অতিমানব

অতিমানব - অপু তানভীর
4.3
(26)

এক

-হেই বেইবি ! এদিকে একটু তাকাও ! তাকাও না !

কালো রংয়ের হ্যামার গাড়িটার দিকে তাকিয়ে নীলু খানিকটা অসহায় বোধ করতে লাগলো । একবার মনে হল জানলার সিট থেকে সরে অন্য কোন সিটে গিয়ে বসে । কিন্তু তার উপায় নাই ।

ওদের এই স্কুল বাসটায় আগে বসার সিট নিয়ে প্রায় বাচ্চাদের ভিতর গন্ডগোল বেঁধে যেত । তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ সবার বসার সিট নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ।

আর নীলু জানলার পাশে ছাড়া ঠিকমত বসতেও পারে না । বাস চলার সময় জানলা দিয়ে বাতাস না আসলে নীলুর কেমন দম বন্ধ হয়ে আসে । তাছাড়া পুরো বাসটার ভিতর নীলুই সব চেয়ে বয়সে বড় । আর সবাই নিচের ক্লাসে পড়ে । মোটামুটি সেই এই পুরো বাসের গার্জিয়ান ।

এতো গুলো বাচ্চার ভিতর নিজেকে খানিকটা বাচ্চা বাচ্চা লাগে । বাচ্চাদের সাথে স্কুল বাসে উঠতে একটু লজ্জা লজ্জাই লাগে ।

ওদের ক্লাসের কেউই আর স্কুল বাসে করে স্কুলে আসে না । কিন্তু নীলুর স্কুল বাসে না এসে কোন উপায় নাই । ওদের বাসা থেকে স্কুলটা বেশ খানিকটা দুরে । রিক্সা বা সিএনজিতে যাওয়ার মত এতোটা বিলাশিতা ওদের নেই । যাতায়াতের জন্য বাসই ভরশা । কিন্তু আজকে এই কি উটকো ঝামেলা এসে জুটলো ।

কালো রংয়ের বড় গাড়িটা থেকে ছেলে গুলো রীতিমত অশালীন মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছে । বলাই বাহুল্য সব ইঙ্গিত গুলো ওকে লক্ষ্য করেই ।

নীলুর আর না থাকতে পেরে জানালার সিট থেকে উঠে দাড়ালো । ঐ দিককার কোন সিটে গিয়ে বসবে ।





দু

ডন একটু একটু কাঁপছে । স্টীয়ারিংয়ে ধরা হাতটাও একটু একটু কাঁপছে । এতো বড় হ্যামার গাড়িটা ঠিক মত সামলাতে পারছে না । তবুও সেই দিকে হুশ নেই ওর । এক হাতে এখনও একটা হুইস্কির বোতল ধরা । ক্ষণে ক্ষণেই তাতে চুমুক দিচ্ছে ।

এতোক্ষণ একটা স্কুল বাসের পাশে পাশি চলছিল । জিম স্কুল বাসের ভিতর বসা একটা মেয়েকে টিজ করছিল । আর ওরা হা হা করে হাসছিল ।

-এই শালা #&@$ !

জিম একটা খারাপ গালি দিয়ে উঠলো । ডনের অবশ্য খুব বেশি হুস নেই । দু তিনবার বললে একবার শুনছে । জিমের আরেকবার গালিতে একটু যেন হুস ফিরলো ।

-কি হল ?

-আরে শালা দেখছিস না মেয়েটা উঠে গেল । জলদি সামনে চল ।

-কোথায় ?

-আরে খানকির পো গাড়ির স্পীড বাড়া ।

স্পীড বাড়া কেবল এই কথাটা ই কানে আসলো । এক্সেলেটরে চাপ দিয়ে দিল ।

গাড়ি ততক্ষণে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের অর্ধেক টা পার করে ফেলেছে । এই ফ্লাই ওভারটা নতুন হয়েছে । চলাচলের জন্য বেশ ভাল । গাড়িও দ্রুত চালানো যায় ।

গাড়ির গতি বেড়েই চলেছে হু হু করে । হঠাত্‍ ডনের চোখের সামনে কিছু একটা দেখা গেল । দেখতে দেখতে একদম কাছে চলে এল । একটা কার গাড়ি । দাড়িয়ে আছে ।

রাস্তার দিকে খুব বেশি লক্ষ্য নেই বলে ডন ঠিক সময়ে ব্রেক চাপতে পারলো না ।

-আরে মাদা§&€¥$ বাঁয়ে কাট । বাঁয়ে ।

হুম বাঁয়ে নিতে হবে । ধাক্কা এড়ানোর জন্য হ্যামারটাকে বাঁয়ে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই ।

ডন স্টীয়ারিং টা বাঁ দিকে ঘুড়িয়ে দিল ।







তিন

হামিদ আলী সেন্ট জোসেফ ইন্টারন্যালাল স্কুল এন্ড কলেজের বাস ড্রাইভার । হামিদ আলীর ডিউটি মিরপুর রোড থেকে যাত্রাবাড়ি রুটে গাড়ি চালানো । কদিন আগেও এই রুটে গাড়ি চালানো খুব ঝামেলার একটা কাজ ছিল । সারা রাস্তা জ্যাম আর জ্যাম । কিন্তু নতুন এই ফ্লাই ওভারটা হওয়াতে এখন গাড়ি চালিয়ে বেশ আরাম পাচ্ছে ।

আজকেও গাড়ি চালাচ্ছিলেন আপন মনেই তখনই মিরর ভিউতে দেখতে পেলেন একটা কালো রংয়ের বড় গাড়ি তার বাসটার পাশাপাশি চলছে । তিনি কিছুক্ষন গাড়ির গতি কমিয়ে দেখলেন কিন্তু কালো গাড়িটা তার পাশাপাশিই রইলো । গতি বাড়িয়েও দেখলেন একই অবস্থা ।

তার আর বুজতে বাকি রইলো না যে গাড়িতে থাকা লোক গুলো বাসের মেয়েদের বিরক্ত করছে ।

ফ্লাইওভারে ওঠার পরেই হামীদ আলী গাড়ীর গতি বাড়িয়ে দিল । কয়েক মুহুর্ত কালো গাড়িটা পিছিয়ে পড়েছিল কিন্তু পর মুহুর্তেই এগিয়ে আসতে শুরু করলো ।

এই কাছে চলে এসেছে ।

এই !

ঠিক তখনই একটা ঘটনা ঘটলো । কালো গাড়িটা হঠাত্‍ করেই স্কুল বাসটার দিকে বাঁয়ে চেপে এল । চেপে আসতে আসতে একেবারে বাসের সামনের ডান চাকার সাথে লাগিয়ে দিল ।

হামিল আলী কেবল লক্ষ্য করলেন তার গাড়ি তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে । গাড়ি কয়েক সেকেন্ড সোজা চলার পরে বা দিকে ঘুরে গেল আপনা আপনি ।

হামিদ আলী গায়ের সর্ব শাক্তি দিয়ে ব্রেকে চাপ দিয়ে ধরলেন কিন্তু কোন লাভ হল না । গাড়ির গতি বিন্দু মাত্র না কমে সরাসরি উড়াল সেতুর রেলিংয়ে আঘাত করলো ।

প্রচন্ড একটা ঝাকি খেল পুরো বাসটা । হামিদ আলীর মাথা ঠুকে গেল সামনের স্টীয়ারিং এ । জ্ঞান হারানোর আগে হামিদ আলী কেবল এই টুকু অনুভব করল রেলিংটা বাসের ধাক্কা ঠিক মত সহ্য করতে পারে নি । গতি যদিও কমে গেছে । কিন্তু গাড়িটা পুরোপুরি থেমে যায় নি । আস্তে আস্তে রেলিং পার হয়ে বাসটা নাচে পড়তে চলছে ।







চার

আরমানের মেজাজটা একটু খারাপ । খুব বেশি না । সামান্য খারাপ । প্রায়ই তার এই রকম মেজাজ খারাপ হয় । বাসে উঠে যদি জানালার পাশে বসতে না পারে তাহলে এমন মেজাজ খারাপ হয় । আরমান খুব ভাল করেই জানে পাবলিক বাসের যাত্রীদের এমন হাস্যকর কারনে মেজাজ খারাপ করা মানায় না কিন্তু আরমানের মেজাজ খারাপ হয় । আর মেজাজ খারাপ টা গিয়ে পরে ওর পাশে বসা লোকটার উপর ।

আজকেও আরমান জানলার পাশে বসতে পারে নি । এই জন্য যথেষ্ঠ বিরক্ত । আর বিরক্তিটা ওর পাশে বসা ছেলেটার উপরে । ছেলেটার বয়স খুব বেশি হলে বাইশ তেইশ হবে । চুলগুলো একটু বড় আর ঘন । কালো রংয়ের একটা প্যান্ট পড়ে আছে আর লালকালো গ্রামীন চেকের ফুল হাতা শার্ট পরে আছে । কানে হেড লাগিয়ে আপন মনে গান শুনছে ।

আরমানের একবার মনে হল ছেলেটাকে একবার বলে যে জানালার পাশের সিট টা ওকে দিতে । দেখতে তো ভদ্রছেলেই মনে হচ্ছে । অনুরোধ করলে নিশ্চই দিবে । কিন্তু কেন জানি বলতে পারছে না ।

দুইবার বলবে বলে ঠিক করেও বলতে পারে নি । এই বার বলতেই হবে । ছেলেটা নিশ্চয়ই শুনবে । আরমান বলতে যাবে ঠিক তখনই জানলা দিয়ে উল্টো দিকের দিকে চোখ চলে গেল । সঙ্গে সঙ্গে আরমানের মুখ হা হয়ে গেল ।

একটা কালো রংয়ের হ্যামার পাশ থেকে একটা স্কুল বাস কে ধাক্কা দিল । বাসটা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে সোজা পাশের রেলিংয়ে ধাক্কা মারলো । রেলিং বাসের ধাক্কায় ভেঙ্গে পড়েছে । বাসটা ফ্লাইওভারের নিচে পড়ে যাচ্ছে ।

আরমান স্কুল বাসটা পড়ে যেতে দেখছে । সব কিছু ঘটলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভিতর ।

আরমানের মুখ থেকে আপনা আপনি একটা চিত্‍কার বেরিয়ে এল । কেবল ও না ওর আসে পাশের পাশের যাত্রীরাও দুর্ঘটনা টা দেখতে পেয়েছে ।

আরমানের মুখদিয়ে চিত্‍কার বের হওয়ার আগেই আর একটা অবাক করা ঘটনা ঘটলো ।



চোখের নিমিষে আরমানের সিটের জানালার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল ।আরমান কেবল অবাক হয়ে গেল পড়ে যাওয়া বাসটার পেছন দিকটা কেউ একজন চেপে ধরেছে । চেপে ধরা মানুষটা আর কেউ না ওর পাশে বসা লাল কালো গ্রামীন চেকের শার্ট পড়া ছেলেটি ।







পাঁচ

তানজিনা কয়েক মুহুর্ত কোন যেন নিতে ভুলে গেছেন ।

ডিউটি না থাকায় আজকে হাসপাতাল থেকে একটু আগে আগেই বের হয়েছিলেন । উড়াল সড়ক হওয়ায় ইদানিং এটার উপর দিয়েই যান । দ্রুত যাওয়া যায় ।

আজকে ফ্লাইওভারের উপরে ওঠায় পর থেকেই তিনি ব্যাপায়টা লক্ষ্য করছিলেন । একটা কালো রংয়ের হ্যামার আর একটা বাস পাশাপাশি চলছে ।

হ্যামারটা ঠিক পেছনেই তানজিনার গাড়ী ছিল । তাই সব কিছু দেখা যাচ্ছিল পরিস্কার ।



হঠাত্‍ কি হল কালো রংয়ের হ্যামার গাড়িটার গতি বেড়ে গেল । বাসটাটে ক্রস করার সময় ঠিক ওর সামনে গিয়েই বাসটাকে পাশ থেকে ধাক্কা দিল । বাসটা চোখের সামনে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে পাশের রেলিংয়ের ধাক্কা মারলো । তারপর রেলিং ভেঙ্গে নিচে পড়তে শুরু করলো । সব কিছু ঘটলো মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভিতরে ।

তানজিনা বাসটাকে চোখের সামনে পড়ে যেতে দেখছেন । এমন দৃশ্য চোখ মেলে দেখতে পারলো না , চোখ বন্ধ করে ফেললো ।

এখনই হয়তো ভারী কিছু পতনের শব্দ শোনা যাবে তারপর চিত্‍কায় আর আর্তনাদ ।

প্রতিদিন হাসপাতালে এমন আর্তনাদ তাকে শুনতে হয় । অভ্যাস এখনও হয়ে উঠতে পারে নি ।

মানুষের চিত্‍কার আর্তনাদে এখনও তানজিনার বুকটা কেঁপে উঠে । তানজিনার চোখ এখনও বন্ধ ।

হঠাত্‍ তানজিনার মনে হল এতোক্ষনে বাসটার নিচে পড়ে যাওয়ার কথা । কিন্তু পতনের আওয়াজ এখনও পাওয়া গেল না । তাহলে কি পড়ে নি । একটু ভয়ে ভয়েই তানজিনা চোখ খুলল ।

চোখ খুলে যে অবিশাশ্য দৃশ্য দেখলো তা দেখার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিল না । তানজিনা দেখলো ওর গাড়িটা বাসটার খুব কাছে গিয়েই থেমেছে । আর বাসটার চার ভাগের তিন ভাগই ফ্লাইওভারের বাইরে । শূন্য ভাসছে ।

আর একটা বিশ পঁচিশ বছরের ছেলে বাসটা পেছন থেকে টেনে ধরেছে । খানিকটা হাস্যকর লাগছে কিন্তু তানজিনা কাছ থেকে ছেলেটার ফুলে ওঠা পেশী দেখতে পাচ্ছে । এবং বাসটাকে যে ছেলেটাই ধরে রেখেছে এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ।

কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব ?

তানজিনা নিজের চোখ কে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ।

এটা হতে পারে না ।

একটা ছেলের পক্ষে পুরো একটা বাসকে এভাবে টেনে ধরা কিছুতেই সম্ভব না ।

তানজিনা গাড়ি থেকে বাইরে বের হল । চারপাশে ততক্ষণ সব গাড়ি থেকে গেছে । তানজিনা লক্ষ্য করলো ওর মতই আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । সব কিছু যেন থেমে গেছে এখানে । কারো মুখে কোন কথা নেই । কেউ কেউ হা করে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে ।

তানজিনা যখন বাস্তবে ফিরে এল তখন ও চিত্‍কার শুনতে পেল । চিত্‍কার আসছে বাসের ভেতর থেকে ।

কি করবে ও এখন ?

বাসের জানলা দিয়ে একটা বাচ্চার মুখ দেখা গেল ।

-আন্টি ! আন্টি !

বলতে বলতে মেয়েটা কেঁদে ফেলল ।

-না আম্মু । তোমাদের কিছু হবে না । একটু সাহস রাখো ।

বাচ্চা মেয়েটার পাশের আরো কতগুলো কান্না রত মুখ দেখা গেল ।

-শান্ত হও । কিছু হবে না ।

তানজিন বাচ্চা গুলোকে শান্তনা তো দিচ্ছে কিন্তু ঠিক কিসের জোরে শান্তনা দিচ্ছে ও নিজেই জানে না ।

হঠাত্‍ পেছন থেকে ভারী গলার আওয়াজ পাওয়া গেল ।

-বাচ্চা গুলো কে সব পেছনের দিকে আসতে বলেন ।

হ্যা তাই । তানজিনার আর দেরী না করে বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলল

-তোমরা সবাই পেছনের দিকে আসো । সবাই পেছনেয় দিকে আসো ।

মনেহল বাচ্চা গুলো তানজিনার কথা শুনছে । একটু পরেই হুটপুটি শোনা গেল । সবাই পেছনের দিকে আসছে ।

ঠিক তার এক মিনিট পরেই বাসটা একটু নড়ে উঠলো । ছেলেটা বাসটাকে এতোক্ষণ কেবল টেনে ধরে রেখে ছিল । এখন পেছনের দিকে টানতে শুরু করেছে ।

তানজিনা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না । ছেলেটার শরীরের প্রতিটা পেশী তীর তীর করে ফুলে উঠেছে । শার্টের হাটা ফেটে হাতে পেশী গুলো বের হয়ে এসেছে ।

এই তো আসছে !

বাসটা উঠে আসছে ।

আসছে !



তানজিনার মত আসেপাশের অনেকেই অবাক হয়ে কেবল দেখতে লাগলো কিভাবে বাসটা আস্তে আস্তে ফ্লাইওভারের দিকে উঠে আসছে ।

কয়েক জন আবার ছেলেটাকে নিয়ে স্লোগান দিতে লাগলো । কেউ বা হাতে তালি দিতে লাগলো । মোট কথা সবাই ছেলেটাকে উত্‍সাহ দিতে শুরু করেছে ।



বাসটাকে টেনে নিরাপদ জায়গায় আনতে আরো পনের মিনিট লেগে গেল । তারপর ছেলেটা চোখের নিমিষেই বাসের ভিতর চলে গেল । ফিরে এল তারপর পরই ।

সব গুলো চোখ তখন ছেলেটার উপর নিবদ্ধ !

-এখানে কেউ ডাক্তার আছে ?

-জি আমি ডাক্তার ।

তানজিনা এগিয়ে এল ।

-আসুন আমার সাথে !

তানজিনাকে নিয়ে ছেলেটা আবার বাসের ভিতর চলে গেল ।

বাসের ভিতর বাচ্চা দের মোটামুটি সবারই কিছু না হয়েছে । কারো মাথা ফেটে গেছে কারো হাত কেটে রক্ত পড়ছে । কারো পায়ে ব্যাথা লেগেছে । বাসের ড্রাইভার তখনও অজ্ঞান হয়ে আছ তবে একটা মেয়ের অবস্থা খুব খারাপ । মাথার ডান দিকটায় একটা ভয়ানক ক্ষত ।

তানজিনা মেয়েটাকে পরীক্ষা করতে লাগলো । পরীক্ষা করে বলল

-এর অবস্থা খুব খারাপ । এখনই হাসপাতালে নিতে হবে ।

ছেলেটি আর বাক্যব্যয় না করে গুরুতর আহত মেয়েটাকে কোলে করে বাসের বাইরে এল ।

তানজিনাও ছেলেটার সাথে সাথে বাইরে চলে এল । কিছুক্ষন এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন দেখলো ।

দুর্ঘটনার জন্য সারা এলাকায় জ্যাম লেগে আছে ।

মেয়েটাকে কিভাবে হাসপাতালে নিবে ? ছেলেটা হঠাত্‍ বলল

-আপনি বাসের ভিতর গিয়ে দেখুন কার অবস্থা কেমন ! ঠিক আছে ?

-আচ্ছা ! কিন্তু এই মেয়েটার কি হবে ?

-সমস্যা নেই আমি একে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি ।

-কিভাবে ? রাস্তায় তো প্রচুর জ্যাম ।

ছেলেটা কোন কথা বলল না ।



তারপর তানজিনা সহ আরও চারিপাশের সবাইকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটাকে কোলে নিলো তারপর উড়ে চলে গেল । তানজিনার মত সবাই কেবল মুখ হা করে তাকিয়ে রইলো ! তানজিনার কেবল মনে হল এতোক্ষণ ও কোন ইংরেজি সুপার হিরো মুভির কোন দৃশ্য দেখছিল ।



এতোদিত নীল প্যান্টের উপর আন্ডারওয়ার পরা সুপার ম্যানকে দেখে এসেছে । আজকে প্রথম কালো জিন্স আর শার্ট পরা সুপার ম্যানকে দেখছে । একেবারে দেশী সুপার ম্যান !

একটু অবাক তো হওয়ার কথা ! কিন্তু চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা সে কিভাবে অস্বীকার করবে?







ছয়

পরদিন সকালে দেশের প্রতিটা সংবাদ পত্রে কেবল এই একটাই সংবাদ । ঢাকায় সুপারম্যান । সব কথা চ্যানেলে একই খবর প্রকাশ । কেউ কেউ পুরো রেস্কিউ ঘটনাটা মোবাইলে ভিডিও করেছে সেটাও দেখানো হচ্ছে ।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কেউ ই এই দেশী সুপারম্যানের কোন পরিস্কার ছবি তুলতে পারে নি । সবাই যখন এই সুপারম্যানের খবর নিয়ে ব্যস্ত তখন প্রায় সবারই চোখ এড়িয়ে গেল ভিতরের পাতার ছোট্ট একটা সংবাদ ।

পোস্তখোলা ব্রীজের নীচে একটা ভাঙ্গা চোড়া কালো রংয়ের হ্যামার গাড়ি পাওয়া গেছে । কেউ যেন প্রচন্ড আক্রোসে গাড়িটাকে দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে এখানে এনে ফেলেছে । ঠিক তার কাছে দুইজন যুবককে উলঙ্গ আর প্রায় মৃত অবস্থায় একটা গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে ।

অতিমানব গল্পটা প্রথম লিখেছিলাম ঢাকাইয়া সুপারম্যান নামে ২০১৩ সালে । বড় হাস্যকর লাগলেও এই গল্পটা আমার অনেক পছন্দের একটা গল্প।

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.3 / 5. Vote count: 26

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →

One Comment on “অতিমানব”

Comments are closed.