লকডাউনে প্রেম

oputanvir
4.5
(53)

সোফিয়ার মন আজকে সারা দিন খারাপ । কাল রাতে রাফির সাথে এমন বাজে রকমের ঝগড়া হয়েছে যে বলার মত না । কেবল মাত্র একে অন্যকে বলে নি সম্পর্ক শেষ হওয়ার কথা । তবে সোফিয়ার মনে হচ্ছে যেন এরপর আর ওদের সম্পর্ক ভাল হবে না । আর আন্তরিক হবে না আগের মত ।
ঝগড়ার শুরুটা সোফিয়াই করেছিলো । আজ থেকে লগ ডাউন শুরু হয়েছে । তাই কোন ভাবেই আর বাসা থেকে বের হওয়ার উপায় নেই । আবার কবে লকডাউন শেষ হবে তার কোন ঠিকানা ছিল না । তাই সোফিয়ার ইচ্ছে করছিলো রাফির সাথে একটু দেখা করতে । এই ইচ্ছে ওর জাগলো রাতের বেলা । অবশ্য গতকাল সকাল বেলা রাফি বলেছিলো বাইরে বের হতে । ওর বাসার কাছাকাছিই কোথাও আসতে । তখন সোফিয়া নিজেই রাজি হয় নি । বাসায় বাবা আছে বলে বের হয় নি । আর রাতের বেলা ও নিজ থেকেই বলছে আসতে । রাফি তখন জানালো যে তখন বাসা থেকে বের হতে পারবে না ।

কথাটা শুনেই সোফিয়ার কি যে হল নিজেই বলতে পারবে না । ওর কেবল মনে হল ও এতো করে অনুরোধ করছে আর সেটা রাফি শুনছে না । কেন শুনবে না ? এমন হবে সে ? একবার তো দেখাই করতে চেয়েছে । তাছাড়া ওর কাছে তো সাইকেল রয়েছে । চাইলেই সে আসতে পারতো বাড়ির সামনে । কিন্তু আসে নি । কেন আসে নি সে !

সোফিয়ার মাথায় আগুন ধরে গেল । সে রাফিকে বলল, না তা পারবে কেন ? ঐ সুমি বললে তো ঠিকই গিয়ে হাজির হতে !

এই লাইনটা সে কেন বলল সেটা সাফিয়া নিজেও জানে না । সুমির হচ্ছে রাফির ক্লাস মেট । এবং ওরা ভাল বন্ধুও বটে । এটাই সোফিয়ার সহ্য হয় না । যদিও জানে রাফির সাথে সুমির অন্য কোন কিছুই নেই । তারপরেও রাগ হলে মাথা ঠিক থাকে না কিছুতেই । কী বলতে কী বলে ফেলে সেটাও ঠিক থাকে না ।

লাইনটা শুনে কিছু সময় রাফি কোন কথা বলল না । তারপর বলল, কী বলবে তুমি ?
-যা বলেছি ঠিক বলেছি? কেন যেতে না ? তা তো যাবেই ।
-দেখো সোফি কথা বার্তা ভাল করে বল !
-হ্যা এখন তো আমিই কথা বার্তা ভাল করে বলবো । তাই না

এইভাবে কথার পিঠে কথা চলতে থাকলো । ঝগড়া বাড়তে থাকলো ।

সকালে ঘুম ভেঙ্গেই সোফিয়ার কেবল মনে হল দোষ আসলে ওরই ছিল । কী দরকার ছিল ওমন করে কথা বলার । শুরুটা তো সেই করেছে । সারাটা দুপুর বিকেল একই ভাবে কাটলো মন খারাপ করে । সন্ধ্যার কিছু আগ দিয়ে ওদের বাসার ইন্টারকম থেকে ফোন এসে হাজির । আশে পাশে কেউ ছিল না দেখে সোফিয়াই ধরলো ।
-আপু আপনাদের বাসায় খাবার ডেলিভারি এসেছে । পাঠিয়ে দিবো?
একটু ভাবলো সোফিয়া । সে তো খাবার অর্ডার দেয় নি । তাহলে কি ওর মা দিয়েছে ? ইদানীং ওর সন্ধ্যা বেলা নাস্তা বানানোর আগ্রহ দেখান না খুব একটা । নতুন একটা সিরিয়াল শুরু হয়েছে । সেটা দেখায় ব্যস্ত থাকেন । খাবার দাবার সব অনলাইনে অর্ডার দেওয়া হয় । সোফিয়া বলল, হ্যা পাঠিয়ে দেন !

ঠিক তিন মিনিট পরে কলিংবেল বেজে উঠলো । সোফিয়া দরজা খুলতেই একটা ছোট খাটো ধাক্কার মত খেল । ফুডপান্ডার টিশার্ট পরে রাফি দাড়িয়ে রয়েছে । হাতে একটা খাবারের বক্স । সোফিয়ার হঠাৎ চোখটা সিক্ত হয়ে এল । সেই সাথে নিজেকে বড় অপরাধী মনে হল । ইস এই লকডাউনের ভেতরেও রাফি ঠিকই চলে এসেছে ওর সাথে দেখা করার জন্য । আর কালকে ও কী বাজে ব্যবহারই না করলো ছেলেটার সাথে ।
-ম্যাম আপনার অর্ডার !
সোফিয়া একটু নত মুখে খাবারের প্যাকেটটা হাতে নিলো । সে ঠিক ঠিক জানে বক্সের ভেতরে কি আছে । এবং এটাও জানে ঠিক কোন রেস্টরেন্ট থেকে সেটা কেনা হয়েছে । ধানমন্ডির একটা নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টের পাস্তা সোফিয়ার বিশেষ পছন্দ ।
রাফি আবার বলল, ওকে ম্যাম ! আমার পেমেন্ট টা !
সোফিয়া বলল, পেমেন্ট?
-বারে এতো কষ্ট করে এলাম খাবার সরবারহ করতে । পেমেন্ট দিবেন না?

সোফিয়ার শরীর একটু যেন কেঁপে উঠলো । সে রাফির চোখের দিকে তাকিয়ে ঠিক ঠিক বুঝতে পারছে যে রাফি কিসের পেমেন্টের কথা বলছে । কিন্তু এইভাবে দরজার সামনে ? যদি কেউ চলে আসে !
একটু ভয় করলো সোফিয়ার । তারপরই মনে হল যা হয় হবে ! ছেলেটা এতো দুর থেকে এল ! এতো কিছু হওয়ার পরেও ওর জন্য এসেছে ।
আস্তে করে দরজাটা টেনে বাইরে বের হয়ে এল । সামনের ফ্লাটের দরজার দিকে তাকালো । এখন যে কেউ দরজা খুলে বের হয়ে আসলে দেখতে পাবে ওকে । আর দেরী করা ঠিক হবে না । সোফিয়া আরও একটু এগিয়ে একেবারে রাফির কাছেকাছি চলে এল । তারপর রাফির ঠোঁটে একটা গাঢ় চুমু খেল ।

-এবার যাও !
-এতো কম পেমেন্ট ?
-জি এটাই । আর না !
রাফি হাসলো । তারপর বলল, বুঝতে পারছি কাল আবার আসা লাগবে ! আসি !

এই বলে সে লিফটের দিকে পা বাড়াতে যাবে তখন সোফিয়ার কি হল ওর হাত চেপে ধরলো । তারপর ওকে জড়িয়ে ধরল আলত করে । জড়িয়ে ধরেই বলল, সাবধানে যেও ।
-আচ্ছা ।
-আর বাসায় গিয়েই ফোন দিবে । রাস্তায় কোথাও দাড়াবে না !
-আচ্ছা !
-আই লাভ ইউ !
-আই লাভ ইউ টু ।

রাফিকে লিফটের ভেতরে ঢুকতে দেখলো সে । এরপর ও বারান্দায় চলে এল গেট দিয়ে রাফিকে সাইকেল নিয়ে বের হতে দেখলো । যত সময় ওকে দেখা যায় বারান্দায় দাড়িয়েই থাকলো । সকাল থেকে যে মন খারাপের ভাব ছিল সেখানে একটা তীব্র ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করা শুরু করেছে !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.5 / 5. Vote count: 53

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “লকডাউনে প্রেম”

Comments are closed.