কাপুরুষের স্বপ্ন

4.4
(18)

দীনার সামনে আমি আবারও কোন দিন দাঁড়াতে পারব ভাবি নি। তবে ভাগ্য আমাদের আবারও মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছে। দীনার আমার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। একটু বয়স বেড়েছে। তবে চেহারায় সেই মাধুর্য ঠিক একই রকম আছে। আমারও তো বেশ বয়স বেড়েছে এই ক বছরে। শেষবার যখন আমাদের দেখা হয়েছিল তখন দীনা আমার গালে একটা চড় মেরেছিল। আর বলেছিল আমি কাপুরুষ। আমি যেন আর কোন দিন তার সামনে গিয়ে না দাড়াই। আমি দাড়াই নি। তবে আজকে দীনা নিজেই এসেছে আমার সামনে।
আচ্ছা দীনা কি কোনো দিন আমার মন থেকে দুরে গিয়েছে? কোনদিন ওকে কি আমি ভুলতে পেরেছিলাম? উপর দিয়ে আমি যতই নিজেকে শক্ত আর বাস্তববাদী প্রমাণের চেষ্টা করি না কেন, আমি জানি যে আমার মনের ছোট এক ঘরে দীনার বসবাস এখনও রয়েছে সেই আগের মতই। আমি প্রতিদিন সেই ঘরের সামনে গিয়ে দাড়াই। কোন কোন দিন দীনা সেই ঘরের দরজা খুলে বের হয়ে আসে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকায়। কিন্তু আমার কাছে আসে না।
চাকরিতে ঢাকাতে আমার পোস্টিং হয়েছে বেশ কয়েকমাস। এই কদিন নিজে একটা হোস্টেলে ছিলাম। কারণ সরকারি কোয়াটার তখনও ফাঁকা হয় নি। কোয়াটার ফাঁকা হওয়ার পরে এই বাসায় উঠে এসেছি মাস দুয়েক হয়েছে। এক প্রকার জীবন কেটেই যাচ্ছিল আমার। তখনই দীনা আবার আমার জীবনে এসে হাজির হল। জামাল মামা ঢাকা এসেছে ডাক্তার দেখাতে। কোনো ভাবে জানতে পেরেছেন আমি এখন ঢাকাতেই থাকি। তিনি নিজেই যোগাযোগ করলেন। আমার বাসায় আসতে চান। আমি নিজেই তাকে বাসস্টান্ড থেকে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম তবে মামা জানালেন যে সেটার কোন দরকার নেই। তিনি নিজেই চলে আসতে পারবেন।
আমি ভেবেছিলাম মামা একাই আসবেন। অথবা সাথে তার ছোট মেয়ে আসতে পারে। তবে সাথে যে দীনা আসবে সেটা আমি বুঝতে পারি নি। ভাবতেও পারি নি। দরজা খুলে যখন দীনা আর মামাকে দেখতে পেলাম কিছু সময়ের জন্য আমি যেন থমকে গিয়েছিলাম। কয়েক মুহুর্তের জন্য আমি যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম সেই অতীতে।

বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে আমার জীবন একেবারে বদলে গিয়েছে। সবাই কেমন যেন অপরিচিত মনে হতে লাগল। এমন কি আমার নিজের মাকেও। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমরা উঠে এলাম নানার বাসায়। সেখানেই আমাদের দিন কাটতে লাগল। তবে বাবা বেঁচে থাকাকালীন সময়ে নানা বাড়িতে আসলে যেমন মনে হত এইবার তেমন মনে হল না। তবে মানিয়ে নিলাম। নিতে হল।
বছর খানেক নানা বাড়িতে থাকার পরেই মায়ের বিয়ে হয়ে গেল। তবে নতুন বাবার বাড়িতে আমার জায়গা হল না। আমাকে নানা বাড়িতেই থাকতে হল। প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগত কান্না আসত তবে সেই ছোট বয়সেই আমি বুঝে গেলাম যে এটাই আমার নিয়তি। মাথার উপরে একটা ছাদ যে আছে এটাই অনেক আমার জন্য। স্কুল কলেজ পাশ করার পরে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। সেই সময়ে দীনাদের বাসাতেই আমি বেশ কিছু দিন ছিলাম। প্রথম দিকে আমার পড়াশোনার খরচ জামাল মামা দিয়েছেন। উনি সাহায্য না করলে আমার পক্ষে পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে যেত।
প্রথম দুই বছর আমি জামাল মামার বাসায় ছিলাম। নিজের থাকা খাওয়ার বদলে মামার বাড়ির কাজকর্ম করে দিতাম আর মামার দুই মেয়েকে পড়াতাম। তবে মামা কিংবা মামী কেউ আমাকে ঠিক তাদের বাড়ির চাকরের মত আচরণ করতেন না। যেমনটা আমরা সাধারণত দেখি। তারা আন্তরিক ভাবেই আমাকে আদর করতেন। তাদের পরিবারের সদস্যই মনে করতেন। এই জন্য আমি আজীবনই তাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। তবে ঝামেলা বাঁধাল দীনা। সে আমার প্রেমে পড়ল। কেন প্রেমে পড়ল সেটা আমি জানি না। আমাকে ভালোবাসার কী কোন কারণ ছিল? আমি সত্যিই জানি না। তবে দীনার ঐ ভালোবাসাটুকু আমার জীবন একেবারে বদলে দিল। সেই সময়ে আমার মনে একটা অনুভূতির জন্ম দিল। আমাকেও যে কেউ ভালোবাসতে পারে সেইবারই আমি প্রথম বুঝতে পারলাম। নতুন ভাবে নিজের জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। সেই স্বপ্নে দীনা থাকত, আমাদের ছোট একটা সংসার থাকত। একটা ফুটফুটে বাচ্চা থাকত। এই স্বপ্ন দেখেই আমি প্রতিদিন ঘুমাতে যেতাম। তবে সেই স্বপ্ন ভাঙ্গতে সময় লাগল না।
ব্যাপারটা জামাল মামার কাছে গোপনও রইলো না। মামা অবশ্য আমার উপরে রাগ করলেন না। তিনি জানতেন যে আমি এমন কিছু করব না। আমার সেই সাহসই হবে না। এটা যে দীনাই করেছে সেটা তিনি জানতেন। আমাকে তিনি বাসা ছেড়ে অন্য জায়গাতে উঠতে বললেন। প্রথম কয়েক মাসের খরচও তিনি আমাকে দিয়েছিলেন। পরে আমি আমার খরচ আমি নিজেই জোগার করে নিতাম। বছর খানেক পরেই দীনার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের আগে দীনা আমার কাছে এসে বলেছিল যাতে আমি তাকে নিয়ে পালিয়ে যাই। আমি রাজি হয় নি। এই কাজটা করলে মামার প্রতি তীব্র অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হত আর আমার পড়াশোনা তখনও শেষ হয় নি। টাকা আয় বলতে কয়েকটা টিউশনির বেতন যা দিয়ে কোন মতে নিজের পেট চলে। দীনা বাস্তবতা দেখে নি। আবেগ দিয়ে সব কিছু বিচার করছে। আমি যখন রাজি হলাম না তখন সে আমাকে কাপুরুষ বলেছিল। গালে একটা চড়ও মেরেছিল সেদিন। আমি সেদিন সত্যিই কাপুরুষই ছিলাম।
দীনার বিয়ের দিন মামা অবশ্য আমাকে যেতে বলেছিল আমি ইচ্ছে করেই যাই নি। আমি নিজেকে দীনাকে বা মামাকে কাউকেউ অস্বস্তিতে ফেলতে চাই নি। আর আমি দীনাকে অন্য পুরুষের পাশে দেখতেও পারতাম না। সেই সাহস আমার ছিল না।
তারও বছর খানেক পরে আমার পড়াশোনা শেষ হয়। আমি আর মাস্টার্স করি নি। একটা এনজিওতে চাকরি পেয়ে যাই। প্রথমে পঞ্চগড়ে পোস্টিং ছিল। এরপর আরও কয়েক জায়গায় আমি গিয়েছি চাকরির জন্য। এরপর চাকরিটা কপালে জুটেছে। এখন মোটামুটি থিতু হয়েছি এই ঢাকা শহরে।
চাকরির প্রথম কয়েকটা বছর বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছিল। সকালে বের হয়ে যেতে হত আর ফিরতে ফিরতে রাত। খাওয়া দাওয়া করেই ঘুম। এভাবেই দিনের পর দিন গেছে আমার। নতুন করে কোন স্বপ্ন আর চোখে আসে নি। মরার মত ঘুমাতাম। সকালে উঠেই কাজে যেতাম। কিন্তু এখন এই একটু আরামের চাকরিটা পাওয়ার পরে সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে আসি। সপ্তাহে দুইদিন ছুটি। ছুটির দিনে আমি এদিক ওদিক ঘোরাফেরা করি। মানুষজন দেখি। জুটিটে পার্কে বসে থাকতে দেখি। তখন দীনার কথা আমার মনে পড় খুব বেশি। রাতে ঘুমানোর সময় সেই স্বপ্নটা আবারও ফিরে আসা শুরু করল। ছোট একটা সংসারের স্বপ্ন। তবে আমি দীনাকে ছাড়া আর কাউকেই কেন জানি কোন দিন সেই স্বপ্নে বসাতে পারি নি। এখনও পারি না।

এদিকে আমার ঠিক কারো সাথেই যোগাযোগ নেই। নানা নানী মারা যাওয়ার পরে আমি ঐদিককার সবার থেকেই দুরে চলে এসেছি। মা মাঝে মাঝে ফোন দেয় কিন্তু এই পর্যন্তই। আমার কেন জানি তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। আসলে আমি জানি সে যা করেছে কিছুটা বাধ্য হয়েই করেছে। তার বয়স কম ছিল, আয়ের কোন পথ ছিল না তার। সারা জীবন তো আর আমাকে আকড়ে ধরে পড়ে থাকবে না সে। কিন্তু তারপরেও কেন জানি তাকে আমি ক্ষমা করতে পারি নি। আমার সেই একাকীত্ব জীবনটার কথা যখনই আমার মনে হয় তখন ভাবি যে সেই সময়ে যখন তাকে ছাড়া কাটিয়ে দিতে পেরেছি, এখন আর তার কোন দরকার নেই।

মামাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গেলাম আমি নিজেই। দীনাও সাথে ছিল। ডাক্তার দেখানো শেষ করে শহরের কয়েকটা জায়গায় ঘুরলাম তিনজন মিলে। মামাকে একটা পাঞ্জাবি কিনে দিলাম। মামা খুব খুশি হলেন। দীনাকে কিছু দিতে চাইলাম তবে সে কিছুই নিতে চাইল না।
সন্ধ্যার সময়ে বাসায় ফিরে এলাম। এই পুরো সময়ে দীনা আমার সাথে কথা বলে নি একদমই। রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে মামা যখন শুয়ে পড়েছে আমিও শুয়ে পড়ার পরিকল্পনা করছি এমন সময়ে দীনা এসে হাজির হল আমার সামনে। আমাকে বলল, তোমার বাসার ছাদে যাওয়া যায়?
-যায়!
-চল ছাদে যাই।
-এখন?
-হ্যা। আসো।

আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই সে ছাদের সিড়ির দিকে পা বাড়াল। আমিও তার পেছন পেছন হাটা দিলাম। আমার কেন জানি আবারও সেই পুরানো দিনের কথা মনে পড়ল। দীনাদের বাসায় ঠিক একই ভাবে আমাদের কথা হত। প্রায় দিনই দীনা আমার দরজায় এসে একটা টোকা দিত। এর অর্থ হল সে এখন আমার সাথে গল্প করতে চায়। সে ছাদে যাচ্ছে। আমি একটু পরে ছাদে গিয়ে হাজির হতাম। লম্বা সময় ধরে আমাদের গল্প চলত। কত বিষয় নিয়েই না আমরা কথা বলতাম। আজকেও কেন জানি তেমন একটা অনুভূতি হল।

রাত খুব বেশি হয় নি। তাই দেখতে পেলাম ছাদে তখনও কয়েকজন মানুষ রয়েছে। বেশির ভাগই অন্যান্য ফ্লাটের ছেলে মেয়েরা। এটা তাদের আড্ডা দেওয়া একটা স্থান। আমরা দুইজন এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালাম। দীনা অনেকটা সময় চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো শহরটা দেখতে লাগল। আমার দিকে না তাকিয়ে সে বলল, কেমন ছিলে তুমি ?
আমি চট করেই উত্তরটা দিতে পারলাম না। সত্যিই তো আমি কেমন ছিলাম? সেই ছোট বেলা থেকে আমি আসলে কেমন ছিলাম? আমি জানি না। আমি বললাম, আছি এক রকম। তোর কী খবর বল? বর কেমন আছে?
দীনা আমার দিকে তাকাল। তারপর বলল, বর নেই।
আমি একটু চমকালাম। বললাম, নেই মানে?
-নেই মানে নেই। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।
আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম। এই তথ্য আমার কাছে ছিল না। আমার কোন ধারণাও ছিল না। আমি বললাম, আমি আসলে জানতাম না।
-কেউই জানে না ঠিক। বাবা ব্যাপারটা কাউকে বলে নি। সে তো খুব রাগ আমার উপর।
-রাগ কেন?
-এই যে ডিভোর্স দিলাম তাই!
-ডিভোর্স কেন হল?
-পরকীয়া জুয়া আরও কত কী! তারপরেও আমার বাবার ইচ্ছে ছিল যেন আমি মানিয়ে নিই। পুরুষ মানুষের নাকি এসব একটু করেই থাকে। কিন্তু আমি মেনে নিতে পারি নি। একবার ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম।
আমি সত্যিই অবাক হয়ে গিয়েছি দীনার কথা শুনে। এতো কিছু হয়ে গেছে আর আমি কিছু জানিও না। অবশ্য আমাকে জানানোর কোন কারণও নেই।
দীনা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা এখানে কেন এসেছে জানো?
-ডাক্তার দেখাতে!
-ডাক্তার না ছাই! বাবার কিছুই হয় নি। এই ডাক্তার তো আমাদের ওখানেও আছে।
-তাহলে কেন এসেছে?
-যাতে তোমার কাছে আমাকে গছাতে পারে!
দীনার কথাটা আমি প্রথমে যেন ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমার চেহারায় অবাক হওয়ার ভাব দেখেই দীনা হেসে উঠে বলল, আরে বোকা বুঝলে না! তুমি তো আর সেই অসহায় ছেলে নাও। এখন ভাল চাকরি করছো, তাও আবার সরকা্রি! এখন তো আর তোমার সাথে বিয়ে দিতে সমস্যা নেই। তাই না?
আমার মাথার ভেতরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি এসে বাসা বাঁধল। আমার সেই প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি। ভালোভাবে বুঝতে শেখার আগেই বাবা মারা গেল। তারপর আমি কেবল সবার চোখে আমার জন্য বিরক্তি নয়তো করুণাই দেখেছি। কেউ ভালোভাবে কথা বললেও আমার কাছে কেন জানি মনে হত সে আমাকে করুণা করছে। বাবা বেঁচে নেই, মা থেকেও নেই, আত্মীয় স্বজনদের কাছে মানুষ। এমন মানুষকে সবাই করুণা করবেই। কিন্তু প্রথম যখন দীনা আমার কাছে এল তখন আমি ওর চোখে আমার জন্য অন্য কিছু দেখেছিলাম, যা আমার কাছে একদমই অপরিচিত ছিল। ওর ভালোবাসা পেতে আমার ইচ্ছে করত। সত্যিই ইচ্ছে করত কিন্তু নিজের অবস্থানের কারণে আমি সেই সাহস করতে পারি নি। ওর বিয়ের সময়ে ও যখন আমার কাছে এসেছিল, তাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে বলেছিল তখন আমার কী যে তীব্র ভাবে ইচ্ছে করছিল ওকে নিয়ে পালিয়ে যেতে সেটা বলা মত ছিল না। আমি সত্যিই সেদিন কাপুরুষ ছিলাম। দীনা বাস্তবটা দেখে নি কিন্তু আমি দেখেছিলাম তাই আমি কাপুরুষ ছিলাম।
আমি আজকে একটু সাহস করে দীনার হাত ধরলাম। আমার একটা ভয় ছিল যে দীনা হয়তো আমার হাত ছাড়িয়ে নিবে। তবে সে নিল না। আমি বললাম, তুই আমার উপরে এখনও রাগ করে আছিস?
দীনা আমার দিকে ফিরে তাকাল। ওর চোখে আমি রাগ দেখতে পেলাম না। তবে সেখানে অভিমান ছিল। ওর চোখে অশ্রুজল চিকচিক করছিল। প্রিয় মানুষের কাছ থেকে বিফল হয়ে ফিরে যাওয়ার মত কষ্টের কী কোন কিছু হতে পারে? আমি দীনাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।
আমি প্রায়ই ভাবি যে সেদিন যদি আমি দীনাকে নিয়ে পালিয়ে যেতাম তাহলে কী হত? এমন হতে পারত যে মামা আমাদের মেনে নিতেন, আমি দীনাদের বাসায় গিয়ে উঠতাম, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেতাম এখনকার মত। কেবল পার্থক্য হত যে দীনা আমার বউ থাকত। আবার এমন হতে পারত যে মামা মেনে নিতেন না। তখন আমাকে পুরো সংসার টানতে হত। হয়তো পড়াশোনা শেষ করে পারতাম না সংসারের চাপে আবার হয়তো পারতাম। অনেক কিছু হতে পারত।
আমি বললাম, আমি সত্যিই সাহসী ছিলাম না রে! তুই ঠিকই বলেছিলি। কাপুরুষই ছিলাম। জীবনের সেই সময়ে আমার আসলে তখন একটা স্বাভাবিক জীবন আয় রোজগার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর থেকে বড় আর কিছুই ছিল না। কিন্তু তোকে হারানোর পর আমি বুঝেছি যে একটু যদি সাহসী হতাম তবে জীবন হয়তো অন্য রকম হতে পারত। রাতের পর রাত আমাকে তোর কথা ভেবে কাটাতে হত না। তুই আমার পাশেই থাকতি তখন।
-এখনও ভাবো আমার কথা!
-প্রতিদিন। এই এতোদিন পরে তোকে দেখতে পেয়ে কী যে আনন্দ হচ্ছিল আমার !
-এই যে আমার একবার বিয়ে হয়েছিল, আমি এটো হয়ে গেছি, এমন কথা মনে হচ্ছে না?
এবার আমি আরেকটু সাহসী হলাম। ওর কাছে গিয়ে ওর কপালে একটু চুমু খেলাম। আমি দেখতে পেলাম ওর চোখ দিএ টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। আমি বললাম, আর তোকে ফিরিয়ে দিব না। কথা দিলাম। আর কখনো ফিরিয়ে দিব না।

পরের দিন সকাল বেলা নাস্তার সময় আমি সরাসরি মামাকে বললাম। মামার চেহারা থেকে একটা ছায়া যেন সরে গেল। আমার নিজ থেকে বলার কারণে তিনি যেন খানিকটা স্বস্তিই পেয়েছেন। আমি আসলে একদমই দেরী করার পক্ষে ছিলাম না। মামাকে সেদিন বিকেলেই বিয়ের কথা বললাম। মামা একটু অবাকই হলেন। একটু নিম রাজি ছিলেন বটে তবে দীনা যখন বলল সেও রাজি তখন আর মানা করলেন না।
আমার সেই স্বপ্নটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। কাপুরুষের স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপারিত হতে যাচ্ছে।

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

অপু তানভীরের নতুন অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে

বইটি সংগ্রহ করতে পারেন ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে থেকে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.4 / 5. Vote count: 18

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →