ষড়যন্ত্র

oputanvir
4.9
(45)

প্রারম্ভ

ভোরের আলো ফুটতে এখনও কিছুটা বাকি । পুরো বাসাটা ঘুমিয়ে আছে । এমন কি বাসার সামনের গেটে যে দারোয়ানটার জেগে থাকার কথা সেও চোখ বন্ধ করে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন । তবে কেবল মাত্র একজনের চোখে কোন ঘুম নেই । তিনি সারা রাতই জেগে ছিলেন । কখনও ঘর আবার কখন বারান্দায় আসা যাওয়া করেই রাত টা কাটিয়ে দিয়েছেন। যদিও তার জেগে থাকার নিষেধ আছে । তার শরীর এতো বেশি টেনশন নিতে পারে না । কিন্তু আজকে তিনি ঘুমাতে পারেন নি । একটা বড় চিন্তা তাকে কিছুতেই ঘুমাতে দেয় নি । অনেক দিন পরে এই দেশে আজকে খুব বড় একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে যার আভাস কারো কাছে নেই । ঘটনা যখন ঘটবে তখন কেউ ঠিক মত বুঝতেও পারবে না, কি হচ্ছে আর কিভাবে হচ্ছে । কিন্তু যখন নিজের চোখে দেখবে তখন না বিশ্বাস করে কেউ পারবে না ।

তিনি আরেকবার খোলা আকাশটার দিকে তাকালেন । ঢাকা শহরে অন্যান্য বাসা থেকে খোলা আকাশ না দেখা গেলেও এই বাসা থেকে খুব ভাল করেই সেটা দেখা যায় । বারান্দায় থেকে খোলা আকাশটা বড় পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । মেঘ মুক্ত আকাশে সকালের একটা শুভ্র পবিত্রতা দেখা যাচ্ছে । কিন্তু কেউ জানে না আজকে কি ঘটতে যাচ্ছে । এতো শান্ত আর নির্মল দিনের শেষটা হবে ভয়ংকর আর রক্তে ভেজা !

এমন সময় তার নিজের মোবাইলটা বেজে উঠলো । মোবাইলটা তার হাতেই ছিল । মোবাইল স্ক্রিনে নাম্বারটা দেখে একটু হাসি ফুটলো মুখে । এই ফোনটার জন্যই তিনি অপেক্ষা করছিলেন অনেকটা সময় ধরে !

-সব প্রস্তুত ?
-জি স্যার ।
-কোন ঝামেলা ?
-না স্যার ?
-কেউ টের পায় নি ?
-কেউ না । কেউ কোন দিন পাবেন না । খুব জলদিই পাবেন সুখবর !

আর কোন কথা হল না । লাইন কেটে গেল । ফোনটা কোলের উপর রেখে আবারও আকাশের দিকে তাকালেন । আজকে তিনি মনে মনে এক অদ্ভুদ উত্তেজনা বোধ করছেন । অনেকদিন আগে তার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধ আজকে তিনি নিবেন ! আজকে সব কিছু তার হবে আবারও ।

এক

ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট । হল রূম ।
হল রূমটা বেশির ভাগ সময়েই ব্যব হার করা হয় বিভিন্ন ধরনের সেমিনার কিংবা সভার জন্য, অধিকাংশ সময়েই যেটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে । তবে আজকে অন্যান্য দিনের থেকে একটু আলাদা । পুরো এলাটাকে যেন নিরাপত্তার নিশ্চিদ্র চাঁদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে । বাইরে প্রতিটি পয়েন্টেই নিরাপত্তা বিভাগের লোকজন সহ প্রেসিডেন্ট সিকিউরিটি স্পেশাল ফোর্সের লোকজনে ঘুরাফেরা করছে । তাদের চোখ এরিয়ে একটা পিপড়াও যেন প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
যদিও বর্তমান প্রেসিডেন্ট আজিজুর রহমানের এসব ঠিক পছন্দ না । তিনি মনে করেন অহেতুক তার জন্য এতো নিরাপত্তা নেওয়া হচ্ছে । তার দেশের মানুষ তাকে ভালবাসে । তাদের দ্বারা কোন ভাবেই তার কোন ক্ষতি হতে পারে না । কিংবা অন্য কেউই তাকে হত্যা করার কথা চিন্তাও করতে পারে না । এমন কি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীও না ।

তার ধারনা মোটেই মিথ্যে না । দেশের মানুষ আসলেই তাকে নিজের জীবন দিয়ে ভালবাসেন । অনেকের মত তিনি তার বাবার থেকেও সফল একজন প্রেসিডেন্ট ! দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য দিনরার পরিশ্রম করেই চলেছেন একভাবে । যতদিন না এই দেশকে বিশ্বের বিকে একটা চিরোস্থয়ী নাম না দিতে পারছেন ততদিন তার শান্তি নেই । অনেক আগেই দেশ নিন্ম মধ্যম দেশের সারি থেকে বের হয়ে এসেছে ।যদিও উচ্চ আয়ের দেশে এখনও প্রবেশ করতে পারে নি তবে বিশ্ব ব্যাংক বলছে সেটা এখন কেবল মাত্র সময়ের ব্যাপার ।

হল রূমটা একেবারে কানায় কানায় ভরে গেছে । প্রেসিডেন্টের ভাষন সবার শেষ । সবাই সেটার জন্যই অপেক্ষা করছে । অনুষ্ঠান চলছে আপন গতিতে । দ্বিবার্ষিকি অর্থনৈতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে । অনুষ্ঠানটা লাইভ টিভিতে দেখানো হচ্ছে । প্রেসিন্ডেন্টের নাম ঘোষনা করার সাথে সাথে পুরো হল রুম হাত তালিতে ভরে গেল । তিনি উঠে দাড়ালেন । নিজের চেয়ার থেকে ভাষণ দেওয়ার জায়গাতে তাকে হেটে যেতে হবে । সবার চোখ কেবল তার দিকে । তিনি সবার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন একবার । তারপর আরেক কদম এগোবেন তখনই একটা আওয়াজ হল । কোন ভারি কিছু যেন কোন নরম কিছুর সাথে আঘাত করলো এমন আওয়াজ । আওয়াজটা কেউ শুনলো না হাত তালির জন্য । কিন্তু শব্দটা খুব কাছে হওয়ার কারনে তিনি শুনতে পেয়েছে । তারপরই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন তার বডিগার্ড আলীর বুকের কাছে লাল রংয়ের একটা ধারা বইছে । ছেলেটা অবাক হয়ে তার দিকে একবার তাকিয়ে আবারও নিজের বুকের তাকালো । তাকে যে কেউ গুলি করেছে সেটা সে বুঝতে পারছে না !

আজিজুর রহমান থেমে গেলেন । ঠিক তারপরই আরেকটা আওয়াজ হল একই রকম । তার অপর বডিগার্ডও শুয়ে পড়লো সাথে সাথে । কারন গুলিটা তার কপালে লেগেছে । তিনি সামনে দিকে তাকালেন । এরপরে আর চাপা কোন আওয়াজ হল না । সরাসরি গুলির আওয়াজ হল । স্টেজের সামনে তিন গার্ডকে কেউ গুলো করলো ! এক মহিলার চিৎকার শুনতে পেলেন । মুহুর্তের ভেতরেই পুরো হল রুমের ভেতরে হট্টগোল বেঁধে গেল ।
তিনি দেখলেন তার একেবার পেছনে থাকা দুজন গার্ড তার দিকে এগিয়ে আসছে । কিন্তু তারা আসতে পারলো না । দুজনেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লো । হলরুমের পেছনের দর্শক সারিতে বসে থাকা প্রয়াই সবাই তখন দরজার দিকে পালাতা শুরু করেছে । তবে তাদের ভেতরে কয়েকজন পিস্তল হাতে তুলে গুলি করা শুরু করেছে নিরাপত্তা কর্মীদের দিকে ।

কিন্তু তার চোখ খুজছিলো অন্য কাউকে । পেয়েও গেলেন । দর্শক সারির একদম পেছনের সারিতে স্নাইপার রাইফেল নিয়ে বসে থাকা মানুষটা তার চোখ এড়ালো না ।

নলটা ঠিক তার দিকে তাক করা । এবার তাকে নিশানা করবে । চেহার গুলো আস্তে আস্তে উপর চলে যাওয়াতে এতো হট্টগলের মাঝেও তাকে নিশানা বানাতে স্নাইপারের কোন সমস্যা হচ্ছে না । তিনি খুব ভাল করেই জানেন নড়তে গেলেই এর পরের নাম্বারটা তার হবে ।

পেছন থেকে গুলির আওয়াজ পেলেন । তাকিয়ে দেখেন টেবিলের নিচে ততক্ষনে স্টেজের মানুষ গুলো অবস্থান নিয়ে ফেলেছে । একেবারে স্টেজের শেষ দিকের দরজা খুলে কেউ গুলো করার চেষ্টা করছে । হল ঘরের সবাই চারটা দরজা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে যে যার মত । তবে বাইরে থেকেও গুলির আওয়াজ ভেসে আসছে । বাইরে থাকা নিরাপত্তা বিভাগের সাথে গোলা গুলি হচ্ছে ।

এবার সময় এসেছে । তিনি স্নাইপারের গতিবিধি ঠিক বুঝতে পারলেন । এতো দুর থেকেও তিনি তার চোখের হিংস্র ভাবটা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছেন । তার সময় চলে এসেছে । শেষ সময়ে নিকিতা আর আবিরের চেহারাটা মনে পড়লো । সকালে বের হওয়ার সময় তাদের সাথে দেখা হয় নি । মেয়েটা ঘুমিয়ে ছিল, মেয়েটার অনেক বেলা করে ঘুমানোর অভ্যাস । আর আবির দুদিন থেকে দেশের বাইরে গেছে । আর হয়তো তাদের সাথে কোন দিন দেখা হবে না ।
তিনি আওয়াজ শুনতে পেলেন । কিন্তু তার আগেই একটা জিনিস তার চোখে পড়লো । সবাই যখন ভয়ে দরজার দিকে পালানোর চেষ্টা করছে তখন একটা ছেলে ছুটে চলে আসছে স্টেজের দিকে । সোজা তার দিকে । স্নাইপারের গুলি আর আর তার মাঝে এসে হাজির হল একদম সঠিক সময়ে ।
আজিজুর রহমান ঠিক বুঝতে পারলো গুলোটা ছেলেটার গায়ে লেগেছে । গুলির ধাক্কাতে ছেলেটা সোজা আজিজুর রহমানের উপর এসে পরলো । তিনি মাটিতে শুয়ে পড়লো । তবে মাটিতে পড়ার আগে আরও দুটো গুলির চাপা আওয়াজ তিনি শুনতে পেলেন । সব গুলোই ছেলেটার গায়ে লেগেছে । বুঝতে পারলো না এই অপরিচিত ছেলেটা কেন তাকে বাঁচানোর জন্য নিজে গুলি খেল !

দুই
নিতুর ইচ্ছে ছিলো আজকে ওরা ছুবি তুলতে যাবে । ওর আর ফারাজ সেরকমই কথা ছিল কিন্তু নিতু বিরক্ত হয়ে বসে আছে এই ন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের হল রূমে । কি সব বিরক্তিকর ভাষণ শুনছে । ফারাজ যে ওকে এখানে আনবে সেটা নিতু কোন ভাবেই ভাবতে পারে নি । অন্তত নিতু যত দুর জানে ফারাজের এখানে আসার কথা না কোন ভাবেই । তবে ছেলেটা ওকে এখানে কেন নিয়ে এল বুঝতে পারছে না । নিতু ফারাজকে গায়ে একটা ছোট্ট করে ঘুসি দিয়ে বলল
-তুই যে এখানে এসেছিস তোর বাসার লোকজন জানে ?
ফারাজ হাসলো । ফারাজের হাসিটা দেখেই নিতুর মনটা ভাল হয়ে গেল । ছেলেটা এমন চমৎকার করে হাসে । এই হাসির অর্থ সে জানে খুব ভাল করে ।
-তাহলে এখানে কেন এসেছিস ?
-এতো কথা কেন বলিস ? চুপচাপ করে ভাষণ শোন তো !
-না ! আমার ভাল লাগছে না । শোন আমার ওয়াশ রুমে যাওয়া দরকার । তুই থাক আমি গেলাম । আর আসবো না । তোর ভাষণ শোনা শেষ হলে গাড়ির কাছে আসিস । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা যা । আর বেশি সময় লাগবে না !

নিতু উঠতে গিয়েও উঠলো না । বসেই রইলো ওর পাশে । নিতু মাঝে মাঝে ফারাজকে ঠিক বুঝতে পারে না । কিছু কিছু ও এমন আচরন করে যেন নিতুকে ঠিক মত চেনে না । অন্যান্য সময় নিতুর সাথে এমন ভাব করে যেন নিতু ছাড়া ওর জীবনে জরুরী আর কিছু নেই কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কাজ করে যেন নিতুকে ঠিক মত চেনেই না ।

নিতু আরও কিছু বুলতে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের ঘোষনা এল । চারিদিকে যেন হাততালির বন্যা বয়ে গেল । নিতু তাকিয়ে রইলো স্টেজের দিকে । এই তো প্রেসিন্ডেন্ট উঠছে নিজের আসন ছেড়ে । কয়েক কদম এগিয়েছে ঠিক তখনই নিতু একটা অবাক করে জিনিস দেখতে পেল । প্রেসিডেন্টের ডান দিকে যে গার্ড টা থাকে সে যেন একটু নড়ে উঠলো । ঠিক তারপরই তার বুকের ঠিক মাঝে লাল রংয়ের রক্ত ফুটে উঠলো । নিতু চোখ বড় বড় করে সেদিকে তাকিয়ে রইলো । প্রেসিডেন্ট নিজেও কিছু একটা বুঝতে পেরেছে । তিনি দাড়িয়ে গেছেন । তারপরই বা দিকের গার্ডের ঠিক কপালে একটা গর্ত হতে দেখলো নিতু । নিতু ফারাজকের হাত টা জোরে চেপে ধরে বুঝলো ফারাজও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে । ফারাজ ওর দিকে তাকালো । চোখাচোখি হল কিছুটা মুহুর্ত । ফারাজ ওকে কিছুই বলল না তবে নিতু জানে ফারাজ এখন কি করতে যাচ্ছে । ঠিক তারপরই ওদের ঠিক সামনে দাড়িয়ে থাকা গার্ডকে গুলি করা হল কোথা থেকেও । এবার আর আস্তে হল আওয়াজ গুলো । সাথে সাথেই পুরো হল রুমে হট্টগোল বেঁধে গেল । সবাই দৌড়ে দরজার দিকে দৌড়াতে শুরু করলো ।

ফারাজ ওর দিকে তাকিয়ে আর কোন কথা বলল না । চোখে চোখেই কেবল বলল যেন আমি যাচ্ছি । নিতু বলতে চাইলো যাস না । কিন্তু সে কথা বলতে পারলো না । নিতুর হাতটা সরিয়ে সোজা স্টেজের দিকে দৌড় দিল । এক লাফেই উঠেই পড়লো স্টেজে । ঠিক তারপরই নিতু দেখলো ওর শরীরটা যেন কিছুর সাথে ধাক্কা খেল । ধাক্কা খেয়েই ফারাজ সোজা প্রেসিডেন্টের উপর গিয়ে আছড়ে পড়লো । নিতু কোন কথা বলতে পারলো না আর । হুড়োহুড়ির কারনে কিছু একটা এসে লাগলো তার মাথার পেছন দিকে । অজ্ঞান হয়ে পড়লো সিটের উপরেই ।

তিন

আজিজুর রহমানের যেন মনে গোলাগুলি থেমে গেছে । তিনি নিজের উপর থাকা ছেলেটিকে সরালেন । ছেলেটার পিঠের তাকাতেই বুকের মাঝে কেমন একটা তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করলেন । ছেলেটার পিঠে মোট তিনটা গুলোর চিহ্ন দেখতে পাচ্ছেন । পুরো শার্ট রক্তে ভেসে যাচ্ছে । চোখ বন্ধ করে করে আছে । এভাবে একটা তাজা প্রাণ তার জন্য চলে গেল এটা তিনি মেনে নিতে পারছে না ।
বয়স কত হবে ? আবিরের থেকে কিছুটা বড় । এমন পাগলামো কেন করলো ছেলেটা ?
কেন এভাবে নিজেকে বুলেটের সামনে নিয়ে এল তাকে বাঁচানোর জন্য ?

তিনি উঠতে যাবে তখনই দেখলেন সেই স্নাইপার এগিয়ে আসছে তার দিকে । চারটে দরজার সব গুলোতেই কিছু কালো কাপড় পরা মানুষ পজিশন নিয়েছে । তাদের বন্দুকের নল দরজার দিকে । যে কাউকে ঘরের ভেতরে ঢুকতে না দিতে তারা বদ্ধ পরিকর । তিনি পুরো হল রুমের দিকে একবার চোখ বুলালেন । কয়েক জায়গাতে কয়েকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে যার বেশির ভাগই তার সিকিউরিটির লোকজন ।
তৈমুর কোথায় ?
কোথায় গেল ?
তার চোখ তৈমুরকে খুজতে লাগলো । কিন্তু কোথাও দেখতে পেল না তাকে । তার ভাগ্য কি হয়েছে সেটা আজিজুর রহমান জানেন না । তিনি তাকিয়ে দেখলেন স্নাইপার একদম তার সামনে এসেছে । আরও তিনজন মানুষ তাকে ঘিরে ধরলো । সবার মুখেই কালো কাপড় দিয়ে ঘেরা । পরনে কালো পোষাক । কেবল চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে । আজিজুর রহমান তাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমরা কেউ বেঁচে ফিরতে পারবে এখান থেকে ?
যেন খুব মজার একটা কথা বলেছে এমন একটা ভাব করে স্নাইপার লোকটা হেসে ফেলল । তারপর বলল
-মিস্টার প্রেসিডেন্ট ! আপনার কি মনে হচ্ছে আমরা এখানে বেঁচে ফেরার কথা চিন্তা করে এসেছি ?

এটা আজিজুর রহমানও ঠিকই বুঝতে পেরেছেন । শহরের এরকম প্রাণ কেন্দ্রে দেশ প্রধানের উপর কেউ হামলা করতে সাহস করবে যদি না তারা সুইসাইড স্কোয়ার্ড হয় । আর্মি আর খুব বেশি হল মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই চলে আসবে এখানে । তারা কেবল এখানে এসেছে তাকে হত্যা করার জন্য ।
স্নাইপার লোকটা স্টেজের দুই পাশে সেট করা ক্যামেরার দিকে ইঙ্গিত করে বলল
-এগুলো দেখতে পাচ্ছেন তো ? লাইভ ! পুরো দেশ এমন কি পুরো বিশ্ব দেখতে পাচ্ছে ।
আজিজুর রহমান সেদিকে তাকালো কিছুটা সময় । সম্ভাবনা কি আছে তার মেয়ে নিকিতাও এখন এটা দেখছে । মেয়েটার কি ঘুম ভেঙ্গেছে ? কিংবা আবির ? ও কি দেখবে ? কিভাবে ওর বাবা মারা যায় ?

আরও একজন এগিয়ে এল খোলা পিস্তল নিয়ে । তারপর তার দিকে তাকিয়ে বলল
-তো বলুন স্যার কিভাবে মরতে চান ? কোথায় গুলো খাবেন ? বুকে নাকি মাথায় ?
আজিজুর রহমান অবাক হয়ে কন্ঠের মালিকের দিকে তাকিয়ে রইলো । মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকলেও তাকে সে ঠিকই চিনতে পেরেছে । আজিজুর রহমান অবাক কন্ঠে বলল
-জাফর ! তুমি ?
কালো কাপড় পরা মুখের ভেতরেই জাফর হাসলো । আজিজুর রহমান সেটা ঠিকই বুঝতে পারলো ।
-জি স্যার আমি ।

জাফর তার ডেপুটি চিফ সিকিউরিটি অফিসার । তৈমুরের পরেই জাফর আহমেদের পদটা । তিনি ঠিক বুঝতে পারছিলেন না কিভাবে সিকিউরিটি ভেদ করে তাদের উপর হামলা করা সম্ভব হল । কিন্তু এখন সেটা পরিস্কার হয়ে গেল । গোলার ভেতরেই গলদ রয়েছে ।
জাফর খানিকটা আমুদে কন্ঠে বলল
-জলদি বলুন স্যার । খুব বেশি সময় নেই আমাদের হাতে । বলুন কিভাবে মরতে চান ? কোথায় গুলি করবো ?

আজিজুর রহমান তাকিয়ে রইলো জাফরের দিকে । এখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না । জাফর আহমেদ আবার বলল
-আপনি যদি মনে করে থাকেন তৈমুর স্যার আপানকে সাহায্য করতে আসবে তবে আপনার সে আশাতে গুড়ে বালি । সে সবার আগেই উপরে চলে গেছে ।
আজিজুর রহমান তীব্র একটা ঘৃণা বোধ করলেন । জাফর আর সময় নষ্ট করতে চাইলো না। সোজা পিস্তলের নলটা আজিজুর রহমানের কপাল বরাবর তাক করলো । তারপর বলল
-আপনার সাথে কাজ করতে পেরে ভাল লেগেছে স্যার । তবে আপনার যাত্রা এই পর্যন্তই ।
ট্রিগার টিপতে যাবে ঠিক তখনই কেউ যেন তার পা চেপে ধরলো । তারপর হেচকা টান মারলো । জাফর আহমেদ তাল সামলাতে পারলো না । খানিকটা উল্টে পরলো তবে ততক্ষনে তার আঙ্গুলো কাজ করে দিয়েছে । নড়ে উঠার কারনে গুলোটা লক্ষ্য ভেদ করতে পারলো না । হিতে বিপরীত হয়ে গুলোটা লাগলো আজিজুর রহমানের পেছনে দাড়িয়ে থাকা লোকটার গায়ে !

আজিজুর রহমান অনেকটা প্রস্তুতি নিয়েই নিয়েছিলো গুলিটা তার গায়েই লাগবে । অলৌকিক ভাবেই তিনি বেঁচে গেলেন আরেকটা বার । এবং সেই আগের ছেলেটার জন্যই । আজিজুর রহমান অবাক হয়ে দেখলো তিনটা গুলো খাওয়া ছেলেটা উঠে দাড়িয়েছে । একটু আগে জাফর আহমেদের পা টা তুলে ঠেলে ফেলেছে । আর জাফর আহমেদের কাধে ঝোলানো শর্ট গানটা ততক্ষনে ছেলেটা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে ।
তবে স্নাইপার ততক্ষনে নিজের হাতের পিস্তল দিয়ে প্রেসিডেন্টের দিকে গুলো চালিয়ে দিয়েছে । তবে এবারও যেন মৃত্যুদূত তাকে স্পর্শ করলো না । ছেলে নিজের শরীর দিকে আড়াল করে নিয়েছে তাকে । গুলিটা এবার লাগলো ছেলেটার কাধের কাছে । দ্বিতীর বার আবার যখন গুলি করতে গেল তবে এবার আর সেই সুযোগ পেল না । শর্টগানের বাট দিয়ে তার মুখ বরাবর সজোরে আঘাত করলো ছেলেটা । হাত থেকে পিস্তল ছুটে গেছে ততক্ষনে ।

ঘটনা গুলো এতো জলদি ঘটে গেল যে অন্য সবাই কেউ ই স্নাইপারের মত প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারলো না । ঠিক এই সুযোগটাই নিল ছেলেটা । জাফর আগে থেকেই মাটিতে পরে ছিল । অন্যজন পরে গেছে তার গুলো খেয়েই । আর স্নাইপার মাটিতে পরে গেল শর্টগানের বাটের আঘাত খেয়ে । আর একজন অবাক হয়ে দাড়িয়ে ছিল । সে যে তার হাতের বন্দুক বের তুলে গুলি করবে সেটাও ভুলে গেছে । তবে ছেলেটা কিছুইতেই এই ভুল করলো না । সরাসরি ট্রিগার চেপে দিল । লোকটা যেন উড়ে গিয়ে পড়লো আর একটু দুরে !

-স্যার চলুন !
আজিজুর রহমানও খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছেন না । কে এই ছেলে ?
এতো গুলো গুলি খেয়েও দাড়িয়ে আছে কিভাবে ! ছেলেটা নিচ থেকে আরেকটা পিস্তল তুলে নিলো ।

আজিজুর রহমানকে নিয়ে সোজা স্টেজের পেছনের দরজার কাছে চলে গেল । পেছন থেকে ততক্ষনে আবারও গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে তবে সেটা অনেক দেরি হয়ে গেছে । আজিজুর রহমানকে এখনও শরীরের আড়ালে নিয়ে ছেলেটা এগিয়ে যাচ্ছে । পেছন থেকে ক্ষণে ক্ষণে শর্টগান গর্জে উঠছে ।

আজিজর রহমান ছেলেটার সাথেই এগিয়ে যাচ্ছে । স্টেজের পেছনের এই দরজা দিয়ে সোজা একটা করিডোর আছে । সেটা দিয়ে সোজা পেছনের দিকের দরজাতে যাওয়া যায় । তবে লম্বা করিডরের দুপাশে বেশ কিছু দরজা আছে বিভিন্ন রুমে যাওয়ার জন্য ।

ওদের লক্ষ্য কেবলই পেছনের ঐ দরজা । ওখানে নিশ্চয়ই সাহায্য পাওয়া যাবে । কিন্তু করিডরের মাঝ বরাবর আসার পরই তাদের ভুল ভাঙ্গলো । শেষ মাথায় দুজন অস্ত্রধারী এসে হাজির । তাদের মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা । তারা গুলি করার আগেই ছেলেটা আগে গুলি করলো । আজিজুর রহমান ঠিক পাশের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পরলো । তারপর ছেলেটাকে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো ।

ছেলেটা ঠিক দরজার সামনে বসে পড়লো শর্ট গান নিয়ে । আজিজুর রহমান এবার ছেলেটার দিকে তাকানোর সময় পেল ভাল করে । ছেলেটার পুরো শরীর রক্তে ভেসে যাচ্ছে । কাধের গুলিটা এখনও যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে ।
-তুমি কে ?
-আমি !

ছেলেটা কেমন অদ্ভুত ভাবে হাসলো । মুখ দিয়ে থুতু ফেললো । আজিজুর রহমান দেখলো সেই থুতুর মধ্যে রক্ত বের হয়ে এল !
-কে তুমি ? এভাবে কেন ? কেন করলো ?
-কেন !
ছেলেটা আবারও যেন হাসলো ।
বাইরে আবারও গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গেল । আজিজুর রহমান দরজার দিকে তাকাতেই ছেলেটা বলল
-ভয় নেই স্যার ! আমি যতক্ষন আছি ওরা আপনাকে মারতে পারবে না ।

আজিজুর রহমানও এই কথাটা বিশ্বাস করেন । যে ছেলে বুলেটের সামনে নিজেকে ঢাল হিসাবে দাড় করিয়ে তার জীবন বাঁচাতে পারে তার বেঁচে থাকতে আসলেই তার কিছু হবে না । কিন্তু ছেলেটা কতক্ষন বেঁচে থাকবে সেটা তিনি জানেন না । কিছু বলতে যাবে তখনই তার মনে হল ছেলেটার চোখ কেমন যেন পরিচিত । এই চোখ তার খুব পরিচিত ।
ছেলেটা কি ওর পরিচিত ?
এর আগে কোন ভাবে কি ছেলেটার সাথে তার দেখা হয়েছে !
আজিজুর রহমান মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু মনে করতে পারলো না । ছেলেটা আজিজুর রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে ।
-একটা কথা বলবো ?
-হ্যা ! বল ।
-আমি হয়তো আর টিকবো না বেশি সময় । আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল আপনার আপনাকে জড়িয়ে ধরবো ! একবার ধরবেন প্লিজ !

আজিজুর রহমান আরও খানিকটা বিভ্রান্ত হয়ে ছেলেটাকে বুকে টেনে নিলেন । ছেলেটা একটু আগেও তীব্র যন্ত্রনা সহ্য করে ছিলো কিন্তু এখন আজিজুর রহমানের বুকে মাথা রেখে যেন তার সব যন্ত্রনা ব্যাথা চলে গেছে । আজিজুর রহমান বুঝতে পারলেন ছেলেটাকে এখনই হাসপাতালে নিয়ে না গেলে তাকে আর বাঁচানো যাবে না ।

কিন্তু কিভাবে যাবেন তিনি ? এই কথা মনে হতেই দরজায় কড়া নড়লো । কেউ যেন দরজা ধাক্কা মারছে । ধাক্কা শুনতেই ছেলেটা আবারও তড়াৎ করে উঠে পড়লো । তারপর দরজা দিকে শর্টগানের নল দরজা ঘুরে গেলো । তবে এবার নকের পর আর গুলির আওয়াজ এল না । ওপাশ থেকে কেউ বলে উঠলো
-মিস্টার প্রেসেডেন্ট ! আপনি কি ঠিক আছেন ? দরজা খুলুন প্লিজ !

ছেলেটা আজিজুর রহমানের দিকে তাকালো । আজিজুর রহমান একটু সরে দাড়ালো । ছেলেটা খুব সাবধানে দরজা খুলতেই দেখতে পেল দরজার সামনে তার পরিচিত আর্মি কমান্ড বাহিনী দাড়িয়ে । আর কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার আগেই আজিজুর রহমান সবার সামনে চলে এল । ছেলেটাকে বললেন
-এরা আমাদের বাঁচাতে এসেছে । ভয় নেই ।
ছেলেটা মুখ থেকে চিন্তার ছাপটা সরে গেল । ছেলেটা হাসলো খানিকটা ! তারপর বলল
-ইট ইজ ভেরি নাইস মিটিং ইউ স্যার !

ব্যাস আর কোন কথা বলার আগেই ছেলেটা ঢলে পড়লো মেঝেতে !

চার

নিজের গাড়িতে উঠে প্রেসিডেন্ট আজিজুর রহমান তার ড্রাইভার মাহমুদের দিকে তাকিয়ে বলল
-মাহমুদ !
-জি স্যার !
আমি তোমাকে ৫ মিনিট সময় দিলাম । এর ভেতরে তুমি আমাকে বিএমসিতে নিয়ে হাজির করবা ? বুঝতে পেরেছো ?

মাহমুদ খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো আজিজুর রহমানের দিকে । এর আগে এমন অদ্ভুত ভাবে তিনি তাকে কোন আদেশ দেন নি । মাহমুদ বলল
-তাহলে স্যার আমাদেরকে বাগানের ভেতর দিয়ে যেতে হবে । ট্রাফিক এতো অল্প সময়ে ক্লিয়ার করা যাবে না ।
-তাহলে তাই কর । সামনে যা আসবে ভেঙ্গে উড়িয়ে দিয়ে দিবে । আম আই ক্লিয়ার ?
-জি স্যার !

আজিজুর রহমান তার পিএসের দিকে তাকিয়ে বলল
-বিএমসিতে ফোন করে বল ইমারজেন্সি রেডি করতে । যত ডাক্তার আছে সবাইকে নিয়ে প্রস্তুত হতে বল ! তারপর দরজা বন্ধ করে দিল । মাহমুদ ততক্ষনে এক্সেলেরেটরে পা দিয়ে ফেলেছে । লাফিয়ে গাড়িটা রাস্তা থেকে উদ্যানের ভেতরে ছুটে চলল বিএমসি দিকে ।
আজিজুর রহমান তার কোলের উপর মাথা রাখা অচেনা ছেলেটার মাথায় হাত রাখলো । বলল
-আর একটু মাই বয় । আর ৫ মিনিট !

বাথরুমের ভেতর থেকে প্রেসিডেন্ট কে উদ্ধার করার পরে সবাই অবাক হয়েই দেখলো তার তেমন কি ক্ষতিই হয় নি । সে কেবল সুস্থ্যই নয় বরং একেবারেই অক্ষত আছে । তার শরীরে যত রক্ত লেগে আছে তার সবটুকুই অন্যজনের । সবাই ব্যস্ত হয়ে পরলো তাকে নিরাপদ জায়গাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য । কিন্তু তিনি তখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে সেই ছেলেটাকে কোলে তুলে নিলেন । ৫০ বছর সুঠোম দেহের প্রেসিডেন্ট নিজেই তাকে কোলে নিয়ে নিজের গাড়ির দিকে দৌড় দিলেন । যে কোন মুল্যে ছেলেটাকে তার বাঁচাতেই হবে ।

প্রেসিডেন্টের গাড়ি যখন বিএমসির ইমারজেন্সির সামনে থামলো তখন ঘড়িতে ছয় মিনিট পার হয়েছে । মাহমুদের দিকে তাকিয়ে প্রেসিডেন্ট বলল
-এক মিনিট তবুও লেট !
-সরি স্যার !

তিনি আর দাড়ালেন না । নিজেই গাড়ি থেকে বের হলেন । তারপর ছেলেটাকে বের করলেন নিজ হাতে । তার পেছনে পুরো বাহিনী রয়েছে । রয়েছে সংবাদ মাধ্যম । একটু আগের হামলা থেকেও এটা যেন আরও বড় কোন খবর হয়ে গেছে । দেশ প্রধান এভাবে কাউকে বাঁচানোর জন্য নিজে কোলে করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা রোজ রোজ ঘটে না । ইমারজেন্সির সামনেই সব রেডি ছিল ট্রলি নিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে যাওয়া হল ভেতরে ।

-স্যার !
প্রেসেডেন্ট তাকিয়ে দেখে তার রেজিমেন্টের একজন অফিসার তার পাশে । অফিসার টি বলল
-এখন আপনার ফেরৎ যাওয়া উচিৎ !
প্রেসিডেন্ট আজিজুর রহমান বলল
-তুমি জানো এই ছেলেটা মোট চারটা গুলো নিজের গায়ে খেয়েছে যেগুলো আমার খাওয়ার কথা ছিল ।
-জি স্যার । পুরো দেশে সেটা দেখেছে ।
-আমি এখান থেকে এক পাও নড়বো না । বুঝেছো ? প্রোটোকল নিরাপত্তা সব জাহান্নামে যাক !

তখন ভেতরে ডাক্তারেরা ছেলেটাকে নিয়ে ব্যস্ত । ছেলেটার শরীর থেকে রক্ত পরিস্কার করতেই চেহারা স্পষ্ট হয়ে উঠলো । তখনই একজন ডাক্তার বলল
-সর্বনাশ !
-কি হয়েছে ?
-এ কে জানেন আপনি ?
-কে ?
-এতো আমাদের জোবাইদা ম্যাডামের ছেলে !
সামনের ডাক্তার অবাক হয়ে বলল
-জোবাইদা ম্যাডাম মানে ? জোবাইদা হাসান ? বার্মেইডের ডিন ?
-হ্যা !
-তাহলে এই ছেলে তো ……
ডাক্তার কথা শেষ করলো না আর !
-স্যার এর যদি কিছু হয়ে যায় আমাদের খবর আছে !

পুরো বিএমসি এলাকা মানুষ জনে ভর্তি হয়ে গেছে । যার বেশির ভাগই প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য । তিনি হাসপাতালের ইমার্জেন্সীর সামনে পেতে রাখা চেয়ারে বসে আছে । এর বাইরে দিয়েই রেজিমেন্টের লোকজন পাহারা বসিয়েছে । পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রনে চলে এসেছে । সবাইকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ভেতরে ।
ঠিক এমন সময় প্রাঙ্গনে আরেক ব্ল্যাক পাজেরো এসে হাজির হল । তার পেছনে এবং সামনে আরও কয়েকটা গাড়ি । গাড়ি থেকে যে নামলো তাকে দেখে সবার চোখ চরক গাছ ।

বর্তমান বিরোধী দলের নেতা ফয়েজ হাসান । তার এই মুহুর্তে এখানে থাকার কোন কথা নয় কিন্তু যখন তার পিতা সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ ফরিদ হাসান গাড়ি থেকে নামলো আসে পাশের সবাই নড়ে চলে উঠলো । তিনি এখন আর খুব একটা বাইরে বের হন না । বয়স হয়েছে তার । কিন্তু আজকে এখানে কেন এসেছেন?
ইতিমধ্যে এই হাসপাতালে দেশের প্রেসিডেন্ট রয়েছে । তার উপর এসে হাজির হয়েছেন বিরোধী দলের নেতা এবং সাবেক একজন প্রেসিডেন্ট !
কার জন্য ?

পাঁচ
আজিজুর রহমান ফোনে কথা শেষ করে আবারও অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকালো । এখনও লাল বাতি জ্বলছে । একটু আগে তার বাসায় কথা হয়েছে । উনি সুস্থ আছেেন এবং বাসার কাউকে চিন্তা করতে মানা করেছেন ।
পাশে একটা কফির কাপ রেখে গেছে অনেক সময় আগে তবে সেটার দিকে তিনি ফিরেও তাকান নি । তার সকল মনযোগ এখন অপারেশোন থিয়েটরের দিকে । পিএসকে বলেছেন দেশে সব থেকে সেরা সার্জনদের এখনই এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা যেন করা হয়।
বারবার ছেলেটার চোখের কথা মনে পড়ছে । এতো পরিচিত মনে হচ্ছে চোখ জোড়া !
ছেলেটা কে ?

ঠিক তখনই হট্টগোলের আওয়াজ পাওয়া গেল । তার গার্ড কাউকে ভেতরে আসতে দিচ্ছে না । আরেকটু এগিয়ে ভীষন অবাক হয়ে গেল আজিজুর রহমান ! ফয়েজ হাসানকে এখানে তিনি কোন ভাবেই আশা করে নি কিন্তু যখন সাবেক প্রেসিডেন্ট ফরিদ হাসানকে দেখলেন তখন আজিজুর রহমান অবাক না হয়ে পারলেন না ।

দুজনেই সোজা ছুটে এসে থামলো আজিজুর রহমানের সামনে ! কোন কিছু বোঝার আগেই ফয়েজ হাসান আজিজুর রহমানের কলার চপে ধরলো ! তারপর বলল
-যদি আমার ভাগনের কিছু হয় তোামাকে আমি ছাড়বো না !
কলার চেপে ধরাতে কয়েকজন অফিসার এগিয়ে আসতে যাচ্ছিলো । আজিজুর রহমান হাতের ইশারাতে তাদের কে থামতে বলল । তারপর তাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-ভাগনে মানে ?
-মানে তুমি জানো না ? শোন এই একটিং তুমি অন্য কারো সাথে করবা ঠিক আছে ? আমার সাথে না !

ফরিদ হাসান পাশেই ছিল । ছেলের দিকে তাকিয়ে
-ছাড় ওকে ! ছাড় বলছি ।
বাবার কথা শুনে ফয়েজ কলার ছেড়ে দিল ! আজিজুর রহমান বলল
-আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না । ভেতরে … কে ….। ?
ফরিদ হাসনা বলল
-ও আমার নাতি !

আজিজুর রহমান অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলো মুখের দিকে । ততক্ষনে বুকের ভেতরে একটা তোলপার শুরু হয়েছে । ফরিদ হাসানের নাতি মানে মানে জোবাইদার ছেলে ?
ঠিক সেই সময়ই আজিজুর রহমান জোবাইদাকে দেখতে পেল । গত ২৫ বছর যাকে একটা বারের জন্য দেখেন নি, তাকে সামনে দেখে কেবল বিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইলো । জোবাইদার পরনে এপ্রোনে । জোবাইদা হাসান দেশের নাম সার্জন এই খবর তার আছে কিন্তু তার যে একটা ছেলে আছে এটা তিনি জানতেন না !
জোবাইদা কয়েকটা মুহুর্ত আজিজুর রহমানের দিকে তাকালো । চোখে একটা অস্থিরতা দেখতে পেল সেখানে । সেই ২৫ বছর আগের অস্থিরতা ! তারপর অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে ঢুকে পরলো !

তখনই আজিজুর রহমান বুঝতে পারলো কেন ছেলে অর্থাৎ ছেলেটার চোখ তার কাছে এতো পরিচিত মনে হচ্ছিলো ! চোখ গুলো তার কাছে বড় পরিচিত মনে হচ্ছিলো কারন প্রতিদিন যখনই তিনি আয়না দেখেন তখনই এই চোখ তিনি দেখতে পান !

পরের পর্ব

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 45

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

5 Comments on “ষড়যন্ত্র”

  1. আমরা কি কখনো এই গল্পটার এন্ডিং আশা করতে পারি????

  2. ভাইয়া,এই গল্পের পরের পার্ট চাই

  3. কি একটা কাম করলেন ভাই, এখন দিনে দশবার করে আসা লাগবে নেক্সট পার্ট দিলেন কি না দেখার জন্য……

  4. ফারাজ প্রেসিডেন্ট আজিজুর রহমানের ছেলে এজন্য এতসব কিছু।
    আর অন্তত একটা পার্ট দিলে খুব খুব ভালো হতো।অসাধারণ ছিলো।

Comments are closed.