন একটা অন্য রকম টান শুরু হয়েছে । এই অনুভুতির কোন ব্যাখ্যা নেই ।
আজকে তেমন কিছু হয় নি । স্কুল থেকে দুপুরের ভেতরেই ফিরে আসে ও ! স্কুল থেকে ফিরে এসেই ও একটু শুয়ে পরেছিল । ভেবে রেখেছিলো যে সন্ধ্যার একটু আগে আগে ও রাজিবের জন্য ভুনা মাংশ আর খিচুড়ি রান্না করবে । এটা ও খব পছন্দ করে । শ্বাশুড়ির কাছ থেকে ফোন দিয়ে জেনে নিয়েছে গতকাল । দুপুরে রান্না করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই ঠিক করেছিলো বিকালে রান্না শুরু করবে !
কিন্তু কখন যে ঘুম চলে এসেছে ও বলতে পারবে না । তাই একটু দেরি হয়ে গেল । সন্ধ্যার রাজিব অফিস থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়েও দেখে যে রান্না তখন শেষ হয় নি । একবার জিজ্ঞেস করে, রান্না শেষ হয় নি শুনে বসার ঘরে চলে যায় আবার । তারপরই বলে যে ও একটু বাইরে থেকে আসছে ।
মিতু রাজিবকে আটকানোর চেষ্টা করে । ও ভাল করেই জানে রাজিব মুখে কিছু না বললেো ও বাইরে যাচ্ছে খাওয়ার জন্য । ওর নিশ্চয়ই খুব ক্ষুধা লেখেছে । আর বিয়ের আগে ও বাইরেই খাওয়া দাওয়া করতো সব সময় ।
রান্না শেষ করে মিতু মন খারাপ করে বসে রইলো বসার ঘরে । নিজের জন্য রুটি বানাতে ইচ্ছে করলো না । আজকে ও না খেয়েই থাকবে । এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো । মিতু দরজা খুলে দেখে রাজিব দাড়িয়ে । হাতে একটা কোকাকোলার বোতল । আরেকটা প্যাকেট !
মিতু কিছু তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছো ?
রাজিব অবাক হয়ে বলল
-বাইরে থেকে খেয়ে কেন আসবো ? তুমি রান্না করছো না ! তাও আবার খিচুড়ি আর ভুনা মাংস !
-সত্যিই খেয়ে আসো নি তো ?
-আরে বাবা না !
মিতুর কেন জানি আনন্দ হতে লাগলো খুব বেশি ! কোন সংকোচ ছাড়াই দরজার মুখেই রাজিবকে জড়িয়ে ধরলো ! রাজিব কিছুই বুঝতে পারছিলো না কি হচ্ছে । এই মেয়েটা এমনই বা কেন আচরন করছে ! কয়েক মুহুর্ত পরে মিতু ওকে ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বলল
-তুমি জলদি করে টেবিলে বস । আমি খাবার দিচ্ছি !
তারপর প্যাকেটের দিকে চোখ যেতে বলল
-এই প্যাকেটে কি ?
-তোমার জন্য । তুমি যে রাতে সিদ্ধ আটার রুটি খাও !
মিতু খানিকটা থেমে গেল । গতদিনই রাজিব ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলো । মিতু যখন টেবিলে ভাতের বদলে রুটি খাচ্ছিলো রাজিব বলল
-তুমি রাতে ভাত খাও না !
মিতু খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল
-আসলে বাবার ডায়াবেটিক্স ছিল । উনি রাতে রুটি খেতেন । ছোট বেলা থেকে আমিও রুটিই খেতাম বাবার সাথে । অভ্যাস হয়ে গেছে ।
রাজিব আর কিছু জানতে চায় নি ! আর আজকে সেটা সে মনে রেখেছে !
রাজিব বলল
-তুমি আমার জন্যও রান্না কর তার উপর নিজের জন্য রুটি বানাবে ! তাই ভাবলাম রুটি গুলো আমিই নিয়ে আসি ! গরম গরম আছে এখনও । দাড়িয়ে থেকে বানিয়ে নিয়ে এসেছি । তুমিও বসে পড় আমার সাথে
মিতু বলল
-তুমি এই জন্য বাইরে গেছিলে ?
-হ্যা ফেরার সময় মনে ছিল না !
-টেবিলে বস !
মিতু ওর হাত থেকে কোকাকোলা আর রুটির প্যাকেট টা নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল । লক্ষ্য করলো ওর চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো । সেটা সে আটকানো চেষ্টা করলো না । একটু আগে কান্নাটা ছিল কষ্টের আর এখনকার কান্নাটা আনন্দের !
——-
অনু গল্পঃ টুকরো দৃশ্য !
Discover more from অপু তানভীর
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
ভাই, wattpad র গল্পগুলো এখানে দিচ্ছেন । খুবই ভালো । তবে রাজকুমার পর্বের দ্রুত update চাই ।
এখন এখানে আগে গল্প পোস্ট করা হয় । তারপর অন্য সব স্থানে । তবে আগের প্রকাশিত কিছু পছন্দের গল্প এখানে পোস্ট করি মাঝে মাঝে । একটু ব্যস্ত আছি এই কদিন । ব্যস্ততা কমলে আশা করি আবার নিয়মিত গল্প পোস্ট করা হবে।