আবন্তি

4.9
(71)

আমি ঠিক ঠিক জানতাম আবন্তি এবার আমার কাছে আসবেই । এতোদিন যা আমি করতে পারি নি, সবুজ নামের ঐ গাধাটা ঠিক ঠিক করে দিয়েছে আমার হয়ে । যখনই সে চড়টা আমার গালে মেরেছিলো তখনই আমি খেয়াল করেছিলাম । আবন্তির দিকেই আমি তখন তাকিয়ে ছিলাম একভাবে । ওর চোখের পাতা কেমন যেন কেঁপে উঠলো । আমার দিকেই এক ভাবে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় । এবং তারপরেই সেখানে আমি আমার জন্য একটা অনুভূতি দেখতে পেলাম । এতোদিন যেই অনুভূতির জন্য আমি বারবার ওর সামনে ফিরে গিয়েছি সেটাই আজকে প্রথমবারের মত দেখতে পেলাম ওর চোখে !

ক্লাস শেষ করে আমি যখন বের হচ্ছিলাম, আবন্তিকে দেখতে পেলাম ক্লাস রুমের সামনেই দাড়িয়ে রয়েছে । আমি জানতাম ও আসবেই তবে এতো জলদি আসবে ভাবি নি । আবন্তি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, অপু একটু কথা ছিল !
আমার সাথে মিমি ছিল । সে আবন্তিকে দেখেই রেগে গেল । বলল, বাহ মাইর খাইয়ে এখন কথা ! তো এবার নিজের হাত দিয়ে মারতে চান আপু !
আমি মিমিকে থামালাম ! বললাম, চুপ থাক তো।
তারপর আবন্তির দিকে তাকিয়ে বলল, বল !

আবন্তি আমার দুই ব্যাচ সিনিয়ার । ইউভার্সিটিতে বড় ক্লাসের আপু ভাইয়াদের সব সময় আপনি করেই বলতে হয় । আমরা সবাই তাই বলি । তবে আবন্তির ব্যাপার আলাদা । আমি ওকে তুমি করেই বলি !
আবন্তি বলল, এখানে । ক্যান্টিনে ….
আমি বললাম, ক্যান্টিনে তোমার বন্ধুরা আছে । তোমার সাথে আমাকে দেখলে আবার মারবে !
-না না না ! আর কিছু বলবে না । বিশ্বাস কর আমি কখন চাই ওরা এমন করুক !

তাকিয়ে দেখলাম মিমি রাগে ফুলছে । কেবল মিমিই না আমাদের ক্লাসের বেশ কয়েকজন রাগ করে আছে । আমার গায়ে অন্য ক্লাসের কেউ হাত দেওয়াটা তারা মোটেই পছন্দ করে নি । হোক তারা বড় ক্লাসের । কী হয়েছে তাতে ! আমি ওদের শান্ত থাকতে বলেছি । বলেছি যে সময় সুযোগ সব আসবে !

আমি বললাম, কফি বারে চল । এখন তো ক্লাস ছুটি । যাবে?
-চল !

আবন্তি কোন কথা না বলে রাজি হয়ে গেল । আমি মিমির দিকে তাকিয়ে একটু হাসলাম । ও আমার হাসার অর্থ বুঝতে পারলো কিনা কে জানে ! আমি আবন্তির সাথে সাথে হাটতে লাগলাম !

বড় আপুদের প্রেমে পড়া নতুন কিছু নয় । বলতে গেলে প্রতিটি ছেলেই জীবনে কোন এক সময় নিজের থেকে বয়সে কোন মেয়ের প্রেমে ঠিকই পড়ে । কিন্তু লোজ লজ্জার ভয়ে সেটা কখনই সামনে আসে না । আমিও ঠিক একই ভাবে আবন্তির প্রেমে পড়লাম । মেয়েটা আমার থেকে দুই ব্যাচ সিনিয়র ! প্রথমে ভেবেছিলাম এই প্রেমে কিছুতেই বেশি দিন টিকবে না । তবে অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে আবন্তিকে কোন ভাবেই মাথার ভেতর থেকে বের করতে পারছি না । একটা সময় মনে হল যে ওকে বের করা সম্ভব না কোন ভাবে ।
তাই একদিন সাহস করে আমি আবন্তিকে মনের কথা বলেই দিলাম । প্রথম দিন সে সরাসরি না করে দিল । বলল যেন এসব কথা বার্তা আর না বলি । তবে আমি পেছনে লেগেই রইলাম । সে আমাকে পাত্তা দিল না ।
কিন্তু গতদিন ওর বন্ধু সবুজের কাছে ধরা পরলাম ।সম্ভবত সে আমাকে অনেক আগে থেকেই নোটিশ করেছে । আজকে সুযোগ পেয়ে আমাকে ধরলো । আবন্তি সাথেই ছিল । সে চুপচাপ দেখছিলো । আমার কলার চেপে ধরে একটু ধমক দিল । আমি অবশ্য খুব একটা গা করলাম না । আমি তাকিয়ে ছিলাম আবন্তির দিকে । তারপর সবুজ আমাকে চড় মারলো । একটু যে ব্যাথা লাগে নি সেটা বলবো না । তবে আবন্তির চোখের চাহনী দেখে সেটুকু ভুলে গেলাম !

কফির পেয়ালা সামনে নিয়ে চুপচাপ আবন্তি বসে আছে । আমি তাকিয়ে রয়েছি ওর দিকে । আবন্তির ঠোঁট দুটো আমার কাছে সব থেকে বেশি আকর্ষনীয় মনে হয় । একটা মেয়ের ঠোঁট ঠিক যেই টুকু হলে একেবারে পার্ফেক্ট হয় ঠিক সেই ভাবেই এই ঠোঁট উপরওয়ালা বানিয়েছে । পুরুও না আবার পাতলাও না । আলচে আভা এমনিতেই রয়েছে । লিপস্টিপের পরিমান একদমই নেই ।
আজকে ওর পরনের পোশাকও আমার একদম পছন্দের । নীল রংয়ের কামিজের সাদা লেগিংস । সাথে সাদা ওড়ণা । চুল অর্ধেক বাঁধা অর্ধেক খোলা । হাতে দেখলাম মেহেদী দেওয়া । নতুন করে দেওয়া হয়েছে ।
আমার জন্য কি?

হতে পারে ! কারণ ফেসবুকের মেসেজ আমি ওকে নিজের পছন্দের কথা বলেছিলাম । সেটা সে সীন করেছে । তার মানে আমার পছন্দের ব্যাপারটা সে জানে !

আমি বললাম, কিছু বলবে না?
আবন্তি একটা জোড়ে দম নিল । তারপর বলল, আমি কালকের জন্য খুব সরি !
-তুমি তো কিছু কর নি ।
-না । আমিই করেছি । আসলে সবুজকে তোমার ব্যাপারে বলা আমার মোটেই উচিৎ হয় নি । আমি সত্যিই বলছি আমার মোটেও এই ধারণা ছিল না যে ও তোমাকে এই ভাবে মেরে বসবে !

বাংলা সিনেমা তে এই রকম সীন খুব থাকে । নায়ককে নায়িকা মাইর খাওয়ায় কিংবা নায়ক নায়িকার জন্য আহত হয় তখন তাদের ভেতরে প্রেম শুরু হয় । এই ঘটনা নিয়ে যতই হাসাহাসি করি না কেন বাস্তবে এই ঘটনা খুব বেশি হয় । আপনার চোখের সামনে যখন কেউ আপনার কারণে আহত হবে, কষ্ট হবে তখন খুব স্বাভাবিক ভাবে আপনার মনে তার জন্য একটা মায়া জন্ম নেবে । নেবেই ।আবন্তির বেলাতেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে । এখন দেখার বিষয় যে আমি এই মায়াকে অন্য কোন দিনে নিয়ে যেতে পারি কি না !

এক সময় আবন্তি হঠাৎ বলল, তুমি যেটা চাচ্ছো সেটা মোটেও সম্ভব না । এটা কি তুমি বুঝছো না?
-কেন সম্ভব না শুনি? কেবল আমি তোমার থেকে দুই বছরের ছোট বলে?
-এটা আমাদের সমাজে অনেক বড় একটা ব্যাপার ।
-ব্যাপার মনে করলেই ব্যাপার । না করলে নাই ।
-আমার পক্ষে সম্ভব না এটা । কোন ভাবেই ।

আমি একভাবে কিছু সময় ওর চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম । আবন্তি কিছু সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল । আমি এবার একটু সাহস দেখালাম । একটা হাত ওর হাতের উপর রাখলাম । মনে একটা ভয় ছিল যে ও হয়তো হাত সরিয়ে নিবে । তবে নিল না । সম্ভবত এখনও সেই অপরাধবোধ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারছে না । আমি বললাম, আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। সত্যি সত্যিই উত্তর দিবে । ধর আমি তোমার সমান বয়সে কিংবা তোমার থেকে বড় । এখন আমি এতোদিন যা যা করেছি, এসব করলাম । তখন কি আমাকে রিজেক্ট করে দিতে ? যদি তখনও আমাকে রিজেক্ট করে দিতে তাহলে সেটা বল । বিশ্বাস কর আজকের পর তোমার সামনে আসবো না আমি । বল !

আবন্তি আমার দিকে তাকালো । গভীর চোখে । ওর চোখ আমাকে বলে দিল সব । এবার আমি নিজের চেয়ার ছেড়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম । তারপর আবার ওর হাত ধরলাম । ও কোন বাঁধা দিল না । আমি বললাম, আবন্তি আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি । তোমাকে কিছু বলতে হবে না । তবে আজকের পর থেকে তোমাকে আর বিরক্ত করবো না । তোমার সামনে যাবো না । আমার কারণে তোমাকে আর অস্বস্তিতে পড়তে হবে না । তবে এটা মনে রেখো তোমার পরে আমার জীবনে আর কোন মেয়ে আসবে না । আই প্রমিস ইউ দ্যাট !

তারপর সব থেকে ভয়ংকর কাজটা করলাম । সাহস আমার কোথা থেকে এল আমি নিজেও জানি না । আলতো করে আমি ওর কপালে চুমু খেলাম । তারপর উঠে চলে এলাম । হেটে আসার সময়ে অনুভব করছিলাম যে আমার খানিকটা কষ্ট হচ্ছে । তবে নিজের মনের কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে আবন্তি আমার কাছে আসবেই আসবে !

এক সপ্তাহ কেটে গেল । এই এক সপ্তাহে আমি একবারের জন্যও ওর সামনে গেলাম না । তিনবার দেখা হল যদিও তবে মাথা নিচু করে চলে গেলাম । এক সময় মনে হল যে আবন্তি বুঝি আর আসবেই না । তবে সে এল । ঠিক এক সপ্তাহ পরেই । সেদিনও ক্লাস শেষ করে বের হয়ে দেখি সে ক্লাসের সামনে দাড়িয়েছে । আমি বের হতেই আমার সামনে এল । তারপর কিছু না বলে আমার হাত ধরে আমাকে বাইরে নিয়ে এল । আমি ভেবেছিলাম যে ও হয়তো আমাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে কিন্তু সেখানে নিয়ে গেল না । সোজা সিএনজিতে তুলল। যাত্রার পুরো সময়টা সে একটা কথাও বলল না । কেবল আমার হাত ধরে রইলো ।

সিএনজি থামলো ওর বাসার সামনে । আবন্তির বাসা আমি চিনি। ওর পিছু পিছু বেশ কয়েকবার এসেছি । আমাকে কেন যে বাসায় নিয়ে এল সেটা আমি নিজেও জানি না । আমাকে খুব স্বাভাবিক ভাবে ওর মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল বন্ধু হিসাবে । অনেকটা ক্লাসমেট কে বাসায় নিয়ে এসেছে । বিকেলের নাস্তা খেলাম এক সাথে । ওর মাকে খুব আন্তরিক মনে হল আমার কাছে । আমি একটা ছেলে হয়ে তার মেয়ের বন্ধু হিসাবে বাসায় এসেছি এটা তার কাছে খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ।

এরপরেই আমাকে আবন্তি ওর ঘরে নিয়ে এল । তারপরই আমাকে অবাক করে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো । এতো শক্ত করে যেন কোন ভাবেই আমাকে ছেড়ে দিবে না। জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই আমার ঠোঁটে চুমু খেল সে । গভীর এক চুমু । আমি জীবনে এই ঠোঁটের স্বাদ ভুলতে পারবো কিনা মনে নেই ।
তারপর আবারও আমাকে জড়িয়ে ধরেই থাকলো । এক সময়ে বলল, তুমি জানো এই সাতটা দিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি । বারবার কেবল আমার মনে হয়েছে যে আমার জীবনে কি যেন নেই । পুরো রাত জেগে থাকতাম । এক ফোঁটা ঘুম আসতো না । কেবল তোমার ছবি সামনে ভাসতো । তোমার প্রোফাইলে গিয়ে বসে থাকতাম ।

ব্যাস আমাদের প্রেম শুরু হয়ে গেল । এবং ব্যাপারটা মোটেও গোপন থাকলো না । ক্যাম্পাসের বলতে গেলে সবাই জেনে গেল । আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরেই গল্প করতাম । বসে থাকতাম । আমার বন্ধুদের সাথে আবন্তির মিল শুরু হল । ও আমাদের গ্রুপের সাথে মিশতে শুরু করলো । সব কিছু চলতে লাগলো বেশ ভালো ভাবেই । কিন্তু আবারও ঝামেলা বাঁধালো সেই সবুজ সাহেব ।

সেদিন ক্যাম্পাস থেকে বের হতে যাবো তখনই আমার সামনে এসে দাড়ালো সে । আজকে আবন্তির ক্লাস ছিল না । তার মানে এই সবুজ সাহেবের নেই । সে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে । আমার সামনে দাড়িয়ে বলল, আবন্তির সাথে যেন তোকে আর না দেখি !
আমি খুব স্বাভাবিক ভাবে বললাম, কেন ?
-আবার কেন বলিস ? মানা করেছি মানে যাবি না ।
আমি বললাম, কিন্তু আবন্তির তো কোন সমস্যা নেই । সে তো আমার সাথে থাকতে পছন্দ করে !
-শ্লার বাই%^$ । এতো বড় সাহস তোর…..।

এই বলে সে আমার কলার চেপে ধরলো । এবং একটা ঘুসি মারতে গেল ।

সবুজ সাহেব আমার থেকে বয়সে বড় হলেও আমার থেকে তার শরীরের গঠন বড় না । বলা চলে লম্বার তার সমনা হলেও তার থেকে শরীর স্বাস্থ্য আমার ভাল । সেদিন আমি কিছু বলি নি কারণ দোষ আমার ছিল । আজকে কেন জান সহ্য করলাম না । ঘুসিটা এক হাত দিয়ে ঠেকালাম । তারপর অন্য হাত দিয়ে তার চোয়াল বরাবর একটা ঘুসি মেরে দিলাম । আর মারতে হল না । একটাতেই যথেষ্ঠ । মাটিতে পড়ে গেল সে !
আমি তার দিকে তাকিয়ে বলল, সেদিন আমার ভুল ছিল । আমি কিছু বলি নি । কিন্তু আজকে আমার দোষ নেই । আপনি বড় ভাই তাতে কিছু যায় আসে না । আরেকবার মারতে আসবে হাত ভেঙ্গে দিবো ।

দেখলাম আমার কিছু বন্ধুবান্ধব এগিয়ে এসেছে । সবুজ ততক্ষনে উঠে দাড়িয়েছে । তার সাথে থাকা বন্ধু বান্ধবরা হতভম্ভ হয়ে দাড়িয়ে আছে । সম্ভবত আমি ভাবতে পারে নি যে আমি ঘুসি মেরে বসবো ! তবে তারা আর ঝামেলা করলো না । কারণ পেছনে বেশ কয়েকজন এসে দাড়িয়েছে আমার !

ঘটনা জানা জানি হতে দেরি হল না । আবন্তির কাছেও পৌছে গেল । সে তো ফোন করে আমাকে সেই ঝাড়ি । পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়েই বুঝলাম অবস্থা ভাল না । কিছু একটা ঝামেলা হবে । নাইম আমার কাছে এসে বলল, তুই কেন এসেছিস আজকে । ঝামেলা হতে পারে
আমি বললাম, আমার কারণে হয়েছে আমি সামলাবো !

দুইটা ক্লাস শেষ হতেই দেখলাম অপরিচিত বেশ কয়েকজন আমাদের ক্লাসে এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেল । এবং অবাক হয়ে দেখলাম আমার সাথে বলতে গেলে সবাই বের হয়ে গেল । আমার পেছন পেছন আসতে লাগলো । মানা করা স্বত্ত্বেও কেউ কান দিলো না সে দিকে ।

কাঠাল তলায় দেখলাম আমাদের ক্যাম্পাসের ছাত্র নেতা বসে রয়েছে । এক পাশে আমি সবুজ সাহেবকে দেখতে পেলাম । আমি গিয়ে দাড়ালাম সামনে । নেতা সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমিই অপু?
-জি ভাইয়া !
-বেয়াদবি কেন করেছো?
-ভাইয়া আমি কয়েকটা কথা বলি ! তারপর আপনি যা বলবেন তাই হবে !
-তোর আবার কি কথা রে !
পাশ থেকে একজন বলে উঠলো । নেতা সাহেব হাত উঠিয়ে তাকে থামিয়ে দিল । তারপর বলল, বল কি বলবে !

আমি একটা বড় দম নিলাম । তারপর বললাম, সব কিছু শুরু আবন্তিকে নিয়ে । কয়েক মাস আগে আমি আবন্তিকে বেশ বিরক্তই করেছি । এই কথা আবন্তি সবুজ সাহেব জানায় । এবং সে আমাকে তখন চড় মারে । আমি সেই দিন একটা কথা বলি নি । কারণ দোষ আমার ছিল । নিরবে শাস্তি মাথা পেতে নিয়েছি ।
নেতা বলল, তারপর?
-তারপর আবন্তির সাথে আমার একটা ভাল সম্পর্ক তৈরি হয় ! সে আমার সাথে আমার বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে শুরু করলো । নিজের ইচ্ছেতেই । গতদিন সবুজ সাহেব আবারও আমার পথ আটকে ধরে এবং বলে যে আমি যেন আবন্তির কাছ থেকে দুরে থাকি ! আমি তো আবন্তিকে মোটেই বিরক্তি করছি না । বরং সে আমার সাথে থাকতে পছন্দ করছে । এখন আপনি বলুন ভাই আবন্তি আমার সাথে মিশছে, তার ভাল লাগছে, আমারও ভাল সময় যাচ্ছে এটা কোন অন্যায় হয়েছে !
নেতা বলল, আবন্তি তোমার থেকে বয়সে বড় !
-ভাইয়া আপনি এই যুগেও এই বয়স নিয়ে বলছেন ! আপনি আধুনিক যুগের আধুনিক ছাত্র নেতা । আপনাকে আমরা ফলো করি । আপনিই তোমাদের শিখিয়েছেন যে বন্ধুত্বের ব্যাপারে বয়স আসলে কোন ব্যাপার না ! মনের মিলটাই বড় !

এমন একটা কথা নেতা সাহেব সত্যিই বলেছিলো আমাদের নবীন বরণে । সেটা আমার মনে আছে ! নেতা সাহেব দেখলাম একটু নড়ে চড়ে বসলো । তারপর সবুজের দিকে তাকিয়ে বলল, আবন্তি কি তোর অভিযোগ করেছে যে অপু বিরক্ত করছে । করেছে ? আবন্তি !
নেতা ডাক শুনে দেখলাম আবন্তি বের হয়ে এল । নেতা তার দিকে তাকিয়ে বলল, অপু যা বলল সব কি সত্য !
-জি ভাইয়া !
নেতা আবার সবুজের দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে তুই মাতব্বারী কেন করতে গেলি !
সবুজের মুখে কোন কথা নেই । আমার পাশেই নাইম ছিল সে চট করে বলল, ভাইয়া সবুজ ভাই অনেক দিন ধরে আবন্তির পেছনে ঘুরছে । পাত্তা নে পেয়ে জ্বলে পুড়ে মরে যাচ্ছে !

সাথে সাথে হাসির রোল উঠলো । নেতা সাহেবও হেসে ফেলল । তারপর হাত উচু করে সবাইকে থামিয়ে দিল । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার সাথে অন্যায় হয়েছে আমি বুঝলাম । কিন্তু তুমিও অন্যায় করেছো । বড় ভাইয়ের গায়ে হাত দিয়েছো । তবে শুরুটা যেহেতু তুমি করো নি তোমার দোষ কম । সবুজ কে সরি বল । আর সবুজ তুইও সরি বল । জোর করে কিছু হয় না এটা তোর বোঝা উচিৎ । এরপর যেন এমন কিছু আর না হয় !

আমি খানিকটা হাসি মুখে এগিয়ে গেলাম সবুজের দিকে । টিটকারী মারকা হাসি দিয়ে বললাম, সবুজ ভাইয়া মনে কষ্ট রাখবেন না । আমি খুব সরি । সবুজ ব্যাথিত কন্ঠে আমাকে সরি বলে চলে গেল । সভা শেষ ।

পরিশিষ্ঠঃ

আবন্তি আমার পাশে বসে রয়েছে । রিক্সা চলছে নিউমার্কেটের দিকে । আবন্তি হঠাৎ বলল, সাকের ভাইকে তো খুব পাম দিলে দেখলাম । কথায় তোমার সাথে কেউ পারবে না । এই কথা দিয়েই আমাকে ঘায়েল করেছো !
আমি আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে বললাম, আমি !! এই আমি !!
-ইস ঢং !

তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বলল, বিয়ের ব্যাপারে কিন্তু আমি কাউকে রাজি করাতে পারবো না আগেই বলে রাখছি । তুমি রাজি করাবে !
-নো চিন্তা জানেমান ! তোমার আব্বুকে পটাতে আমার একটুও সময় লাগবে না । তোমাকে বিয়ে আমি করবোই ।
-হয়েছে ! দেখা যাবে !

রিক্সা এগিয়ে চলছে টংটাং করে । সেই আমাদের সামনের জীবনে এক সাথে থাকার স্বপ্নটাও …..

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 4.9 / 5. Vote count: 71

No votes so far! Be the first to rate this post.

About অপু তানভীর

আমি অতি ভাল একজন ছেলে।

View all posts by অপু তানভীর →