ফেইক বয়ফ্রেন্ড

4.8
(70)

হাসপাতালের নাম টা আমি আরেকবার পড়লাম । ধানমন্ডি এলাকার সব থেকে বড় হাসপাতাল । এর আগে আমি কোন দিন এতো বড় হাসপাতালে ঢুকি নি । একটু অবশ্য দ্বিধা কাজ করছিলো । কিন্তু সেই সাথে ইশানার কাছে যাওয়ার জন্যও একটা তাগিত অনুভব করছিলাম । মেয়েটা কেমন আছে কে জানে ? যদিও আমি যতদুর জানি যে এই রকমের কেস এই টাইপের প্রাইভেট হাসপাতালে হ্যান্ডেল করা হয় না । সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যালে । সুজন ঠিক মত খবর দিয়েছে তো ?

আমি রিসিপশনের দিকে এগিয়ে গেলাম । এই রাতের বেলা সেটা একটু ফাঁকাই বলা চলে । একটা লোক বসে ছিল । আমি সামনে দাড়াতেই বলল
-বলুন ! তবে এখন কিন্তু ভিজিং আওয়ার নেই ।
-আসলে আমি ইশানা নামের একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি ।
-ইশানা ? আপনাকে আগেই বলেছি এখন ভিজিটিং আওয়ার চলছে না । কালকে আসবেন । সকাল ৯ টা থেকে ১১ আর বিকেল ৪ টা থেকে ৬ টা । এখন কোন দেখা হবে না । আগামী কাল ।
একটু যেন বিরক্তই মনে হল লোকটা কে !

আমি প্রথমে এদিক ওদিক তাকালাম । কেউ আমাকে এখানে সাহায্য করবে না । এমন কি এমন কেউ নেইও পরিচিত যাকে আমি ফোন করতে পারি । এক ইশানা ছিল সেতো নিজেই এখানে ভর্তি হয়ে আছে । আমার ফোনের জবার সে দিতে পারবে না । আমি আরেকবার এগিয়ে গেলাম রিসিপশনের দিকে । বললাম

-আসলে আমি ঘন্টা খানেক আগে আসা একটা সুইসাইড এটেম্প কেসের কথা জানতে চাচ্ছি ।

দেখলাম লোকটার চেহারা মুহুর্তেই বদলে গেল ।
-ইশানা মানে ইশানা চৌধুরী ?
-জি ।
-আপনি কি হন ওনার ?
-সেটা কি বলা খুব জরুরী ?
-আপনার নাম কি তপু বা এরকম কিছু ?
-অপু !

এবার লোকটার চেহারা আগের থেকেও একটু বেশি ফ্যাঁকাসে হয়ে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না । আমি আসলে ঠিক চিনতে পারি নি ।
আমি খানিকটা দ্বিধা নিয়ে বললাম
-আমাকে কি আপনার চেনার কথা ?
-আমাকে খুব শক্ত ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে আপনি আসা মাত্রই যেন ইশানা ম্যামের কেবিনে পাঠিয়ে দেওয়া ।

এই কথা বলেই লোকটা একটা বেল বাজালো । একটা ছেলে একটু পরেই এসে হাজির । আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে দিয়ে লোকটা বলল
-ইনাকে জলদি ইশানা ম্যামের কেবিনে নিয়ে যাও । আর স্যার কি এখনও আছে ?
ছেলেটা বলল
-হ্যা এখনও আছে । একটু আগে পুলিশও এসেছে ।
-আচ্ছা যাও নিয়ে যাও ।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-প্লিজ কিছু মনে করবেন না । আপনি রাজুর সাথে যান ও আপনাকে কেবিনে নিয়ে যাবে ।

আমি ছেলেটার পেছন পেছন হাটতে লাগলাম । একটু যেন কেমন কেমন লাগতে লাগলো নিজের কাছে । নিজেকে একটু ভিআইপি ভিআইপিও লাগছিলো । আমি জানতাম ইশানারা অনেক বড় লোক তবে এই এতো বড় হাসপাতালেও ওদের এমন প্রভাব থাকতে পারে আমি ভাবি নি । কেবল ঐ রিসিপশনের চোখের দিকে তাকিয়েও আমি সেটা ঠিক বুঝতে পারছিলাম ।

আরও কিছু সময় হাটার পরেই ছেলেটা আমাকে একটা করিডোরের সামনে নিয়ে এল । আমি আরও একটু সামনে এগোতেই দেখলাম কয়েকজন পুলিশ অফিসারের সাথে একজন কোর্ট-টাই পরা মাঝ বয়সী লোক কথা বলছে চিৎকার করে ।

-সাফায়েত আই ওয়ান্ট দ্যাট বাস্টার্ড ডেড ।
পুলিশের পোশাক পরা অফিসারটি বলল
-আঙ্কেল একটু বোঝার চেষ্টা করুন । এভাবে…..
এটা শুনে যেন কোর্ট-টাই পরা লোকটা আরও বেশি চিৎকার করে উঠলো
-আমি কোন কথা শুনতে চাই না । যদি তুমি না পারো তাহলে আমাকে বল আমি অন্য কারো সাথে কথা বলি ।
-আমি সেটা বলি নি । তবে এভাবে এখনই যদি কিছু হয় তাহলে আপনার রেপুটেশনের উপরে একটা দাগ পড়বে ।
-নাথিং ইজ বিগার দ্যান মাই ডটার । আই জাস্ট ওয়ান্ট দ্যাট কার্লপ্রিট ডেড ।

আচ্ছা তাহলে উনি ইশানার বাবা । ইশানার কাছেও ওর বাবার কথা আমি বেশ কয়েকবার শুনেছি । খুব ব্যস্ত সেই সাথে খুব নাকি রাগী । তবে তিনি মেয়ে বলতে অজ্ঞান, তাই মেয়ের এই অবস্থা দেখে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না । আর কার্লপ্রিট বলতে কাকে বোঝাচ্ছে সেটাও আমার বুঝতে খুব বেশি কষ্ট হল না । পুলিশ অফিসার টা বলল

-আপনি একটু শান্ত হোন । প্লিজ একটু শান্ত হোন । আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি ঐ শয়তানটা আর কোন দিন নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে না । হাত দিয়ে কোন দিন কিছু খেতেও পারবে না । আই প্রমিজ ইউ দ্যাট । পরে আপনি ওকে নিয়ে যা ইচ্ছে করবেন । কিন্তু কদিন যাক তারপর ।
দেখলাম ইশানার বাবা যেন একটু শান্ত হল ।
-মেক ইট কুইক !

পুলিশ গুলো আর দাড়ালো না, চলে গেল । ইশার বাবা এবার আমার দিকে তাকালো । যদিও আমার উপস্থিতি তিনি আগেই বুঝতে পেরেছেন বলেই আমার মনে হল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ইউ মাস্ট বি অপু !
আমি কিছু না বলে কেবল মাথা ঝাকালাম ।
-আসো ! ইশানা তোমার কথা বলছিলো ।

আমি আরও একটু এগিয়ে গেলাম । অনুভব করলাম আমার বুকের ভেতরে কেমন একটা ভয়ভয় করতে লাগলো । একটু আগেই এই ভদ্রলোক রাফিকে মেরে ফেলার জন্য বলছিলো । তাও আবার একজন পুলিশকে । এই লোক কোন সাধারণ লোক হতে পারে না । কেন রিসিপশনের লোকটা ঐ রকম ফ্যাকশে হয়ে গেছিলো সেটা বুঝতে আমার মোটেই কষ্ট হল না ।

আমি ইশানার বাবার সাথেই কেবিনে ঢুকলাম । ওকে নাকি একটু আগেই কেবিনে আনা হয়েছে । তবুও সারাক্ষণ পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে । ভেতরে একজন নার্সকেও দেখতে পেলাম ইশানার । দরজার কাছেই দাড়িয়ে ছিল ।
ইশানার বাবার কাছ থেকে আরও জানতে পারলাম যে ওর স্টোমার্ক ওয়াশ করার সময় বেশ কয়েকবার নাকি ও আমার নাম নিয়েছে । সেখান থেকেই আমার খোজ পাঠানো হয়েছে । যেন চোখ খোলার সাথে সাথে ও আমাকে দেখতে পায় !

সাদা ধরধবে একটা রুমে ঢুকলাম । তাকিয়ে দেখি ঠিক রুমটার মাঝখানে একটা বেড রাখা রয়েছে । সব কিছু সাদা । আরও কিছু যন্ত্রপাতি । সবই সাদা । মনে হল যে আমি কোন হাসপাতালে নয় বরং কোন হোটেল রুমে চলে এসেছি । আমি সাদা বেডটার দিকে এগিয়ে গেলাম । সেখানে একটা সাদা চাদরের ভেতরে ইশানা শুয়ে আছে । ওকে এর আগেও আমি অনেক বার দেখেছি কিন্তু এতোটা নিঃপাপ, আর কোমল আমার আগে মনে হয়নি । আমি কয়েক মুহুর্ত যেন তাকিয়েই রইলাম ইশানার দিকে । যখন সব কিছু ভুলে আমি ইশানার দিকে তাকিয়ে আছি তখন ইশানার বাবা আমার কাধে হাত রেখে বলল
-তুমি এখানে একটু থাকো । ওর জ্ঞান ফিরে এলে তোমাকে দেখলে ওর ভাল লাগবে ।

যদিও অনুরোধ করলো তবে আমার কাছে কেন জানি সেটা অনেকটাই আদেশের মত শোনালো ।
-আর কোন কিছুর দরকার হলে কেবল এই বেল টা বাজাবে ।
বেডের কাছে একটা লাল সুইট দেখালো ।
-কিছু খেতে মন চাইলেও । আমার মনে হয় তুমি রাতের খাওয়া খাও নি । তার আগেই চলে এসেছো, তাই না ?

আসলেই আমি রাতের খাওয়ার সময় পায়নি । রাত জেগে থাকি বলে রাতের খাওয়া খেতে একটু দেরিই হয় আমার । আজকে খাওয়া হয় নি ।

-আমি ব্যবস্থা করছি ।

এই বলে ইশানার বাবা দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল, সাথে করে নার্সকেও নিয়ে গেল । আমি ইশানার পাশের একটা টুলে বসলাম । মেয়েটা এর আগেও আমার খুব বেশি অন্য রকম লাগতো আজকে কেন জানি একটু বেশি আপন মনে হল । অচেতন অবস্থায় মেয়েটা আমার নাম নিয়েছে ।
কেন ?
তাহলে কি সত্যি সত্যিই ……..
আই ডোন্ট নো । আমি আসলেই জানি না ।


ইশানার সাথে আমি যেদিন ফেসবুকে ইন এ রিলেশনশীপ দিলাম তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমার বন্ধুরা সেটাকে খুব ভাল ভাবে নেয় নি । ভাল ভাবে নিবে না এটা আমি খুব ভাল করেই জানতাম । নেওয়ার কথা না । সুজন আমার দিকে কঠিন চোখ তাকিয়ে বলল
-তুমি কি মনে করে ঐ মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ালি বলতো ? তুই জানিস না ঐ মেয়েটা কেমন ? পুরো ক্যাম্পাস জানে আর তুই জানিস না ?

আমি কিছু বললাম না । কারণ আমার কিছু বলার ছিল না । আসলেই পুরো ক্লাসই এমন কি বলতে গেলে পুরো ক্যাম্পাসই ইশানার সম্পর্কে খুব ভাল করেই জানে । অন্তত আমার মত গোবেচারা টাইপের ছেলে যে ওর সাথে সম্পর্কে যেতে পারে এটা কেউ ভাবতেও পারে না । সুজন আবার বলল
-তোকে নিয়ে কোন ট্রিকস খেলছে । সাবধানে থাকিস বলে দিলাম ।
-আচ্ছা ঠিক চিন্তা করিস না । ব্যাপারটা যে রকম দেখাচ্ছে আসলে সেরকম না ।

আসলেই কিন্তু ব্যাপারটা সেই রকম না । ইশানা আমার ক্লাসে পড়ে না । এইবারের সেমিস্টারের আমাদের একটা ননক্রেডিট সাবজেক্ট আছে । এই ক্লাস টা হয় কমবাইন্ড আকারে । ইশানাদের সাথে । কোর্চ টিচার আসলে সময় বাঁচানোর জন্য এমনটা করেছে । কিছু বলার নেই তাই আমরাও মেনে নিয়েছি ।

ক্লাস করতে গিয়ে দেখি ইশানাদের সাথে ক্লাস । যদিও মেয়েটাকে আমি আগে থেকেই চিনি । কেবল আমি কেন সবাই চিনে । তবে এইবার যেন আরও একটু ভাল করে চিনতে পারলাম । এতো কাছ থেকে । এবং কয়েকদিন পরে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম মেয়েটাও আমাকে খানিকটা লক্ষ্য করছে । কেন করছে আমি জানি না অবশ্য । আমি সারাটা সময় ক্লাসের শেষের দিকেই বসে থাকতাম । স্যার কি বলতো সেটা শোনার চেষ্টা করতাম না কোন দিন । বাসায় গিয়ে নিজে নিজে পড়তাম ।

যেদিন প্রথম ইশানার সাথে কথা হল তার পরের দিন আমাদের একটা ইনকোর্স পরীক্ষা ছিল । আমি ক্লাস থেকে থেকে সব সময়ই একটু শেষের দিকে বের হই । সবাই বের হওয়ার পরেই । সেদিন তখনও বের হইনি । কেবল বের হতে যাবো তখনই মেয়েটা আমাকে ডাক দিল !
-অপু !
আমি একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । এই মেয়ে কোন ভাবেই আমাকে ডাক দেওয়ার কথা না । শুনেছি মেয়েরা পরীক্ষার আগে ভাল ছাত্রদের আগে পিচে ঘোরাফেরা করে । আমি অত ভাল ছাত্রও নই অবশ্য । আমি বললাম
-আমি ?
-হুম !
আমি আবারও বেঞ্চের উপরে বসে পড়লাম । তারপর আমার কাছে এসে আমার সামনের বেঞ্চে এসে বসলো । বলল
-তুমি ছাড়া আর কারো নাম তো অপু না ।
-ও । আমার ঠিক জানা ছিল না । বল কি দরকার ?
-আসলে কালতো এক্সাম । আমার না কিছুই পড়া হয় নি । ক্যান ইউ হেল্প মি ?
-হেল্প ?

আমি ঠিক মত বুঝলাম না এই মেয়ে আমার কাছে কি সাহায্য চাচ্ছে । আমি আসলে অন্য ছাত্রদের সাহায্য করার মত ছাত্রও নই । ইশানা বলল
-হ্যা । তুমি আমি শুনেছি তুমি টপিক গুলো বেশ সহজ করে পড় । আমাকে নোট গুলো দেবে ?

এই কথা সত্য যে আমি নিজে যা পড়ি তা লিখে রাখি । তবে সেগুলো কোন ভাবেই নোট বলা যাবে না ।
-আমি তো নোট করি না । কেবল যা পড়ি সেগুলো লিখি । কারণ না লিখলে আমার ঠিক মনে থাকে না ।
-ঐ তো ঐ গুলোই । দেবে প্লিজ ?

ছেলেদের সব থেকে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সে কখনই সামনে দাড়ানো একটা মেয়ের অনুরোধ চট করেই ফেলে দিতে পারে না । মেয়েটা যেমনই হোক না কেন, আর তার উপরে মেয়ে যদি সুন্দরী হয় তাহলে তো কথাই নেই । ইশানার নামে যত কথাই চলতে থাকুক না কেন মেয়েটা যে সুন্দরী সেটা কোন ভাবেই অস্বীকার করা যাবে না । আমি রাজি হয়ে গেলাম । তবে বললাম যে এখন তো কাছে নেই নিতে হলে আমার সাথে আমার বাসায় যেতে হবে ।

ইশানা নিজে থেকেই আমার ফোন নাম্বার নিল । তারপর বলল আজ বিকেলেই সে আমার বাসায় আসবে । বিকেল বেলা আমাদের দেখা হল । সে সব গুলো কাগজ ফটোকপি করে নেওয়ার সাথে সাথে আমরা একসাথে বসে চাও খেলাম । আসলে তখনও আমার মাথায় ঠিক আসছে না যে এতো মানুষ থাকতে ইশানা আমার কাছ থেকে নোট কেন নিবে !


আসল সত্য আরও কয়েকদিন পরে টের পেলাম । আমাকে ফোন দিয়ে একটা অদ্ভুত কাজের জন্য অনুরোধ করলো ! ওর বয়ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য বলল তবে সেটা মিথ্যা-মিথ্যি ।

আমি যখন কিছু বুঝলাম না তখন ইশানা বলল
-আসলে আমার একজন বয়ফ্রেন্ড ছিল । কিন্তু ওর স্বাভাব কদিন থেকেই আমার কাছে ভাল লাগছে না । আমি ওর সাথে ব্রেকআপের চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু ও কিছুতেই সেটা হতে দিবে না । ওর কথা হচ্ছে যদি আমি নতুন কারোর সাথে ইনভল্ভ হই তাহলেই সে সেটা মেনে নিবে কিন্তু যদি আমি একা থাকি তাহলে তার সাথে সম্পর্ক রাখতেই হবে । এই জন্য । প্লিজ হেল্প মি !

-ও আচ্ছা তাহলে এই জন্য তুমি আমার সাথে এই কদিন মিশছো ?

দেখলাম ইশানা কথার জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলো । একবার মনে হল না করে দেই কেন জানি না করলাম না । পুরো কলেজ ভার্সিটি জীবনে আমার কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল না । তার মানে এই না যে আমি কাউকে পছন্দ করতাম না কিন্তু কাউকে কোন দিন সাহস করে বলতে পারি নি । কেন জানি মিথ্যা-মিথ্যি হলেও একজন গার্লফ্রেন্ড হবে তাও আবার ইশানার মত একজন এই ব্যাপার টা আমার কাছে মোটেই খারাপ লাগলো না । বললাম
-আচ্ছা ঠিক এতে যদি তোমার উপরকার হয় তাহলে তাই ।
-থ্যাঙ্কিউ ! তোমাকে আসলেই অনেক ধন্যবাদ।

ইশানা এসে আমার হাত ধরলো । ওর মুখের হাসিটা কেন জানি আমার কাছে মেকি মনে হল না । মনে হল ও আসলেই খুশি হয়েছে যে আমি ওকে সাহায্য করতে রাজি হয়েছি ।


ইশানার দিকে কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম ঠিক নিজের মনের কাছে মনে নেই । কেবল একটা সময় ধরে আমি ওর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়েই আছি । কোন সময় জ্ঞান আমার নেই । আজকে ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময়ও ওর সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু এমন অবস্থায় কোন দিন ওকে দেখি নি, এভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় ।

শিশু যেমন চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকে ঠিক তেমনি মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে । আমার কেবল তাকিয়ে থাকতেই মন চাইলো । কেন জানি ভাল লাগছিলো ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে । এভাবে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম আমি নিজেই জানি না । আমার চেয়ে থাকাটাতে একটু ব্যঘাত ঘটলো । কারন ইশানা একটু নড়ে উঠলো । আমি ওর বাঁ দিকে বসে ছিলাম । ওর নড়াচড়াতে ওর বাঁ হাত টা চাদরের ভেতর থেকে বের হয়ে এল । ওখানে একটা স্যালাইনের সুই লাগানো রয়েছে । আর ও একটু নড়ে আবার ডান দিকে একটু কাত হয়ে শুলো ।

এখন আমি এখন যেখানে বসে আছি যেখান থেকে ওর চেহারাটা ঠিক মত দেখা যাচ্ছে না । আমাকে এখন আগের মত ওর চেহারার দিকে তাকাতে ডান দিকে বসতে হবে । চাদর থেকে বের হওয়া হাত টা আমি আবারও চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়ে আমি আমার টুলটা নিয়ে আবারও ডান দিকে এগিয়ে গেলাম ।

আগের বার আমি একটু দুরে বসলেও এবার একদম বেডের কাছে নিয়ে গিয়ে বসলাম । এতো কাছে যে চাইলেই আমি ওখান থেকে বসেই ওর কপালে কিংবা ঠোটে চুমু খেতে পারি ।
চুমু !!
কি ভাবছি এসব ?
আমি আমার ফেইক গার্লফ্রেন্ড কে এভাবে চুমু খাওয়া কি ঠিক হবে ?
কেন হবে না ?
ওতো নিজেও আমাকে আমাকে চুমু খেয়েছে !
তাহলে ?

আমি ইশানার ডান হাতটা ধরলাম । একটু যেন বেশি গরম মনে হল । একটু কি জ্বর এসেছে ? অবশ্য আমার শরীর সব সময়ই একটু ঠান্ডা থাকে । আমি সবার শরীরই একটু বেশি গরম মনে হয় ! আস্তে আস্তে ওর নরম হাতটাতে আমার হাত ঘষতে লাগলাম ।

চুমু কি খাবো ?
না থাক !
দরকার নেই ।

অন্য কিছু ভাবা যাক । আচ্ছা ইশানা যখন অজ্ঞান ছিল তখন নাকি আমার নাম নিয়েছে । মেয়েটা কেন আমার নাম নিবে ? আমি এখনও এই ব্যাপারটার অর্থ বের করতে পারি নি । ইশানা পরিস্কার ভাবেই বলেছিল কেবল ওকে সাহায্য করার জন্য আমাকে ওর ফেইক বয়ফ্রেন্ড হওয়া লাগে । এর বেশি কিছু না । অবশ্য এই গত কয়েকদিনে ইশানা সব থেকে বেশি আমার সাথেই সময় কাটিয়েছে । আর সত্যি সত্যি বলতে কি এই সময়টা আমার একবারও মনে হয় নি ইশানা অভিনয় করছে । আর মানুষ যার কথা সব সময় ভাবে অবচেতন মন সব সময় তাকেই কাছে পেতে চায় । এই জন্যই কি ও আমার নাম নিয়েছিল ?

আমি ছোট্ট করে ওর কপালে একটা চুম খেলাম । তারপর আবারও বসে পড়লাম টুলে । মনে মনে ঠিক করে ফেললাম যে যতক্ষণ মেয়েটা চোখ না খুলবে ততক্ষন আমি ওর সামনে থেকে যাবো না ।

-স্যার ডিনার !

পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই নার্স টা যে ইশানার বাবার সাথে বের হয়ে গিয়েছিল । একটা বড় চার কোনা কাগজের ওয়ানটাইম প্লেট ধরে আছে । সেখানে একটা বেশ বড় বার্গার আর একটা চিকেন ফ্রাইড রাইসের বাটি । তার উপরে আবার একটা বড় চিকেন লেগ-পিচ । পাশে কোকের বোতল রাখা ।

-এতো কিছু ? এতো কে খাবে ?
-স্যার পাঠালো !
-আচ্ছা আপনি রাখুন ওখানে । আমি খেয়ে নিব । আর আপনি কি এখানে থাকবেন এখন ?
-আমার টিউটি এখানে তবে আপনি না চাইলে আমি থাকবো না । কাছেই আমাদের রেস্ট রুম । আমি ওখানে অপেক্ষা করতে পারি । কেবল ঘন্টা খানেক পরপর চেক করে যাবো !

নার্সের ব্যবহার দেখে আমি আবারও একটু অবাক হলাম । নার্স এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমিই এই হাসপাতালের মালিক কিংবা মালিকের ছেলে । আমাকে এতো সম্মান দিয়ে কথা বলছে কেন কে জানে !
আমি বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে আপনি ওখানে গিয়েই অপেক্ষা করুন । দরকার হলে আমি আপনাকে ডাক দিব ।

নার্স আর কিছু না বলে প্লেট সামনের একটা টেবিলের উপরে রেখে দিয়ে চলে গেল । আমি আবারও ইশানর দিকে তাকিয়ে রইলাম । নিজের কাছেই বুঝতে পারছি না মেয়েটার দিকে তাকাতে এতো ভাল কেন লাগছে ।


যেদিন আমি ইশানার সাথে রিলেশনশীপ স্টাটাস দিলাম ঠিক সেদিনের পরদিনই ও আমার ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে হাজির । আমি তখন মাত্র সবে ক্লাস শেষ করে বের হয়েছি । বাইরে এসে দেখি ইশানা দাড়িয়ে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । আমি আসলে এখানে ওকে এভাবে আশা করি নি ।

ইশানা সোজা আমার কাছে এসে আমার হাত ধরলো সবার সামনেই । আমার সাথের বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে দেখি ওরা আমার দিকে কেমন আড় চোখে তাকিয়ে আছে । আমাকে আর বেশি সুযোগ না দিয়ে ইশানা আমাকে প্রায় টানতে টানতেই নিয়ে গেল । রাস্তা দিয়ে যখন হাট ছিলাম তখন অনুভব করতে পারছিলাম যে সবার চোখ আমাদের দিকে । ইশানাকে সবাই মোটামুটি চেনে তার সাথে আমি হাটছি তার উপর আবার হাত ধরে ।

ইশানার অবশ্য এসবের দিকে কোন লক্ষ্য নেই । সে আমার সাথে আপন মনেই কথা বলে যাচ্ছে । আমি একটু অস্বস্থি নিয়ে হাটছি ওর পাশে । তবে সত্যি কথা বলতে কি যে আমার যে খারাপ লাগছে তা কিন্তু না, বরং আমার যেন একটু ভালই লাগছিলো । অস্বস্থিকর কিন্তু ভাল লাগার অনুভুতি ।

আমাকে নিয়ে ওকে ক্যাম্পাসের একটা জাগয়া বসে পড়লো । এখানে স্বাধারনত কাপলরা বসে গল্প । আমি কত দেখেছি আর মনে মনে আফসোস করেছি যে নিজে কি কোন দিন এখানে বসে গল্প করতে পারবো কারো সাথে । আর আজকে আমি বসে বসে গল্প করছি ইশানার সাথে ।

আমি ইশানাকে বললাম
-তুমি এটা কি করলে ? এভাবে না আসলও কিন্তু হত ।
ইশানা বলল
-শুনো বয়ফ্রেন্ড, আমি যা করবো বাধা দিবা না ঠিক আছে । মনে রেখো আমি এখন তোমার প্রেমিকা ।

এই বলে বেশ হাসতে লাগলো । আমি ওর হাসির দিকে তাকিয়ে রইলাম । সেদিন অনেক টা সময় বসে রইলাম ওর সাথে । সময় টা কিন্তু মোটেই খারাপ কাটলো না । আমি বরং খুশিই হলাম ওর সাথে থেকে । যখন উঠবো তখন ইশানা বলল
-আমাকে বাসায় পৌছে দিয়া আসবা ?
-কেন গাড়ি ?
-আজকে গাড়িতে যাবো না ?
-তাহলে ?
-তোমার সাথে রিক্সায় যাবো । নিয়ে যেতে হবে । আমি কোন কথা শুনবো না । শুনবো না । শুনবো না !

এরপর এমন ভাবে আমার কাছে আবদর করতে লাগলো যে আমি অবাক হয়ে গেলাম । মিথ্যা হলেও আমার এই অনুভুতিটা মোটেই খারাপ লাগলো না ।

ওকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম । প্রথম বারের মত এমন কারো সাথে রিক্সায় উঠলাম । ইশানাকে আসলেই আমার কাছে একটু অন্য রকম লাগছিলো । মেয়েটা যে অভিনয় করছে এটা আমার কাছে মোটেই মনে হল না । আমার কাছে সব কিছুই যেন অন্য রকম লাগছিল । আর এখন তো অভিনয় করার দরকার নেই । কারন আমাদের আসেপাশে কোন পরিচিত মানুষও নেই । আমি বুঝতে পারছিলাম না । তবে কিছু বলতেও পারছিলাম না । আমি নিজেই জানি না কেন ?

একটা সময় ইশানা আমাকে বলল
-এই রিক্সার হুড তুলো
-কেন ? রোদ নেই তো । সমস্যা কি ?
-আরে বাবা হুড তুলো । আমার বাসা সামনে।
-ও আচ্ছা ।
আমি হুড তুলে দিলাম । কিন্তু তখনও আমার ঢুকছে না বাসা সামনে তো হুড তুলতে কেন হবে ?

ঠিক তখনই একটা ইশানা কাজ টা করলো । কেউ যদি আমার মাথায় জোরে করে একটা বাড়ি মারতো সেটাতেও আমি এতো বড় ধাক্কা খেতাম না । ইশানা হুড তোলার সাথে সাথেই ইশানা আমার ঠোটে চুম খেলো । ঝট করে করে না বরং লম্বা একটা চুম্বন !

তারপর নিজের ঠোটটা সরিয়ে রিক্সাওয়ালাকে থামতে বলল । আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নেমে গেল । দৌড়েই গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল । আমি তখনও ঠিক বুঝতে পারি নি আসলে কি হল আর ইশানা আসলে করলো ?
আর সব থেকে বড় কথা কেন করলো ?

বাসায় আসার পরেও আমার মাথা ভেতরে এই জিনিস ঐটাই ঘুরতে লাগলো । অন্য কোন কিছু আনতেই পারছিলাম না । ওকে যে ফোন দিয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করবো সেটাও কেন জানি অস্বস্থির জন্য করতে পারছিলাম না । আমি কিভাবে একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করবো যে আমাকে সে কেন চুমু খেলো । ভেবেছিলাম সেটাই মনে হয় শেষ । কিন্তু শেষ না ।

তারপর থেকে প্রতিটা দিন যখন আমার সাথে ইশানার দেখা হল প্রতিটা দিন যাওয়ার সময় ও আমাকে ঠিক কোন না কোন ভাবে চুমু খেতোই । তবে কেবল যে চুমই খেতো সেটা না, আমার সাথে ও অনেক কথা বলতো । অনেক বেশি । আমার কেবল মনে হত যেন আমাকে পেয়ে জীবনের সব না বলা কথা ও বলে ফেলছে । ক্লাস ক্যাম্পাস ছাড়াও আমরা বাইরে দেখা করতে লাগলাম । ঘন্টার পর ঘন্টা এক সাথে সময় কাটাতে শুরু করলাম ।একদিন নিজ থেকেই নিজের কথা, নিজের পরিবারের কথা গুলোও আমাকে বললো ।

ছোট বেলা থেকেই ও খানিকটা একা একা মানুষ হয়েছে । বাবার আদরের মেয়ে হলেও বাবার বেশির ভাগ সময়ই ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকতো । এই কারনেই নাকি ও মা ওদেরকে রেখে অন্য কারো সাথে চলে গিয়েছিল । কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক সেটা বলার মত কেউ ছিল না । জীবনে অনেক ভুল করেছে এখনও করছে । বাবা সব কিছুতেই হ্যা বলতো বিধায় ওর জন্য যেন সব কিছু আরও সহজ হয়ে গেল অন্য পথা যাওয়াটা । এভাবেই অনেকটা উৎশৃঙ্খল জীবনের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে গিয়েছিলো ও । মাঝে মাঝে ওর খুব বেশি ওখান থেকে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারে না । কারো হাত ধরে ফিরতে ইচ্ছে করে ওর ।

আমার মনে হল যেন বলতে চাইলো সেই হাতটা যেন আমার হয় । ও আসলে কেবল ফেইক বয়ফ্রেন্ড হওয়ার জন্যই আমার সাথে এরকম করে নি । এর ভেতরে আরও অন্য কিছু আছে ।

এসব রাতের ভাবতাম প্রায়ই । আজকেও ভাবছিলাম আর তখনই ঘটনাটা ঘটলো । সুজন ফোন করে জানালো যে ইশানর নাকি একটা ভিডিও বের হয়ে হয়েছে অনলাইনে । ওর আগের বয়ফ্রেন্ড রাফি নাকি ছেড়েছে । আমার সাথে সম্পর্কে যাওয়ার প্রতিহিংসার কারনে এটা ছেড়েছে ।

আমার কেন জানি মন খারাপ হল । আমাদের মাঝে অনেক কথা হলেও ইশানা কোন দিন আমাকে এসব কথা বলে নি । জানতাম এখনকার প্রেম ভালবাসা মানে অনেকটাই এরকম হয়ে গেছে কিন্তু তাই বলে ভিডিও করবে এসবে । নিজের ইমোশনকে আবারও লাগাম দেওয়ার চেষ্টা করলাম । সাথে সাথে এও ঠিক করলাম যে আজকের পর থেকে আর ইশানার সাথে আর দেখা করবো না । ওর সাথে কোন কথা বলবো না ।

ফেসবুকে গিয়ে রিলেশনশীপ স্টাটাসটা বদলাবো ঠিক তখন আবারও সুজন ফোন করলো । এবার ফোন করে ও যা বলল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । ইশানা নাকি এই ভিডিও বের হওয়ার ঘটনায় খুব আপসেট হয়ে পড়ে । তারপরই নাকি একগাদা ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুইসাইড এটেম্ট করে ।

আমি এটা শুনে একেবারে থ হয়ে যাই । ইশানা এমন একটা কাজ করতে পারে ভাবতেো পারি নি । একটু আগে যেটা নিয়ে আমি ভাবছিলাম সেটা কোথায় হারিয়ে খুজেও পেলাম না । আমি তখনই ইশানার জন্য হাসপাতালে ছুতে দিলাম ।


এর মাঝে সিস্টার এসে দুবার দেখে গেছে ইশানাকে । একবার ডাক্তারও এসেছে । তবে ইশানার বাবা আর আসে নি । আশ্চর্য ভদ্রলোক । ইশানা ঠিকই বলেছিল । ও বাবা সব সময় ব্যস্ত । তাই বলে এখনও ব্যস্ত থাকবে !!

আমার একটু ক্ষুধা অনুভব হলে মনে পড়লো আসলে আমার কিছু খাওয়া হয় নি । আমি এই সারাটা সময় ইশানার হাত ধরেই বসে ছিলাম । এখন মনে হল একটু কিছু খাওয়া দরকার । আমি টুল থেকে খাবার রাখা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম । লেগ-পিচ টাতে একটা কামড় দিয়ে আবার যখন ইশানার বেডের দিকে ফিরেছে দেখি ও চোখ মেলে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।

কখন চোখ খুললো এই মেয়ে !

আমি আবারও তাড়াতাড়ি ওর কাছে ফিরে গেলাম । আমি টুলে বসতেই ইশানা বলল
-আমার হাত ছাড়লে কেন ?
-তুমি জেগে ছিলে এতোক্ষন ?
-হাত ধর আগে । ধর বলছি !

আমি ওর হাত ধরে বসলাম ওর পাশে । ইশানা বলল
-চোখ বন্ধ করার আগে ভেবেছিলাম আর কোন দিন তোমাকে দেখতে পাবো না । তুমি এসেছো……

ওর মুখে হাসির সাথে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো । অদ্ভুত একটা দৃশ্য । সম্ভবত মেয়েদের এই অবস্থায় দেখতে সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে । অন্য রকম সুন্দর ! আমি তাকিয়ে রইলাম কেবল । তারপর টিস্যু দিয়ে ওর চোখ মুছতে মুছতে বললাম
-কাঁদছো কেন ? আমি রয়েছি তোমার পাশে । এই দেখো তোমার পাশে আছি ।
ইশানা আরও কিছুটা সময় নিরবে চোখের পানি ফেলল । আমি বললাম
-চিকেন খাবা ? টেস্টি আছে কিন্তু ?
-আমাদের হাসপাতালের চিকেন টা বাজে ।
-তোমাদের হাসপাতাল ?
-হু । এটার মালিক বাবা !

ও আচ্ছা এবার বুঝতে পারলাম আরও ভাল করে । আমাকে কেন এতো বেশি সম্মান দেওয়া হচ্ছিলো । মালিকের মেয়ের বন্ধু বলে কথা । ইশানা একটু পর ক্ষীণ গলায় বলল
-ডিড ইউ সি দ্যাট ?
-কি ?

কি বলার পর বুঝলাম ও আসলে কি দেখার কথা বলছে । আমি বললাম
-না ! দেখি নি ।
ওর চোখ দিয়ে পানি বের হতে দেখে আমি আবারো ওর চোখ মুছে দিলাম । বললাম
-প্লিজ কেঁদো না । আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না । কোথাও না ।
-আমি সত্যি ইচ্ছে করে করি নি । বিশ্বাস কর । আমি ঐ দিন খুব বেশি ড্রাঙ্ক ছিলাম । ও যে এরকম…..
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে । বলতে হবে না । আমি শুনতে চাচ্ছি না তো….
-না, শুনতে হবে । আমি কোন দিন এরকম কিছু করি নি । বিশ্বাস কর । জানি না মানুষ আমাকে নিয়ে কি বলে তবে আমি কারো কাছে এরকম কিছু করি নি । ঐদিনও ও কিছু করতে চেয়েছিল কিন্তু পারে নি । আমি প্রটেস্ট করেছি । সত্যি বলছি …….

আমি ওর মুখের কাছে আমার হাত নিয়ে নিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিলাম । তারপর বললাম
-তোমাকে কৈফৎ দিতে হবে না । তুমি বলেছো এতেই চলবে ……
-অপু ……
-হুম
-আই লাভ ইউ।

এতো মোলায়েম স্বরে কেউ কাউকে ভালবাসি বলতে পারে আমি জানতাম না । ওর চোখ দিয়ে তখনও পানি পড়ছে । ইশানা আবারও বলল
-আই লাভ ইউ, ইন রিয়েল ।
-আই নো ! এখন কান্না বন্ধ কর । তোমার বাবা এসে যদি দেখে তার মেয়েকে আমি কাঁদাচ্ছি তাহলে আমার খবরই আছে ।

আমার এই কথা শুনে ইশানা কান্না বন্ধ করে হাসলো একটু । তারপর বলল
-তোমার কি মনে হয় আব্বু এসব দেখছে না ?

আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম । কি বলছে এই মেয়ে ! উনি কিভাবে দেখবে এসব ! আমি বললাম
-কিভাবে দেখবে ?
-আমাদের হাসপাতালের ভিআইপি ক্যাবিন গুলোতে সব সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে । যেন কোন প্রকার কোন দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে । আমি নিশ্চিত জানি আব্ব যেহেতু এখানে নেই আব্বু ঠিক ঠিক সিসিটিভি ফুটেজ রুমে আছে । আমাদের কে দেখছে ।

খাইছে আমারে । আমি যে ইশানাকে চুমু খেয়েছি এসবও দেখেছে ।

ইশানা বলল
-তোমার মুখ এমন কেন করছো ?
-তোমাকে আমি চুমু খেয়েছিলাম একবার । তোমার বাবা নিশ্চয়ই দেখেছে ।
ইশানা আবারও হেসে ফেলল ফিক করে । এবার আর ওর চোখ দিয়ে পানি পড়লো না অবশ্য ।
-কপালে ?
-হুম !
-ওকে এবার ঠোটে খাও ।
-কোন ভাবেই না । তোমার বাবা দেখছে । আমি কোন ভাবেই এই কাজ করতে পারবো না ।

তখনই ইশানা ওর পাশে রাখা বেড সুইচ টা চেপে দিল । প্রায় সাথে সাথেই একজন নার্স ছুটে এল ঘরে । আমার কেন জানি মনে নার্স রুমের বাইরেই দাড়িয়ে ছিল ।

-ইয়েস ম্যাম !
-এই রুমের ক্যামেরা বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন ।
-কিন্তু স্যার….
-কোন কথা শুনতে চাই না । বন্ধ করতে বলেছি করেন ।

নার্সটা যেন অনিচ্ছা স্বত্তেও দেওয়ালের একটা সুইচ টিপ দিল । তারপর রুম ছেড়ে চলে গেল । ইশানা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এবার !
-বন্ধ হয়েছে ?
-হুম ।
-এখনই ?
-ইয়াপ এখনই । প্রতিবার কেবল আমি আগে চুমু খাই । আজকে তুমি ….

এই একটা দিনে কত কিছু হয়ে গেল । রাত থেকে এখন প্রায় ভোর হতে চলল । পুরোটা সময় আমি ইশানার পাশে ছিলাম । ভাবছিলাম ওর যখন জ্ঞান ফিরবে তখন আমি কি বলবো । কত কিছু ভালছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব কিছু এসে থামলো চুমোতে ।

ইশানা তখনও আমার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে আছে । ইশার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে না আজকে ওর উপর দিকে এতো বড় একটা ঝড় গিয়েছে ! শুয়ে থাকা অবস্থায় ওকে যেমন নিঃপাপ একটা বাচ্চার মত মনে হচ্ছে এখনও ঠিক সেই রকমই মনে হচ্ছে । কেবল মনে হচ্ছে সেই বাচ্চাটা একটু যেন বড় হয়ে গেছে । আর একটু একটু দুষ্টুমি করতে শিখেছে ।

আমি ওর দিকে আর একটু এগিয়ে গেলাম । ইশানা গভীর চোখে আমার দিকে তখনও তাকিয়েই আছে ।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 70

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →