রিমি মাথা নিচু করে রইলো । সাদিকের দিকে যেন তাকাতে পারছে না । সাদিককে ওর একটু ভয় করলো। কারণ রাগান্বিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে সে । এই কয়মাসে সাদিক একটা বারও ওর সাথে উচু গলা করে কথা বলে নি । কিন্তু আজকে সে রেগে গেছে । ওর বাসায় দেখেছে বাবা রেগে গেলেই ওদের দুই বোনকে সামনে পেলে চড় থাপ্পড় মেরে বসতো । ওদের মা যদি সামনে আসতো তখন তাকেও চড় খেতে হত । কিছু সময় পরে আবার স্বাভাবিক । আজকে সাদিকও ওকে চড় মেরে বসবে !
সাদিক আবার বলল, কেন উঠেছো বাসে !
রিমি মিন মিন করে বলল, রিক্সায় পাচ্ছিলাম না । আর অনেক ভাড়া চাচ্ছিলো !
-তো? টাকা দেই নি আমি ? বল ?
রিমি কি বলবে খুজে পেল না । ওর খুব কান্না আসছে । তবে সেটা আটকানোর চেষ্টা করছে । মনে মনে ঠিক করে নিল যদি সাদিক ওকে চড় মেরেও বসে তবে সে কিছুতেই কাঁদবে না । এমন ভাব করবে যেন কিছুই হয় নি । সাদিক সামনের থেকে চলে গেল । ফিরে এল একটু পরেই । হাতে ফাস্ট এইড বক্স । সেটা নিচে নামিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে বলল, কই পা দেখি ।
রিমি ওর কেটে যাওয়া পা টা একটু এগিয়ে দিল । একটা কাপড় দিয়ে প্যাচানো সেটা । সাদিক একটা টুল এগিয়ে দিল । তারপর বলল, বস এখানে । রিমি কোন কথা না বলে বসলো । সাদিক বসলো মেঝেতে । তারপর রিমির পাটা নিজের কোলের উপরে নিয়ে তুলল হাত দিয়ে ।
রিমি লজ্জায় শেষ । স্বামী হয়ে স্ত্রীর পায়ে হাত দিচ্ছে । রিমি বলল, কি করছো তুমি? পা হাত দিয়ো না । তুমি স্বামী হয়ে আমার পায়ে হাত দিলে দিলে আমার পাপ হবে ।
সাদিক কোন কথা বলল না । কেবল রিমির দিকে এমন চোখে তাকালো যেন এমন অদ্ভুত কথা সে আর কোন দিন শোনে নি।
রিমি অবাক হয়ে দেখলো নিজের কোলের উপর ওর পা টা নিয়ে খুজ যত্ন সহকারে সেটা ড্রেসিং করে দিল । আজকে বাস থেকে নামতে গিয়ে রিমির পা ডান পা টা একটু কেটে গিয়েছিলো । সেটা সাদিক দেখেই ওকে প্রথমে জিজ্ঞেস করলো কিভাবে কেটেছিলো । তারপর যখন শুনলো বাস থেকে নামতে গিয়ে কেটেছে তখন বেশ ভাল ভাবেই ধকম দিল ওকে । বলা যায় বিয়ের পর এটাই প্রথম ধকম দেওয়া ।
তারপরই রিমি তীব্র বিস্ময় নিয়ে লক্ষ্য করলো ওর পায়ের উপর এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো !
সাদিক কি কাঁদছে ।
কেন ?
ওর ব্যাথা পেয়েছে বলে !
-সাদিক !
রিমি ডাকলো । তবে সাদিক মুখ তুলে চাইলো না । এখনও ওর পায়ের পরিচর্যা করছে সে । এরপর সাদিকঔঠে দাড়ালো । ফার্স্ট কিট বক্সটা রেখে এসে রিমিকে বলল, সামনের কয়েকদিন একদম পায়ে নড়াচড়া না ।
এই বলে ওকে টুল থেকে উঠিয়ে কোলে নিয়ে শোবার ঘরের বিছানার উপরে বসিয়ে দিল । রিমির দিকে একবারও না তাকিয়ে বলল আমি তোমার খাওয়ার জন্য কিছু নিয়ে আসছি ।
-সাদিক !
সাদিক না শুনে চলে যাচ্ছিলো দেখে রিমি আবারও চিৎকার করে বলল, সাদিক
-কি?
-এদিকে আসো !
-কেন আসবো? কেন শুনবো তোমার কথা শুনি?
রিমি এবার আরও নরম সুরে বলল, এসো প্লিজ ।
সাদিক ঘুর ওর দিকে । ওর কাছে এসে বসলো। রিমি একটু এগিয়ে । সাদিকের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো । কি অদ্ভুত এই ছেলেটার চোখ । ভাবলো রিমি । একটু আগে সেখানে কি রাগ ছিল অথচ এখন সেখানে কতই না আবেগ দেখা যাচ্ছে, অভিমান আর সব থেকে বড় কথা ওর জন্য বেদনা দেখা যাচ্ছে । রিমি সাদিকের সেই চোখে চুমু খেল । তারপর বলল, এভাবে ভালো বাসতে নেই বোকা । বুঝেছো !
অসম্ভব ভালো লাগল ছোট গল্পটা পড়ে
ভালোবাসা?
কিউট?