মিরার টাই বাঁধার পরবর্তি ঘটনা সমূহ

অপু তানভীর
4.8
(63)

-মিরা টাই টা একটু বেঁধে দাও তো ।

মিরা আমার দিকে এমন ভাবে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে আছে যেন আমি অন্য কোন ভাষায় ওর সাথে কথা বলেছি । এই মেয়েটা সব সময় এমন বিরক্ত হয়ে কেন তাকিয়ে থাকে কেন কে জানে ? ওর বাবা মা ভাই কেউই তো এমন করে কথা বলে না ।
আমি আবার মিরার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
-কানে সমস্যা তোমার ?
-মানে ?
-নাকি বাংলা বুঝো না ? বাংলা ? ইংরেজিতে বলবো নাকি হিন্দিতে ?
মিরা মুখ আরো কঠিন করে বলল
-আপনি আমার সাথে ইয়ার্কি মারছেন ?
-তোমার সাথে আমি ইয়ার্কি কেন মারবো ? তুমি তো আমার শ্যালিকা হও না, তাই না ? তোমার ছোট ভাই অবশ্য আমার শ্যালক ….
-চুপ । আপনি আর একটা কথা বলবেন না । কি জন্য এসেছেন বলেন ? আমি ভার্সিটিতে যাবো ।
-আরে আমিও তো অফিস যাবো । এই জন্য তোমার কাছে এসেছি । দেখো টাই বাঁধতে পারছি না । একটু কষ্ট করে যদি বেঁধে দিতে ।
-দিস ইজ টু মাচ ।
-আরে একটু বিপদে পড়েছি । প্রতিবেশী হিসাবে একটু সাহায্য করবে না ?

মিরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিরার মাকে পিছনে দেখা গেল । আন্টির হাতে আটা জাতীয় কিছু লেগে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি ব্যাপর মিরা ? ছেলেটার সাথে এমন করে কেন কথা বলছিস ?
মিরা কোন কথা বলল না । আমি বললাম
-দেখেন একটু হেল্প করতে বলছি, করছে না । টাইয়ের নট খুলে গেছে কিছুতে বাঁধতে পারছি না । টাই বাঁধতে পারি না বলে নটটা খুলিও না কোন দিন কিন্তু এখন কি করি বলেন তো ?
মিরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-টাই বাঁধতে পারেন না টাই পরার দরকার কি ?
-এই কথা তো আর বস শুনবে না ।
মিরার মা পেছন থেকে বলল
-টাই বাঁধতে পারে না তো কি হয়েছে ? তোর বাবাও তো টাই বাঁধতে পারে না । আমার হাতে আটা লেগে আছে । তুই একটু বেঁধে দে ।
-মা !!
-আরে কি আশ্চর্য । একটু টাই বেঁধে দিলে কি হবে ?

মিরার মা আমাকে বেশ পছন্দ করে সেই শুরু থেকে । বিশেষ করে মা যখন বড় ভাইয়ের বাসা থেকে মাঝে মাঝে আমার এখানে আসে দেখি দুজনে মিলে কত কথা বলে । যেন হারানো দুই বান্ধবী । কি কথা বলে কে জানে ।

আমি দরজা দিয়ে একটু ভেতরে ঢুকে মিরার সামনে টাইটা এগিয়ে দিলাম । মিরা মুখে বিরক্তি নিয়ে আমার টাই বাঁধতে লাগলো ।
আমি বললাম
-তুমি আমার উপকার করছো বদলে আমি তোমাকে ভার্সিটিতে পৌছে দেই ।
-জি না, ধন্যবাদ । আমার উপকার আপনার করার দরকার নেই ।
আবারও আমার উপকারে মিরার মা এগিয়ে এল । রান্না ঘর থেকেই বলল
-কেন যাবি না ?
-মা । আমি যেতে পারবো ।
-যাবি তো বাসে করেই । গাড়িতে করে গেলে কি হবে ?
-মা আমি ভার্সিটির গাড়িতে করে যাবো । তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না ।
মিরা কোন দিন আমার সামনে, এতো কাছে আসে নি । আমার কেন জানি মনে হল মিরা আমার বিয়ে করা বউ । অফিসে যাওয়ার সময় ও আমার টাই টা বেঁধে দিচ্ছে । আহা !
জীবন কি চমৎকার ।

মিরাদের পাশে ভাড়া এসেছি সেই বছর খানেক হল কিন্তু এই মেয়েটা কে আমি এখনও ঠি মত বুঝতে পারলাম না । মিরার বাবা মা ছোট ভাই রিয়াদের সাথে আমার সম্পর্ক অনেক ভাল । যখন বাসায় থাকি রিয়াদ বেশির ভাগ সময় তো আমার বাসায় থাকে । আমার সাথে তার কত কথা । আমার কাছ থেমে টিপস নিয়ে মেয়েদের পটিয়ে ফেলে অথচ তার বোনকে আমি আজও পটাতে পারলাম না ।
এই মেয়ের সমস্যা কি কে জানে । প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ওর কোন প্রেমিক আছে কিন্তু খোজ নিয়ে জানতে পারলাম এরকম কেউ নেই । এমনও না যে ওর কোন ছেলে বন্ধু নেই । অথচ আমার দিকে তার একদম লক্ষ্য নেই ।
বদ মেয়ে !
থাপড়ায়া কান গরম করে দেওয়া উচিৎ ।

মায়ের কথা মত, নাকি অন্য কোন কারণে, মিরা শেষ পর্যন্ত গাড়িতে উঠে এল । আমার অফিস যাওয়ার পথেই ওর ক্যাম্পাস পরে । সুতরাং নামিয়ে দিতে কোন সমস্যা হবে না । আমি তো চাই ও প্রতিদিন আমার সাথেই ক্যাম্পাসে যাক । কিন্তু চাইলেই কি সব কিছু হয় ?
ওর ক্যাম্পাসের সামনে আসতেই ও নেমে পড়লো ।
-আরে কই যাও ?
-কেন ?
-না মানে কিছু বলবা না ?
-কেন বলবো ? আমি আপনার একটা উপকার করেছি, আপনি আমাকে একটা উপরকার করেছেন । ব্যস । কাটাকাটি । ওকে ? বাই ।

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিরা হাটা দিল ।
নাহ । এই মেয়ের আশা মনে হয় ছেড়েই দিতে হবে দেখছি ।
বদ মাইয়ার পেছনে আর কত ঘুরবো !

আশা যখন ছেড়ে দিবো দিবো ভাবছি তখনই যেন আশার আলো জ্বলে উঠলো । ঐ দিন বিকেল বেলা মিরার ফোন এসে হাজির । আমি তো প্রথমে ঠিক বিশ্বাসই করতে পারি নি ।
-আপনি কোথায় ?
-অফিসে ।
-কখন আসবেন ?
-তুমি বললেন এখনই আসি ?
-না আসতে হবে না । কাজ শেষ করে আসেন ।
-কোথায় আসবো ? ধানমন্ডি ক্যাফে আসেন । এসে আমার বান্ধবীদের বলবেন যে আমার সাথে আপনার কিছু চলছে না ।
-তোমার সাথে আমার কি চলবে ?
-দেখেন ঢং করবেন না । আপনি আর রিয়াদ মিলে আমার সাথে আজকে যে কাজটা করলেন, ওকে যদি হাতের কাছে পাই না ।
-রিয়াদ । ও আবার কি করলো ?
-শুনেন ঢং করবে না । আপনাকে যা বলতে বলেছি তাই বলবেন । একটা কথা বেশিও, না কমও না ।

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিরা ফোন রেখে দিল । এই মেয়ের সমস্যা কি ? সারাটা সময় এতো রেগে রেগে থাকে কেন ? আর রিয়াদ আর আমি কি এমন করলাম ।
রিয়াদ কে ফোন দিলাম ।
-রিয়াদ ।
-ভাইয়া বলেন ?
-কোথায় তুমি ?
-আপাতত বাড়ির বাইরে । কি বলবেন বলেন ?
-তোমার আপু এমন করে রেগে আছে কেন বলতো ? আমি আর তুমি মিলে কি নাকি করেছি ? কি বলছে ?
রিয়াদ কিছুক্ষন হাসলো । তারপরপ বলল
-আপনি ফেসবুক দেখেন নি ?
-না । আজকে ঠিক লগিন করা হয় নি ।
হাসতে হাসতেই রিয়াদ বলল
-লগিন করে দেখেন, বুঝতে পারবেন । আর এর জন্য কিন্তু আমার পুরস্কার চাই ।
-কি ? বলবা তো ?
-আপনি নিজেরই দেখেন ।

আমি ঠিক বুঝলাম না । সমস্যা কি আজকে সবাই এমন রহস্য করে কেন কথা বলছে । ফোন রেখে আমি ফেসবুকে লগিন করলাম । লগিন করতেই আমার চোখ চরখ গাছে । রিয়াদ আমাকে একটা ছবি ট্যাগ করেছে । ছবিতে দেখা যাচ্ছা মিরা আমার টাই বাঁধছে । আজকে সকালে মিরা যখন টাই বাঁধছিল কোন ফাঁকে রিয়াদ নিশ্চয়ই ছবিটা তুলেছে । যে কেউ দেখলে মনে হবে একজন স্বামীর গলায় তার স্ত্রী টাই বেধে দিচ্ছে । স্ত্রীর মুখ একটু গম্ভীর যেন স্বামীর উপর একটু রাগ করেছে ।
আহা !
নিচে আবার রিয়াদ লিখে দিয়েছে
আমার আপু আর দুলাভাই

শ্যালোক মশাই । তুমি একটা কাজের মত কাজ করেছো । আচ্ছা এইটা দেখেই মনে হয় মিরার বান্ধবীরা কিছু একটা ভেবে নিয়েছে ।

সন্ধ্যার কিছু পরেই ক্যাফেতে হাজির হলাম । মিরা আগে থেকেই উপস্থিত ছিল ওখানে । আমি আসতে না আসতেই মিরা বলল
-আপনি এখনই বলুন ।
-আরে আগে দম নিতে দাও ।
-দম নিতে হবে না । সত্য কথা বলেন । বলেন যে আপনার সাথে আমার কিছু নেই ।
আমি ওর বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল
-আমার সাথে মিরা কিছু নেই । ঠিক আছে ?
মিরা বলল
-দেখলি তো আমি মিথ্যা কথা বলছি না । ঐ ছবিটা রিয়াদ আর উনি মিলে তুলেছে ।
আমি প্রতিবাদ করে বলল
-কারেকশান প্লিজ । আমি এর ভিতর নাই । মোটেই না ।
-আহা । নাই না । আপনিই হচ্ছেন মূলে এর । আমি জানি না বুঝি ?
-তাই ? তুমি খুব জানো ?
-জি আমি জানি ।
-তাই না । ওকে …
আমি ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বললাম
-দেখো ভেবেছিলাম যে সত্যিটা লুকিয়ে রাখবো, কিন্তু এখন আর ঢেকে লাভ নেই । আসলে মিরার সাথে গত মাসে আমি বিয়ে করেছি গোপনে । বাসায় কেউ জানে না । কাল রাত থেকে ওর সাথে একটু ঝগড়া চলছে । তাই আমাদের রাগ ভাঙ্গানোর জন্য রিয়াদ ছবি টা দিয়েছে ।

এক নিঃস্বাসে কথা গুলো বলে আমি মিরার দিকে তাকালাম । মিরা চোখে এক পাহাড় অবিশ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । মনে হচ্ছে ও যেন বিশ্বাস করতেই পারছে না কি হল এতোক্ষন । কথা হারিয়ে ফেলেছে ।

ওর বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে দেখি ওদের সবার মুখ হাসি হাসি । একজন বলল
-আমি জানতাম । আজকে যখন দেখলাম আপনি ওকে নামিয়ে দিলেন ক্যাম্পাসে তখনই সন্দেহ হয়েছিল । এর আগেও দেখেছি আপনি ওকে নামিয়ে দিয়েছেন । তারপর রিয়াদের সাথেও আপনাকে দেখেছি ।
তারপর মিরার দিকে তাকিয়ে বলল
-মিরা তুই আমাদের কাছে না লুকালেই পারতিস । আমরা তো তো বন্ধুই নাকি ?
আমি বললাম
-আমিও বলেছিলাম ।
আমার কথা শুনে মিরা আবার আমার দিকে তাকালো । চোখে সেই অবিশ্বাস । আমি হাসি হাসি মুখ নিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে আছি । আমার খুব মজা লাগছে । আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই মিরা বলল
-আপনার খুব মজা লাগছে না ?
-হুম ।
-চলেন আপনি বাসায় চলেন । আজকে আপনার আর রিয়াদের খবর আছে ।
-আরে কিছু খেয়ে যাই ।। তোমার বন্ধবীদের সাথে প্রথম বারের মত দেখা হল ।
-চলেন । খেতে হবে না ।
আমাকে প্রায় জোর করেই মিরা বাইরে নিয়ে এল । মিরা কন্ঠস্বর শুনে মনে হচ্ছে আমাকে পারলে ও কাঁচাই খেয়ে ফেলে । কিন্তু কিছুই করতে পারছে না ।

গাড়িটে বসে মিরা যেন বোমা ফাটালো । চিৎকার করে বলল
-আপনি কাজটা কেন করলেন ?
-তুমি আমাকে মিথ্যা অপবাদ কেন দিলে ?
-আপনি….আপনি.. আপনি..।

আমি হাসতে থাকি মনে । তবে একটু চিন্তা লাগছিল রিয়াদের জন্য । আজকে ওর কপালে কি আছে কে জানে ।

ভেবেছিলাম ঘটনা মনে হয় এখানেই শেষ হয়ে যাবে । কিন্তু ঘটনা তো কেবল শুরু তখন ।

###
মিরা আমার আগে আগে সিড়ি দিয়ে উঠছিল । ওর পা ফেলার আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারছিলাম কি পরিমান রেগে আছে আমার উপর । আমার অবশ্য খুব বেশি কিছু মনে হচ্ছে না । একটু আধটু মজা করাই যায় ।
ওর বন্ধুদের সামনে ওমন ভাবে আমার উপর দোষ না চাপালে হয় তো এমন কিছুই বলতাম না । যাক যা বলেছি ভাল হয়েছে । টিট ফর ট্যাট ।

যখন ফ্ল্যাটের কাছে চলে এসেছি তখনই ফোন বেজে উঠলো । মার ফোন ।
এই সময়ে ? মা সাধারন এই সময়ে ফোন দেয় না ।

আমি ভেবেছিলাম রেগুলার যেভাবে কথা বলে সেরকম কথা বলার জন্যই মা ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ করেই সেই ভুল ভাঙ্গলো ।
মা গম্ভীর কন্ঠে বলল
-কোথায় তুই ?
-এই তো মা । সিড়ি দিয়ে উঠছি । উঠে পড়েছি ।
আমাকে অবাক করে দিয়ে মা বলল
-মিরাদের বাসায় আয় ।
-মানে ?
-কোন মানে নেই ।
এই বলে মা ফোন রেখে দিল ।

আচ্ছা আজকে আমার সাথে হচ্ছে টা কি ? সবাই যে যার মত কথা বলেই ফোন কেটে দিচ্ছে । আমার কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করছে না । আর মা মিরাদের বাসায় আসতে বলল কেন হঠাৎ ? তার মানে কি মা মিরাদের বাসায় ?
রাত যদিও বেশি হয় নাই তবু মার তো এখন আসার কথা না । কোন ভাবেই না ।

আমি মিরার পাশে গিয়ে ওদের দরজায় সামনে দাড়ালাম । মিরা ততক্ষনে কলিংবেল টিপেছে । আমি ওর পাশে দাড়িয়েছে দেখে ওর মেজাজ টা আরও এক ধাপ বেড়ে গেল ।
-কি ব্যাপার ? আপনি এখানে কেন ?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মিরাদের বাসার দরজা খুলে গেল । সামনে মিরার মা দাড়িয়ে । মুখ যথেষ্ঠ গম্ভীর । সকাল বেলা যেমন টা দেখেছিলাম তেমন টা মোটেও নয় ।
আমাদের দুজনকে দেখেই মিরার মা বলল
-তোমরা ভেতরে এসো ।

বাসায় ভেতরে আমার আর মিরা জন্য অন্য কিছু অপেক্ষা করছিল । আমার মা বাবা আর বড় ভাই সাথে মিরার বাবা মা আর কে কে যেন রয়েছে । আমি তাদেরকে ঠিক চিনিও না । মিরার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখেও কেমন একটা বিশ্ময় কাজ করছে । এতো গুলো মানুষ এখানে কেন এই প্রশ্ন আমার মত ওর মনেও জানতেছে ।

আমাকে দেখে মা বলল
-তুই এমন একটা কাজ কেমন করে করলি ?
-কি করলাম ?
-কি করলি মানে ? মিরাকে বিয়ে করবি ভাল কথা আমাদের বলবি না ? আমরা কি মানা করতাম নাকি ?

আমি এবার সত্যি সত্যি আকাশ থেকে পড়লাম । মা এসব কি বলছে । মিরাকে বিয়ে মানে কি ? তাহলে কি ?
মাও ঐ ছবি দেখেছে ?
কিন্তু কিভাবে ?
আমার তখনই মনে পড়লো আমার ভাইও আমার সাথে ফেসবুকে আছে । সাথে আরও বেশ কিছু কাজিন রাও । ওরাই কি তাহলে ভুল বুঝেছে ।

আমি মিরার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে । ও বলল
-আপনারা এসব কি বলছেন ? মামা তোমরা ।

দেখলাম একজন আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-হয়েছে । আমরা এটা তোমাদের কাছ থেকে আশা করি নি । আমাদের জানিয়ে করলে আমরা কি এমন আপত্তি করতাম ? রিয়াদকে বলতে পেরেছিস আমাদের কে বলতে পারিস নাই ?

রিয়াদ ! তাহলে রিয়াদ এর পেছনে । ও ছবি তুলেছে তারপর সবার কাছে এই কথা বলেছে ?
অন্তত মিরার মা তো জনাতোই যে এই ছবির পেছনে আসল রহস্য । তিনিও যখন গম্ভীর তার মানে রিয়াদ কিছু একটা করেছে ।
অবশ্যই কোন ভাবে সবার মনে একটা বিশ্বাস যুগিয়েছে যে আমি মিরাকে বিয়ে করেছি । যেহেতু রিয়াদ প্রায় সময়েই আমার বাসায় যায় ওর সাথে আমার ভাব আছে এই কথা বিশ্বাস করে নিতেই পারে ।

ওদের কথা শুনে মিরা এতো অবাক হল যে কোন কথা ঠিক মত বলতেই পারলো না । বাবা তখন মিরার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-দেখুন বিয়াই সাহেব, ছেলে মেয়েরা একটা ভুল করে ফেলেছে ….

বিয়াই সাহেব !

আমাদের দুজনের মুখ থেকে একটা কথা একসাথে বের হল । এসব কি হচ্ছে ?
বাবা তখনও বলে চলেছে
-আমাদের মনে আজকে রাতেই ওদের বিয়েটা হয়ে যাক । আত্মীয় স্বজনেরা অনেক কথা বলছে । আজকে যদি পারিবারিক ভাবে আবার বিয়েটা হয় তাহলে একটা দফা রফা হবে ।

আরেক বার মানে ? আমি কবার বিয়ে করলাম ? আচ্ছা এদের মাথায় কি সমস্যা দেখা দিয়েছে । এরা এসব কি বলছে । একটা মাত্র ছবি দেখে এরা কত কিছু ভেবে বসেছে ।
তখনই আমার মাথায় চিন্তা এল, আচ্ছা আমি এতো চিন্তা করছি কেন ? এই সুযোগে মিরার সাথে যদি আমার বিয়েটা হয়ে যায় তাহলে তো লারে লাপ্পা । আমি আর কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম । মিরা বলল
-আপনারা কেন বুঝতে পারছেন না । একটা ভুল হচ্ছে । আমি বিয়ে করি নি । বিয়ে করতে চাই না ।

মা মিরা কে ধকম দিয়ে বলল
-এই মেয়ে তোমাকে কথা বলতে বলেছে ? দেখছো না আমরা বড়রা এখানে কথা বলছি । চুপ করে দাড়িয়ে থাকো ।

ধমকটা মিরা আশা করে নি । প্রথম কি বলবে ঠিক বুঝতে পারলো না । আসলে মিরার সাথে আজকে সকাল থেকেই সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে মিরা কি করবে ঠিক বুঝতে পারছে না । মিরা একবার ওর বাবা মার দিকে তাকালো তারপর আমার দিকে তাকালো । ওর চোখে খানিকটা পানি দেখতে পেলাম মনে হল । মিরা রুম ছেড়ে বাইরে বের হয়ে এল । নিজের রুমের দিকে নয় একবারে বাইরে দিকে ।

আমিও রুম থেকে বেরিয়ে প্রথমে রিয়াদ কে ফোন দিলাম ।
-দুলাভাই । কেমন কাটছে ?
-তুমি কি করেছো বলতো ? আর কি বলেছো সবাই কে ?
আমার কথা শুনে রিয়াদ আবার হাসলো । বলল
-বলেছিলাম না আমার একটা পুরস্কার পাওনা আছে । সেইটা রেডি রাখেন । আর যে যা বলে কেবল হ্যা হ্যা বলে যান । দেখবেন কাজ হয়ে যাবে ।

এবারও রিয়াদ আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিল । আমি মিরার পেছন পেছন ছাদের দিকে ছুটলাম ।

মিরা এক কোনে দাড়িয়ে রয়েছে অন্ধকারে । চাঁদের আলো অবশ্য আছে ।
আমি কাছে যেতেই বলল
-আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন তাই না ?
-দেখো আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না । সত্যি বলছি ।
-হয়েছে । আমি আগেই বলেছি ঢং করতে হবে না ।
-প্লিজ । একটু ….
-আপনি আমার সামনে থেকে যান ।
-আমি চলে গেলেই কি সমাধান হবে ?
মিরা কোন কথা বলল না । অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি বললাম
-আচ্ছা তুমি চিন্তা কর না । তুমি যখন চাও না, তখন বিয়ে হবে না । বাবা মাকে বুঝিয়ে বললেই ওনারা বুঝতে পারবে । তুমি চিন্তা কর না ।

মিরা কোন কথা বলল না । আমি আবার বললাম
-ওনাদের কে বলার আগে কি কিছুক্ষন থাকবো এখানে ? এর পরে হয়তো সুযোগ নাও আসতে পারে । আসলে নিচে তোমার বাবা মা আর আমার বাবা মা মিলে আমাদের বিয়ের প্লান করছে আর এখানে আমরা দুজন দাড়িয়ে চাঁদের আলো দেখছি এটা ভাবতেই ভাল লাগছে ।
মিরা এবারও কোন কথা বলল না । চুপ করে দাড়িয়ে রইলো ।

আরও একটু কাছে গিয়ে বলল
-একটা কথা বলি ?
অনেক টা সময় পর মিরা বলল
-কি ?
-আমাকে টাই বাঁধা শিখাবে ?
-কেন ?
-না মানে তোমাকে যদি বিয়ে না করতে পারি তাহলে আমার টাই বেঁধে কে দিবে ?
মিরা আবারও আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে রইলো । বাইরে অন্ধকার হলেও চাঁদের আলোতে ওর কাঠিন্য বেশ বোঝা যাচ্ছিল ।
আমি বললাম
-দেখ এই টুক আমার জন্য তোমার করা উচিৎ নাকি ? মনে কর প্রতিদিন তোমাদের বাসার সামনে গিয়ে টাই বাঁধাটা কেমন লাগবে বলতো । আর আজকের পরে তোমার মা মনে হয় আমাকে তোমাদের বাসায় ঢুকতেই দিবে না ।

মিরা আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হেসে ফেলল হঠাৎ করেই ।
-আপনার খুব মজা লাগছে না তাই না ?
-হুম ।
-এদিকে আসেন ।

আমি এগিয়ে গেলাম মিরার দিকে মিরা আমার গলা থেকে টাই টা খুলে আবার যত্ন করে বাঁধতে লাগলো । ও মনযোগ দিয়ে টাই বাঁধছে আর কথা বলছে । কোন টা পরে কোনটা হবে আমাকে শিখাচ্ছে । আর আমি এই আবছায়া আলোতে ওর চেহারা দেখছি । মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি । এতো সুন্দর স্বপ্ন আর দেখেছি কি না কে জানে ।

-কি দেখেছেন ?
-হুম ।
-পারবেন এখন একা একা ।
-নাহ ।
-তাহলে কি দেখলেন এতোক্ষন ?
-তোমাকে ।
-আপনি কি চান আমার কাছে বলেন তো ? সত্যি করে বলেন ?
-বিয়ের জন্য হ্যা বলে দাও আপাতত । আমার না ইচ্ছে করছে না বিয়েটা আটকাতে । প্রতিদিন সকালে তুমি আমার টাই বেঁধে দিবে এই সুযোগটা আমার হাত ছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না । একদম না ।
-তাই না । তাহলে কেবল টাই বাঁধার জন্য আমাকে বিয়ে করতে চান ?
-একবার হ্যা বল তো তারপর দেখবে কিসের জন্য বিয়ে করতে চাইছি ।
-এই খবরদার পঁচা কথা বলবেন না ।
-পঁচা কথা কোথায় বললাম ?
-এই যে বললেন ।
-মোটেই না । আমি কিছু বলি নি, তুমি চাচ্ছ আমি বলি ।
-জি না । মোটেই না ।

কখন যে আমাদের পিছনে কেউ চলে এসেছে আমরা লক্ষই করি নি । মিরার হাত তখনও আমার টাইতেই আছে ।

কাশির শব্দে দুজনেই চুপ করে গেলাম । পেছনে তাকিয়ে দেখি মিরার সেই মামা । আমাদের দিকে তাকিয়ে মামা বলল
-এর পরেও বিশ্বাস করতে হবে যে তোরা বিয়ে করিস নি । এমন ভাবে কেবল স্বামী স্ত্রীই ঝগড়া করতে পারে ।
আমি কোন কিছু না ভেবে বললাম
-ঠিক ।
মিরা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কি বলছেন একটু আগে ?
-আমার কিছু মনে নেই কি বলেছি ।
-দেখেন ভাল হবে না বলছি ।
-না হোক । আমি এই সুযোগ হাত ছাড়া করবো না কিছুতেই । কিছুতেই না ।

মামা বলল
-অনেক কথা হয়েছে । এবার নিচে চল । আজকে রাতেই ঝামেলা শেষ হোক ।
-মামা । একটু বোঝার চেষ্টা কর ।
-শোন মিরা । তোদের বিয়ে হোক আর নাই হোক, একটা শুনে রাখ এই ছেলের সাথেই তোর বিয়ে হবে । তোর ঐ ছবি আমাদের আত্মীয় স্বজন সবাই দেখেছে । এখন যদি সবাই শোনে এই ছেলে তোর স্বামী না একবার ভেবেছিস কি হবে ? কোন কথা শুনতে চাই না চল এখনই ।

সত্যি সত্যি মিরা রসাথে রাতের বেলাটেই বিয়ে হয়ে গেল । মিরা আমার ঘরে ঢুকে বেশ অবাক হল বাসর ঘর সাজানো দেখে । আমাকে প্রশ্ন করলো
-এই ঘর কে সাজিয়েছে ?
-কেউ হয়তো সাজিয়েছে ।
-এতো জলদি ?
-আজকাল সব রেডিমেড পাওয়া যায় । সুন্দর হয়েছে না ?
-হুম ।
তারপর আমার দিকে একটু তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনি এই কাজটা ভাল করলেন, মনে রাখবেন ।
-মানে কি ? বিয়ে হয়ে গেছে এখনও এই কথা বলছো ?
-বিয়ে করার মজা টের পাবেন আপনি হাড়ে হাড়ে । দাড়ান আপনাকে মজা দেখাচ্ছি । আর রিয়াদ কে হাতের কাছে পাই একবার ।। শালা দুলাভাইকে একসাথে দেখে নেব ।।

আমি হাসলাম কেবল । মিরা তখন একটু শকড থাকলেও এখন মোটামুটি সামলে নিয়েছে । ছাদে চিৎকার চেঁচামিচি করলেই ঘরে এসে মিরা আর বেশি উচ্চ বাচ্চ করে নি । মা মিরার পাশে বসে ছিলেন । তাছাড়া পরিবারের আরও অনেকেই ছিল । আমার চোখ বারবার রিয়াদ কে খুজছিল ।। একবার কেবল দেখলাম এক কোনায় বসে মুচকি মুচকি হাসছে । আজকের এই ঘটনা ও না থাকলে হয় তো হতোই না । বাসর ঘরটাও ঐ সাজিয়েছে । শালা বাবু একটা কাজের মত কাজ করেছে ।

যাক । শেষ পর্যন্ত বদ মেয়েটাকে দিয়ে সারা জীবন আমার টাই বাঁধানোর একটা পাকাপোক্ত ব্যবস্থা হল ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 63

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →