শেষ ফোনকল

4.7
(18)

প্রতিদিনের মত আজকের দিনটাও স্বাভাবিক ভাবেই শুরু হয়েছিল। মীরা প্রতিদিনের মত সকালে ক্লাসে গিয়ে হাজির হল। পরপর দুইটা ক্লাস করে ক্লান্তও হয়ে গেল। তারপর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে এল ক্যাফেটোরিয়াতে। ঠিক এই সময়েই ক্যাফেটোরিয়ার টিভিতে সংবাদটা প্রকাশ বড়। মহাখালীর স্বনামধন্য হাইরেইজ বিল্ডিংয় আরকে টাওয়ারে আগুন লেগেছে।
মীরা কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে রইলো। কিছু যেন চিন্তা করল। ওরই মত ক্যাফেটোরিয়ার প্রতিটা চোখ তখন টিভির দিকে। সবাই বিল্ডিংয়ের মানুষজনের জন্য চিন্তা করতে করতে লাগল। অনেকের মুখেই ফিসফিসানি দেখা দিল। অবশ্য এটা নিয়ে কেউ খুব লম্বা একটা সময় চিন্তা করল না। কারণ দেশে এই ঘটনা এই নতুন না। এর আগেও কত বেশ কয়েকবার এই ঘটনা ঘটেছে এই দেশে। প্রতিবারই কিছু মারা গেছে কয়েকটা এটা নিয়ে খুব লেখালেখি কথা বার্তা হয়েছে তারপর সবাই ভুলে গেছে। এই দেশে এটা নিত্য দিনের ঘটনা। এটা নিয়ে কেউ তাই খুব একটা চিন্তা করল না কেউ।
মীরাও খুব বেশি চিন্তা করল না। একটু পরে আরেফিন স্যারের ক্লাস শুরু হবে। সেটার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এমন সময়ে মীরার ফোনটা কেঁপে উঠল। ফোনের দিকে তাকিয়েই দেখল নামটা। রায়হানের ফোন!
একটু অবাক না হয়ে পারল না। রায়হান ওকে এর আগে কোন দিন ফোন দেয় নি। ওর নম্বরটা নিয়েছিল অনেক আগেই। কয়েকবার মেসেজ পাঠিয়েছে এই যা কিন্তু আজকের আগে সরাসরি ফোন করে নি।
রায়হান ওদের বিল্ডিংয়ের থাকে। ওদের উপর তলার ফ্লাটে। সে সরকারি বিসিএস অফিসার। তাই তার ভাবের শেষ নেই। অবশ্য এমন একটা পজিশনে যে কেউ থাকলেই তার ভেতরে অহংকার ভাবটা আসা স্বাভাবিক। এটা মীরা জানে। তবে মীরার সাথে সে কথা বার্তা বলে ঠিকই। বিশেষ করে রাতেরবেলা মীরা যখন ছাদে ওঠে তখন প্রায়ই দিনই রায়হানের সাথে দেখা হয়। রায়হান ছাদে পায়চারি করে কফির কাপ হাতে। এটা নাকি তার পছন্দের একটা কাজ। মীরা ফোনটা রিসিভ করল।
-হ্যালো!
রায়হানের গম্ভীর কন্ঠ তার কানে গেল। তবে সেই কন্ঠে কিছুটা যেন ব্যকুলতা কাজ করছে। মীরা বলল, আপনি এই সময়ে?
-তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি।
-এখন?
-হ্যা। এরপর হয়তো আর সুযোগ পাওয়া যাবে না।
-কেন? কী হয়েছে!
ওপাশ থেকে কিছু সময় নিরবতা। মীরা বলল, হ্যালো বলুন।
-তুমি কি সংবাদ দেখেছো, আগুন লাগার সংবাদ?
-হ্যা। টিভিতে দেখছি।
-আমি এখন ঐ বিল্ডিংয়ের ভেতরে!
মীরা যেন প্রথমে কথাটা ঠিক বুঝতে পারল না। ফোনটা কানে নিয়েই সে তাকাল টিভি স্ক্রিনের দিকে। মুখ দিয়ে বের হল, মানে? আপনি ঐ বিল্ডিং এ?
-হ্যা। কয়েক দিন ধরেই এই বিল্ডিং আমরা কয়েকজন অডিট করছিলাম। তাই নিয়মিত আসছিলাম। আজও এসেছিল তারপর …।
-সে কী বলছেন আপনি? আপনি বের হতে পারেন নি?
-এতো উত্তেজিত হও না।
রায়হান কিছুটা সময় চুপ করে রইলো। তারপর বলল, আসলে আমি বের হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বাইরে এতো ধোয়া যে সম্ভব হয় নি। নিঃশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না ধোয়ার ভেতরে। এখন একটা ওয়াশরুমে আছি। এটা নিরাপদ এখনও। তবে কত সময় নিরাপদ থাকবে জানি না।
-বাসায় জানিয়েছেন?
-না। তারা এই জিনিস সহ্য করতে পারবে না। একটু আগে মা বাবার সাথে কথা বলেছি তবে আমি এখানে আছি সেটা বলি নি।
মীরা বুঝতে পারল না এখন তার কী বলা উচিৎ। এই পরিস্থিতিতে মীরার আসলে কিছুই করার নেই। সে কিছুই করতে পারবে না। রায়হান বলল, তোমাকে যে কথা বলার জন্য ফোন দিয়েছি, সেটা এটা বলি। হয়তো এরপরে আর কোনো দিন বলার সুযোগ আসবে না।
-এমন করে বলবেন না প্লিজ।
-না শোনো। এই কথাগুলো আমি তোমাকে অনেকবার বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু বলতে পারি নি। জানি না কোন সংকোচ কাজ করেছে তবে আজি শেষ সময়। আজকে না পারলে আর হবে না। প্রথম যেদিন আমি তোমাকে দেখেছিলাম সেদিনই আমি তোমাকে পছন্দ করেছি। কিন্তু কেন জানি কখনই তোমাকে নিজের মনের কথা বলতে সাহস হয় নি। তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে জেনে তারপর তো আর কিছু বলার উপায়ই ছিল না। আমি প্রতিদিন ছাদ যেতামই কেবল এই আশাতে যে তুমি যদি একটু আসো, একটু তোমার সাথে আমার কথা হয়!
কিছু সময়ের বিরতি। রায়হান আবারও বলা শুরু করল, সারা জীবনই আতেল টাইপের ছেলে ছিলাম আমি। এখন ভাল চাকরি পেয়েছি বলে অনেকেই ভাবে যে আমি হয়তো ভাব দেখাই আসলে তা না। মুখচোরা স্বভাবের কারণে কখনও কোন মেয়ের সাথে আমি কথা বলতেই পারি নি। এখনও পারি না।
মীরা কী বলবে বুঝতে পারল না। ওর মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। একজন মানুষের সামনে বিপদ, হয়তো সে মারা যাবে তার শেষ সময়ে সে তাকে ফোন দিয়েছে। এই ভাবনাটা মীরাকে প্রবল ভাবে নাড়া দিল। সে অনুভব করল যে তার চোখ দিয়ে আপনা-আপনি পানি বের হয়ে এসেছে।
রায়হান বলল, আচ্ছা শোনো, আমার ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে আসছে। ভাল থেকো কেমন আর আমাকে মনে রেখো!
মীরা বলল, প্লিজ যে কোন ভাবেই হোক বের হয়ে আসার চেষ্টা করুন প্লিজ! প্লিজ !
ওপাশ থেকে কোন কথার আওয়াজ শোনা গেল না। মীরা আবার বলল, ছাদের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করুন। ছাদে গেলে কিছু একটা হবে। প্লিজ ওভাবে বসে থাকবেন না। আপনার পায়ে পড়ি প্লিজ!
মীরা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই ফোনের লাইনটা কেটে গেল। মীরা পাগলের মত আরও কয়েকবার ফোনের সংযোগ দেওয়ার চেষ্টা করল তবে কোন কাজ হল না। ওপাশ থেকে বলছে যে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মীরাকে পাগলের মত কাঁদতে দেখে আর ফোন টিপতে দেখে ওর বন্ধুরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কিছু সময়। তারপর দিবা এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল, কী হয়েছে এমন কেন করছিস, কী হয়েছে?
মীরা কোন কথা বলতে পারল না। কেবল ওর চোখ দিয়ে পানিই পড়তে লাগল। মীরা বুঝতেই পারল না সে এখন কী করবে? তার আসলে এখানে কী করার আছে? মীরা জানে না। রায়হান না এর আগে তেমন ভাবে খেয়ালও করে নি কিন্তু আজকে তার জন্য সে চোখের পানি ফেলছে।
মীরা আর ক্লাস করল না। সোজা বাসায় চলে গেল। একবার মনে হয়েছিল যে আগুনলাগা বিল্ডিংয়ের সামনে যাবে তবে সেই রাস্তাটা পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে প্রচুর মানুষের ভীড়। মীরা জানে যে সেখানে গিয়ে আসলে তার কোনো কাজ নেই। তাই আর সেদিকে গেল না।
বাসায় পৌছে পুরোটা সময় নিজের ঘরে শুয়ে রইলো। বিকেলের দিকে সাহস করে একবার রায়হানদের ফ্লাটে নক দিল। মীরাকে দেখে রায়হানের মা একটু অবাক হল। মীরা তাদের বাসায় এসেছে রায়হানের সাথে একটু কাজ আছে বলে। তবে রায়হানের মা জানাল যে রায়হান এখনও অফিসে। সন্ধ্যার দিকে আসলে সে রায়হানকে পাবে। মীরা রায়হানের মায়ের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারল যে রায়হানের ব্যাপারে এখনও তারা কিছুই জানে না। নিজের বাসায় ফেরত আসার পথেই মীরার কান্না যেন থামছিল না। মীরার মা অনেকবার মীরাকে জিজ্ঞেস করল বটে তবে মীরা কোন জবাব দিল না। দরজা বন্ধ করে একভাবে রায়হানের জন্য চোখের পানি ফেলতে লাগল। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল তার মনেও নেই। রাতে মায়ের দরজা ধাক্কার আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল। মা তাকে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে খাবার টেবিলে গিয়ে হাজির হল। ভাত সামনে নিয়ে বসে রইলো কেবল। তার এখন কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না।
তখনই তার মা কথাটা বলল। যদিও তাকে উদ্দেশ্য করে নি। টেবিলে তার বাবাও রয়েছে।
-আজকে জানো কী হয়েছে, উপরতলার ভাবি আছে না, ঐ যে যার ছেলে বিসিএস ক্যাডার?
মীরা মুখ তুলে তাকালো মায়ের দিকে দিকে। তার বুকের ভেতরে একটা ধড়ফড়ানি শুরু হয়ে গেছে। তার বাবাও খাবার থেকে মুখ তুলে তাকিয়েছে। মীরার মা বলে চলল, আজকে আরকে টাওয়ারে যে আগুন লেগেছিল তখন সে সেখানেই ছিল। ওদের অফিস থেকে নাকি ওখানে অডিট চলছিল। কপালে বিপদ থাকলে যা হয়। বেচারা আটকে পড়েছিল আগুনের ভেতরে। বাঁচার আশা ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে। কোন মতে নাকি ছাদে উঠে গিয়েছিল। সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে। এখন হাসপাতালে আছে। ভাবী সন্ধ্যা থেকে কী কান্নাকাটি করছিল!
মীরার তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। সে কী বলবে খুজে পাচ্ছে না। তার মনের ভেতরে একটা তীব্র অনুভূতি হচ্ছে। আনন্দের অনুভূতি! মীরার এখন ইচ্ছে করছে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে রায়হানের কাছে ছুটে যেতে। একবার তার চেহারাটা ভাল করে দেখতে ইচ্ছে করল তার। কিন্তু সে এখন হাসপাতালে আছে। বাসায় আসবে কখন ?
মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, সুস্থ আছে? মানে আগুনে পুড়েছে?
-না আগুনে পোড়ে নি শুনলাম। তবে অনেক ধোয়ার কারণে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। জানিসই তো মানুষ আগুন ধরা বিল্ডিংয়ে পড়লে পোড়ার আগেই ধোয়ার কারণে মারা যায়।
রাতের বেলা মীরা কতবার রায়হানকে ফোন দিল তার ঠিক নেই তবে প্রতিবারই ফোনটা আনরিচেবল আসছিল। তার মানে তার ফোন এখনও বন্ধ রয়েছে। রাতের ঘুমটা এল কখন সেটা মীরা জানে না।
পরেরদিন সে ক্যাম্পাসে গেল না। নিজের ঘরে গুম মেরে বসে রইল। তবে মাঝে মাঝে সে উপর তলায় গিয়ে ঘুরে এসেছে। রায়হান তখনও হাসপাতাল থেকে আসে নি। এক সময়ে মীরার মনের উত্তেজনা কমে এল অনেকটাই। তার মনে হল যে যদি রায়হান ফিরেও আসে তাহলে সে কিভাবে বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখা করবে? কী বলবে?
সেইদিন রায়হানের সাথে মীরার দেখা হল না। এমন কি পরের একটা সপ্তাহেও মীরার সাথে রায়হানের দেখা হল না। মীরার জীবন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে দুদিন পরেই। সে নিয়মিত ক্লাস করতে লাগল। অন্য সবার মত সেও ভুলেই গেল যে সেই বিল্ডিং আগুন লেগেছিল। কয়েকজন মানুষ মারা গেছে। তবে এখন সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। মীরার যেন মনেই রইলো না যে রায়হান তাকে ফোন করেছিল, যে ভেবেছিল সে মারা যাচ্ছে তাই তার শেষ ফোনটা সে মীরাকে দিয়ে নিজের মনের কথা জানিয়েছিল। কিন্তু এই কদিন তার মনেই রইলো না যে মীরার সাথে একবার দেখা করা উচিৎ। মীরাও এগিয়ে গেল না।
সপ্তাহ খানেক পরে মীরার সাথে রায়হানের দেখা হল। এই পুরো সপ্তাহ মীরা প্রতিদিনই রাতের বেলা একবার করে ছাদে এসেছে তবে রায়হান আসে নি। সম্ভবত তার শরীর তখনও খারাপ ছিল তবে এক সপ্তাহ পরে রায়হান ছাদে এসে হাজির হল। মীরার মনের ভেতরে একটা অদ্ভুত দ্বিধা কাজ করল। এর আগে যতবার রায়হানের সাথে দেখা মীরা তার সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে কোন প্রকার দ্বিধা করে নি। অথচ আজকে তার মনে কী রকম একটা অনূভূতি হচ্ছে। এই অনুভূতিটা তার কাছে অচেনা! মীরাই আগে কথা বলল আজ।
-আপনার শরীর কেমন?
-এখন ভাল তবে ধোয়ার কারণে নিঃশ্বাস নিতে এখনও কিছুটা অস্বস্তি লাগছে। তোমার কী খবর? ভাল সব কিছু?
-আমার কী হবে? আমি ভালই আছি?
-তোমার চোখ তো তা বলছে না।
-এই অন্ধকারে আপনি আমার চোখ কিভাবে দেখলেন?
রায়হান হাসল। বলল, একেবারে অন্ধকার নয়। সিড়ি ঘরের আলো জ্বলছে। তুমি যখন ভেতরে ঢুকলে তখনই তোমার চোখের উপরে চোখ পড়েছে।
-আপনি বুঝি ঐদিকেই তাকিয়ে ছিলেন?
-হ্যা। তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পুরো সপ্তাহ জুড়েই ! আশা করেছিলাম তুমি দেখতে আসবে, হাসপাতালে না হোক বাসায় যখন এলাম, তখন আশা করেছিলাম!
কিছু সময় মীরা কোন কথা বলল না। এভাবে অকপটে স্বীকার করবে সেটা মীরা ভাবে নি। এতোদিন খুব বেশি কথা সে বলত না। তারপর বলল, কী হিসাবে আসতাম? আপনি না আমার ক্লাসমেট, না বন্ধু, না পারিবারিক পরিচিত, না প্রে…
লাইনটা শেষ করল না। সে। রায়হান বলল, প্রতিবেশি তো?
-ঢাকায় প্রতিবেশিরা নিজেদের খোজ খবর নেয় না। বলেন তো আমাদের বিল্ডিংয়ের কয়জন আপনাকে দেখতে গেছে!
রায়হানের নিরবতায় সব কিছু বলে দিল। মীরা বলল, আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন?
-হুম!
-কেন?
-তুমি জানো না কেন অপেক্ষা করছিলাম?
মীরা এই কথার জবাব দিল না। নিজেও আর কোন কথা বলল না। অনেকটা সময় তারপর কেউ কোন কথা বলল না। দুজন কেবল পাশাপাশি বসে রইলো অনেকটা রাত পর্যন্ত।
অনেকটা রাত হয়ে গেছে। মীরা বলল, আজকে আসি। কেমন?
রায়হান কোন কথা বলল না। তবে মীরা নিজের জায়গা ছেড়ে উঠল না। সে জানতে চাইলো, একটা ভাল কথা মনে পড়ল, আপনি কিভাবে জানলেন যে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে?
রায়হান কিছুটা সময় চিন্তা করে বলল, চাকরি পাওয়ার আগে আমি তোমার পিছু নিয়েছি অনেকবার!
-কী?
-হ্যা। তখন তো কোন কাজ কর্ম ছিল না, তাই?
-তাই বুঝি?
-হ্যা। তবে চাকরি পাওয়ার পরে আর সময় হয় নি।
-সময় হলে অবশ্য জানতে পারতেন যে আমার ব্রেকআপ হয়ে গেছে অনেক আগেই। জিতুর সাথে আমার সম্পর্কটা টিকেছিল মাস ছয়েক। তারপরই একদিন ওকে হাতেনাতে অন্য মেয়ের সাথে ধরেছিলাম। তারপর থেকেই অফ।
-তাই নাকি?
চাঁদের আলোতেই মীরা রায়হানের মুখের উজ্জ্বল ভাবটা ঠিকই টের পেল। মীরা বলল, বাহ আপনি দেখি আমার ব্রেকআপের কথা শুনে খুশি হয়েছেন?
-অবশ্যই খুশি হয়েছি।
-আপনি তো আচ্ছা বদমানুষ!
রায়হান হেসে ফেলল। তার মুখের হাসি দেখে কেন জানি মীরার ভাল লাগল। যাওয়ার আগে মীরা বলল, জানেন আপনার ঐ শেষ কলের ব্যাপারটা আমি কিছুতেই মন থেকে বের করতে পারি নি। একজন মানুষের সামনে নিশ্চিত মৃত্যু আর সে শেষবারের মত আমার সাথে কথা বলতে চাইছে, আমার কন্ঠস্বর শুনতে চাচ্ছে, আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছে! আমি কোন দিন ভাবি নি এমনটা হবে। যদি সত্যিই আপনার কিছু হয়ে যেত বিশ্বাস করুন আমি কোন দিন এই শোক থেকে বের হতে পারতাম না। কোন দিন না।
তারপর আরও কিছুটা সময় কাটল নিরাবতায়। মীরা যখন উঠে পড়ল নিজের জায়গা ছেড়ে তখন রায়হান প্রশ্নটা করল, কাল রাতে আসবে?
-নাহ, আর আসব না।
-সেকি কেন? আর কথা হবে না?
-কথা হবে না তা তো বলি নি। ছাদে আসব না। ছাদে বসে আর কতদিন কথা বলব বলেন?
-তাহলে?
মীরা এবার রায়হানের দিকে তাকাল। তারপর বলল, আপনি বুদ্ধিমানুষ। বাকিটা ভেবে নিন।
মীরা আর দাঁড়াল না। সে সিড়ি দিয়ে যখন নামছিল তখন মুখে একটা চাপা হাসি দেখা দিল। আজকে রায়হান নিশ্চিত রাতে ঘুমাতে পারবে না আনন্দে। মীরার এতো পরিস্কার ইঙ্গিত ধরতে তার বেশি সময় লাগার কথা না।

ফেসবুকের অর্গানিক রিচ কমে যাওয়ার কারনে অনেক পোস্ট সবার হোম পেইজে যাচ্ছে না। সরাসরি গল্পের লিংক পেতে আমার হোয়াটসএপ বা টেলিগ্রামে যুক্ত হতে পারেন। এছাড়া যাদের এসব নেই তারা ফেসবুক ব্রডকাস্ট চ্যানেলেও জয়েন হতে পারেন।

অপু তানভীরের নতুন অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে

বইটি সংগ্রহ করতে পারেন ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে থেকে।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 18

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “শেষ ফোনকল”

  1. মনখোলা গল্প; দূর্ঘটনার কোলাহলে নীরব ভালোবাসা ও মানুষের ভীতসন্ত্রস্ততা, বিচলিত অপেক্ষা আর শেষের স্নিগ্ধ ইঙ্গিতটা –এটাই আপনার গল্পের সিগনেচার।

    আরো লিখুন, পাঠকের তৃষ্ণা নিবারণ করে যান অবিরাম।

    শুভকামনা চিরন্তন।

Comments are closed.