ডাইনী বউ

4.8
(66)

আমি সাধারণত রাস্তায় চলার সময় মানুষের সাথে ঠিকঠাক কথা বলি না । অনেকে আছে না পাশের সিটের মানুষের সাথে আগ বাড়িয়ে দুনিয়ার কত গল্প করে ফেলে । আমার মনে হয় এতো ফাউ প্যাঁচালের কোন দরকার কি শুনি ! তুই বেটা কে না কে তোর জীবনে কি হয়েছে সেটা শুনে আমি কী করবো?

আমি এই জন্য বাসে কিংবা ট্রেনে উঠেই আগে হয় বই নিয়ে বসি নয়তো কানে হেডফোন গুজে চোখ বন্ধ করি । কিন্তু আজকে সে সুযোগ পেলাম না । আমার সিটে আসার আগেই দেখি এক ভদ্রলোক বসে রয়েছে । এবং আমাকে দেখেই একটু হাসি দিলেন । হাসি দেখেই আমার মনে হল আজকে আমি শান্তিমত যাত্রা করতে পারবো না । হলও তাই । বই কিংবা হেডফোন কোনটার সুযোগই আমি পেলাম না । ভদ্রলোক তার আগেই কথা বার্তা শুরু করে দিলেন। শুরুতেই আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলেন । তার নাকি কথা বললে খুব বেশি ভাল লাগে না । একা এক স্থানে খুব বেশি সময় চুপ করে থাকতে পারেন না । তাই আগে থেকেই যেন ক্ষমা সুলভ চোখে যেন তার ব্যাপারটা দেখি ।

এই কথার উপরে আসলে আর কোন কথা না । ভদ্রলোকের নাম আবির আহমেদ । ভদ্রলোক একটা সরকারী কলেজে শিক্ষকতা করেন । এরপর থেকে একের পর এক কথা বলেই চললেন । বুঝতে পারলাম আজকে আমার কোন মুক্তি নেই ।
এরপরই আবির আহমেদ এমন একটা গল্প শুরু করলেন আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না । সত্যিই বলতে কী প্রথমে একটু বিরক্তবোধ করলেও পরে মনে হল গল্প শুনতে আমার খারাপ লাগছে না । কিন্তু যখন তিনি নিজের স্ত্রীর গল্প শুরু করলেন তখন আগ্রহটা আমার একটু বেড়ে গেল । আর কেনই বা বাড়বে না শুনি ! কেউ যদি বলে তার বউ মানুষ না তার বউ হচ্ছে একজন ডাইনী তখন আগ্রহ নিয়ে সেই গল্প শুনতেই হয় ! আবির সাহেব তার গল্প শুরু করলেন । আমি মন দিয়ে সেই গল্প শুনতে লাগলাম ।

বুঝলেন তখন সবে মাত্র বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছি । পোস্টিং নিজ জেলাতে হয় নি । হয়েছে পাশের এক জেলাতে । আমি বরাবরই শান্তি প্রিয় মানুষ । চাইলেই নিজ জেলা থেকে বাসে করে যাওয়া আসা করে যেত, বাসা থেকে প্রথমে এই কথাই বলেছিল । ঘন্টা খানেক যাতায়াতে সময় লাগবে তবে কেন জানি আমার মন টানলো না । বলে দিলাম যে এতো প্যারা নিতে পারবো না । বাসা নেব কলেজের কাছে যাতে সকালে একটু বেলা করে ঘুমাতে পারি । নিয়েও নিলাম তাই । এভাবেই কর্ম জীবন শুরু হয়ে গেল । দিন গুলো বেশ ভালই কাটছিল । তখনই নাওমির দেখা পেলাম । আরও ভাল করে বললে আমার মা নাওমির দেখা পেল ।

মা প্রায় দিনই আমার বাসায় গিয়ে থাকতেন । একদিন রাতের বেলা খাবার খাচ্ছি । মা খাবার বেড়ে দিচ্ছেন । এমন সময়ে মা বললেন, তোর জন্য মেয়ে দেখেছি । তোর বিয়ে দেব ।
আমি ভাত মুখে দিতে দিতে বললাম, মা এখনই কেন এসব !
-এখন নয়তো কখন ? তোর বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে ।
-মা আমার বয়স মোটেই পার হয়ে যাচ্ছে না ।
-না হচ্ছে না ! তোকে বলেছে । তোর বয়সে তোর বাবার দুই ছেলে ছিল । তোর বড় ভাইয়ের এক ছেলে ছিল আর তোর এখনও বিয়েই হয় নি ।
আমার বয়স মোটেও বেশি হয় নি । তখন সবে মাত্র চাকরিতে ঢুকেছি । এখনই বিয়ে করে সংসারের হাল ধরার কোন ইচ্ছে আমার ছিল না । তারপর মা যা বললেন আমার চোখ কপালে উঠলো । তিনি বললেন, তোর জন্য মেয়ে দেখা আমার শেষ ।
-মানে কি?
-হ্যা । মেয়ে এখানেই থাকে । এই এলাকাতে । তোর মত চাকরি করে । হাই স্কুলের টিচার । আমি দেখা করেছি মেয়ের সাথে । মেয়ের মায়ের সাথেও কথা বলেছি । তোর কথা বলেছি । ওনারা আগ্রহও দেখিয়েছে ! কালকে ছুটির দিন আছে । তোর বাবাকে আসতে বলেছি । আমরা মেয়ে দেখতে যাবো ।

আমি খাওয়া বন্ধ করে কিছু সময় মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেজাজ খারাপ হল একটু । তবে সেটা মুখে প্রকাশ করলাম না । ঠিক করলাম মাকে শান্ত করতে মেয়ে দেখতে যাবো ঠিক করলাম । এবং বলবো যে মেয়ে আমার পছন্দ হয় নি ।

কিন্তু তখনও আমি ঠিক জানতাম না যে মেয়ে দেখার পরে আমি নিজেই মেয়ের জন্য পাগল হয়ে যাবো । সত্যি বলছি ভাই পরদিন বিকেলে মেয়ের বাসায় যখন গেলাম এবং মেয়ে যখন খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে আমার সামনে এল আমি কেবল হা হয়ে গেলাম ! আমার ঢাকাতে পড়াশুনা করেছি । কতশত মেয়ে দেখেছি । কত সুন্দরী মেয়ের সাথে প্রেমও করেছি কিন্তু সেই সব সৌন্দর্য্য নাওমির কাছে কিছু না । আমি সব লাজ লজ্জা ভুলে নাওমির দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম কেবল ।

মেয়েটার দুষ্ট চোখের হাসি যেন আমাকে পাগল করে দিলো একেবারে । নাওমি যে আমার বিস্ময় ভাবটা দেখে মজা পাচ্ছিলো সেটা আমি নিজেও টের পাচ্ছিলাম । তবে আমার সেসব মাথায় ছিল না । আমার কেবল মনে হল এই মেয়েকে তখনই বিয়ে করে ফেলি ।

বাসায় এসে ঘোষণা দিলাম যে এই মেয়েকেই আমি বিয়ে করবো । যদি এই মেয়ের সাথে বিয়ে না হয় তাহলে অন্য কারো সাথে আমি কোন দিন বিয়ে করবো না ।

পরের কয়েকটা দিন আমার মাথা থেকে আমি কোন ভাবেই নাওমিকে বের করতে পারলাম না । চোখের সামনে সব সময় যেন নাওমিই ভাসতে লাগলো । অন্য কিছু আমি চিন্তাই করতে পারলাম না । লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নিজেই হাজির হলাম ওদের বাসার সামনে । বিকেলে কড়া নাড়তেই দেখলাম নাওমি বের হয়ে এল । ওর পোশাক দেখে মনে হল কোথাও যেন বের হচ্ছে ও । আমি খানিকটা বিব্রত হয়ে বললাম, আপনি কি বের হচ্ছেন?
-জি আপনার জন্যই বসে ছিলাম । চলুন !
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ওর কথা । বললাম মানে
-মানে আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম । চলুন ঐ নদীর পাড়ের দিকে যাই । ওদিকে বসে শোনা যাক আপনার কথা ।

আমার বাসা আর নাওমিদের বাসা বলতে গেছে কাছাকাছি । শহর বলা যাবে না এলাকাটাকে আবার একদম গ্রামও বলা যাবে না । আমার বাসা পর্যন্ত পাকা রাস্তা এসেছে । এরপর পা হাটা কাচা পথ । বেশ কিছু গাছ গাছালী তারপরই একটা ছোট নদী বয়ে গেছে । এদিকে মানুষ জনের চলাচল কম । আমরা হাটতে হাতে নদীর পাড়ে গিয়ে বসলাম । নাওমি একটা জায়গা দেখে বসে পড়লো । আমিও বসে পড়লাম ওর পাশে । একটু দুরত্ব বজায় রেখে
কিছু সময় কেটে গেল চুপচাপ । এক সময়ে নাওমি বলল, আমি জানি আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান । খুব বেশি করেই চান তবে ….
-তবে ?
-সব টা শোনার পরে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন কিনা সেটা আপনার বিবেচনা !
-মানে কি?
-এই যেমন আপনি যে আসবেন এটা আমি আগে থেকেই জানি । অনুমান না, একেবারে নিশ্চিত ভাবেই । এমন কি কী পোশাক পরে আসবেন আসার সময়ে কোন ইটে একটু হোচট খাবেন সেটাও আমি জানি ।

আমি সত্যিই একটু অবাক হলাম । আসার সময় সত্যিই দুইটা ইটে হোচট খেয়েছি । একবার তো পড়েই যাচ্ছিলাম ।
নাওমি বলল, যামিম আপনাকে আমার কাছে আসতে দিতে চাচ্ছে না । সে চাচ্ছে না আপনার সাথে আমার বিয়ে হোক ।
-যামিমটা কে !
-ওটা না জানলেও চলবে । আগে আমার কথা বলি । আমার যে বর্তমান বাবা মা ইনারা আমার আসল বাবা মা নন । আমাকে তারা কুড়িয়ে পেয়েছিলো । তারপর থেকেই আমাকে নিজের মেয়ের মত করে লালন পালন করেছে । আমার আসল মা মারা গেছে । আরও ভাল করে বললে তাকে মেরে ফেলা হয়েছিল ।

আমি কোন কথা বললাম না । কী বলবো ঠিক বলবো সেটা বুঝতেও পারছি না । নাওমি বলল, কিভাবে মেরে ফেলা হয়েছে জানেন?
-কিভাবে?
-পুড়িয়ে !
আমি তীব্র বিস্ময় নিয়ে বললাম, মানে?
-মানে হচ্ছে আগে যে গ্রামে থাকতো সেখানে তাকে মানুষ ডাইনী হিসাবে চিনতো । এবং অভিযোগটা মিথ্যে ছিল না । সে আসলেই একজন ডাইনী ছিল ।
-কি বলছেন এসব ?
-জি সত্য । এবং আমি নিজেও একজন ডাইনী ।
আমি এবার একটু হেসে উঠলাম । তারপর বললাম আপনি কি আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন ? কিংবা এমন কিছু করার চেষ্টা করছেন যেন আমি বিয়েতে না করে দিই ।
নাওমি যেন জানতো আমি এমন কথাই বলবো । সে বলল, ঠিক সেটা না । দেখুন, আমি আমার বর্তমান বাবা মায়ের কাছে চিরোকৃতজ্ঞ । তারা না থাকলে হয়তো আমি বেঁচে থাকতেই পারতাম না । তাদের ইচ্ছের কাছে আমার গুরুত্ব খুব বেশি । ইনফ্যাক্ট সব থেকে বেশি । তারা চাচ্ছে আপনার সাথে আমার বিয়ে হোক। আমিও তাই চাই । কিন্তু এটাও চাই যে সব টুকু সত্য বলে তবে বিয়ে হোক ।

আমি নাওমির কথা ঠিক বিশ্বাস করলাম না । কেবল বললাম, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই । আপনি ডাইনী কি পরী সেটা আমার কাছে খুব বেশি গূরত্ব বহ করে না । আপনার আসল বাবা মা কে সেটাও না । আপনি কেবল গূুরত্বপূর্ন !
-ঠিক তো ? দেখবেন পরে কিন্তু আবার বলবেন না যেন আমি আপনাকে বলি নি ।
-বলব না ।

আসলে তখন অন্য কিছু আমার মাথাতেই ছিল না । আমার কেবল মনে হচ্ছিলো কবে আমি নাওমিকে বিয়ে করবো । আমার তখনও ঠিক বিশ্বাস হয় নি যে নাওমি আসলেই একজন ডাইনী হতে পারে । কোন ভাবেই হতে পারে না । কিন্তু ঠিক এক সপ্তাহ পরে যা ঘটলো তাতে আমার সব কিছু ওটলো পাটল হয়ে গেল ।
নাওমির সাথে বিয়ে প্রায় ঠিক । এখন তারিখটা ফেলা বাকি । সামনের সপ্তাহে আবারও বাবা মা আসবেন তখন আলোচনা করে একটা তারিখ ফেলা হবে । আমি বাসায় একা সেদিন । রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়েছি হঠাৎ একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল । কিছু সময় ধরে চিন্তা করতে লাগলাম যে কেন ঘুম ভাঙ্গলো । চারিদিক মোটামুটি নিশ্চুপ । আবার যখন চোখ বন্ধ করতে যাবো তখনই শব্দটা শুনতে পেলাম ।

আমার মনে হল যেন আমার বাড়ির উঠানে কোন ভয়ংকর জন্তু দাড়িয়ে রয়েছে । এবং সেটা গড়গড় করছে রাগে । একবার মনে হল মনের ভুল তবে আওয়াজটা যখন আবার হল তখন মনের ভেতরে আর সন্দেহ রইলো না যে আসলেই কিছু একটা দাড়িয়ে রয়েছে । কিন্তু কি ?
কুকুর রয়েছে শেয়ালের ডাকও শুনেছি কিন্তু এইটা কোন প্রাণী !
এই সময়ে আমার উচিৎ ছিল ঘরের ভেতরেই চুপ করে শুয়ে থাকা । কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো যে আমার প্রোস্রাবের বেগ পেয়ে গেল । কেন পেয়ে গেল সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না । এতোই তীব্র হতে লাগলো যে মনে হল এখনই যদি না যাই ওয়াশ রুমে তাহলে প্যান্ট ভিজে যাবে । আমি দ্রুত উঠে পড়লাম । আমার ওয়াশরুমটা ঠিক ঘরের ভেতরে না । দেওয়াল ঘেরা একতলা বাড়ি । বাথরুমটা বাড়ির ভেতরে হলেও মুল বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যেতে হয় । আমি ভয়ে ভয়ে দরজা খুললাম । হাতে টর্চ নিয়ে বাইরে ফেললাম । যদিও বাইরে চাঁদের আলো ছিল পরিস্কার । সব কিছু পরিস্কার দেখা যাচ্ছিলো । যে আওয়াজটা পাচ্ছিলাম দেখলাম যে তেমন কিছুই নেই । বাড়ির মূল ফটকের দিকে তাকালাম । সেটা বন্ধ । সন্ধ্যা বেলা আমি নিজ হাতে সেখানে তালা মেরেছি । তালাটা এখান থেকেই দেখতে পাচ্ছি । তার মানে কেউ বাড়িতে ঢুকে নি । দেওয়াল এতো উচু যে শেয়াল কিংবা কুকুরের ভেতরে প্রবেশ প্রায় অসম্ভব । বেড়াল অবশ্য ঢুকতে পারবে । মানুষের ঢুকতে লেগেও একট বেগ পেতে হবে । কারণ দেওয়ালের উপরে পেরেক দেওয়া ! তার মানে ভেতরে কেউ আসে নি । আর আর কিছু না ভেবে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম । কাজ শেষ করে যখন দরজা খুলে বের হয়েছি তখনই শরীর হিম হয়ে গেল ।

বাইরের চাঁদের আলোতে দেখলাম যে একটা প্রমাণ সাইজের কালো চিতা বাঘ দাড়িয়ে রয়েছে আমার আর আমার ঘরের মাঝের উঠানে । আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে রয়েছে ।
এই খানে এই চিতা বাঘ কিভাবে এল ? আশে পাশে তো কোন বন কিংবা চিড়িয়া খানা নেই । তাহলে কিভাবে এল ?

লাল চোখ দুটো দেখে আমার মনে হল যেন আমি এখনই অজ্ঞান হয়ে যাবো । দৌড়ে কোন ভাবেই আমি ঘরে প্রবেশ করতে পারবো না । আমাকে ওটা ধরে ফেলবে । দেখলা ওটা সামনের পা দুটো একটু টানটান করলো । একবার হুংকার ছাড়লো । এবারই ঝাপ দিবে আমার উপরে । আমি এক লাফে আবার বাথরুমে ঢুকে পড়লাম । তারপর দরজা আটকে দিলাম । সাথে সাথেই দরজার উপরে যেন তাণ্ডব শুরু হল । আমি দুই হাতে সেটা ধরে টেনে রাখলাম । তবে কেন জানি মনে হল যে সেটা খুব বেশি সময় টিকবে না । খুলে যাবে একটু পরেই ।

এই ভাবে কত সময়ে চলল আমি জানি না তবে একটু পরেই ধুপ করেই কিছু একটার আওয়াজ শুনতে পেলাম । মনে হল যেন কেউ উঠানে এসে লাফ দিয়ে পড়লো । আমার ওয়াশ রুমের দরজায় আঘাত বন্ধ হয়ে গেল সাথে সাথেই । আমি ওয়াশরুমের ফাঁকা স্থান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি তীব্র একটা আলোর ঝলকানী । সাথে সাথে একটা গোঙ্গানীর আওয়াজ । এবং তারপর সব চুপ । কোথাও কোন আওয়াজ নেই ।
ঠিক এক মিনির পরে দরজাতে টোকা পড়লো । আমাকে অবাক করে দিয়ে নাওমি বলে উঠলো, আবীর বেরিয়ে এস । আর কিছু হবে না ।

আমি তীব্র বিস্ময় নিয়ে বের হলাম । তাকিয়ে দেখি নাওমি উঠানে দাড়িয়ে । ওর হাতে একটা কাঠের লাঠি জাতীয় কিছু রয়েছে । সেটার মাথায় একটা আলো । ডিম লাইটের আলোর মত ।

আমার কাছে এসে বলল, তুমি ঠিক আছো তো?
-হ্যা । তুমি কিভাবে এলে?

বলতে বলতে বাড়ির মুল দরজার দিকে তাকালাম । সেটা এখনও বন্ধ ! তালা মারা । ও কিভাবে ঢুকলো । নাওমি আমার হাত ধরে ঘরের ভেরতে নিয়ে গেল । নিজেই গ্লাসে পানি ঢেলে খাওয়ালো । বলল, আমার আসলে আগেই সাবধান হওয়া দরকার ছিল । যামিম তোর পিছু লেগেছি । তবে আর আসবে না ও ।
আবারও যামিম ! আমি বললাম যামিমটা কে শুনি ? আগেও শুনেছি ওর নাম ।
-ও হচ্ছে একটা প্রেত । আগে আমার পোষা ছিল তবে এক সময় আমার অবাধ্য হয়ে যায় । তাই ওকে ছেড়ে দিয়েছি ।
-মানে? কী বলছো এসব ?
আমার দিকে নাওমি এক ভাবে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল, আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম । আমি ডাইনী । উইচ ।
আজকে কেন জানি কথাটা হেসে উড়িয়ে দিতে পারলাম না । নাওমি বলল, সেদিন কেন বিশ্বাস করো নি জানি না আজকে নিশ্চয়ই করেছো ।

আমি একটু ঢোক গিলে বললাম, তুমি মানুষ তো?
নাওমি একটু হাসলো । তারপর বলল, ভয় নেই আমি মানুষই । বলতে পারো মহিলা তান্ত্রিক টাইপ । নেটফ্লিক্সের দ্য চিলিং এডভেঞ্চার অব সাবরিনা দেখেছো না? ঐ রকম । বুঝেছো?
-হুম ।
-আমার কিছু ক্ষমতা রয়েছে যার কিছু আমি জন্মগত ভাবে পেয়েছি কিছু পেয়েছি সাধনা করে । বুঝেছো?
-হুম ।
-গুড ! এখন ঘুমিয়ে পড় । আমি যাওয়ার সময় বাড়ি বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছি । এরপর থেকে আর কিছু আসবে না ।

এরপর নিজের হাত থেকে একটা আংটি খুলে আমার হাতে পরিয়ে দিল । বলল, এটা এখন থেকে কোন ভাবেই খুলবে না । কোন দিন না । মনে থাকবে ?
-আচ্ছা ।
-এখন ঘুমাও ।

আমি বাধ্য ছেলের মত বিছানাতে গিয়ে চোখ বন্ধ করলাম এবং সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম ।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতের কথা মনে পড়লো । দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম । ঘরের দরজা বন্ধ । নাওমি যদি রাতে এসে থাকে তাহলে ঘর থেকে বের হল কিভাবে? বাইরে বের হয়ে এলাম । মুল ফটকের দরজা এখনও তালা মারা !
তাহলে সব কি মিথ্যা?
স্বপ্ন দেখেছি?
হবে হয়তো !
কিন্তু চোখ নিজের বাম হাতের দিকে গেল তখন বুঝতে পারলাম যে সব মিথ্যা না । হাতে নাওমির দেওয়া আংটিটা এখনও রয়েছে ।

গল্প শেষ করে ভদ্রলোক বেশ কিছু সময় চুপ করে রইলো । আমি বললাম, এরপর?
-এরপর আর কী ! মাস খানেকের ভেতরেই আমাদের বিয়ে হয়ে যায় । তারপর থেকে সুখেই আছি বলতে পারেন । ও যখন প্রেত সাধনা করে তখন বাড়ির চারিদিকে নানা রকম আওয়াজ ভেসে আসে । অনেক কিছুই দেখতে পাই। যদিও নাওমি বলেছে যে আমার কোন ক্ষতি হবে না । আর ওর সাথে সাথে থাকতে থাকতে আমি নিজেও অনেক কিছু শিখে গেছি । অনেক কিছু বুঝতে পারি ।

ভদ্রলোক আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু দেখলাম ট্রেনটা আস্তে আস্তে থেমে যাচ্ছে । চিলাহট্টি চলে এসেছে । ভদ্রলোক বললেন, আচ্ছা আজকে তাহলে চলি অপু সাহেব । অন্য আরেকদিন আবার দেখা হবে হয়তো !

ভদ্রলোক যখন নেমে গেলেন তখনই আমার মনে খটকা লাগলো । আমি ভদ্রলোককে নিজের ভাল নাম বলেছিলাম । কিন্তু আমার ডাক নাম তো বলি নি । তাহলে এই লোক আমার ডাক নাম কিভাবে জানলো?
তখনই মনে পড়লো ভদ্রলোক বলেছিলেন ডাইনীর সাথে থাকতে থাকতে সে নিজেও এখন অনেক কিছু জানেন ।
সত্যিই কি !

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.8 / 5. Vote count: 66

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

2 Comments on “ডাইনী বউ”

  1. I simply needed to thank you very much all over again. I do not know what I could possibly have used in the absence of the actual ways shared by you regarding such field. It was before a depressing concern in my position, nevertheless taking note of the professional technique you dealt with that took me to leap over happiness. Extremely happy for this support and thus have high hopes you find out what an amazing job your are undertaking training men and women using your web site. I’m certain you haven’t encountered all of us.

Comments are closed.