হারকিউলিস

oputanvir
4.7
(41)

বাস্ট্যান্ড পার হতেই বাস থেকে প্রায় সবাই নেমে গেল । আর একজন নতুন প্যাসেঞ্জারও উঠলো না । অবশ্য রাতের এই সময়ে লোকজন একেবারে কমে যাওয়ার কথা । মানুষ জন না থাকাটাই স্বাভাবিক । তারপরেও মিরনের মনের ভেতরে কু ডেকে উঠলো । একবার মনে হল সে বাস থেকে নেমে যায় । এমন কোন বাসে ওঠে যেখানে যাত্রী আছে । বিশেষ করে মেয়ে যাত্রী । কিন্তু তারপরেই আবার মনে হল যে এখন অনেক রাত হয়ে গেছে । এখন যদি বাস থেকে নেমে যায় তাহলে অন্য আরেকটা বাস কখন আসবে কো ঠিক নেই । আদৌও আসবে কিনা সেটাও নিশ্চিত নয় ।

পুরো বাসে কেবল সে একা মেয়ে যাত্রী । একেবারে শেষ মাথায় একজন মাথা নীচু করে রয়েছে । সম্ভবত ঘুমাচ্ছে । আর বাসে কেউ নেই । হেল্পার কন্ডাক্টর আর ড্রাইভার !
কিন্তু তিন রাস্তার মোড় থেকে যখন একজন যাত্রী ওঠার জন্য সিগনাল দিল আর ড্রাইভার গাড়ি না থামিয়ে টান দিল দ্রুত তখনই মনের ভেতরে সেই অস্বস্তিটা আরও বেড়ে গেল । এই সময়ে এরা তো এমন করে না । যাত্রীর জন্য দরকারে ৫/১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু এখন যাত্রী না নিয়েই চলে যাচ্ছে । মিরন উঠে দাড়ালো । আর এই বাসে নয় । দরকার হলে সে এই টুকু পথে সিএনজি নিয়ে যাবে । একটু টাকা বেশি খরচ হবে, হোক, তবুও যাবে ।
-বাস থামান !
কথাটা বলেই মিরন নিজের সিট ছেড়ে উঠে দাড়ালো । কন্ডাক্টর একটু দুরেই বসে ছিল । মিরনের এই রকম হঠাৎ উঠে দাড়াতে সে খানিকটা চমকে উঠলো বটে তবে সেটা সামলে নিল । তারপর মিরনের দিকে তাকিয়ে বলল, আফা, এখনও তো আসে নাই ।
-না আসা লাগবে না । আমি এখানেই নামব ।
মিরনের কথায় যেন খুব কৌতুক আছে এমন একটা ভাব করে কন্ডাক্টর হেসে উঠলো । মিরন তাকিয়ে দেখলো ড্রাইভারও কেমন বিশ্রি ভাবে হাসছে । মিরনের মনে সেই ভয়টা এখন তীব্র ভাবে নেমে এল । বারবার মনে হল যে আজকে রাতে ওর সাথে ভয়ংকর কিছু হতে চলেছে ।
কী করবে এখন ও ?
ওর একার পক্ষে কী করা সম্ভব?

-মেয়েটাকে নামতে দিন?

কথাটা আসলো পেছন থেকে । মিরন সহ বাসের ঐ তিন জন পেছন ঘুরে দাড়ালো । পেছনের সিটে একজন যে বসে ছিল সেটা ওরা সবাই ভুলেই গিয়েছিলো । মিরন মানুষটার কন্ঠ শুনে যেন একটু বল পেল বুকে । সে দ্রুত বলে উঠলো, দেখুন না ওরা বাস থামাচ্ছে না ।
লোকটার দিকে এবার ভাল করে তাকালো । লোক না বলে যুবক বলাই ভাল । মিরনের থেকে হয়তো কয়েক বছর বড় হবে । অন্য দিকে বাসের তিনজন একেবারে পুরুষ । ওদের সাথে এই ছেলে কোন দিন পেড়ে উঠবে না । হয়তো বাস থেকে ধাক্কা মেরে ফেলেও দিতে পারে ।
কন্ডাক্টর এবার উঠে দাড়ালো । সোজা হেটে গেল যুবকের দিকে । তারপর খানিকটা গলা চাউড় করে বলল, এই মিয়ে নিজের চরকায় তেল দেন । বাস থামাইতেছি একখই নাইমা যাইবেন ।

মিরন তাকিয়ে দেখলো ওদের দিকে । তারপরই ঘটনা টা । কন্ডাক্টর তীব্র একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো ব্যাথায় । তারপরই পা চেপে ধরে বসে পড়ল । মিরন তখনই দেখতে পেল জিনিসটা ।
লম্বা নল ওয়ালা একটা পিস্তল চলে এসেছে যুবকের হাতে । সেটা সে কন্ডাক্টের মাথায় ঠেকিয়ে বলল, একদম চুপ । চিৎকার করেছিস তো এখনই ট্রিগার চেপে দেব ।
কন্ডাক্টর এক হাত চাপা দিয়ে নিজের মুখের আওয়াজ বন্ধের চেষ্টা করলো ।
যুবক তাকে পাশ কাটিয়ে এবার আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলো মিরনের দিকে। ওর দিকে চোখ রেখে হাসলো একটু । বাস তখনও ছুটে চলেছে । মিরন ভয়ে সিটিয়ে গেছে । কী হচ্ছে সেটা ওর মাথার ভেতরে ঢুকছে না ।

মিরনকে পাশ কাটিয়ে বাসের সামনের দিকে গেল । হেল্পার ভীত চোখে তাকিয়ে আছে যুবকের দিকে । যুবক হেল্পারের দিকে তাকিয়ে বলল, লাফ মারার কথা ভাবছিস? লাফ মারার সাথে সাথে তোকে গুলি করবো । গুলি নাও লাগতে পারে । কিন্তু গুলি তোর শরীরে লাগার সম্ভবনা শতকরা ৮০ ভাগ । চান্স নিবি?
হেল্পার নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে । যুবক বলল, উপরে উঠে আয় । দরজা থেকে উপরে আয় । ঐ সিটে গিয়ে বস ।

হেল্পার কোন কথা না বলে নির্দেশ পালন করলো । যুবক এবার ড্রাইভের দিকে তাকিয়ে বলল, ড্রাইভার সাহেব আপনার পাশের জানলা বন্ধ করেন । জানলা দিয়ে লাফি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তো মরেছেন ।
তারপর হেল্পারের দিকে তাকিয়ে বলল, যা জানলাটা বন্ধ করে আয় !
হেল্পার আবারও চুপচাপ কেবল নির্দেশ পালন করলো ।

এবার যুবক ফিরে তাকালো মিরনের দিকে । বলল, আপনি কোথায় নামবেন?
-ব্রি-ব্রিজের সামনে!
-ড্রাইভার সাহেব । ব্রিজের সামনে গাড়ি থামাবেন । যাত্রী নামবে । মহিলা যাত্রী !

যখন ব্রিজের সামনে গাড়ি এসে থামলো তখনও মিরনের ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে ও নিরাপদে নেমে যাচ্ছে বাস থেকে । বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর সে আবারও ফিরে তাকালো বাসের দিকে । যুবক দরজার কাছে এসে দাড়িয়েছে । হাত নেড়ে ওকে বিদায় জানাচ্ছে ।
মিরন হঠাৎ বলল, আপনি ওদের সাথে কী করবেন?
যুবক হাসলো একটু । তারপর বলল, ওরা আপনার সাথে কী করার পরিকল্পনা করছিলো নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলেন ? তারপরও ভাবছেন ওদের কথা ?
-প্লিজ বলুন ।
-এতো ভাববেন না। কেবল একটা কথা বলি যে ওরা এই কাজ এই প্রথম না, আগেও করেছে ।

তারপর সে বাসের দরজায় দুইটা ধাক্কা দিল । বাস চলতে শুরু করলো । মিরন তাকিয়েই রইলো বাসটার দিকে যত সময় না সেটা চোখের আড়ালে চলে যায় !

পরদিন বিকেলে মিরনের একটা সংবাদে চোখ আটকে গেল । বসিলা ব্রিজের অদুরে একটা বাস থেকে তিনটা লাশ পাওয়া গেছে । তিনজনকেই তাদের যৌনাঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে । তাদের লাশের পাশে একটা কাগজের নোট পাওয়া গেছে । সেখানে লেখা ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যদণ্ড ।
খবরে আরও জানা যায় এই তিনজনের দুইজনের নামে দুইটা ধর্ষন মামলা চলছিলো । দুইজনই জামিনে ছাড়া পেয়েছে ।

মিরনের বুঝতে মোটেি কষ্ট হল না যে আসলে কি হয়েছিল গত রাতে আর কে করেছে এই কাজটা !

দুই

নতুন অফিসের প্রথম দিনে মিরন জীবনের সব থেকে বড় বিস্ময়ের সম্মুখীন হল । এমন একজনের সাথে যে তার দেখা হবে সেটা কোন দি ভাবে নি । কিছু সময় সে কেবল তাকিয়ে রইলো মানুষটার দিকে । মিরন যেন অবাক হতেও ভুলে গেছে ।

মাস খানেক এই অফিসটাতে সে ইন্টারভিউ দিয়েছিলো । ইন্টারভিউ যে খুব একটা ভাল হয়েছিলো সেটাও সে বলবে না । চাকরি যে হবে সেটা সে আশাও করে নি । তবে যখন চাকরির জন্য ফোন এলো, তখন বেশ অবাকই হয়েছিলো । তারপর আজকে চাকরিতে জয়েন করে সবার সাথে পরিচিত হওয়ার সময়ই দেখতে পেল তাকে । মানুষটার দিকে একবার চোখ পড়তেই চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছিল মিরনের । সেদিন রাতের বেলা দেখেছিলো বটে কিন্তু দিনের বেলা এই পরিস্কার আলোতে তাকে চিনতে মোটেও কষ্ট হল না । ওদের অফিসের ইঞ্জিনিয়ার সে। আইটি বিভাগে কাজ করে । ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো । চোখের কোন পরিবর্তন হল না । মিরনের তখন মনে হল সম্ভবত ওকে চিনতে পারে নি সে ।

একবার মনে হল যে চাকরি থেকে আজই বিদায় নেয় কিন্তু তারপরই চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিল । এতো ভাল একটা চাকরি সে আবার খুজে পাবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই । এই চাকরি ছাড়ার কোন মানে নেই । আর সে যদি মিরনকে না চিনতে পারে তাহলে তো কোন সমস্যা নেই । সে পুরোপুরি অন্য ডিপার্টমেন্টে কাজ করে । ওর সাথে দেখা হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই ।

কিন্তু ওর ধারণা ভুল প্রমানিত করে দিয়ে পরদিনই মাহবুবের আরমানের সাথে তার দেখা হয়ে গেল ক্যাফেটেরিয়াতে । লাঞ্চের সময়ে মিরন এক কোনাতে বসে লাঞ্চ করছিলো তখনই মাহবুব এসে বসলো তার সামনের চেয়ারে । ওর চোখের দিকে তাকিয়েই মিরন একেবারে ফ্রিজ হয়ে গেল । সেই সাথে এটাও বুঝতে পারলো যে ওর ধারণাটা আসলে সঠিক নয় । মাহবুব আরমান তাকে ঠিক ঠিক চিনতে পেরেছে ।

-কেমন আছেন মিস? ঐদিন রাতে ঠিক ঠাক মত বাসায় পৌছিয়েছিলেন?

কথা টা বলেই আরমান একটু হাসলো । মিরন একেবারে চুপ করে বসে রইলো । কোন কথা বলল না । মাহবুব বলল, আপনি সম্ভবত আমাকে খুব খারাপ ভাবছেন, তাই না ?
এবারও মিরন কোন জবাব দিলো না ।
মাহবুব বলল, মানুষ হিসাবে আমি আসলেই খুব বেশি ভাল সেটা আমি বলব না । তাই আমাকে মানুষ যত কম চিনে ততই তাদের জন্য ভাল । চিনলেই সমস্যা । তাই না ?

বাক্যটা একটা হুমকি সেটা মিরনের বুঝতে মোটেও কষ্ট হল না । সোজা বাংলায় মাহবুব তাকে চুপ থাকতে বলছে । সে তো চুপই ছিল । সেই ঘটনার পরে পুলিশ অবশ্য একটু খোজ খবর করেছিলো । বাসের খবর করতে চেষ্টা করেছিলো । সিসিটিভি দেখে খোজ খবরের ব্যাপারটা সে পত্রিকা থেকে জানতে পেরেছে । মনের ভেতরে একটা ভয় ছিল যে পুলিশ তার কাছে হয়তো চলে আসবে । কিন্তু সেটা আর হয় নি । পুলিশ তার খোজ বের করতে পারে নি । অনেক কয়বার মনে হয়েছে যে সে নিজ থেকে পুলিশের কাছে । কিন্তু সে বলবে কী? তারপর সেদিন যদি এই মানুষটা না থাকতো তাহলে তার যে কী অবস্থা হত সেটা সে কল্পনাতেও আনতে পারে না ।

মিরন বলল, আমি আপনাকে চিনি না ।
-আমি জানি আপনি আমাকে চিনেন না । তাই তো পরিচিত হতে এলাম । আমার নাম মাহবুব । কালকে আমাদের দেখা হয়েছিলো?
-জ্বী !

মাহবুব হাসলো । তারপর বলল, আসুন আজকে আমার পক্ষ থেকে আপনাকে কফি খাওয়াই । জানেনই তো কলিগরা হচ্ছে দ্বিতীয় ফ্যামিলি ! তাই না ?

মিরন কোন কথা বলল না । বুকের মাঝে একটা ভয় ঠিক ঠিক কাজ করছে । পুরোটা সময় মাহবুব এতো চমৎকার ভাবে ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলল যে মিরনের ঠিক বিশ্বাসই হচ্ছিলো না যে ঐদিনের রাতের ঐ খুনী মানুষটা হচ্ছে আর এই মাহবুব মানুষটা একই । সেদিন যদি সে বাসে না থাকতো তাহলে কি মিরনের কোন দিন এই ব্যাপারটা মাথায় আসতো?

পরের কয়েকদিন খোজ খবর নিয়ে মিরন যা জানতে পারলো যে মাহবুব এই কোম্পানিতে এসেছে খুব বেশি দিন হয় । ওর নিয়োগের মাস দুয়েক আগে আরও একটা নিয়োগ হয়েছিলো । সেটাতে ঢুকেছে সে । তখনই মিরনের মনে হল যে মাহবুব এখানে এসেছে কিছু করতে ! কিন্তু কী করতে এসেছে এখানে?
কাউকে কি খুন করতে এসেছে?
কাকে?

উত্তরটা সে আবিস্কার করলো আরও দুইদিন পরেই ।

জেনারেল ম্যানেজারের অফিসে পরের সপ্তাহে ডাক পড়লো মিরনের । অফিস ছুটির পরেই । এই মানুষটা সেদিন ইন্টারভিউয়ে ছিল । তার চোখের দৃষ্টি মোটেই মিরনের ভাল লাগে নি । মেয়েদের এই চোখের দৃষ্টির চেনার একটা সহজাত ক্ষমতা থাকে । সেটা দিয়েই সে চিনতে পেয়েছিলো । চাকরিতে জয়েন করার পরে মিরন নিজে তার কেবিনে এসে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলো । সেদিনও একই দৃষ্টিতে লোকটা মিরনের দিকে তাকিয়ে ছিল । তারপর আর ঐ মুখো হয় নি সে । মনে হয়েছে যে এই লোকটার থেকে দুরে থাকতে হবে । কিন্তু চাইলেও তো আর দুরে থাকা যাবে না । সে অফিসের একজন বস । আজকে যখন ছুটির পরে তার ডাক পড়লো তখন মিরন প্রমদ গুলো । কিভাবে সেটা কাটাবে সে নিজেও জানে না । আপাতত তাকে যেতেই হবে । আর অন্য কোন উপায় নেই ।

অফিস শেষ করে যখন জেনারেল ম্যানেজারের অফিসে প্রবেশ করছে তখন অফিস প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে । মিরনের মনের ভেতরে একটু অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে । যেন মনে হচ্ছে ঐ কেবিনে এই সময়ে প্রবেশ করাটা মোটেও ঠিক হচ্ছে না । কেন ঠিক হচ্ছে না সেটা সে জানেও না । দরজা ঠেকে ঢুকতেই জেনারেল ম্যানেজার আলিম আলীকে দেখতে পেল । সে নিজের চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছিলো । ওকে ঢুকতে দেখে একটু হাসলো । মিরনের মনে হল যে ম্যানেজার সাহেব ওর জন্যই অপেক্ষা করছিলো । চোখে সেই দৃষ্টি । মিরন যেন আরও একটু সংকুচিত হয়ে উঠলো !
চেয়ারের সামনে বসতে বসতে মিরন বলল, স্যার ডেকেছিলেন ? কোন কাজ ছিল কি?
-আরে রাখো কাজ অনেক কাজতো করলে সারা দিন !
তারপর একটা হাসি দিল । বেশ কুৎসিৎ হাসি । হাসিটা ঠিক যেন ওর খুব পরিচিত মনে হল ! বাস কন্ডাক্টরের সেই হাসিটার মত মনে হল !

টুকটাক কথা বলতে লাগলো ম্যানেজার আলিম আলী । সবই অদরকারী কথা বার্তা । মিরন খুব ভাল করেই বুঝতে পারলো যে আলিম আলী সময় পার করতে চাচ্ছে । ওকে এখানে আটকে রাখার জন্য । কেন এমন করতে চাইছে সে?

এক সময়ে হঠাৎ আলিম আলী বলল, তুমি কি জানো এই চাকরিটা তোমার পাওয়ার কথা ছিল না?
মিরন এবার চোখ তুলে তাকালো । সে নিজেও জানে যে চাকরিটা ওর পাওয়ার কথা ছিল না । অন্তত যেই রকম ভাইভা সে দিয়েছিলো তাতে কোন ভাবেই পাওয়ার কথা ছিল না । তারপরেও চাকরিটা ও পেয়েছে ।
আলিম আলী বলল, আমার একান্ত ইচ্ছেতে তোমার চাকরিটা হয়েছে ।
মিরন এবার বলল, ধন্যবাদ স্যার !
-কেবল কি ধন্যবাদ দিলে চলবে?
এই বলে সে আবারও হাসলো । মিরন যদিও বুঝতে পারলো আলিম আলী কোন দিকে ইংগিত করছে তবুও সে বলল, স্যার আমি মন দিয়ে কাজ করবো । অন্য সবার থেকে বেশি পরিশ্রম করবো !
একটু যেন বিরক্ত হল যে । তারপর বলল, আহ ! তুমি দেখি বড় অবুঝ ! যাই হোক সব বুঝে যাবে । আগামী শুক্রবার আমি যাচ্ছি গাজীপুরের সাইট ভিজিটে । তুমি আমার সাথে যাবে । ঠিক আছে ?

মিরন কোন মতে বলল যে জ্বী স্যার ! তারপর রুম থেকে বের হয়ে এল । যখন বাসার দিকে যাচ্ছিলো তখন বারবার কেবল একটা কুৎসিত দৃশ্য ওর চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো । কিছুতেই সেটা মাথার ভেতর থেকে বের করতে পারছিলো না । মনে মনে ঠিক করেই নিল যে আর এখানে চাকরি করবে না সে ।

শুক্রবার সকাল থেকে নিজের ফোন বন্ধ করে দিল । তারপর সারাটা দিন নিজের ঘরেই শুয়ে রইলো । রুমমেটরা জানতে চাইলো যে কী হয়েছে কিন্তু কোন কথা বলল না । কেবল একবার বলল যে ওর শরীর খারাপ লাগছে । এমন কী দুপুরের খাবার পর্যন্ত খেল না ।

পরদিন সকালে সে নিজের রেজিগনেশন লেটার হাতে নিয়ে হাজির হল অফিসে । অফিসে আর কাজ করবে না সে । কিন্তু অফিসে ঢুকেই বুঝতে পারলো কোন একটা ঝামেলা হয়েছে । সবার মুখ কেবল যেন থমথমে । পুলিশকে দেখে সে আরও অবাক হয়ে গেল । কী হচ্ছে এসব !

আরও কিছু সময় পরে যখন সব কিছু জানতে পারলো তখন ওর চোখ কপালে উঠলো । কলিগদের কাছ থেকে জানতে পারলো যে ওদের ম্যানেজার আলিম আলীকে গতকাল গাজীপুরে কেউ মেরে ফেলেছে । মেরেছে একেবারে কদিন আগে খুন হওয়া সেই বাসের লোকজনের মত । যৌনাঙ্গে গুলি করে । মৃত্যর আগে তাকে বেশ ভাল রকমের টরচার করা হয়েছে ।

পুলিশ জানালো যে তারা গাজীপুরের ঐ রিসোর্টে খোজ খবর নিয়েছে । আলিম আালী নাকি প্রায় দিনই সেখানে মেয়েদের নিয়ে গিয়ে হাজির হতেন । কখন মেয়েরা তার সাথেই আসতো আবার কখনও কোন একাই আসতো । এমনই বলা ছিল কেয়ারটেকারকে। গতদিন দুপুরেও নাকি উচু লম্বা একটা মেয়ে বোরকা পরে এসে হাজির হয়েছিলো । তাকে অবশ্য কেউ বের হয়ে যেতে দেখেনি। কোন দিন দিয়ে সে বের হয়েছে কেউ জানে না । রাত হয়ে গেলেও যখন আলিম আলীকে নিজের রুম থেকে বের হতে না দেখে রিসোর্টের কেয়ারটেকার দরজায় টোকা মারে । কিন্তু সেটা খোলা পায় সে । দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পায় যে বিছানার উপরে পড়ে আছে আলিম আলী । এই দরজা থেকে তার দিকে তাকিয়েই কেয়ারটেকার বুঝতে পারে যে সে আর বেঁচে নেই ।
আলিম আলীর চরিত্রের দোষ যে আছে সেটা অফিসের সবাই জানে । মিরনও জেনেছে দুদিন আগে । আসলে মিরনেরই গতকাল সেখানে যাওয়ার কথা ছিল । মিরন নিজের ফোন বন্ধ করে রেখেছিলো । যদি সে সত্যিই সেখানে গিয়ে হাজির হত তাহলে কী হত?

পুলিশ সবার সাথে কথা বলে চলে গেল । মিরনের চোখ খুজতে লাগলো মাহবুব কে । তাকে পেয়েও গেল । ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে । চোখে কেমন একটা কৌতুকপূর্ণ হাসি । চোখের সেই দৃষ্টিতেই মিরন বুঝতে পারলো যে আলিম আলীকে কে খুন করেছে !

পরিশিষ্টঃ

-আমি যদি এখন পুলিশকে বলে দিই যে আলিম বদমাইশটাকে কে মেরেছে তখন ?
মাহবুব যেন খুব মজা পেল মিরনের কথা শুনে । হো হো করে হেসে উঠলো । লাঞ্চ শেষ করে ওরা অফিসের ছাদে বসে আছে । এটা কর্মচারিদের স্মোকিং জোন হিসাবে ব্যবহারিত হয় । আজকে অবশ্য এখানে এখনও কেউ আসে নি । মিরন আর মাহবুব এসে হাজির হয়েছে । মিরনই মাহবুবকে ডেকে নিয়ে এসেছে !
তারপর বলল, কে এমন করে মেরেছে বল তো?
-ইস ঢং ! আমি সব জানি !
-জানলেই ভাল । সব বলে দাও !
মিরন তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় মাহবুবের চোখের দিকে । এই চোখ যে কোন খুনির চোখ হতে পারে সেটা মিরনের বিশ্বাস হয় না । এই চোখ কোন মানুষকে খুন করতে পারে না । ওগুলো কোন মানুষ না । মেয়েদের সাথে যারা এমন জঘন্য কাজ করে তারা কোন ভাবেই মানুষ হতে পারে না !

সে মাহবুবের তাকিয়ে হঠাৎ হেসে ফেলল । মিরনের হাসি দেখে মাহবুব বলল, হাসছো কেন ?
মিরন বলল, আপানকে বোরকা কেমন লাগছে সেটা কল্পনা করার চেষ্টা করছি !

মাহবুব হাসলো কেবল । মেয়েটা কত স্বাভাবিক ভাবে কথা গুলো বলছে । অথচ ওর কত ভয়ংকর দিক এটা । কিন্তু মাহবুবের মনে হল যে মিরনের কাছে ওর এই ভয়ংকর গোপনীয় ব্যাপারটা নিরাপদ থাকবে ! কোন নিশ্চয়তা নেই তবুও থাকবে সেটা মাহবুব জানে !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.7 / 5. Vote count: 41

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →